#চন্দ্রাবতীর_রাতে #সৌরভে_সুবাসিনী(moon) #পর্বঃ১৫

0
182

#চন্দ্রাবতীর_রাতে
#সৌরভে_সুবাসিনী(moon)
#পর্বঃ১৫

সসপ্যানের তলানী থেকে বুদ বুদ আকারে পানি ধীরেধীরে উপরে উঠে আসছে৷ একটু পর বড় বড় বুদবুদ সৃষ্টি হবে। জানান দিবে পানিতে চা দেওয়ার সময় হয়ে এসেছে।
আমাদের চারপাশের সম্পর্কগুলো কতই না অদ্ভুত। কখনো গরম চায়ের মতন, যা উষ্ণ না হলে পান করার মানে নেই আবার কখনো ঠান্ডা কোমল পানীয়জলের মতন গরম বা স্বাভাবিক তাপমাত্রায় পান করে তৃপ্তি পাওয়া যায় না।
অথচ পানি! সে তো তৃষ্ণা নিবারক। বিশুদ্ধ পানি যেমন তাপমাত্রায় থাকুক না কেনো! প্রয়োজন ঠিক মিটিয়ে নেয়।

চারপাশে তাকালে এমন সম্পর্ক ইদানীং বড্ড বেশিই চোখে লাগছে মালিয়াতের।
ইশরাকের প্রতি না চাইতেও দুর্বলতা কাজ করছে। তাইতো যতটা পারছে নিজেকে গুটিয়ে রাখছে।
নিজের জন্য বোনের চুল পরিমাণ ক্ষতি হবে এমনটা সে চিন্তাও করতে পারছে না। তবুও মন বড্ড বেহায়া। যাকে চিন্তা করা তার জন্য নিষিদ্ধ! মন বারবার শুধু তাকেই ভেবে চলে।

আয়েত্রী পাশেই দাঁড়ানো ছিলো। মালিয়াতকে অন্যমনস্ক দেখে ওর কাঁধে হাত রাখে আয়েত্রী।
পাশ ফিরে আয়েত্রীকে দেখে মুচকি হাসে মালিয়াত।
গরম পানি দুটো মগে ঢেলে ঢাকনি দিয়ে ঢেকে ট্রের উপর রাখলো সে।
তারপর আয়েত্রীর হাতে তুলে দিয়ে বলল,

“আজ উনারা তোমাদের সাথে নাস্তা করবে আপু। তুমি আর প্রতী আপু উত্তরের বারান্দায় চলে যাও। উনারা অপেক্ষা করছে। ”

চারটে বেতের চেয়ার বৃত্তাকারে পেতে রাখা আছে উত্তরের বারান্দায়। মাঝে একটি টেবিল। টেবিলে রাখা শীত কালীন সব ফল,জুস, পরোটা, ভাজি সহ নানা পদের খাবার।
আয়েত্রীকে দেখতেই ইশরাক হাত বাড়িয়ে ট্রে নিয়ে নেয়।মনে হচ্ছে দু ভাইয়ের বেশ গুরুত্বপূর্ণ আলোচনা চলছিলো।

“আচ্ছা! ওই দুটো ভাইয়া কোথায়? উনারা নাস্তা করবে না?”

আয়েত্রীর প্রশ্নে ইস্তিয়াক জবাব দেয়,

“ওরা একটু কাজে বেরিয়েছে গো আপু। ”

ততক্ষণে প্রতী গরম পানিতে টি ব্যাগ চুবিয়ে দুই ভাইয়ের হাতে তুলে দিয়েছে।আয়েত্রী টুকটাক ফল মুখে দিচ্ছিলো৷ খুব ইচ্ছে হচ্ছে ঝাল ঝাল জলপাইয়ের আচারের সাথে সবজি খিচুড়ি খেতে।
কিন্তু মা ধমকে এখানে পাঠিয়েছেন ছাগলের মতন ঘাস পাতা গিলতে। ইশরাক চায়ে এক চুমুক দিয়ে এগিয়ে দিলে আয়েত্রী চমকে উঠেছে।
কিছুটা কপাল কুঁচকে ইশরাকের দিকে তাকাতেই ইশরাক ইশারা করে চা ভর্তি মগ নিতে। প্রতি উত্তরে আয়েত্রী কড়া গলায় নিচুস্বরে বলল,

“আমি ওসব গ্রীণ টি গিলি না। আর বড় ভাই এখানে বসে আছে সেদিকে খেয়াল আছে?”

কথার রেশ প্রতিফলিত হতেই হাসির আমজে ছড়িয়ে পড়েছে চার পাশে৷
উচ্চস্বরে হাসছে দুভাই।
এদিকে আয়েত্রী, প্রতী দুজনেই বিরক্তি নিয়ে তাকিয়ে আছে। নেহাৎ এদের সাথে বিয়ে পাকাপাকি হয়েছে! না হলে আয়াতকে ঢেকে এক ঘুষি মেরে সামনের দুদাঁত ফেলে দিতো।
হাসির দমক থামিয়ে ইস্তিয়াক বলল,

“মিস শালিকা নাম্বার ওয়ান! আমরা দুই ভাই টুইন। নন আইডেন্টিক্যাল টুইনস। আমি মিনিট পাঁচেক আগে মায়ের পেট হতে বেরিয়েছি তাই আমি বড়। এছাড়া আমরা ভাই কম বন্ধু বেশি তাই তোমার লজ্জা পাওয়ার কিছুই নেই।”

আয়েত্রী,প্রতী বেশ অবাক হয়েছে তবুও চোখেমুখে প্রকাশ করলো না। এক টুকরো আপেলের সাথে বিষ্ময়তা গিলে ফেললো।এদিকে ইশরাক আয়েত্রীর পাশাপাশি বসে এটা ওটা মুখে দিয়েই চলেছে।
চকলেট এগিয়ে দিলেই আয়েত্রী বলল,
“সকাল সকাল চকলেট?ওজন বেড়ে যাবে। ”
“কে বলেছে ওজন বেড়ে যাবে? সকালে চকলেট খেলে ওজন বাড়ে না। স্কিন গ্লো করে। চুপচাপ একটু খানি খেয়ে নাও তো। ”

ইশরাকের কথায় ফোড়ন কেটে কেউ একজন বলল,

“আয়েত্রীর পছন্দ ঝাল ঝাল আচার। এসব ও পছন্দ করে না। তুমি আয়েত্রীকে বরং এটা খেতে দাও। ”

কথা বলতে বলতে এক বাটি আচার ইশরাকের দিকে এগিয়ে দিলো আয়েত্রীর হবু ছোট মামি উপনীতা।
ইশরাক কিছুটা ইতস্ততভাবে বলল,

“আসলে মামীজান আয়েত্রীর শরীর ভালো না আপনি তো জানেন মনে হয়। ডক্টরের নিষেধাজ্ঞা আছে মসলাদার খাবার না খাওয়ার। ”

“কিন্তু এটা আয়েত্রীর উপমা ফুপি পাঠিয়েছে যে! আয়েত্রীর ভীষণ পছন্দ। বড় মানুষের বানানো খাবারে দোয়া ভালোবাসা দুটোই থাকে।খেতে দিন সমস্যা নেই।”

একে তো ভদ্রমহিলা ইশরাক,ইস্তিয়াকের থেকে বয়সে ছোট বলেই মনে হচ্ছে এদিকে সম্পর্কে বেশ উপরে। ইশরাক কি বলবে বুঝতে পারছিলো না। ঠিক তখন আয়েত্রী বলল,

“মামাই! আমার ঝাল খেলে গলা, বুক জ্বলে যায়। তাছাড়া ইদানীং যখন তখন বমি হচ্ছে। আমি পরে খেয়ে নিবো। তুমি প্লিজ কিছু মনে করবে না। ”

“আচ্ছা যা ভালো মনে করিস। তবে এই নে তোর জন্য তোর ফুপি এটাও পাঠিয়েছে৷ নিজ হাতে ফুল তুলেছে চাঁদরে।একটু পরে দেখ তো।”

উপনীতা কথা বলতে বলতেই কালো একখানা চাঁদর এগিয়ে দিলো আয়েত্রীর দিকে। ইস্তিয়াক বাধা দিয়ে নিজ হাতে নিয়ে বলল,

“আরে করছেন কি! আয়েত্রীর স্কিন সেন্সিটিভ। কালো কাপড় না ধুয়ে গায়ে লাগাতে নেই। আর তাছাড়া ও বোধ হয় হালকা রঙের কাপড়েই বেশি কম্ফোর্ট ফিল করছে। আপনি দাঁড়িয়ে কেনো! বসুন না!”

“জ্বী না। আপনারা নাস্তা করুন। কিছুক্ষণের মধ্যে তো আকদের প্রিপারেশন শুরু হয়ে যাবে। মেয়ে দুটোকে মেহেদী, হলুদ লাগাতে হবে।হয়তো সময় পাবো না তাই এখন দিয়ে গেলাম। ”

মুচকি হেসে প্রতী বলল,
“মামাই, দুই মেয়ের না। আজ শুধু আয়েত্রীর আকদ হচ্ছে। আমার আকদ দুই দিন পর হবে। ”

দুই ভাই আয়েত্রীর নানার সাথে কথা বলে সিদ্ধান্ত নিয়েছেন আজ শুধু আয়েত্রী-ইশরাকের আকদ হবে।
আরো কিছু হচ্ছে কিন্তু সেসব সীমাবদ্ধ থাকছে তাদের মাঝেই।

প্রতীর আকদ পেছানোর কারণ জিজ্ঞেস করতেই ইস্তিয়াক মজার ছলে বলল,

“নিজের বাসর খাট কি নিজে সাজানো যায়? দুই ভাই এক সাথে বিয়ে করলে মশারীওয়ালা বাসর খাট সাজাবে কে? তারচে বরং আজ তোমাদের দুদিন পর আমাদের।”

বিনিময়ে আয়েত্রী কিছুই বলতে পারেনি। শুধু তাকিয়ে ছিলো। এদিকে ইশরাক-ইস্তিয়াক কোথাও বেরিয়েছে।দুপুর নাগাদ বাকী লোকজন এসে যাবে। খুব একটা আনন্দের পরিবেশ নেই কারণ কারো অজানা নয়। আজ চন্দ্র ক্ষয় শুরু হবে। আয়েত্রীর উপর ঝড় আসতে চলেছে।
বাড়িতে সবাইকে বলা হয়েছে সবাই যেনো যতটা সম্ভব দরুদপাঠ করে।

সামিউল সাহেব বাইক নিয়ে বের হচ্ছিলেন। আয়েত্রী পথ আটকে দাঁড়িয়ে বলল,সে যাবে। অগ্যতা বোনঝি কে নিয়েই চললেন সাথে। গন্তব্য খুব একটা দূরে নয়। পাশেই বন্ধু মানুষের বাড়ি। বিদেশ থেকে আনা কিছু জিনিসপত্র দিতে যাচ্ছেন।
পুরো রাস্তা আয়েত্রী শাওন নামক মানুষের কথা চিন্তা করতে করতে যাচ্ছে।
আদৌও কি শাওন বলতে কারো অস্তিত্ব এই পৃথিবীতে আছে? না কি শুধুই কল্পনায় জমানো ইচ্ছেগুলোর নাম শাওন।
সত্যি কি কখনো নদীর পাড়ে যাওয়া হয়েছে তার? না কি সব ছিলো শুধুই কল্পনার বা স্বপ্ন।
শাওনের চেহারা মনে করতে পারে না আয়েত্রী। মাথায় যন্ত্রণা হয়। শুধু মনে হয় আধোঘুমে আধো জাগরণের নাম শাওন।
আকাশ-কুসুম ভাবতে ভাবতে পৌঁছে যায় তাদের গন্তব্যের দিকে।
সেবাড়ির বসার ঘরের দিকে এগিয়ে যেতেই চোখে পড়লো রুপোলী ফ্রেমে বাধানো সাদাকালো একটা ছবি। যে ফ্রেমে বন্দী রয়েছে হাস্যজ্বল শাওনের প্রতিচ্ছবি।
তবে কি সত্যি আয়েত্রীর কল্পনা নয়? বাস্তব? এটাই কি তার বাড়ি?
মামার স্পর্শে পাশ ফিরে তাকিয়ে আরেকদফা অবাক হলো আয়েত্রী।
মামার পাশেই দাঁড়ানো রয়েছে একজন মধ্যবয়সী লোক। বয়স হবে মামার বয়সের। অদ্ভুত ভাবে উক্ত ব্যক্তির সাথে শাওনের চেহারার ভীষণ মিল। শুধু যেনো চোখের পলকে বয়স বেড়ে গিয়েছে দশ বছর।

চলবে
#ছবিয়ালঃতাহমিনা

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here