#আকাশেও_অল্প_নীল #পর্বঃ১৮ #আর্শিয়া_ইসলাম_উর্মি

0
312

#আকাশেও_অল্প_নীল
#পর্বঃ১৮
#আর্শিয়া_ইসলাম_উর্মি

৫২,
স্নেহাদের বাসার উদ্দেশ্যে বের হতে সবাই মাহাদের বাসার সামনের ছোট্ট জায়গা টায় দাড়িয়ে আছে। হাতে গোনা ১৫জন মানুষ যাচ্ছে। রাইমার তিন মামাতো বোন, সাইরা, সাইফা রাইমার বড়ো মামার মেয়ে, ছোটো মামার এক মেয়ে তিশা এবং এক ছেলে রাহান, শার্লিন এরা ছয়জন আর বাকি ন’জন মাহাদের দুই জেঠু আর দুই ফুফুর ছেলেমেয়ে। ওরা সবাই রেডি হয়ে হলুদের জন্য ডালা নিয়ে যাবে, সেই ডালাগুলোর অপেক্ষায় আছে। ডালাগুলো সব বড়োরা সাজিয়েছে। সেগুলোই দিয়ে যাবে সেই অপেক্ষায় আছে ওরা। প্রায় ৭-৮মিনিটের মাথায় রাইমার খালামনি আর মা আর মাহাদের জেঠিমা, ফুফুরা সব ডালা একে একে নিয়ে এসে সবার হাতে একটা করে ধরিয়ে দেয়। ও বাড়িতে যাওয়ার জন্য গাড়িও এসে পরেছে। সাহিরা বেগম সবার হাতে ডালা দিয়ে বললেন,

“সবকিছু সাবধানে নিয়ে যেয়ো। কোনো কিছু জানি নষ্ট না হয়।”

“সাবধানে কি নিবে ভাবী? বাচ্চা বাচ্চা মেয়েরা শাড়ি পরেছে। ওরা শাড়ি সামলাবে, নাকি ডালা সামলাবে! শাড়ি পায়ের সাথে পেচিয়ে পরে না যায়!”

কথাটা বললেন সাহিরা বেগমের ছোটো জা৷ শার্লিন কিছু টা হাসির ছলে বললো,

“আন্টি নো টেনশন। বাচ্চাদের সামলে রাখবোনি। ওরা পরে গেলে ওদের সাপোর্ট দিয়ে আমরাও ইচ্ছে করে উস্টা খেয়ে পরবো। যেনো পরে গিয়ে অপমানিত বা একাকিত্ব অনুভব না করে।”

“ওরা বাচ্চা, তুমি খুব বড়ো নাকি মেয়ে?”

বললেন মাহাদের বড়ো ফুফু। মাহাদের বাবা সবার বড়ো। উনার পরে বাকি ভাইবোন। তাদের সন্তান সব একটু কম বয়সীই। মাহাদের ছোটো দুই চাচাতো বোন, ওরা সবার ছোটো হওয়ায় শাড়ি সামলানোর মতো ধৈর্য একটু কমই আছে। মাহাদের ফুফুর কথা শুনে শার্লিন বললো,

“বড়োই তো আন্টি! বিয়ে দিলে এতোদিনে বাচ্চাকাচ্চার মা হয়ে বসে থাকতাম।”

শার্লিনের কথায় উপস্থিত সকলে হেসে উঠে। রাইমা শার্লিনের পাশেই দাড়িয়েছিলো। ওর নির্লজ্জ কথাবার্তার ধাচ দেখে রাইমা শার্লিনের পায়ে পা দিয়ে চাপ দেয়। শার্লিন ব্যথা পেয়ে রাইমার দিকে তাকিয়ে বললো,

“পায়ে ব্যথা দিস কেন?”

“অসভ্যের মতো বড়োদের মাঝে মানসম্মান টা হালুয়া করিস না।”

রাইমা ফিসফিসিয়ে কথাটা বললো। শাহনাজ বেগম বললেন,

“হয়েছে হয়েছে, অনেক আনন্দ মজা করলে! এবার যাও তো গাড়িতে উঠো। এমনি অনেকটা দেরি হয়ে গেলো তোমাদের।”

উনার কথায় সম্মতি দিয়ে সবাই এক এক করে গাড়িতে উঠে বসে৷ রাইমা যাওয়ার সময় মাহাদকে একবার খুজলো যে মাহাদকেও জোড় করে সাথে নিয়ে যাবে। যদিও বা এখন যাওয়ার নিয়ম নেই। কিন্তু হলুদের সময় দুই হলুদ পাখিকে একসাথে না দেখলে তো শান্তিও হবে না। রাইমা উশখুশ করে বসে বসে। নিজের ফোন টা হাতে নিয়ে মাহাদকে মেসেজ দিয়ে রেখে দেয়। ডালাগুলো সাবধানে কোলে বসিয়ে সীটে গা এলিয়ে দেয়৷ দুই গাড়িতে ভাগ হয়ে ১৫জন বসেছে। শার্লিন রাইমার কানে কানে ফিসফিস করে বলে,

“এই বইনে!”

“কি হইলো তোর?”

“ইফরাদ তো আসলো না।”

“ফোন দে।”

“বেডা ফোন ধরেনা।”

“তোগোর দুইটার কাহিনী দেখলে আমার উস্টা দিয়ে চান্দের দেশে পাঠাতে ইচ্ছে করে।”

“রাগিস কেন তুই?”

“ওফ হ এবার। গাড়িতে আমি উঠতে পারিনা। আমার মাথা ঘোরে।”

শার্লিন মুখটা গোমড়া করে বসে থাকে। গাড়ি ছুটছে তার গন্তব্যে।

৫৩,
স্নেহাদের বাসায় মানুষের ছোটাছুটিতে গমগম করছে চারদিক। দিগন্ত ব্যস্ত, অনেক বেশিই ব্যস্ত। দম ফেলার ফুসরত পাচ্ছে না। তার বাসায় একটু বেশিই মানুষ। চাচা, ফুফু পরিবার সহ এসেছে সকালে। তারাও দিগন্তের কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে কাজ করে এগিয়ে দিচ্ছে। দিগন্তের বাসায় বাচ্চাদের কলরবে মুখোরিত চারপাশ। দিগন্ত সব ভুললেও বাচ্চাদের কথাটা কখনও ভুলবে না৷ বোনের নতুন জীবনের সূচনাটা বাচ্চাদের মুখে হাসি ফুটিয়েই শুরু হোক৷ তার ছোট্ট স্কুল টার কিছু মেয়ে কলিগ যাদের সাথে স্নেহার মিল বেশি ছিলো, তাদেরকে হলুদের দিন থেকেই ইনভাইট করে এনেছে স্নেহা৷ আগামীকাল বিয়েতে সব কলিগ রাই আসবে। আয়োজন টা আগামীকালের জন্য হলেও আজকেই সব কিছু গুছিয়ে নিতে উঠেপরে লেগেছে দিগন্ত। বোনের বিয়েতে কোনো রকম ত্রুটি সে চায় না। বাসার সামনে ছোট্ট বাগান টায় হলুদের জন্য সব আয়োজন করা শেষ। ডেকোরেশন, খাওয়া দাওয়ার আয়োজন শেষে দিগন্ত তার চাচাকে ডেকে বললো,

“চাচা, সব আয়োজন তো মোটামুটি ঠিকঠাক হয়েছে তাইনা?”

“দায়িত্ব সহকারে সব করলে বাবা, কিছুর তো ত্রুটি দেখছিনা।”

উত্তর দিলেন দিগন্তের চাচা। দিগন্ত বললো,

“স্নেহা আপার কাছে কারা আছে? আপা রেডি হয়েছে, খোজ খবর নিয়েছিলেন কিছু? আমি তো বাসায় ঢোকার সুযোগই পেলাম না৷ ফুফু আপাকে তৈরি করেছে তো?”

“চিন্তা করো না। তোমার ফুফু, আর বোনেরা আছে। স্নেহার তৈরি হওয়া শেষ হয়ে এলো প্রায়। আমি বাসার ভেতর থেকেই আসলাম।”

“ঠিক আছে চাচা। আপনি একটু রান্নার দিকে খোজ নিয়ে দেখবেন? আমি একটু গোসল দিয়ে আসি।”

দিগন্ত কপালে হাতের বুড়ো আঙুল। আর তর্জনী আঙুল দিয়ে একটু চাপ দেয়। মাথা ব্যথা করছে হুট করে। শরীরটা ম্যাজম্যাজ করছে। সকালে ঘুম থেকে উঠে শুরু করেছে দৌড়ঝাপ। এবার একটু গোসল দিয়ে ফ্রেশ হওয়া জরুরী। দিগন্ত বাসায় ঢোকার জন্য পা বাড়ায়। তখনই বাসার গেইটে দুই গাড়ি এসে থামে। গাড়ি থামতেই সবার প্রথমে নামে রাইমা। রাইমার দিকে চোখ পরতেই দিগন্ত থমকে যায়। মেয়েটার দিকে আগে মুগ্ধতা নিয়ে তাকায়নি। তবে আজ বাধ্য হচ্ছে তাকাতে। আগে মেয়েটার প্রতি আগ্রহ হয়নি, শুধু ঝগড়াই করে গেছে মেয়েটার দোষে। কিন্তু বউ হবে বলেই কি মেয়েটার প্রতি তার এতো মুগ্ধতা ভর করেছে! বুঝতে পারলো না দিগন্ত। সে যেভাবে বলেছে সেই ভাবেই রাইমা সেজেছে। কাচা হলুদ শাড়ি কলাপাতা রঙের পাড়, বাঙালি ভাবে শাড়ি পরে তার কথা মতোই চুল ছেড়ে দিয়ে সিম্পল কিছু অর্নামেন্টস পরেছে। বা হাতে চুড়ি, ডান হাতে ঘড়ি। দুইহাতে হলুদের ডালা। এই সাধারণ সাজেই মেয়েটাকে অসাধারণ লাগছে তার কাছে। দিগন্ত এক পলকে তাকিয়ে দেখছে মেয়েটাকে। রাইমা মাথা নিচু করে শাড়ি সামলে পা ফেলে বাড়ির ভেতরে আগাচ্ছে। তার পিছে পিছে শার্লিন, সাইরা, সাইফা, রাহান, তিশা আর বাকি কাজিন রা এক সিরিয়ালে ঢুকছে। দিগন্ত ভালো করে খেয়াল করে দেখলো, রাইমার চুলের মাঝে গোলাপ ফুল মিসিং। এই একটা কমতি কি মানা যায়! না, সুযোগ পেলে কমতি টা পূরণ করে দিবে সে। রাইমা দিগন্তের সামনে এসেই দিগন্তকে দেখে মুচকি হাসে। মাথা নিচু করে দাড়িয়ে আলতো স্বরে জিগাসা করে,

“এসব রাখবো কোথায়?”

“এগুলো আনা খুব জরুরী ছিলো?”

“এটা নিয়ম, আনতে হয়৷”

“নিয়ম তো মানুষের তৈরি। সেগুলো মানা তো খুব জরুরী নয়।”

“এতো কথা পেচাচ্ছেন কেনো? কোথায় রাখবো বলে দিলেই তো ল্যাটা চুকে যায়।”

রাইমা মেজাজ খারাপ হয়ে যাচ্ছিলো দিগন্তের কথা প্যাচানো দেখে। এজন্য খানিকটা চেঁচিয়েই কথাটা বললো। দিগন্ত একটু হাসলো। বুকে হাত গুজে দাড়িয়ে বললো,

“এই তো অস’ভ্য মেয়ে তার অস’ভ্য ফর্মে ফিরেছে। আপনাকে এই নরম স্বভাবে একদম মানায় না। তাই ক্ষেপালাম। এতো বড়ো স্টেজ সাজানো, চোখে পরেনা? স্টেজেই রাখুন।”

রাইমা ঠোঁট ভেঙচিয়ে সেদিকে পা বাড়ায়। শার্লিন দিগন্তকে পাশ কাটানো সময় ঠোট টিপে হেসে বললো,

“আগু”নে ঘি ঢেলে কি শান্তি পেলেন দুলাভাই? পরে না নিভাতে সমুদ্র সম জল লাগে!”

“আপনি শালী আছেন কি করতে? দুলাভাইকে গার্ড করবেন না?”

“শালীকে কেউ আপনি বলেনা দুলাভাই।”

“ওকে, এতো কথা বলে আবার তোমার বান্ধবীর তাপ বাড়িও না যাও। আমাদের একসাথে কথা বলতে দেখলে আবার ক্ষেপে দুজনকে না দৌড়ানি দেয়।”

শার্লিন হেসে ফেলে দিগন্তের কথায়। বড়ো কদমে চলে যায় স্টেজের দিকে।

৫৪,
স্নেহাকে এনে স্টেজে বসিয়ে দেওয়া হয়েছে। মেয়েটাকে পুরো হলুদ পাখিই লাগছে, যেমনটা রাইমা ভেবেছিলো। হলুদের শাড়ি, তাজা ফুলের গহনা, হালকা সাজ। মাহাদ ভাই দেখলে নিশ্চিত আবারও স্নেহা ভাবীর প্রতি মুগ্ধতায় ঘা’য়েল হতো। নিজের চিন্তা ভাবনায় নিজেই মুচকি হাসে রাইমা। স্টেজের সামনে চেয়ার পেতে বসার ব্যবস্থা করা হয়েছে। একদম প্রথম শারির চেয়ারে বসেই স্নেহাকে দেখতে দেখতে এসবই ভাবছে সে। এদিকে শার্লিন ইফরাদকে কল করতে করতে তার ইফরাদের প্রতি রাগ তরতর করে বাড়ছে। ইফরাদ না কল রিসিভ করছে না তার মেসেজের উত্তর দিচ্ছে। লোকটাকে সামনে পেলে মাথার চুল টেনে ছিড়বে। আস্তো হারামি একটা লোক। তার টেনশন হয় একটুও বুঝেনা। তাকে টেনশনে রেখে কি শান্তি পাচ্ছে। শার্লিনের অস্থিরতা দেখে রাইমা শার্লিনের বা হাত আকড়ে ধরে৷ শার্লিন করুণ চাহনীতে তাকায় রাইমার দিকে। রাইমা তাকে আশস্ত করতে বলে,

“শান্ত হ, ইফরাদ ভাই বেখেয়ালি মানুষ নন। হয়তো কোনো কাজে আটকে গেছেন। তুই এতো চিন্তা করিস না।”

“আমার চিন্তা হচ্ছে রাই।”

“কিছু হয়নি টেনশন করার মতো। শান্ত হয়ে বসে থাক।”

শার্লিন চুপচাপ বসে রয়। তার কিছু ভালো লাগছেনা৷ মেসবাহর আসার কথা, সেও আসেনি। দুজনে মিলে উধাও হয়ে গেছে একদম। একবার হাতের কাছে পেয়ে নিক। দুটোকেই মজা দেখাবে শার্লিন৷ রাইমা সাইরার দিকে তাকিয়ে বলে,

“তোরা আগে হলুদ ছুইয়ে আসবি। আমি আর শার্লিন সবার শেষে যাবো।”

“তোমরা বড়ো, তোমরা না গিয়ে আমরা আগে যাবো?”

বললো সাইরা। রাইমা উত্তরে বললো,

“বড়ো ছোটো ফ্যাক্ট না। আমাদের চেনা দুজন মানুষ আসবে। তাদের জন্য অপেক্ষা করছি।”

সাইরা আর বড়ো বোনের উপর কথা বাড়ায় না৷ রাইমার দুই মামা সবার তার মা আর খালামনির বড়ো। বোনদের বিয়ে দিয়েই উনারা বিয়ে করায় মামাতো ভাইবোন গুলো তার আর মাহাদের ছোটো। রাইমার কথা ফুরোতেই দিগন্ত এসে রাইমার পাশে দাড়ায়। রাইমা একবার দিগন্তের দিকে তাকায়। মানুষ টা সবে গোসল করে বোধ হয় এখানে এসে দাড়ালো। কাচা হলুদ রঙের পাঞ্জাবি, সাদা রঙের পাজামা, হাতে ঘড়ি, ভেজা ছোটো ছোটো চুলগুলো কপালের উপর পরে আছে। পরিচয় হওয়ার পর এই প্রথম বোধ হয় রাইমা অনুভূতি নিয়ে দিগন্তের দিকে মুগ্ধ নয়নে তাকালো। গোসল সেরে এই পোশাকে দিগন্তকে একদম ছোটো বাচ্চাদের মতো কিউট লাগছে রাইমার কাছে। কে বলবে, এই লোক তার সাথে ঝগরুটে লোকের মতো ঝগড়াই করে যায়! দিগন্ত রাইমাকে তার দিকে এক দৃষ্টিকে তাকিয়ে থাকতে দেখে ফিসফিস করে রাইমা শুনতে পাবে এমন ভাবে বলে,

“আমার মতো ইনোসেন্ট একটা ছেলের দিকে এভাবে তাকিয়ে থেকে নজর দিচ্ছেন?”

রাইমা থতমত খেয়ে যায়। দিগন্ত তো সামনের দিকে তাকিয়ে আছে। তাহলে টের পেলো কি করে সে দিগন্তের দিকে তাকিয়ে আছে! তবুও নিজেকে সামলে দিগন্তের কথার জবাবে বলে,

“আমার হবু বরকে আমি দেখছি, আপনার সমস্যা কি? আমি আসার পর আমায় যে তাকিয়ে তাকিয়ে দেখছিলেন, আমি কিছু বলেছিলাম?”

দিগন্ত নিজের কথার প্যাঁচে নিজেই পরে মৃদু হাসে। মেয়েটার সাথে কথায় পারা যায় না। সে আগের মতো করেই বললো,

“একটু আমার সাথে আসবেন? একটু দরকার ছিলো।”

“কি দরকার?”

“আসলেই টের পাবেন। প্লিজ আসুন।”

রাইমা দিগন্তের অনুরোধ ফেলে না। দিগন্ত পা বাড়িয়েছে যাওয়ার জন্য। সেও উঠে দিগন্তের পিছুপিছু গেলো। শার্লিন দেখেও না দেখার মতো দুজনকে স্পেস দিতে নিজের জায়গাতেই বসে রইলো। স্নেহাকে হলুদ ছোয়ানো শুরু হয়েছে। সবাই এক এক করে গিয়ে হলুদ ছুইয়ে দিচ্ছে। শার্লিন অন্য মনস্ক হয়ে বসেছিলো। তখনই তার চুলে টান পরে। খোপা করা চুলে তাজা গোলাপ ফুল দিয়ে পেচিয়ে রাখা। সেই চুলে টান কে দিলো! শার্লিন রেগে সেদিকে দৃষ্টি দিতেই ইফরাদকে দেখতে পায়। হাসিমুখে দাড়িয়ে আছে। দিগন্তের মতো সেও একই রকম পাজাম পাঞ্জাবি পরেছে। শার্লিনের মুখের কথা, রাগ হাওয়া হয়ে যায় ইফরাদকে দেখে। অশ্রুসিক্ত চোখে ইফরাদকে জিগাসা করে,

“কোথায় ছিলেন? কখন থেকে ফোন দিচ্ছি! রিসিভ করেননি কেনো? চিন্তায় পাগল হওয়ার অবস্থা আমার।”

“আমার পাগলি, আবার নতুন করে কি পাগ’ল হবে? মায়াবতী, তোমায় কি মিষ্টি লাগছে। কেঁদে নিজের সাজ টা নষ্ট করো না।”

ইফরাদ শার্লিনের মন ভালো করতে কথাগুলো বললো। শার্লিন এক হাতে চোখের কোণায় জমা অশ্রু মুছে বললো,

“কোথায় ছিলেন?”

“ঐদিকে তাকাও, বুঝতে পারবে আমার দেরি হওয়ার কারণ।”

৫৫,
শার্লিন ইফরাদের দৃষ্টি অনুসরণ করে গেটের দিকে তাকায়। মাহাদ আর মেসবাহ বাইকে করে বাসায় ঢুকছে। মাহাদকে দেখে শার্লিন খুশিতে উঠে দাড়িয়ে সিটি বাজায়। ইফরাদ হতবাক, এই মেয়ে এতো দূরন্ত কেনো! এভাবে বেশরমের মতো এতো মানুষের মাঝে সিটি কে বাজায়? শার্লিন খুশিতে লাফালাফি শুরু করে দিয়েছে। লাফাতে লাফাতে বলছে,

“এবার গায়ে হলুদ জমবে। ও ভাবীইই দেখো, ভাইয়া এসেছে।”

শার্লিনের লাফালাফিতে সবাই দৃষ্টি ঘোরায় গেইটের দিকে। ইফরাদ শার্লিনের হাত ধরে থামানোর জন্য বলে,

“আরে বইন আমার থাম, লজ্জা শরম রাখ। এখানে অনেক মানুষ।”

“আমি আপনার বোন হলাম কবে?”

শার্লিন থেমে ইফরাদের দিকে তাকিয়ে প্রশ্ন করে। ইফরাদ কপাল চাপড়ে বলে,

“থামো, ক্ষমা চাই। এখন ঝগড়া করো না।”

“তারমানে আমি ঝগরুটে?এটা বুঝাচ্ছেন?”

“ক্ষমা চাইছি তো, চুপ করো একটু।”

শার্লিন মুখ গোমড়া করে চেয়ারে বসে পরে। ইফরাদ হাফ ছেড়ে পাশে ফাকা চেয়ার পেয়ে বসে পরে, যেখানে রাইমা বসেছিলো।

মাহাদ পাঞ্জাবির হাতা গোটাতে গোটাতে স্টেজের দিকে আগাচ্ছে। স্নেহা মাহাদের দিকে তাকায় এক পলক। লোকটার দৃষ্টিতে দৃষ্টি মিলতেই মাহাদ হাত উচিয়ে বোঝায় তাকে দারুণ লাগছে। স্নেহা লজ্জায় চোখ নামিয়ে নেয়। দিনদিন মাহাদের প্রেমে পরে যাচ্ছে নতুন ভাবে। কি সুন্দর স্নিগ্ধ লাগছে তাকে। স্নেহা মুচকি হাসে। স্নেহার ফুফু, চাচী রা সব খাবার দাবার রেডি করছিলো। রান্নার জন্য আজকে বাবুর্চি ডাকা হয়েছে। সব আইটেম ঠিকঠাক কিনা দেখে নিচ্ছিলেন ওনারা। বাইরে হইচই শুনে ওনারা বাইরে আসেন। নতুন জামাইকে দেখে এগিয়ে আসেন। মাহাদ ততোক্ষণে নিজের স্নেহার পাশে এসে বসেছে। স্নেহার ফুফাতো বোন সরে গিয়ে বসার ব্যবস্থা করে দিয়েছে। মাহাদ পাশে বসে স্নেহার কানের কাছে ফিসফিস করে বলে,

“ইশশ, রোজ রোজ নতুন ভাবে তোমার প্রেমে পরে যাচ্ছি। হলুদরঙা লজ্জাবতীকে কতোটা যে সুন্দর লাগছে বলে বোঝানো যাবে না।”

স্নেহা মাহাদের কথায় আরও লজ্জায় মিইয়ে যায়। আলতো স্বরে বলে,

“এসেছো কি লজ্জা দিতে?”

চলবে?

ভুলত্রুটি মার্জনীয়, রিচেইক করিনি৷ সবাইকে মাহাদ আর স্নেহার বিয়ের দাওয়াত রইলো। হলুদেও সবাই ওদের সাথে জয়েন করে আনন্দ করুন। 🤭 ইনশা আল্লাহ সম্ভব হলে রাতে আরও একটা পর্ব দেবো। আসসালামু আলাইকুম।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here