#অবেলায়_তোমার_আকাশে
#পর্ব_১৬
#লেখিকা_N_K_Orni
ঘড়িতে সাড়ে বারোটা বাজতে গেছে। বৃষ্টি এখনো বসে আছে। তার দুই চোখ ঘুমে ভর্তি। তখনই কেউ দরজা খুলে ভেতরে প্রবেশ করল। বৃষ্টি বুঝতে পারল তার স্বামী এসেছে। সে নিজেকে স্বাভাবিক রাখার চেষ্টা করল। বৃষ্টি ঘোমটার আড়াল থেকে দেখল লোকটা ওয়াশরুমে যাচ্ছে। তারপর সে চোখ নামিয়ে নিল। সে মনে মনে ভাবতে লাগল,
— আচ্ছা ওনাকে কি জোর করে বিয়ে দেওয়া হয়েছে? উনি তো একবারও আমার দিকে ফিরে তাকালেন না। আচ্ছা ওনাকে কি ওনার বাবা জোর করে বিয়ে দিয়েছেন? তাই হবে হয়তো? নাহলে আমার মতো একটা মেয়েকে কে বিয়ে করবে? কিন্তু এভাবে বিয়ে দেওয়াটা ঠিক হয়নি?
বলেই বৃষ্টি একটা দীর্ঘশ্বাস ছাড়ল। তখনই ওয়াশরুমের দরজা খোলার আওয়াজ শুনল। একটু পরে লোকটা এসে তার পাশে বসল। তখনই বৃষ্টি শুনল,
— সরি দেরী করার জন্য। আসলে কি বলতো? অতিরিক্ত খুশির জন্য তোমার গিফট কিনতেই ভুলে গিয়েছিলাম। গাড়িতে যখন ছিলাম তখন মনে পড়ল। তাই তো তাড়াতাড়ি বেরিয়ে গেলাম। রাগ করে না প্লিজ।
লোকটার কথা শুনে বৃষ্টি কিছুটা অবাক হলো। সে মনে মনে বলে উঠল,
— তার মানে ওনার বিয়েতে মত ছিল। আমার জন্য গিফট কিনতে যাওয়ায় দেরী হয়েছে। আচ্ছা ওনার গলাটা চেনা চেনা লাগছে? কোথায় যেন শুনেছি? কিন্তু কোথায়?
বৃষ্টিকে চুপ থাকতে দেখে লোকটা বলে উঠল,
— কি হলো বৃষ্টি? চুপ করে আছো কেন? রাগ করছ নাকি এতোক্ষণ বসিয়ে রাখছি বলে? আরে ঘোমটাটা তো খোলো।
বলেই লোকটা বৃষ্টির ঘোমটা সরিয়ে ফেলল। বৃষ্টি সাথে সাথে চোখ নামিয়ে নিল। লোকটা বৃষ্টির দিকে তাকিয়ে বলে উঠল,
— এতোদিনে আমি তোমাকে আমার নিজের করে পেলাম।
লোকটার কথা শুনে বৃষ্টি ধীরে ধীরে চোখ তুলে তার দিকে তাকাল। আর তখনই কিছুটা আলো এসে লোকটার মুখের ওপরে পড়ল। হালকা আলো এসে পড়ায় বৃষ্টি তার মুখ দেখতে পেল। তাকে দেখে বৃষ্টির চোখ বড়ো বড়ো হয়ে গেল। সে অবাক হয়ে অস্ফুট স্বরে বলে উঠল,
— স্যার আপনি?
লোকটা কিছুই বলল না। একটা মুচকি হেসে বৃষ্টির মাথার দুই পাশে হাত রেখে বৃষ্টির নরম ঠোঁটে তার ঠোঁট ডুবিয়ে দিল। কিছুক্ষণ পর বৃষ্টির ঠোঁট ছেড়ে দিয়ে লোকটা মুখ তুলে তাকাল। ঠোঁট ছেড়ে দিতেই বৃষ্টি অবাক দৃষ্টিতে তার দিকে তাকিয়ে রইল। সে মনে মনে বলে উঠল,
— তারমানে আমার শ্রাবণ স্যারের সাথেই বিয়ে হয়েছে? বিয়ে পড়ানোর সময় আরেকটু মনোযোগ দিলেই স্যারের নামটা শুনতে পেতাম। কিন্তু কথা হচ্ছে স্যার কেন আমাকে বিয়ে করলেন?
হ্যাঁ বৃষ্টির শ্রাবণের সাথেই বিয়ে হয়েছে। ওই দিনের ভুতমার্কা লোকটা শ্রাবণই ছিল। বৃষ্টিকে চুপ করে থাকতে দেখে শ্রাবণ অবাক হয়ে বলে উঠল,
— কি হলো বৃষ্টি? এতো কি ভাবছ? আমাকে দেখে অবাক হচ্ছ?
বৃষ্টি কিছু বলল না শুধু চুপ করে রইল। তখনই শ্রাবণ তার কানের কাছে মুখ নিয়ে বলে উঠল,
— আই লাভ ইউ বৃষ্টি। আমি তোমাকে অনেক বেশি ভালোবাসি।
কিছুক্ষণ চুপ থেকে শ্রাবণ আবার বলে উঠল,
— তুমি হয়তো বিশ্বাস করবে না। কিন্তু আমি তোমাকে অনেক আগে থেকেই ভালোবাসি।
শ্রাবণের কথা শুনে বৃষ্টি অবাক হয়ে মনে মনে বলে উঠল,
— স্যার আমাকে অনেক আগে থেকে ভালোবাসেন মানে? উনি কি আমাকে আগে থেকে চেনেন?
বৃষ্টিকে চুপ করে থাকতে দেখে শ্রাবণ এবার অস্থির হয়ে বলে উঠল,
— বৃষ্টি তুমি কথা কেন বলছ না? তোমার কি আমাকে পছন্দ হয়নি? বলো বৃষ্টি?
তখন বৃষ্টি বলে উঠল,
— স্যার আপনি কেন আমাকে বিয়ে করলেন? আপনি কি জানেন না যে আমি কোনোদিন মা হতে পারব না? তাহলে কেন বিয়ে করলেন?
বৃষ্টির কথায় শ্রাবণ বলে উঠল,
— আমার শুধু তোমাকে চাই। আর যদি বাচ্চা না হয় তখন আমরা অন্য কোনো ব্যবস্থা করব। এই ছোট একটা বিষয়ের জন্য আমি তোমাকে ছাড়তে পারব না।
বৃষ্টি এতক্ষণ মাথা নিচু করে ছিল। শ্রাবণের কথা শুনে বৃষ্টি মুখ তুলে তাকাল। তার দুই চোখে অজস্র অশ্রু এসে ভিড় করেছে। সে মনে মনে বলে উঠল,
— উনি এটাকে ছোট বিষয় বলছেন? উনি আমাকে এতো ভালোবাসেন? অথচ এই বিষয়টার জন্য আসিফ আমাকে ছেড়ে গিয়েছিল। বাবা ঠিকই বলেন যে ও আমাকে কখনো ভালোই বাসেনি।
বলেই ভাবতে ভাবতে বৃষ্টির চোখের কোণা বেয়ে এক ফোটা অশ্রু গড়িয়ে পড়ে যেতে নিল। তখনই শ্রাবণ তার হাতের আঙুল দিয়ে সযত্নে সেটা মুছে দিল। শ্রাবণ কিছু বলতেই যাবে তখনই বৃষ্টি তাকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরল। শ্রাবণ বৃষ্টির মাথায় হাত বুলিয়ে দিতে লাগল। কিছুক্ষণ পর বৃষ্টি তাকে ছেড়ে দিল। শ্রাবণ এবার বৃষ্টির জন্য আনা রিংটা তার হাতে পরিয়ে দিল। শ্রাবণ বৃষ্টির দিকে তাকিয়ে বলে উঠল,
— পছন্দ হয়েছে?
বৃষ্টি হালকা মাথা নাড়াল।
— যাইহোক অনেক রাত হয়েছে। এবার ঘুমানো দরকার। কিন্তু তার আগে আমি তোমাকে আমার নিজের করে পেতে চাই।
শ্রাবণের কথা শুনে বৃষ্টি লজ্জায় মাথা নিচু করে ফেলল। সেটা দেখে শ্রাবণ হালকা হাসল।
পরদিন সকালে শ্রাবণ ঘুম থেকে উঠে দেখল বৃষ্টি বারান্দায় তার চেন হাতে নিয়ে কথা বলছে। শ্রাবণ একটু এগিয়ে গেল বৃষ্টি কি বলছে তা শোনার জন্য? সে শুনতে পেল বৃষ্টি তার চেন হাতে নিয়ে বলছে,
— মাম্মাম তুমি কই? তোমাকে খুব মিস করছি? জানো তো মাম্মাম এতোদিনে আমি আমার জীবনের সঠিক জীবনসঙ্গী খুঁজে পেয়েছি। তুমি থাকলে খুব ভালো হতো।
এসব দূর থেকে শুনে শ্রাবণ একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলল। তারপর বৃষ্টির দিকে তাকিয়ে মনে মনে বলে উঠল,
— তুমি চিন্তা করো বৃষ্টি? এই সবকিছুর পেছনে যে আছে তাকে আমি খুব তাড়াতাড়ি খুঁজে বের করব। আর তোমার রিপোর্টের আসল সত্যও আমি বের করব।
বলেই শ্রাবণ ওখান থেকে চলে গেল।
শ্রাবণের বাসায় বৃষ্টির দিনটা ভালোই কাটল। শ্রাবণের বাবা আর ছোট ভাই মেঘ তাকে নিজের পরিবারের সদস্যদের মতোই দেখেছে। যেন তারা তাকে অনেক আগে থেকেই চেনে। তারা ওর খুব খেয়াল রেখেছে। দুইদিন পর শ্রাবণ বৃষ্টিকে তার বাসায় দিয়ে ঢাকায় ফিরে গেল। বৃষ্টি আরও দুইদিন পর যাবে। বৃষ্টি এবার তার বাবার রুমের সামনে গিয়ে দাঁড়াল। তারপর দরজায় নক করে বলল,
— বাবা আসব?
— হ্যাঁ আয় মা।
বৃষ্টি ভেতরে ঢুকল। রাদিব সাহেব ইংরেজি ম্যাগাজিন পড়ছিলেন। বৃষ্টিকে দেখে তিনি ম্যাগাজিনটা পাশে রাখলেন। তারপর বৃষ্টির দিকে তাকিয়ে বলে উঠলেন,
— কিছু বলবি মা?
বৃষ্টি গিয়ে তার বাবার সামনে গিয়ে বসল।
— বাবা আমি কালই ফিরে যাব। আরেকটা কথা ছিল। তুমি ফুফিকে এই বিষয়ে কিছুই বললে না। ফুফি তো সব শুনে খুব রাগ হবে।
বৃষ্টির কথায় রাদিব সাহেব হালকা হাসলেন। তারপর বলে উঠলেন,
— তুই ওসব চিন্তা করিস না। তোকে যেদিন নিয়ে এসেছিলাম ওই দিন রাতেই আমি তোর ফুফিকে ফোনে সব বলেছি। তোর ফুফি কিছু কাজে আসতে পারেনি। তাই তুই ভেবেছিস ও জানে না। কিন্তু তোর ওসব নিয়ে ভাবার দরকার। আর আমি তোকে কালই নিয়ে যাব।
— আচ্ছা।
বলেই বৃষ্টি তার রুমে চলে গেল।
পরেরদিন রাদিব সাহেব বৃষ্টিকে মিসেস রায়ার বাসায় দিয়ে এলেন। বৃষ্টির বিয়ের কথা শুনে অভ্র আর আয়না অনেক আফসোস করেছে বিয়েতে যেতে না পারায়। কিন্তু পরে আবার বিয়ে হবে শুনে খুশি হয়েছে।
কয়েকদিন পর বৃষ্টির কলেজ খুলে দিলে সে আবার কলেজে যাওয়া শুরু করল। প্রায় প্রতিদিনই বৃষ্টির শ্রাবণের সাথে কলেজে দেখা হতো। কিন্তু দুজই স্বাভাবিক থাকত। তবে তাদের ফোনে ঠিকই কথা হতো। এভাবেই ছয়মাস কেটে গেল। এখনো কেউ জানে না বৃষ্টি শ্রাবণের স্ত্রী, এমনকি অভ্রও না? সে শুধু জানে বৃষ্টি বিবাহিত। কিন্তু কার সাথে বিয়ে হয়েছে সেটা জানে না। হঠাৎ একদিন রাদিব সাহেব মিসেস রায়াকে বললেন বৃষ্টিকে নিয়ে ওনার বাসায় আসতে।
চলবে,,,
( ভুলত্রুটি ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন। )