#অবেলায়_তোমার_আকাশে
#পর্ব_১৪
#লেখিকা_N_K_Orni
রাদিব সাহেবের কথায় বৃষ্টি অবাক হয়ে বলে উঠল,
— কি সিদ্ধান্ত বাবা?
— আমি তোমার বিয়ে দিতে চাই।
রাদিব সাহেবের কথায় বৃষ্টি অবাক হয়ে বলে উঠল,
— এসব তুমি কি বলছ বাবা? তুমি ভালো করেই জানো যে….
বৃষ্টিকে পুরোটা বলতে না দিয়ে রাদিব সাহেব বলে উঠলেন,
— দেখ মা আমার বয়স হচ্ছে। আমি আজ আছি কাল নেই। আমি চলে গেলে তোর কি হবে? আমি যদি তোকে একা রেখে যাই তোর আশেপাশের মুখোশ পরা মানুষগুলো তোকে ছিড়ে খাবে যা আমি কখনোই চাইনা। আমি চাই তোকে সবসময় ভালো দেখতে। তাই তো তোর এক কথায় আসিফের সাথে তোর বিয়ে দিতে রাজি হয়ে গিয়েছিলাম। কিন্তু পরবর্তীতে তুইই কষ্ট পেলি। আমি আর তোকে কষ্টে দেখতে চাই না। আমি চাই তোকে বিয়ে দিতে। আমি চাই তুইও একজন ভালো মানুষকে বিয়ে করে সুখে থাক। যে তোকে বিপদে ছেড়ে যাবে না। তোকে সবসময় আগলে রাখবে। তোকে বিপদ থেকে রক্ষা করবে। তোর সুখ দুঃখের সাথি হবে।
রাদিব সাহেবের কথা শুনে বৃষ্টি কিছুটা কষ্ট পেল। সে অসহায় হয়ে বলে উঠল,
— কিন্তু বাবা তুমি বুঝতে পারছ না। আমাকে কে বিয়ে করবে? তুমি ভালো করে জানো যে আমি কখনো মা হতে পারব না। আর কেউই তার বাবা হওয়ার স্বপ্ন বলি দিয়ে আমাকে বিয়ে করতে চাইবে না। সেটা তুমি ভালো করেই জানো। তুমি কি কাউকে বিষয়টা না জানিয়ে বিয়ে ঠিক করবে? তাহলে কিন্তু আমি তোমার বিপক্ষে থাকব? আমি কখনো আমার এই সমস্যার কথা লুকিয়ে বিয়ে করতে পারব না।
বৃষ্টির কথায় রাদিব সাহেব হালকা হাসলেন। তিনি মুচকি হেসে বৃষ্টির মাথায় হাত বুলিয়ে দিতে দিতে বলে উঠলেন,
— আমি তোর বিয়ে অলরেডি ঠিক করে ফেলেছি। পরশু তোর বিয়ে।
রাদিব সাহেবের কথা শুনে বৃষ্টি অবাকের শেষ পর্যায়ে চলে গেল। সে একরাশ বিস্ময় নিয়ে বলে উঠল,
— এসব তুমি কি বলছ বাবা?
— আমি ঠিকই বলছি। আমি পরশু তোর বিয়ে ঠিক করে ফেলেছি। গতকালই ঠিক করেছি। প্রথমবার তোর পছন্দে আমি রাজি হয়েছিলাম। এবার তুইও আমার পছন্দে রাজি হয়ে যা। আর বিয়েটা করে নে।
— আচ্ছা আমি করব বিয়েটা। তুমি কি তাকে আমার ওই সমস্যার বিষয়ে বলেছ?
— হ্যাঁ বলেছি। সব জেনেও সে রাজি হয়েছে। সে শুধু তোকে চায়। এজন্যই বলছি তুই না করিস না।
— কিন্তু বাবা সে কে?
— আছে কেউ একজন। সে তোকে অনেক ভালো রাখবে। তুই বিয়েতে মত দিয়ে দে।
— কিন্তু বাবা এভাবে হঠাৎ করে?
— আমি এভাবেই দিতে চাই। বিয়েতে তেমন কাউকে বলব না। শুধু ছেলের পরিবার আর তোর নাবিলা আপুরা থাকবে। ছেলের পরিবার বলতে ছেলে, তার ছোট ভাই আর বাবা। ছেলের মা অসুস্থ। তাই আসবে না।
— ওহহ।
— আমি খুব ছোট করেই বিয়েটা দিতে চাই। আমি যে তোর বিয়ের কথা ঠিক করেছি তা কেউ জানে না। এমনকি সানিয়াও না। ছেলের সাথে আমার কথা হয়ে গেছে। ওদের এখানে একটা বাড়ি আছে। পরশু বিয়ের পর ওরা তোকে নিয়ে যাবে তিন চারদিন পর আবার দিয়ে যাবে। তারপর আমি তোকে ওখানে রেখে আসব। তারপর তোর পড়ালেখা শেষ হলে ভালো করে বিয়ে দিব।
রাদিব সাহেবের কথা শুনে বৃষ্টি ছোট করে বলল,
— আচ্ছা।
— সানিয়া এখন তোর বলার দরকার নেই। আমি কাল সকালে ওকে বলে দিব। আর কাল ব্রেকফাস্টের পর তোকে নিয়ে বের হব। বিয়ের জন্য কেনাকাটা করার দরকার আছে তো।
— আচ্ছা।
বলেই বৃষ্টি চলে যেতে গেল। কিন্তু কিছু একটা ভেবে আবার ফিরে এলো। তারপর রাদিব সাহেবের দিকে তাকিয়ে বলে উঠল,
— আচ্ছা বাবা যার সাথে আমার বিয়ে ঠিক হয়েছে তার কি আগে বিয়ে ছিল? বা অন্য কোনো সমস্যা?
বৃষ্টির কথা শুনে রাদিব সাহেব হালকা হেসে বলে উঠলেন,
— ওসব কিছুই না। আমি জানি তুই এসব কেন বলছিস? এসব বলাই স্বাভাবিক। কিন্তু এসব ভাবার দরকার নেই। তোর সব উত্তর তুই বিয়ের পরই পেয়ে যাবি।
— আচ্ছা।
বলেই বৃষ্টি রুমে চলে এলো।
রাতে বৃষ্টি তার রুমের বারান্দায় দাঁড়িয়ে আছে। সে বিকালে রাদিব সাহেবের বলা কথাগুলো ভাবছে। যদিও সে এখন আর আসিফকে ভালোবাসে না তবুও সে এখন কাউকে বিয়ে করতে রাজি না। কিন্তু রাদিব সাহেবের কথা শুনে সে আর তার কথা ফেলতে পারেনি। তার মাথায় শুধু একটা কথাই ঘুরছে। লোকটা কে? কে তার অক্ষমতার কথা শুনেও তাকে বিয়ে করতে চায়? এর পেছনে কি কোনো স্বার্থ আছে? এসবই ভাবছে বৃষ্টি। তখনই রাদিব সাহেব তাকে খাওয়ার জন্য ডাকল। বৃষ্টি খেয়ে এসে ঘুমিয়ে পড়ল।
পরদিন সকালে বৃষ্টি ঘুম থেকে উঠে ফ্রেশ হয়ে নিল। সে যখন রুম থেকে বের হলো তখন দেখল মিসেস সানিয়া টেবিলে খাবার সাজাচ্ছেন। বৃষ্টি ঘড়ির দিকে তাকিয়ে দেখে সাড়ে আটটা বাজে। বৃষ্টি মিসেস সানিয়ার কাছে গিয়ে বলে উঠল,
— কোনো সাহায্য লাগবে আম্মু?
— না তুই বস।
মিসেস সানিয়ার কথা শুনে বৃষ্টি কিছুটা অবাক হলো। ওনার এই রূপের সাথে বৃষ্টি খুব অপরিচিত। তখন রাদিব সাহেব এসে বৃষ্টিকে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে তাকে বসতে বলল। বৃষ্টি আর রাদিব সাহেব খেতে বসল। খাওয়ার মাঝে রাদিব সাহেব মিসেস সানিয়াকে বৃষ্টির বিয়ের বিষয়ে বললেন। মিসেস সানিয়া তখন খুবই অবাক হলেন। তিনি বলে উঠলেন,
— সে কি তুমি বৃষ্টির বিয়ে ঠিক করেছ আর আমাকে বললে না একবারও?
— কেন? বললে কি আবারও ভাঙতে? যাইহোক আমি বৃষ্টির বিয়ে তারিখ পরশুই ঠিক করেছি।
— কিন্তু কার সাথে? আর এতো তাড়াতাড়ি। মানে কালকেই বিয়ে? এভাবে হঠাৎ করে?
— পরশু যেই ছেলেটাকে দেখেছিলে ওর সাথে। আর তাড়াতাড়িই ভালো।
রাদিব সাহেবের কথা শুনে মিসেস সানিয়া বিরবির করে বলে উঠলেন,
— দেখলাম আর কই? এসেছিল তো ভুত সেজে।
মিসেস সানিয়া বিরবির করা কথা রাদিব সাহেব না শুনলেও বৃষ্টির কানে ঠিকই গেল। সে খাওয়া রেখে ভ্রু কুচকে মনে মনে বলে উঠল,
— আম্মু এসব কি বলব? ভুত সেজে মানে? ভুতের মুখোশ পরে এসেছিল নাকি?
খাওয়া শেষে রাদিব সাহেব বৃষ্টির দিকে তাকিয়ে বলে উঠলেন,
— বৃষ্টি খাওয়া শেষে তুই তৈরি হয়ে নে। তোর বিয়ের জন্য শপিং এ যেতে হবে তো।
— আচ্ছা।
রাদিব সাহেব এবার মিসেস সানিয়ার দিকে তাকিয়ে বলে উঠলেন,
— আর তোমার যদি ইচ্ছা হয় তাহলে তৈরি হয়ে নিও।
বলেই তিনি তার রুমে চলে গেলেন। বৃষ্টিও খাওয়া শেষ করে রুমে চলে গেল। মিসেস সানিয়া খাওয়া শেষ করে টেবিল গোছাতে গোছাতে মনে মনে বলতে লাগলেন,
— সায়েরার বিয়েটা আসিফের সাথে না দিলেই পারতাম। আগের দিনের ছেলেটাকে দেখে তো বেশ বড়লোকই মনে হলো। আসিফের থেকেও বেশিই মনে হলো। ওর সাথেই সায়েরার বিয়েটা দিলে পারতাম। আসিফের সাথে দিয়ে খুব ভুল করে ফেলেছি। এখন আসিফ আমার সাথে আমার মেয়েকে কথা বলতে দেয় না।
বলেই একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে তিনি রুমে চলে গেলেন। তারপর বৃষ্টি, মিসেস সানিয়া আর রাদিব সাহেব একসাথে শপিং এ গেল। বিয়ের শপিং শেষে তারা বাসায় ফিরে এলো।
রাতে বৃষ্টি তার মায়ের চেনটা হাতে নিয়ে কথা বলতে লাগল। সাথে বুকে জড়িয়ে কাঁদতে লাগল। কথা বলতে বলতে এক পর্যায়ে সে ঘুমিয়ে পড়ল।
চলবে,,,
( ভুলত্রুটি ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন। )