অবেলায়_তোমার_আকাশে #শেষ_পর্ব

0
684

#অবেলায়_তোমার_আকাশে
#শেষ_পর্ব
#লেখিকা_N_K_Orni

মিসেস রায়া বৃষ্টির রুমে এসে বৃষ্টিকে বললেন তাড়াতাড়ি তৈরি হয়ে নিল। বৃষ্টি মিসেস রায়ার দিকে তাকিয়ে বলে উঠল,

— কিন্তু কেন ফুফি?

— ভাইয়া একটু আগে কল দিয়েছিলেন। তোকে সাথে করে নিয়ে যেতে বলেছেন।

— হঠাৎ করে যাওয়ার কথা বলল যে?

— সেটা আমিও জানিনা। তুই তৈরি হয়ে নে। তারপর তোকে বেরিয়ে পড়ব।

— আচ্ছা।

বৃষ্টি এবার তাড়াতাড়ি তৈরি হয়ে নিল। তারপর মিসেস রায়া আর বৃষ্টি বেরিয়ে পড়ল। ওদের পৌছাতে পৌছাতে রাত হয়ে গেল। ওরা দুজন বাসার সামনে গিয়ে কলিং বেলে চাপ দিল। কিছুক্ষণ পর মিসেস সানিয়া এসে দরজা খুলে দিলেন। তিনি বৃষ্টি আর মিসেস রায়াকে দেখে খুবই অবাক হয়ে বলে উঠলেন,

— তোমরা এতো রাতে?

মিসেস সানিয়ার কথা শুনে মিসেস রায়া কিছুটা বিরক্তি নিয়ে বলে উঠলেন,

— এখন কি নিজের বাড়িতে আসতেও আমাদের সময় বুঝে আসতে হবে?

— না আমি সেভাবে বলিনি।

— তাহলে এবার সামনে থেকে সরো। আমাদের ভেতরে ঢুকতে দেও।

— হুম।

বলেই মিসেস সানিয়া সরে দাঁড়ালেন। বৃষ্টি আর মিসেস রায়া ভেতরে ঢুকলেন। তারপর দুজনে তাদের রুমে চলে গেলেন। মিসেস সানিয়া তাদের যাওয়ার দিকে তাকিয়ে ভ্রু কুচকে বিরবির করে বলে উঠল,

— এরা হঠাৎ করে এলো কেন? কোনো ঝামেলা করতে আসেনি তো? কিছুই বুঝতে পারছি না।

বৃষ্টি তার রুমে গিয়ে ফ্রেশ হয়ে জামাকাপড় বদলে নিল। তারপর মিসেস রায়ার রুমে গেল। ওখান থেকে ওরা দুজন রাদিব সাহেবের রুমে গেল। রাদিব সাহেব তার রুমে শুয়ে ছিলেন। ওদের দেখতেই তিনি উঠে বসলেন।

— ওহহ তোরা চলে এসেছিস?

রাদিব সাহেবের কথা শুনে মিসেস রায়া বলে উঠলেন,

— হ্যাঁ ভাইয়া আমরা এসেছি। তুমি হঠাৎ করে আমাদের এভাবে আসতে বললে কেন? কোনো দরকার আছে?

— হ্যাঁ আছে তো।

— কি দরকার?

— তার উত্তর কাল সকালে পেয়ে যাবি। এখন রুমে গিয়ে বিশ্রাম নে। অনেক দূর থেকে এসেছিস। আমি সানিয়াকে বলছি তোদের খাবার দিতে।

— কিন্তু ভাইয়া?

— কোনো কিন্তু না। যা তোরা রুমে যা।

তারপর রাদিব সাহেব বৃষ্টির দিকে তাকিয়ে বলে উঠলেন,

— যা মা রুমে যা।

— আচ্ছা।

বৃষ্টি আর মিসেস রায়া তাদের রুমে চলে এলো। পরদিন সকালে ব্রেকফাস্ট করার পর রাদিব সাহেব সবাইকে বসার রুমে আসতে বললেন। সবাই তাই করল। রাদিব সাহেব, মিসেস সানিয়া, মিসেস রায়া, বৃষ্টি সবাই বসে আছে। রুমে চলছে পিনপন নীরবতা। তখনই মিসেস রায়া নীরবতা ভেঙে বলে উঠলেন,

— ভাইয়া আমরা সবাই এসেছি তো। এবার বলো কি বলবে?

— বলব একটু পরে।

মিসেস রায়া এবার অস্থির হয়ে বলে উঠলেন,

— যখন বলতেই হবে তখন পরে না বলে এখনই বলো না।

— আসলে কথাটা উনি বলবেন না। আমি বলব। আবার আমি না বলে অন্য একজনও বলতে পারে যদি তার ইচ্ছা হয়।

কথাটা বলতে বলতে একজন রুমের ভেতরে ঢুকল। বৃষ্টি তাকিয়ে দেখে শ্রাবণ দাঁড়িয়ে আছে। মিসেস শ্রাবণকে চেনে না তাই তিনি তার দিকে ভ্রু কুচকে তাকিয়ে রইলেন। শ্রাবণ এসে একটা সোফায় বসল। তার দৃষ্টি সম্পূর্ণ মিসেস সানিয়ার দিকে। মিসেস সানিয়া শ্রাবণের দিকে তাকিয়ে আঁতকে উঠলেন। শ্রাবণ এবার মিসেস সানিয়ার দিকে তাকিয়ে গম্ভীর স্বরে বলে উঠল,

— তো মিসেস সানিয়া রায়হান ওহহ সরি আহমেদ পুরো বিষয়টা আমি বলব না আপনি বলবেন?

শ্রাবণের কথা শুনে মিসেস সানিয়া কাঁপা কাঁপা স্বরে বলে উঠল,

— তুমি কোন বিষয়ের কথা বলছ? আমি কিছু বুঝতে পারছি না।

— নাটক না করে পুরোটা বলেন। বৃষ্টির মায়ের মৃত্যু থেকে এই পর্যন্ত সবটা বলুন।

শ্রাবণের ধমকে মিসেস সানিয়া কিছুটা ভয় পেয়ে গেলেন। তারপর দৃঢ় কন্ঠে বলে উঠলেন,

— হ্যাঁ আমি করেছি। আমি সবটা করেছি। নাবিল আর রাদিব একসাথে বিজনেস করলেও বেশিরভাগই ছিল রাদিবের। আর নাবিলের রাদিবের মতো ওতো সম্পত্তিও ছিল না। ও সব কিছুতে রাদিবের থেকে পিছিয়ে থাকত। আমি, রাদিব আর নাবিল ব্যাচমেট ছিলাম। আমি প্রথম থেকেই রাদিবকে পছন্দ করতাম। কিন্তু রাদিব আমাকে ঠিকমতো চিনতোই না। ভেবেছিলাম রাদিবকে একদিন প্রোপোজ করব কিন্তু সেদিনই জানতে পারলাম ও রাহেলার সাথে রিলেশনে আছে। ভেবেছিলাম কিছু একটা করে ওদের আলাদা করব। কিন্তু পড়ালেখা শেষে করেই রাদিব রাহেলাকে বিয়ে করে। তখনই নাবিল আমাকে বিয়ের প্রস্তাব দেয়। এক ফ্রেন্ডের থেকে জানতে পারি রাদিব আর নাবিল একসাথে বিজনেস শুরু করেছে। তাই আমিও ওর প্রস্তাবে রাজি হয়ে যাই। কিন্তু নাবিল রাদিবের থেকে সবদিকে পিছিয়ে ছিল। এরপর রাদিব আর রাহেলার ঘরে বৃষ্টি হয়। আমাদের ঘরেও সায়েরা হয়। কিন্তু সবকিছু আমার হাতের বাইরে চলে যাচ্ছিল। তাই আমি দীর্ঘদিন ধরে একটা প্লাণ করতে থাকি। আর যখন দুই পরিবার মিলে যাওয়ার কথা ওঠে আমি সুযোগ বুঝে প্লাণটা কাজে লাগাই। প্লাণ মতো রাহেলা, নাবিল আর বৃষ্টিকে গুলি করা হয়। কিন্তু বৃষ্টি বেঁচে যায়। বৃষ্টি সুস্থ হওয়ার পর রাদিব আবার ব্যবসায় হাত দেয়। আর নাবিলের বদলে আমি যোগ দেই। একদিন একটা কাজের জন্য আমাদের একটা জায়গায় যেতে হয়। তখন আমি আমার দ্বিতীয় প্লাণ কাজে লাগাই। ড্রাগস খাইয়ে রাদিবকে ফাঁসাই আর সেই ভিডিও দিয়ে ব্যাকমেইল করতে থাকি। রাদিব সারা দুনিয়ার ভয় না করলেও বৃষ্টিকে নিয়ে ভয় ছিল। যার জন্য সে আমার সব কথা শুনত। বিয়ের পর আমি বৃষ্টির মন থেকে আর এই বাড়ি থেকে রাহেলাকে পুরোপুরি মুছে ফেলার চেষ্টা করতে থাকি। আস্তে আস্তে আমার সব প্লাণ কাজে দিচ্ছিল। আমার মেয়ে সায়েরা আর বৃষ্টি একসাথে বড়ো হলো। একদিন আসিফের পরিবার বৃষ্টির জন্য বিয়ের প্রস্তাব নিয়ে আসে। তখন আসিফকে দেখে সায়েরার অনেক ভালো লাগে। তাই আমি আর সায়েরা মিলে বৃষ্টির ওই মিথ্যে রিপোর্ট বানাই। আর প্লাণ কাজে দেয়। আসিফরা বিয়েটা ভেঙে দেয়। আর আমি তখনই সায়েরার সাথে বিয়ের কথা বলি। ওরা আর উপায় না পেয়ে রাজি হয়ে যায়।

সবটা শুনে ওখানে থাকা সবাই স্তব্ধ হয়ে যায়। বৃষ্টির দুই চোখ অজস্র পানি ঝরে পড়ছে। রাদিব উঠে গিয়ে ঠাসস করে মিসেস সানিয়ার গালে জোরে একটা থাপ্পড় দিলেন। মিসেস সানিয়া মাথা নিচু করে ফেললেন। তখনই মিসেস রায়া রেগে বলে উঠলেন,

— কি ভয়ংকর মহিলা? নিজের স্বামীকে খুন করতে হাত কাঁপল না। আমাকে ভাবিকে মেরেছিস তুই। আমার ভাইয়ার সুন্দর জীবন নষ্ট করেছিস তুই। তোকে তো পুলিশে দেওয়া উচিত।

— এই তো আমি পুলিশ নিয়ে চলে এসেছি।

দরজার কাছে দাঁড়িয়ে বলে উঠল মেঘ। পুলিশের কথা শুনে মিসেস সানিয়া উঠে দাঁড়ালেন। তখনই পুলিশ এসে ভেতরে ঢুকল। রাদিব সাহেব মিসেস সানিয়া নিয়ে যেতে বললেন। পুলিশ ওনাকে নিয়ে চলে গেল। রাদিব সাহেব এবার কান্নায় ভেঙে পড়লেন। মিসেস রায়া গিয়ে ওনাকে শান্ত করলেন।

সময় তার আপন গতিতে চলতে লাগল। কেটে গেছে কয়েকটা বছর। বৃষ্টির পড়ালেখা প্রায় শেষ। বৃষ্টি শ্রাবণের সাথে ঘুরতে এসেছে। হঠাৎ তার ফোনে একটা কল এলো। বৃষ্টি একটু দূরে গিয়ে ফোন ধরল। ফোনের অপর পাশ থেকে একজন বলে উঠল,

— কেমন আছো বৃষ্টি?

— কে আপনি? ঠিক চিনতে পারলাম না।

— আমি আসিফ। বৃষ্টি আমি ভুল ছিলাম। তোমার রিপোর্টটা ভুল ছিল। জানো সায়েরা কখনো মা হতে পারবে না। ও আমাকে ঠকিয়েছে। বৃষ্টি প্লিজ আমার জীবনে ফিরে এসো। আমি জানি তুমি এখনো আমাকে ভালোবাসো।

( মিসেস সানিয়ার সাথে সম্পর্ক না থাকায় আসিফ আর সায়েরা কেউই জানে না যে বৃষ্টির বিয়ে হয়ে গেছে। এমনকি মিসেস সানিয়ার জেলে যাওয়ার কথাও না। )

আসিফের কথা শুনে বৃষ্টি কিছুটা হাসল। তারপর বলে উঠল,

— তোমাকে কে বলেছে আমি তোমাকে ভালোবাসি? আমি বিবাহিত। আমার স্বামী আমাকে অনেক বেশি ভালোবাসে। আর আমিও আমার স্বামীকে অনেক ভালোবাসি। তাই এসব চিন্তা বাদ দেও।

— ওহহ হ্যাঁ আরেকটা কথা কোনো মেয়ে মা হতে পারবে না বলে তাকে বিয়ে করা যাবে না। বা কোনো স্ত্রী মা হতে পারবে না জেনে তাকে ডিভোর্স দেওয়া, দ্বিতীয় বিয়ে করা এসব চিন্তাভাবনা বাদ দেও। সন্তান সৃষ্টিকর্তা নিয়ামত। তাই আগে দৃষ্টিভঙ্গি বদলাও তারপর বাচ্চার চিন্তা করবে। রাখছি। ভালো থেকো।

বলেই বৃষ্টি কল কেটে দিল। তখনই শ্রাবণ এসে ওর পাশে দাঁড়াল।

— কে ফোন করেছিল?

বৃষ্টি এবার তাকে পুরোটা বলল। সব শুনে শ্রাবণ বৃষ্টিকে জড়িয়ে ধরে বলে উঠল,

— যা হয় ভালোর জন্যই হয়। ও ছেড়ে চলে গিয়েছিল বলেই তো অবেলায় তোমার আকাশে আমি জায়গা নিতে পেরেছি।

শ্রাবণের কথা শুনে বৃষ্টিও তাকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরল। এভাবেই ভালো থাকুক সকল ভালোবাসা আর তাদের ভালোবাসার মানুষগুলো।

সমাপ্ত

( ভুলত্রুটি ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন। ভালো না লাগলে ইগনোর করুন তবে কোনো খারাপ মন্তব্য করবেন না। )

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here