তোমাতে করিবো বাস💗 #পর্ব_৪৬

0
186

তোমাতে করিবো বাস💗
#পর্ব_৪৬
লেখনীতে-আফনান লারা
.
তটিনির মনটা খারাপ হয়ে গেছে।সে কখনওই চায়নি বাপ্পির মায়ের অপছন্দ হয়ে উঠতে।শুরুতে এইসব দিক লক্ষ না করলেও এখন তো সে চায় তিনি যেন ওকে ভাল ভাবে।কিন্তু সেটা না হয়ে হচ্ছে কিনা উল্টোটা।
উনার ধমক খেয়ে তটিনি বাপ্পির কাছে ফেরত চলে আসে।বাপ্পি জানালা বন্ধ করে বিছানায় দুটো বালিশ বুকে ধরে আরামসে ঘুম দিয়েছে।তটিনি ওকে ওরকম শান্তিতে ঘুমাতে দেখে ভাবলো কষিয়ে কয়েকটা লাগিয়ে দিবে,পরে ভাবলো এই উজবুকটাকে ফুলের টোকা দিলেও তার মা,বোন এসে কথা শুনিয়ে যায়।এরে কোনো টোকাই দেয়া যাবেনা।তাই নিজের রাগটাকে দমিয়ে সে রুমে পায়চারি করতে করতে ভাবছে কি করলে শাশুড়ি মায়ের রাগটাকে কমানো যাবে।অনেক ভাবনাচিন্তা করে শেষে বুদ্ধি বের করলো বকুল আপুর কথা।
তিনি ভাল বলতে পারবেন আন্টির রাগ কমানোর উপায় সম্পর্কে।
——
‘বুঝলাম,মা রাগ করলে সেটা থাকে বাপ্পিকে নিয়ে।এছাড়া মায়ের রাগ হয়না কোনো কিছুতে।আর তুমি সেই বিষয়টাতেই রাগাইছো?’

‘এখন আর কি করি!আপনিও বকেন’

‘আমি বকছিনা।আচ্ছা শুনো,মায়ের বাগানে বসে গান শুনতে শুনতে চা দিয়ে বিসকিট খাওয়া খুব পছন্দের।বিসকিটটা হলো’অলিম্পিক এনার্জি প্লাস বিসকিট।বুঝছো?’

তটিনি মাথা নাড়ায়।বকুল আপু আবার বলে,’তার চুলে তেল মালিশ করে বেনি করে দিলেও তার মন ভাল করা যায়।আপাতত এই দুটো কাজ করো।তারপরেও রাগ না গেলে আমি মোক্ষম একটা বুদ্ধি দিবো।’
——–
ঐ চাচা আসিফের শর্ত শুনে হ্যাং হয়ে গেছিলেন
আর কথাই বলেননি।মনে মনে আজকালকার ছেলেদের বকাঝকা করে,প্রজন্মের দোষ দিয়ে চলে গেছেন।এই কাহিনীতে একটা ভাল কিছু হলো,আর সেটা হচ্ছে রিনি সহজবোধ করলো।হাসি পেলো সাথে মনে বল পেলো এত মানুষের সামনে খাওয়ার।ঠোঁটের কোণায় হাসি রেখেই সে খাবারটা খেয়ে নেয়।
সে ভেবেছিল খাবার খেয়ে আসিফ ওকে নিয়ে সোজা বাসায় ফিরবে।কিন্তু আসিফ সেটা না করে ওর হাতে হাত রেখে উল্টো পথে হাঁটছে।
রিনি যেতে যেতে জিজ্ঞেস করলো তারা কোথায় যাচ্ছে।।
আসিফ যেতে যেতে শুধু মুচকি মুচকি হাসে,আর কিছু বলেনা।রিনিও আর প্রশ্ন করেনা।
স্বামী এমন একজন মানুষ,বাবা মায়ের পরের একমাত্র আশ্রয়স্থল। এই মানুষটা হাত ধরে যেখানেই নিয়ে যাক না কেন তাকে ভরসা করার জন্য মন আপনা আপনি সাঁই দিয়ে দেয়।মনে ভয় হয়না কোনো কিছুর।
রিনির ও সেই অনুভূতিটা মনের ভেতর খেলে যাচ্ছে।চোখে আজ অন্যরকম ভাবনা ছলছল করছে।আসিফ হয়ত দেখেনি,তবে সে জানেওনা রিনি মনে মনে তাকে কতটা ভরসা করে।

চলতে চলতে তারা এই হাউজিংয়ের শেষ প্রান্তে চলে আসে।হাউজিংটা ওতোটা উন্নত না,তাই এর শেষ প্রান্ত ও যে আহামরি হবে তা বলা বোধগম্য নয়।
আসিফ আশা করেছিল সুন্দর লেক থাকবে,তারা বসে গল্প করবে,রিনির মন ভাল করবে।তা হলো কই!
চোখের সামনে বিরাট বড় ময়লার একটা লেক।গন্ধ চারিদিকটাকে ঘেরো দিয়ে ফেলেছে।নাকে হাত দিয়ে সে রিনির দিকে তাকায়।রিনি বুঝেছিল আসিফ তাকে কেন এনেছে এখানে।এখন এক্সপেকটেশন কিরকম হওয়া উচিত তা মনে মনে চিন্তা করে সে মুখে হাসি ফুটিয়ে বলে,’বেশ তো!ঐ যে ওখানে বসার জায়গা আছে, চলুন আমরা গিয়ে বসি’

আসিফ রিনির এমন উত্তর আশা করেনি বলে সে অবাক হয়ে তাকিয়েছিল শুধু।এতক্ষণ সে রিনিকো টেনে টেনে আনলেও এবার রিনি তাকে টেনে ঐ বেঞ্চির কাছে নিয়ে এসেছে।

বেঞ্চির মাঝে পাঁচ আঙুল ফাঁক রেখে বসেছে দুজন।
কপোত কপোতী দেখে দূর থেকে এক বাদামওয়ালা এসে হাজির।সে মনে মনে ঠিক করেছে এখানে বাদাম বিক্রি করবে।
কাজটা সে শুরুও করে দিয়েছে।কোথাও কোনো মানুষ নেই তাও সে এদিকে ওদের লক্ষ করে চলতে চলতে’এই বাদাম খাবেন,বাদাম!!! এই উক্তিটি বলেই যাচ্ছে।’

আসিফ রিনির দিকে তাকায়।রিনি সবেমাত্র ভাত খেয়ে এসেছে বলে সে খাবেনা বলে দেয়।তখন আসিফ বলে,’বাদাম পেট ভরার খাবার না যে ভাতের পর খাওয়া যাবেনা।বাদাম মানুষ সময় কাটাতে খায়।’

এই বলে আসিফ বিশটাকার বাদাম কিনে নিলো।রিনিকে সাধলো প্রথমেই।কিন্তু রিনি যে প্রথমে মানা করে বসে আছে তাই সে আবারও মানা করে দেয়।
এবার আসিফ একাই বাদাম খাচ্ছে।তাদের বেঞ্চির পাশ ঘেঁষেই একটা কাঠবাদাম গাছ।সেটার ছায়াতলে বসে এই ভরদুপুরে দুজন ময়লার লেকের দৃশ্য উপভোগ করছে।
——-
বাপ্পির মাকে টেনেহিঁচড়ে তটিনি নিয়ে এসেছে বাগানে।সেখানে দুকাপ চা,এনার্জি প্লাস বিসকিট ও এনে সাজিয়ে রেখেছে।এসব দেখে বাপ্পির মা কিছুক্ষণ তাকিয়ে ছিলেন।তারপর মাথার উপরের কড়া রোদ দিতে থাকা সূর্যটার দিকে তাকালেন।দাঁতে দাঁত চেপে কপাল মুছে বললেন,’দুপুরবেলা কেউ চা খায়?’

এটা শুনে তটিনি দাঁত কেলালো।তবে ভেতরে ভেতরে সে আফসোস করছে।বুবু বলেছিল বিকালে চা খেতে পছন্দ করে মা।কিন্তু সে আগ বাড়িয়ে অতিরিক্ত করে এই দুপুরেই চায়ের বন্দবস্ত করে হাজির।মনে মনে নিজেকে দোষারোপ করে সে আবারও দাঁত কেলাতে থাকলো।ও কিছু বলছেনা দেখে বাপ্পির মা বললেন,”হ্যাঁ,আমি আগে দুপুরে চা খেতাম।দিনে চারবেলা খেতাম।কিন্তু দুপুরবেলার চায়ে যত দুধ চিনিই ঢালা হোক না কেন,চা ঠিক জমেনা।কেমন যেন মনে হয় গরম পানিতে চিনি মিশিয়ে খাচ্ছি।তাই আমি দুপুরবেলা চা খাওয়া বন্ধ করে দিয়েছি আজ থেকে ত্রিশ বছর আগে।’

তটিনি মাথা নাড়ায়।মা বাগানে পা ও রাখলেন না।চলে গেলেন আবার।
তটিনি নিজের কপালে নিজে চড় দিয়ে এবার গেলো তেল গরম করতে।ওনার মাথায় মালিশ করে দিয়ে ওনার মন শান্ত করে তুলবে।প্ল্যান A কাজ করে নাই তো কি হয়েছে।প্ল্যান B তো আছে।
——
আসিফ বাদামের খোসা ছাড়িয়ে রিনির দিকে ধরলো।ছোট কালে আসিফ এরকম বাদামের খোসা ছাড়িয়ে রিনির দিকে ধরলে রিনি সেটা ধরার আগেই সে টুপ করে নিজেই খেয়ে নিতো।হুট করে সেইদিনগুলোর কথা মনে পড়ে গেলে রিনির।সে আসিফের হাতের বাদামগুলোর দিকে তাই গভীর মনযোগ দিয়ে তাকিয়ে ছিল।
আসিফে অবশ্য সেসব কিছুই মনে নেই।তাই সে বাদাম ধরেইছিল স্বাভাবিক ভাবে।রিনি তখন ওর হাত থেকে বাদামটা নিয়ে বলে,’আন্নে ছোডোকালে আঁরে বহুত চেঁতাইতেন’

‘কে বলেছে?’

‘আঁর বেজ্ঞিন মনে আছে’

‘কিভাবে চেঁতাইতাম?’
———
বাপ্পির মা একটু সোফায় বসে আরাম করে চোখ বুজে ছিলেন।তটিনি একটা টুল এনে ওনার পিছনে এসে বসে এক বাটি তেলে হাত ডুবিয়ে সেও হাত ধপ করে ওনার মাথায় রাখলো।
উনি কি ভয়টা যে পেলেন!!চোখ বড় করে এক চিৎকার দিয়ে সোজা হয়ে বসে পেছনে মুড়ে দেখলেন তার গুণধর পুত্রবধূ আবারও দাঁত কেলিয়ে তাকিয়ে আছে।

‘তোমার সমস্যা কি বলো তো!পাগল হয়েছো?এই গরমের মধ্যে আমি মাথায় তেল দিবো?তাও গরম তেল?এসব কে শিখিয়েছে তোমায়?যেই শিখিয়েছে,ভাল শিখিয়েছে।কিন্তু এটা শেখায়নি কখন কাজটা প্রয়োগ করতে হবে।গাধী কোথাকার!যাও আমার ছেলের কাছে।আমার পেছনে না লেগে ওর পেছনে লাগো।ওর কি লাগবে জিজ্ঞেস করো,তারপর সেটা করো।এই বাড়িতে আমার ছেলে ভাল থাকলে, আমার মন আপনাআপনি ভাল হয়ে যায়’

তটিনি মাথা নাড়িয়ে বাপ্পির কাছে এসে হাজির হয়।বাপ্পি তখন গভীর ঘুমে মগ্ন।সে ধীরে ধীরে ওর কাছে এসে ওর টি-শার্টের কলার খপ করে ধরে টান দিয়ে বললো,’জামাই উঠোন!জামাই।ভাত খাইবেন?পানি খাইবেন?কি খাইবেন?আমায় বলুন।আমি সব বানাই দিবো।জামাই উঠেন!’

বাপ্পি ভয় পেয়ে লাফ দিয়ে উঠে বসে এদিক- ওদিক চেয়ে আবার তটিনির দিকে ফিরে বুকে থুথু দিয়ে বললো,’কোথায় আগুন লাগছে?’

‘কই?আগুন লাগবে কেন?’

‘তাহলে ওরকম ঝাঁকালে কেন?স্বপ্নে এরোপ্লেনে চড়ে দুবাই যাচ্ছিলাম।তোমার ঝাঁকুনিতে টুপ করে মাঝ পথে মরুভূমিতে পড়ে গেছি প্লেন ক্রাশ হয়ে।তারপর সেখানে ধাউ ধাউ করে আগুন জ্বলে উঠলো’

তটিনি বাপ্পির কাছে ঘেঁষে বসে ওর গলায় হাত বুলাতে বুলাতে বললো,’পানি খাবেন?’

‘ ঘুম থেকে তুলে পানি খেতে বলছো?’

‘তো কি খাবেন বলুন ‘

‘আমি ঘুমাবো।খাবো পরে’

এই বলে বাপ্পি আবার শুয়ে পড়ে।তটিনি ওর কাছে এসে ওকে ধরে আবারও টানতে টানতে বলে,’আহা আপনাকে ঘুমাতে দেয়া যাবেনা।শাশুড়ি আন্টির আদেশ।আপনাকে ধরে ধরে জিজ্ঞেস করতে হবে আপনার কিছু লাগবে কিনা।আফটার অল আপনি হলেন এই বাড়ির মাথামুণ্ডু’

চলবে♥

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here