#চন্দ্রাবতীর_রাতে #সৌরভে_সুবাসিনী(moon) #পর্বঃ১৭

0
188

#চন্দ্রাবতীর_রাতে
#সৌরভে_সুবাসিনী(moon)
#পর্বঃ১৭

আপনি যেদিন জন্ম নিলেন সেদিন ছিলো ভরা পূর্ণিমা। চাঁদের আলোয় বন্যা বয়েছিলো চারপাশে। ঘড়িতে যখন টিক টিক করে একটা বাজলো!
ঠিক তখন শোনা গেলো আপনার চিৎকার।তখন আমার বয়স ১৭ বছর। সেরাতে সন্ধ্যে থেকেই আমরা কয়েকজন ছিলাম আপনার নানার বাড়িতে। গ্রামে তখনো এতটা উন্নতি আসেনি।
আপনার জন্মের পর আপনার নানা আজান দিলো। সামিউল তখন সাদা তোয়ালে প্যাঁচানো ফুটফুটে একটা কন্যা শিশুকে কোলে নিয়ে বাইরের ঘরে এলো!
আপনাকে দেখে শুধু বলেছিলাম
“মা শাহ্ আল্লাহ্ ”
সামিউল নাম রাখলো আয়েত্রী তবে আমার মনে হয়েছিলো আপনার নাম হওয়া উচিৎ চন্দ্রাবতী।
সময়ের তালে বড় হলেন, পিচ্চি আয়েত্রীকে নিয়ে যখন সামিউল বাহিরে আসতো, তখন হাত বাড়ালেই কোলে ঝাপিয়ে পড়তেন৷ আলাদা একটা সৌরভ পেতাম আপনার গা থেকে। নিতান্তই বাচ্চা একটা মেয়ে। আরো
কিছুটা বড় হলেন, একদিন ঝুটি খুলে দিয়েছিলাম বলে আমার ডান হাতে বেশ শক্ত করে কামর বসিয়েছিলেন। রক্ত বেরিয়েছিলো। তবুও রাগ আসেনি আপনার উপর।কেনো যেনো প্রচন্ড সমীহ করতে ইচ্ছে হতো। এখনো হয়।
আয়েত্রী! আমি আপনার জন্মের সময় একজন যুবক ছিলাম। আমার কাছে আপনি নিতান্তই সমীহ স্নেহের পাত্রী।
আমাদের মধ্যে ভালোবাসা সম্পর্ক আদৌও সম্ভব নয়।
এখনো সম্ভব নয় কারণ আপনি জানবেন। খুব দ্রুত। তবে আপনি আমি না চাইতেও আমাদের ভাগ্য এক সুতোয় বাঁধা পড়েছে।
আপনি ছাড়া আমার মুক্তি নেই। তবে সে মুক্তি যদি আপনার মৃত্যুতে, আপনার রুহ্! শয়তান কে দিয়ে হয় তাহলে সে মুক্তির আমার প্রয়োজন নেই।
আপনি চলে যান চন্দ্রাবতী! প্লিজ চলে যান। আমার উপর আমার নিজের স্বকীয়তা হারিয়ে যাওয়ার আগে চলে যান।

নদীর পাড়ে বালিতে চুপচাপ বসে আছে আয়েত্রী।চোখ বন্ধ হয়ে আসছে কোন একটা কারণে।
বউয়ের সাজ নিয়ে, দুচোখে ক্লান্তি নিয়ে বসে থাকা আয়েত্রীর দৃষ্টি শাওনের দিকে।
শাওন তার থেকে খানিকটা দূরে দাঁড়িয়ে আছে। নাক দিয়ে রক্তের ধীর স্রোত নেমে আসছে। সাদা বেনারসিতে ফোটায় ফোটায় পড়ছে উষ্ণ রক্ত।
শাওন দেখে দ্রুত আয়েত্রীর পাশে এসে বললো,

“আয়েত্রী! খোপার বেলীফুলের মালা ছিড়ে ফেলুন। ফেলে দিন।”

অথচ আয়েত্রীর দুচোখ বন্ধ হয়ে আসছে। এদিকে শাওন জোর করে বলতেই আয়েত্রী বেলীফুলের মালা ছিড়ে ফেললো। আয়েত্রী যেনো প্রাণ ফিরে পেলো। তবুও কি শেষ রক্ষা হলো?
দপদপিয়ে জ্বলতে শুরু করেছে শাওনের চোখ।
আয়েত্রী উঠে চলে যেতে চাইলেই শাওন খোপ করে ধরে ফেলে। হিসহিসিয়ে তেড়ে এসে বললো,

“কোথায় যাচ্ছো চন্দ্রাবতী! তুমি তো আমার সাথে যাবে। চল! চিৎকার করবে তো এখানেই পুতে রাখবো। চিন্তা করো না। বেশি কষ্ট দিবো না।সুখের মৃত্যু হবে তোমার। ”

শাওনের এমন রুপের সাথে পরিচিত নয় আয়েত্রী। ভয়ে পাংশু হয়ে যাচ্ছে। এদিকে শাওন টেনে নিয়ে যাচ্ছে পানির দিকে। ঘাড়ের নিচে বেশ চিনচিনে ব্যথা অনুভব করছে আয়েত্রী। দুচোখ বন্ধ করে মন্ত্রমুগ্ধের মতো এগিয়ে চলেছে শাওনের সাথে পানির দিকে।

চোখ মেলে তাকিয়ে আয়েত্রী সর্বপ্রথম যার মুখ দেখতে পায় সে আরাধ্যা বেগম।
দুহাত পিছনে রেখে পায়চারী করছেন আয়েত্রীর নানা।
ইশরাক হাত ধরে বসে আছে। আয়েত্রীর জ্ঞান ফিরতে না ফিরতেই উঠে বসিয়ে দিলো আয়াত।
মাথা ছিড়ে যাচ্ছে। এত যন্ত্রণা কেনো হচ্ছে?

“আয়েত্রী! কিছু লুকোবে না। সবটা বলবে।”

আয়েত্রীর নানার কথায় চোখ তুলে চাইলেও খুব একটা জোর পাচ্ছে বলে মনে হলো না।
ধপ করে নিভে গেলো ঘরের সব বাতি। দরাজ গলায় সালাম দিয়ে কেউ একজন রুমে প্রবেশ করলেন। রুমে থাকা কারো বুঝতে বাকী নেই কে উনি।
উনি সেই জ্বীন।
উনি এসে আয়েত্রীকে দুটো খোরমা খেজুর দিলেন হাতে।সাথে এক গ্লাস পানি।
তারপর বিরবির করে পড়তে থাকলেন দোয়া-দরুদ।

আয়েত্রীকে খেতে বললে আয়াত চুপচাপ আয়েত্রীর মুখে তুলে দেয়। বিগত ৩৯ ঘন্টায় অনেক কিছু বদলেছে। হ্যাঁ আয়েত্রী প্রায় দেড় দিন জ্ঞানহীন, বোধহীন হয়ে বিছানায় ছিলো। কারো ডাকে
সেরাতে যখন আয়েত্রীকে রেখে বাহিরে এসেছিলো প্রতী, ঠিক সে মুহূর্তে আয়েত্রী বেরিয়ে যায়।
বাহিরে এসে কে ডাকছে এটা জানতে জানতেই প্রতীর সময় লাগে প্রায় মিনিট দশেক। ফিরে রুমে আয়েত্রীকে না পেয়ে সবাইকে জানালে সবাই মিলে খুঁজতে বের হতে চায়।
কিন্তু ততক্ষণে সেই ডুমুর গাছের জ্বীন ফিরে এসেছে। এসেছিলো সে রাতে ইশরাকের খবর দেওয়া হুজুর। হুজুর সবটা জেনে বলেছিলো যে আয়েত্রীর সাথে এমন করেছিলো সে এই বাড়িতেই আছে।

চালের গুড়ো দিয়ে বাড়ির গেটের সামনে সীমানা তৈরী করে বলেছিলেন
“যে ব্যক্তি এই সীমানা অতিক্রম করতে পারবে না সেই ব্যক্তিই আয়েত্রীর সাথে এমন করেছে। ”

পরপর বাড়ি থেকে সবাই বেরিয়ে যায়। বের হতে পারে না দুইজন ব্যক্তি।
কে সে দুইজন ব্যক্তি এতটা দেখার সময় ছিলো না সামিউলের। সে দ্রুত দৌড়ে যায় নদীর পাড়ে। কারণ আয়েত্রী হোক না হোক সেখানেই থাকবে।
সেখানে গিয়ে আয়েত্রীকে দেখতে পায়। আয়েত্রী পানিতে নামছিলো। কিন্তু একরত্তি মেয়ের শক্তির কাছে সে একা হেরে যাচ্ছিলো। দূর থেকে আয়াত টর্চের আলো ফেলতেই দেখে মামা চেষ্টা করছে আয়েত্রীকে পাড়ে তুলে আনতে কিন্তু আয়েত্রী পানির দিকে যাচ্ছে।

সেরাতে চারজন বলিষ্ঠ পুরুষ প্রায় হেরেই গিয়েছিলো আয়েত্রীর শক্তির কাছে। মনে হচ্ছিলো আয়েত্রীর শরীরে অজানা কিছু প্রবেশ করেছে৷ যার দরুন সে এত শক্তিশালী হয়ে উঠেছে।
নদীর পাড় থেকে উঠিয়ে আনতেই জ্ঞান হারায় আয়েত্রী। ফিরলো তো দীর্ঘ ৩৯ ঘন্টা পর।

“হাজী সাহেব! সব শোনার আগে ওদের বিয়ে দিলে ভালো হয়। কারণ তাদের আমরা বন্দী করেছি কিন্তু শয়তান কে বন্দী করিনি। তারা আয়েত্রীর পিছনে বদ জ্বিন লাগিয়েছে। যদি টের পেয়ে যায় আয়েত্রী জেগেছে তাহলে তারা বসে থাকবে না।”

আয়াতের ওয়ালিয়ায় আয়েত্রী ইশরাকের বিয়ে পড়িয়ে দেন আয়েত্রী নানাভাই।
তারপর ইশরাক আয়েত্রীকে জিজ্ঞেস করে কি কি হয়েছে? সবটা বলতে।

আয়েত্রী সবটা বলে। এবার কিছু লুকোয় না। এমনকি সামিউলের সাথে যাওয়া আজকের শাওনের সাথে বলা কথা, ওদের বাড়ি যাওয়া সব।

সব শুনে সামিউল বললো,

“তুমি শাওন কে কোথায় পেলে? সে তো গত পনেরো বছর যাবত গ্রাম থেকে নিরুদ্দেশ। তাকে আমরা কোথাও খুঁজে পাচ্ছি না।আদৌও কি সে বেঁচে আছে কি না কেউ জানে না।তুমি যাকে দেখেছো সে শাওন নয় তার ছোট ভাই শ্রাবণ ”

তখন আয়েত্রীর নানা প্রতিউত্তরে বললেন,

“আছে! শাওনের অস্তিত্ব আছে বলেই আয়েত্রী দেখেছে। কাল সকাল অবধি অপেক্ষা করো। সব প্রশ্নের উত্তর পেয়ে যাবে। আগামীকালের সকাল আয়েত্রীর প্রতি করা সকল কার্যকলাপের কারণ এবং উদ্দেশ্য সবার সামনে এসে যাবে। শুধু মাত্র সকালের অপেক্ষা মাত্র। ”

চলবে
#ছবিয়ালঃ বাধন 😎

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here