#চন্দ্রাবতীর_রাতে #সৌরভে_সুবাসিনী(moon) #পর্বঃ১৪

0
189

#চন্দ্রাবতীর_রাতে
#সৌরভে_সুবাসিনী(moon)
#পর্বঃ১৪

মিহি কুয়াশায় মোড়ানো চারপাশ। বারান্দায় টুল পেতে বসে আছে আয়েত্রী। পরণে ব্ল্যাক স্কার্ট প্ল্যাজো,অফ হোয়াইট লং কামিজ, আয়াতের জ্যাকেট।
ভাইয়ের জিনিসপত্র সানন্দে ব্যবহার করে সে।
ভাই কিছুই বলে না, কারণ বোনের কাছেও আবদার করলে কখনো ফিরতে হয়নি।
বসে বসে আয়েত্রী হাতের কড় গুনে দরুদ শরীফ পড়ছিলো। দৃষ্টি সামনের দিকে। অপর পাশের ঘরের বারান্দার গ্রিল ঠেলে কেউ একজন বেরিয়ে এলো। পরণে তার ব্ল্যাক ওয়ার্কিং সুট।
মিষ্টি হাসির বিনিময়ে আয়েত্রী হাত নেড়ে অপেক্ষা করতে বলে রুমে চলে যায়।
মায়ের কানে বলে আসে,

“মা! আমি একটু বের হচ্ছি।”

জ্যাকেট খুলে নিজেকে চাদরে মুড়িয়ে বেরিয়ে আসে আয়েত্রী। পিছন পিছন আরাধ্যা বেগম এগিয়ে এসে দেখেন আয়েত্রী ইশরাকের সাথে বেরিয়ে যাচ্ছে।
আরাধ্যা বেগম কিছু বলে না, মুচকি হেসে ভিতরে চলে আসেন।
হ্যাঁ! ওদের একান্তে কিছু সময় অবশ্যই প্রয়োজন। মেয়েকে বিয়ের জন্য চাপ দিবেন না, মেয়ে যদি ইশরাকের সাথে কথা বলার পরেও সম্মতি না দেয় তাহলে জোর করার কোন মানেই হয় না।তবে এটা ভেবে উনি মনে মনে বেশ প্রশান্তি পাচ্ছিলেন যে, আয়েত্রী তার বাবা-মায়ের কথায় ইশরাক কে বুঝতে কিংবা তাদের সিদ্ধান্তকে সম্মান করছে।

ধীর পায়ে এগিয়ে চলেছে ইশরাক-আয়েত্রী।আয়েত্রীর সাথে তাল মিলিয়ে হাটার জন্য বেশ ছোট ছোট পদক্ষেপ নিতে হচ্ছে ইশরাককে।দুজনেই নীরব। শীতের ভোরসকালে সচরাচর কেউ উঠে না।
তাই রাস্তায় কথা বলতে কোন সমস্যা হবে বলে মনে হয় না।
ওরা এবার উল্টো পথে এসেছে। নদীর ধাড়ের রাস্তাতেই আছে কিন্তু যে পাশে সচরাচর যাতায়াত, সে পথে আজ যায় নি।

“আমার ফুল পছন্দ নয়।উপন্যাস ভালো লাগে না। গল্প ভালো লাগে না৷ আগের দিনের রহিম রুব্বান কিংবা ঐতিহাসিক কিছুই ভালো লাগে না। ”

আয়েত্রীর কথায় মুচকি হাসে ইশরাক। মুখে হাসির রেখা টেনে ইশরাক বলল,

“গল্প শুনতে ভালো লাগে? ”
“হুম”
“বেশ তো আমি না হয় আজ একটা উপন্যাসের কিছুটা শোনাবো, যদি ভালো লাগে বাকীটা নিজের পড়ে নিতে হবে কিন্তু….. ”

“আপনার গার্লফ্রেন্ড আছে?”
“না ”
“কেনো?”
“সময় সুযোগ হয়ে উঠেনি। আর তাছাড়া সব পুরুষ প্রেমিক পুরুষ হয় না। ”

“প্রতিটি পুরুষ একেক জন প্রেমিক পুরুষ। নির্দিষ্ট নারীর স্পর্শে প্রতিটি পুরুষের জীবনেই কোন না কোন সময় জেগে উঠে অন্তস্থঃ প্রেমিক পুরুষ। ”

“বাহ্! দারুণ বললেন তো!”
“আমার কেউ নেই৷”
“আচ্ছা! ”
“আমি মাছ খেতে পারি, কিন্তু কাটতে, রাধতে, বাছতে পারি না। শাড়ি কখনো পড়া হয়নি। কফিটা ভালো বানাতে পারি। কাপড় আয়রন করতে পারি তবে ওতটা ভালো নয়। ”

“হুম বুঝলাম।”
” আপনি হয়তো ভাবছেন আপনাকে কেনো এসব বলছি তাই না?আসলে আপনার ফ্যামিলি থেকে আপনার সাথে আমার বিয়ের জন্য প্রস্তাব দিয়েছিলো। আমার বাবা গ্রহণ করেছে, যেহেতু সংসার জীবন আপনার আমার হতে পারে তাই আমার সম্পর্কে আগে থেকেই আপনার জেনে নেওয়া প্রয়োজন। ”

আয়েত্রীর শেষ কথায় ইশরাক চুপচাপ দাঁড়িয়ে যায়৷ আয়েত্রী দুকদম এগিয়ে ইশরাক কে পাশে না পেয়ে পিছন ফিরে দেখে ইশরাক দাঁড়িয়ে আছে। চোখে মুখে বিস্ময় ভাব থাকলেও ইশরাক প্রকাশ করলো না। আয়েত্রী ফের দুপা পিছিয়ে ইশরাকের সামনে দাঁড়িয়ে বলল,

“আপনার রিয়্যাকশন দেখে মনে হচ্ছে আপনি এসব জানতেন না। যাইহোক আমাকে পছন্দ না হলে পরিবার কে জানিয়ে দিন অথবা কাল সকাল অবধি অপেক্ষা করুন। আমার লাইফলাইন না কি টানা হয়ে গেছে। আজ রাত কি হবে কেউ জানে না। ”

ইশরাক দ্রুত আয়েত্রীর দুহাত নিজের বামহাতের মুঠোয় বন্দী করে নিলো। ডান হাতে আয়েত্রীর চিবুকে হাত দিয়ে খানিকটা উঁচু করে ধরে বলল,

“আপনি রাজি হলে আজ থেকে আপনার সম্পূর্ণ দায়িত্ব আমার। শুধু বিশ্বাস করে এই হাত দুটো আমার হাতে রাখতে হবে। পারবেন তো? আচ্ছা? আপনাকে বিয়ের জন্য চাপ দিচ্ছে না তো?”

“জানেন তো! আমি শক্ত জুতো পড়তে পারি না।পা ফুলে যায়। তাই আমার বাবা জুতো কেনার সময় চাপ দিয়ে দিয়ে দেখে জুতো নরম না কি শক্ত। সব ফ্লেবারের লিপস্টিক পছন্দ করি না, লিপস্টিক কেনার জন্য ভাই এক দোকান থেকে দশ দোকান ঘুরে। শুধু মাত্র জলপাইয়ের আচার পছন্দ বলে মা বছরে অন্য কোন আচার না এই আচারেই ফ্রিজ ভর্তি রাখে। এত কেয়ার করা মানুষগুলো যখন আপনার কাছে আমার ভবিষ্যৎ দিচ্ছে এর পিছনে অবশ্যই কারণ আছে। অবশ্যই আপনি যোগ্য বলেই দিচ্ছে। ”

“আপনি তাহলে রাজী?”
“জ্বী।”

আয়েত্রী ছোট্ট একটা উত্তরে ইশরাকের চোখেমুখে আনন্দের বিদুৎ চমকাচ্ছিলো বারবার। কিন্তু ঐযে ডিসিপ্লিন মানুষ। অনুভূতি প্রকাশ করা কি ঠিক?

“আপনার চোখ দেখে মনে হচ্ছে আপনি দুহাতে আমাকে জড়িয়ে ধরতে চাইছেন। কিন্তু কিছু একটা বাধা দিচ্ছে। ”

“হ্যাঁ,ওসব না হয় মিসেস চৌধুরীর জন্য তোলা রইলো।”

বাড়ি ফিরে আসতেই কেউ একজন ইশরাকের থেকে ছো মেরে আয়েত্রীকে নিয়ে গেলো। আয়েত্রী ডান হাত তখন ইশরাকের বাম হাতে ছিলো। এভাবে কেউ আয়েত্রীকে নিয়ে যাবে এটা আশা করেনি ইশরাক।
এগিয়ে যেতেই দেখলো উঠোনে প্রতী ইস্তিয়াক বসে আছে টুলে। পাশে আয়েত্রী, তারপর উক্ত ব্যক্তি এসে ইশরাককে পাশে বসিয়ে দিলো। ঘটনার আকস্মিকতায় হতভম্ব হয়ে বসে আছে ইশরাক। উক্ত ব্যক্তির দিকে ইশরাক তাকিয়ে দেখলো পঁচিশ বছর বয়সী একজন যুবতী।
আয়েত্রীর দিকে তাকাতেই কানে-মুখে জবাব দিলো
“আমাদের ছোট মামী।মামার বাগদত্তা।”

গ্রাম্য রীতি অনুসারে আয়েত্রী, প্রত্যাশার মাথায় কাপড় দিয়ে ঘোমটা তুলে দেয়। তারপর প্রথমে প্রত্যাশা পরে আয়েত্রী আঁচলে বিভিন্ন ফল দিয়ে পরিপূর্ণ করে দিলো।

ইশরাক এবারো আয়েত্রীর দিকে তাকালো। আয়েত্রী বলল,

“বছরান্তেই পোয়াতি হওয়ার আশীর্বাদ।”

পর পর পনেরোটা মাটির কলসী থেকে পানি পড়ে গেলো। প্রথম কলসীর গায়ে শৈবাল জন্মেছে। পনেরো নম্বর কলসী সব থেকে বেশি নতুন। কলসী গুলোর বিশেষত্ব হচ্ছে এই কলসী গুলো পানি পরিপূর্ণ অবস্থায় উল্টো করে রাখা স্বতেও এক ফোটাও পানি মাটিতে পড়েনি। কিন্তু হঠাৎ ঝুপঝুপিয়ে পনেরো কলসীর পানি একত্রে পড়ে গেলো কিভাবে?

বেশ উদ্বিগ্ন কন্ঠে কোন নারী মূর্তি আহ্বান করছে কাউকে। কিছুক্ষণ পর ঘরে থাকা সব বাতি বন্ধ হয়ে গেলো। শুধু একটা কন্ঠস্বর ভেসে এলো।

“পনেরো কলসী ছিলো তোমার পনেরো বছরের তপস্যা। পনেরো জন মানুষ! যাদের মৃত্যু হয়েছিলো আয়েত্রীর মুখের কথায়।এদের আত্নার বিনিময়ে শয়তান সজীব রেখেছে তোমার প্রেমিক পুরুষের দেহ। আয়েত্রীর আশেপাশে কেউ একজন এসেছে। কুমারী রুহ্ শয়তান কে না দিলে তোমার প্রেমিক পুরুষ ফিরবে না। মনে রেখো তোমার কুমারিত্ব হারিয়েই শুরু হয়েছিলো এই তপস্যা যা শেষ করতে তোমায় উৎসর্গ করতে হবে আয়েত্রীর পবিত্র, কুমারী শরীর। ”

চলবে
#ছবিয়ালঃনোভেরা

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here