#চন্দ্রাবতীর_রাতে #সৌরভে_সুবাসিনী(moon) #পর্বঃ১৬

0
265

#চন্দ্রাবতীর_রাতে
#সৌরভে_সুবাসিনী(moon)
#পর্বঃ১৬

আয়েত্রী বসে আছে সরাসরি শাওনের সাদা কালো প্রতিচ্ছবির সামনে। অদ্ভুত চাহনি আয়েত্রীর । এদিকে শাওন যেনো চিনতেই পারছে না। হাবভাব এমন যে আয়েত্রীকে সে বহুকাল পর দেখছে।
শাওনের পরিবর্তন বলতে পেটে মেদ জমেছে। চোখের আশেপাশে মনে হচ্ছে মাংস বেড়েছে।মোট কথা বয়সের ছাপ পড়েছে।

“তারপর বল কাক্কা কি খবর? এলি তো তিন দিন। আজ সময় হলো?”

উক্ত ব্যক্তির কথায় সামিউল হেসে উত্তর দেয়,

“এসেই ব্যস্ত। প্রতীকে দেখতে এলো পছন্দ করলো আত্রী-প্রতী দুজন কেই। আজ আবার আত্রীর আকদ হচ্ছে। তাই তোকে দাওয়াত করতে এলাম। সাথে তুই যা আনতে বলেছিলি নিয়ে এলাম। এই আরকি। ”

উক্ত ব্যক্তি বিষ্ময়ের সুরে বললেন,

“এটা সেই পিচ্চি আত্রী? আজ আকদ? আগে বললি না কেন কাক্কা? ”

“আরে বলার সময় পাইনি তো। অনেক আয়োজন বাকী তাই তাড়াতাড়ি চলে আসিস। জুম্মার নামাজের পর আয়োজন শুরু হবে। ”

“এই পিচ্চি আত্রীর আজ আকদ। চিন্তা করা যায়? সেদিন তোমার সাইকেলের সামনে বসে ঘুরে বেড়াতো, কালো বললে ক্ষেপে যেতো। আজও কি ক্ষেপে যাও না কি? কালো বললে? ”

কথাগুলো আয়েত্রীর কান অবধি পৌঁছাতে পারছে না।

তলানীতে খানিকটা পানি অবশিষ্ট থাকলে কেউ যদি পানির আশায় সে ছোট্ট কুয়োয় দড়ি দিয়ে বালতি ফেলে,
যেমন ঝপাৎ করে শব্দ হয়, আয়েত্রী মস্তিষ্কে কোথাও একটা ওমন শব্দ হচ্ছিলো৷ হাত পায়ে শিথিলতা নেমে আসছে।চোখে নেমে আসছে রাজ্যের ক্লান্তি। আয়েত্রীর মনে হচ্ছে খুব দ্রুত তলিয়ে যাবে সে সেই খানিকটা পানিপূর্ণ কুয়োয়।

বিষ্ময়, অবিশ্বাস নিয়ে আয়েত্রীর প্রাণপণে চেষ্টা করছে কি কথা হচ্ছে শোনার।

সামিউলের কন্ঠ ভেসে আসছে বাতাসের সাথে। সামিউল কারো খবর জিজ্ঞেস করছে।

“তার আর খবর পেয়েছিস?”

দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে উক্ত ব্যক্তি বললেন,

“নাহ্!সে আর আসেনি। আচ্ছা যে যায় তাকে কি ফিরিয়ে আনা যায়? হয়তো আছে কোথাও একটা নিজে সংসার করছে দিব্যি। তার আর কি? কবেই বা ছিলো পরিবারের প্রতি দায়িত্ব? ”

“আমার মনে হয় তার কোন বিপদ হয়েছিলো রে। না হলে এভাবে পালানোর মানুষ সে না।একবার না এক বার তো আসবে? ”

“পনেরো বছর হয়েছে সামি। পনেরো বছরে পনেরো হাজার বার আমার বাবা থানায় গিয়েছে, মর্গে খুঁজেছে। পথে ঘাটে কোথায় খুঁজেনি? মানুষটা তাকেই খুঁজতে গিয়ে মরে গেলো। দাদীটা পাগল হলো। মা সেরাতে চুপ হয়েছে কথা বলে না।রোবট হয়ে গেছে আমার মা। সবার সব কথাতো শোনে, সব কাজ তো করে কিন্তু অনুভূতি নেই। আমরা কিভাবে বেঁচে আছি শুধু আমরা জানি। লাশ পেলেও না হয় সবার একটা বুঝ আসতো মনে। কি দিয়ে এই দুই বয়স্ক মানুষকে আমি বুঝ দিবো? যদি সত্যি সে বেঁচে থাকে তাহলে আমার কাছে কোনদিন মাফ পাবে না।”

“আজ আয়েত্রীর আকদ। মন খারাপ করিস না। তবে আজ উনি হয়তো আসবেন। সম্পর্কে আয়েত্রীর ফুপু। জানিস তো। ভদ্রমহিলা আবার উপনীতার বড় বোন।তার ঠিকানা কেউ জানে না।হয়তো তার থেকে পেতে পারিস কিছুটা খবর।”

আয়েত্রীর কানে আর কোন শব্দ পৌঁছাতে পারলো না। মামার গায়ে ঢলে পড়লো সে।

বেশ অনুভব করছে কেউ একজন আয়েত্রীর ডান হাতের আংগুলের কড় গুনে গুনে কিছু একটা পাঠ করছে।
চোখ না মেলেই উক্ত হাতের ব্যক্তির দিকে এগিয়ে যায় আয়েত্রী। অনেকটা গা-ঘেঁষে শুয়ে আছে সে।
সে জানে এ কাজ কার! এই কাজ আয়াতের। প্রতি জুম্মায় আয়াত নামাজ পড়ে এসে আয়েত্রীর হাতের আংগুলের কড় গুনে দরুদপাঠ করে ১০০ বার। এটায় নাকি আয়াতকে আলাদা প্রশান্তি এনে দেয়।
কিন্তু আজ হঠাৎ হাত বদল হলো। আয়েত্রী অন্য কারো স্পর্শে ধড়ফড়িয়ে উঠে বসে।
চোখ মেলে দেখে আয়েত্রীর হাত ইশরাকের হাতে। ইশরাক সানন্দে গ্রহন করেছে আয়েত্রীর হাত।

“আত্রী বয়সে আমার থেকে বছর দুয়ের বড়। তবে খুব অল্প বয়সে বুঝতে পেরেছিলাম এ মেয়ে নিজেকে কখনো সামলাতে পারবে না।প্রথম প্রথম যখন রক্তবমি হতো তখন ভয় পেতাম তারপর যখন ওর দুচোখে তাকিয়ে দেখতাম তখন মনে হয়েছিলো এ মেয়ে আর যাই হোক আমার বেঁচে থাকার টনিক। যেকোন বিনিময়ে ওকে বাঁচিয়ে রাখবো। তারপর ধীরে ধীরে আমিই হয়ে উঠেছি ওর বড় ভাই। মান্থলি ডেট থেকে শুরু করে আন্ডারগার্মেন্ট’স বিষয়ক সব কথা আমাকে ফ্রি ভাবে বলতে পারে। কারণ কি জানি না। হতে পারে আমিই ওর বন্ধু, ভাই সব। আজ থেকে এসবের দায়িত্ব আপনাকে দিলাম।আমি আপনার থেকে অনেক ছোট হলেও আমার জীবনের সর্বসেরা উপহার আজ আপনাকে দিচ্ছি। কখনো অনাদর করিয়েন না। যদি মনে হয় আমার বোন আপনার কাছে বেশি! তাহলে একবার আমাকে জানাবেন। আমি আমার আমানত ফিরিয়ে নিয়ে আসবো।”

কথাগুলো বলার সময় আয়াত বেশ আবেগাপ্লুত হয়ে উঠে। ইশরাক মুচকি হেসে আয়াতের হাতের উপর হাত রেখে আয়াত কে আশ্বস্ত করে সে আয়েত্রীর পুরো খেয়াল রাখবে।

দুপুরের দিকে বাড়ি সত্যি বিয়ে বাড়ি হয়ে উঠেছে। আনন্দের আমেজ বইছে চারিদিকে।
চার বোন মিলে আয়েত্রীকে হলুদ লাগিয়ে গোসল করাতে নিয়ে যাচ্ছিলো। ইশরাক এবারো বাধা দেয়। সবাই বেশ মন খারাপ করলো।
শালীরা চেপে ধরে বলল,শুধু আয়েত্রী নয় তাকেও হলুদ লাগাবে।
নিজেকে নিয়ে ইশরাকের সমস্যা নেই কিন্তু আয়েত্রীর শরীরে এক চিমটি হলুদ যেনো না লাগে সে কথা সাফ সাফ জানিয়ে দিলো।
আয়াত এসে আয়েত্রীকে রুমে নিয়ে যায়।
নিজ হাতে বোনের দুহাত ভর্তি মেহেদী লাগিয়ে দেয়। এদিকে বাহিরে বাকী চার বোন মিলে ইশরাক,ইস্তিয়াক,ইলিয়াস, ইমতিয়াজ কে হলুদ দিয়ে ভূত বানিয়ে দিয়েছে।

গোসল শেষে ওরা যখন রুমে আসলো তখন ইস্তিয়াক ইলিয়াসের উদ্দেশ্যে বলল,

“কি আপডেট? ”

“ভদ্রলোক বছর দুই আগেই মারা গেছেন।তবে উনার ছেলেও তো বেশ ধার্মিক দেখলাম। উনি আসবেন।”

ইলিয়াসের উত্তরে খুব একটা সন্তুষ্ট হতে পারলো না ইশরাক।
কেনোনা খুব আশায় ছিলো যে ওর দাদার সমস্যার সময় এগিয়ে এসেছিলো ভদ্রলোক আয়েত্রীর ব্যপারে সহায়তা করবে কিন্তু উনি মারা গেছেন দুই বছর আগে।

বিকেল গড়িয়ে সন্ধ্যে নেমে এলো। আয়াতের ইচ্ছেমতো সাদা বেনারসি, মেহেদী, আলতায় সেজেছে আয়েত্রী।
বেলী ফুল নিজ হাতে পড়িয়ে দিলো প্রতী।
বাইরে ঝিরিঝিরি বাতাস বইছে। আরে! লোডশেডিং হওয়ার বুঝি আর সময় পেলো না। প্রতি বাহিরে উঁকি দিয়ে দেখলো বাহিরে পুরো বাড়িতে আলো জ্বলছে। প্রতী কিছুটা ভয় পাচ্ছিলো। ঠিক তখন ঘরে আলো ফিরে এলো।
সব স্বাভাবিক হলেও সবার দৃষ্টির আড়ালে আয়েত্রীর খোপার বেলীফুলের মালা ধীরে ধীরে নীল বর্ণ ধারণ করছিলো সেদিকে কারো নজর পড়লো না।

ওদিকে যে চন্দ্রক্ষয় শুরু হয়েছে।বার বার একরাশ মেঘ এসে ঢেকে দিচ্ছে মেঘকে।

চলবে
#ছবিয়ালঃজান্নাত

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here