তোমাতে করিবো বাস💗 #পর্ব_৪৫

0
175

তোমাতে করিবো বাস💗
#পর্ব_৪৫
লেখনীতে-আফনান লারা
.
দমফাটা হাসি রোধ করে,রিনি কাছে এসে মিসেস মোস্তফার হাত ধরলো তাকে তোলার জন্য।তিনি উঠতে চাইলেন,রিনিও উঠাতে চাইলো কিন্তু তিনি উঠতে পারলেন না।ওজন বেশি না তার মতে।এই সত্তর পঁচাত্তরের কাছাকাছি।
রিনি টানতে টানতে কাহিল হয়ে যাবার পরেও উঠাতে না পেরে আসিফের দিকে তাকায়।আসিফ চায়নি হাত ধরতে,কিন্তু এখন এমন পরিস্থিতি যে সে না উঠালে তিনি উঠতে পারবেননা।
তাই বাধ্য হয়ে উঠে এসে সে ওনাকে ধরে তুললো।আসিফের খুব একটা কষ্ট হয়নি তবে হাতের কব্জি গুলা কেবল ম্যাচম্যাচ করছে,যেন মটর করে হাঁড় ভেঙ্গে যাবে কিছুক্ষণ পরই!
এই মহিলা বসার পরই তো খাট ভেঙ্গে যাবার কথা।তা নাহয়ে রাইদা বসার পরই ভাঙ্গলো!
আসিফ আর রিনি দেয়াল ঘেঁষে চুপচাপ দাঁড়িয়ে রইলো ওনাদের দিকে চেয়ে।ওনারাও আর কিছু বললেননা।পড়ে থাকা ভাঙ্গা খাটটা দেখতে দেখতে চলে গেলেন দুজনে।রিনি দরজা লাগিয়ে আসিফের দিকে তাকিয়ে খিলখিল করে হেসে উঠলো।আসিফ ঐ জায়গাতে দাঁড়িয়ে থেকে রিনিকে হাসতে দেখছে।মেয়েটা এ কদিনে হাসি প্রায় ভুলেই গেছিলো।ওকে ওরকম ভাবে তাকিয়ে থাকতে দেখে রিনি হাসি থামিয়ে কানের পাশের চুলগুলোকে কানের পেছনে নিয়ে নিজের ব্যাগটা খোলে।ভেতর থোকে তোয়ালে নিয়ে চলে যায় ওয়াশরুমের দিকে।আসিফ ভাবছে এই ভরদুপুরে তারা খাবে কোথায়!
এই রিনা খান তো খাবার দিবেনা!হাবভাবে বেশ বোঝা যাচ্ছে।তাছাড়া তাদের থেকে আশা করাটা এক প্রকার ছোটলোকি। এই ভেবে মানিব্যাগটা নিয়ে আসিফ বেরিয়ে গেলো পাশের একটা হোটেল থেকে দুপুরের খাবার কিনে আনতে।
রিনি মুখ ধুয়ে বেরিয়ে আসিফকে না দেখে নিচে পাতানো তোষকে বসে পড়ে।বাহিরে বের হলেই ঐ দুজন গলা চেপে ধরবে তা বুঝতে পেরে সে আর বাহিরে গেলোনা,এখানে বসেই আসিফের অপেক্ষা করতে লাগলো।তাদের এই রুমটাও দেখতে বেশ পুরোনো।এত পুরোনো দালানের ভাড়া এত বেশি কেন!তাও সাবলেট!
দেয়ালে আঁকিবুকি কত কি!
এতসব দেখতে দেখতে রিনির কানে আসলো সেই বাচ্চাটির কান্নার আওয়াজ।কি সাংগাতিক!
উপরের তলা থেকে এত জোরে আওয়াজ আসছে।আর সেই বাচ্চা এখন এই মূহুর্তে এখানে থাকলে কানের পর্দা তো ফেটে যাবার কথা!ভাগ্য ভাল আমাদের সাথে ওরা সাবলেটে থাকে নাই।নাহয় বধির হবার আশঙ্কা ছিল।
——-
আসার পথে কাছেই বেশ কয়েকটা হোটেল দেখতে পেয়েছিল আসিফ।এখন সেদিকটায় যাচ্ছে।অনেক ভেবেচিন্তে সারির প্রথম হোটেলটাতেই ঢোকে।
সে গিয়ে অর্ডার দেয় এক পিস চিকেন আর এক পিস তেলাপিয়া মাছ,সাথে দুই প্লেট ভাত প্যাকেট করে দিতে বলে।তার গড়গড় করে বলে যাওয়া অর্ডারটা ওয়েটার শুনলো চুপচাপ, তারপর গলার গামছাটা তুলে কপাল মুছতে মুছতে বললো,’আমরা প্যাকেট দিই না’

‘সেকি!কেন?’

‘ভীড় দেখছেন?এই ভীড়েই সব মাছ তরকারি শেষ হয়।তাহলে প্যাকেট দিয়ে বারতি খরচ কেন রাখবো? ‘

‘সেকি। এ কেমন নিয়ম!জীবনে তো শুনি নাই’

‘তো এখন শুনে নিন’

‘আচ্ছা আমি নাহয় সামনের দিকে গিয়ে দেখি’

‘যান যান।
সব এক নৌকার মাঝি!কেউ প্যাকেট দিবেনা।খেলে এখানেই বসে খেতে হবে’

ওয়েটারের কথা আসিফ কানে তুললোনা।এক এক করে সারির সবকয়টা হোটেলে সে ঘুরলো।সবার এক কথা।আসলে তাদের কথা সত্য।হোটেল গুলোতে উপচে পড়া ভীড়।

মাথা চুলকে ফোন হাতে নেয় আসিফ।তারপর মনে আসে রিনির ফোন নেই।তাকে কলটা দেবেই বা কি করে।
তাই আবার সোজা হাঁটা ধরলো সে।

বাসায় ফিরে দরজায় হাত রেখে বুঝলো ইতোমধ্যে কেউ দরজা লক করে ফেলেছে।তাই বাধ্য হয়ে কলিংবেলে চাপ দিয়েছে।কিন্তু ঐ কিপটা আজগরের বাড়ি বলে কথা।কলিংবেল থাকা স্বপ্নের ব্যাপার হলেও দূ্রভাগ্যবশত সেটি নষ্ট।
দাঁতে দাঁত চেপে দরজার কড়া নাড়তে থাকে আসিফ।
রাইদা বেশ শুনতে পেয়েছে সেই আওয়াজ। কিন্তু সে খুলবেনা।কারণ এই দরজার কড়া নাড়ার আওয়াজ তার পরিচিত না।সুতরাং সে খুলবেনা।

রিনি শুনে সে ছুটে আসে খোলার জন্য।এসে খুলতেই দেখে আসিফ ওপারে।সে ভেতরে আসতে আসতে বললো,’দরজা খুলিসনি কেন এতক্ষণ? ‘

‘আঁই তো হবে হুইনছি এতক্ষণ হুনি ন।আর এই মাইয়া তো মনে হয় ভয়রা’

রাইদা চোখ বড় করে তাকিয়ে থাকলো।রিনির কথা না বুঝলেও ভয়রার মানেটা সে ঠিক বুঝেছে।দরজা খোলা তার অপরাধ বলে আপাতত চুপ থাকলো।ভয়রা বলার পালটা জবাব সে পরে একদিন দিয়ে দিবে।

আসিফ ভেতরের রুমে এসে রিনিকে বললো তৈরি হয়ে নিতে।তারপর হোটেলে গিয়ে খাবে।রিনি ভ্রু কুঁচকে বললো এখানে নিয়ে আসলো পারতো সে।হোটোলে বসে খেতে ভাল লাগেনা তার।

‘চেয়েছিলাম।কিন্তু ওরা দিবেনা,ওদের নিয়ম নাই’

রিনি মাথা নাড়িয়ে গায়ে ওড়নটা টেনে আসিফের সাথে চললো।ওদের দুজনকে বের হতে দেখে রিমনের মা ফোন নিয়ে কল করলেন আজগর সাহেবকে।

আজগর সাহেনের ফ্ল্যাট—

১৯৭৯সালের একটা ল্যান্ডলাইন টেলিফোন বাজছো।তার তারগুলোতে কামড়াকামড়ির দাগ।দাগগুলো আজগর সাহেবেরই।ছোট কালে খুব বদমাইশ ছিলেন তিনি।সব রেখে এই ল্যান্ডলাইনটাই কামড়াতেন।যাই হোক এতক্ষণ তিনি বাজার থেকে আনা ছোট ইলিশমাছ কাটা দেখছিলেন।বড় ইলিশের যে দাম!
অবশ্য বড় ইলিশ কেনার টাকা তার পকেটে থাকলেও তিনি কিনবেন না।কিপটা কেন বলা হয় তাকে!

মাছ কাটছেন তার স্ত্রী জাকিয়া।ফোনের আওয়াজ পেয়ে উঠে এসে রিসিভ করতেই ওপাশ থেকে মিসেস মোস্তফা ফিসফিস করে বললেন,’স্যার জলদি আমাদের বাসায় আসেন’

‘আসবোনা।আমি মাছ কাটা দেখতেছি।আসলে কি লাভ?মাসের ভাড়া দিবেন?’

‘না তো’

‘তবে কেন আসবো?সিঁড়ি বেয়ে নামলে কত শক্তি খরচ হয় জানেন?’

‘সিঁড়ি বেয়ে উঠলে শক্তি খরচ হয় জানতাম।সিঁড়ি বেয়ে নামলে শক্তি খরচ হয় তা নতুন শুনলাম।যাই হোক,একটু দ্রুত আসুন।গোপন বৈঠক আছে’

‘এত কষ্ট করে চারতলা থেকে দোতলায় আসবো।খিধে পাবেনা?সেই তো এসে আবার আমার বাসার বিসকুট খেয়ে পেট ভরাতে হবে’

‘ভাইরে ভাই ঠিক আছে। আমি নাস্তা করাবো।আপনি জলদি আসুন’
——–
হোটেলে রিনি বাদে বাকি সব পুরুষ মানুষ।রিনি সামনে ভাত রেখে ও খেতে পারছেনা।তার অস্বস্তি বোধ হচ্ছে ভীষণ।এর আগে এত এত মানুষের ভীড়ে সে খায়নি কখনও।এদিকে আসিফ গপাগপ গিলে যাচ্ছে।
খাবার সময় সে আশেপাশে তাকায়না,কিন্তু রিনির খাবারের দিক লক্ষ রাখতে হবে ভেবে একবার সে মাথা তুলে তাকালো।তাকিয়ে দেখলো ভাত যতটা দিয়েছিল ততটাই আছে।সে ছুঁয়েও দেখেনি।বারবার মুখে ওড়না চেপে ডানে বামে তাকাচ্ছে।

‘কি হলো রিনি?খাচ্ছিস না কেন?’

‘শরম লাগে,এই বেডাগুন কেইন্না করি রেনি রইছে’

আসিফ ডান পাশে তাকিয়ে দেখলো মধ্য বয়সী একজন আঙ্কেল রিনির দিকে তাকিয়ে তাকিয়ে নোহারী খাচ্ছেন।এমন ভাবে খাচ্ছেন যেন হাঁড়টা গরুর না,রিনির’

আসিফ অমনি এক ধমক দিয়ে বললো,’কি দেখেন চাচা?আরেকটা বিয়ে করবেন?করেন!কাবিন এক কোটি দিতে হবে।পারবেন?’

লোকটা দাঁত কেলিয়ে বললো,’কেন পারমুনা।অবশ্যই পারমু।আমার চাউলের ব্যবসা থেইকা প্রতি মাসেই আসে পঞ্চাশ লাখ।’

‘আহা চাচা, পুরা কথা তো শুনবেন।আমার বউরে এক কোটি টাকা কাবিন দিয়ে বিয়ে করে সাথে আবার আমাকেও নিয়ে যেতে হবে।এই মেয়েটা আবার আমাকে ছাড়া থাকতে পারেনা,ঘুমাতে পারেনা।বাল্যকালের বিবাহ তো!আমি নাহয় আপনাদের মাঝে শুবো।শর্তে রাজি হলে বিয়ে করতে পারেন।’
———
তটিনি বাহিরে গিয়ে বাপ্পির মাকে লক্ষ করছে।তিনি রেগে আগুন হয়ে আছেন তার কারণ হলো বাপ্পির বাবা ওনাকে খুব বকেছেন তটিনিকে দিয়ে জামাকাপড় ধুইয়েছে বলে।
তটিনি ওনাকে বারবার দেখছে কারণ সে মাফ চাইবে।জামাকাপড় ধুইতে দেয়া কোনো অপরাধ না।বরং সে কাজটা পারেনা এটা তার অপরাধ।কিন্তু বাপ্পির বাবা মাঝ দিয়ে ওনাকে বকতে গেলেন কেন সেটাই মাথায় ঢোকেনা ওর।

তটিনিকে অনেকক্ষণ ধরে ডাইনিংয়ের পাশের পিলারটা জড়িয়ে ধরে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখেছেন উনি।সে নড়ছেইনা।এদিকে ওর এভাবে তাকিয়ে থাকা তাকে রান্নায় মন বসাতে দিচ্ছেনা কিছুতেই।শেষে ধমক দিয়ে বললেন,’কি সমস্যা? ‘

‘আন্টি আমি দুঃখিত’

‘দুঃখিত হতেই হবে।নিজের ছেলের বউয়ের দোষে আমাকে বকা শুনতে হবে তা জানলে দামড়া ছেলেটাকে দামড়াই রেখে দিতাম।খাল কেটে কুমির আনতাম না’
চলবে♥

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here