#আড়ালে_অন্তরালে
#মাহমুদা_লিজা
পর্বঃ১৮
কলটা রিসিভ করে ফোনটা কানে লাগাতেই রিহানের অস্হির কন্ঠটা শুনতে পেল মুরাদ। তার হাসফাঁ স করার কারণ জানতে চেয়ে মুরাদ বলল – কি হয়েছে রিহান?
মুরাদকে কথাটা কিভাবে জানাবে, কোথা থেকে শুরু করবে কিছুই বুঝতে পারছে না। আচমকা ঝড়ের মত বিপদের আগমনটা ঠিক কতটা ভয়াবহ হতে চলেছে তা ভেবে রিহানের স্বর রুদ্ধ হচ্ছে। মুরাদ এবার রসিকতার ছলে বলল – তুমি আজকাল কি বেশি বেশি মুভি দেখছো নাকি? কথা বলার মাঝে এত ব্রেক কষলে হয়?
রিহান মনে মনে ভাবছে খবরটা শুনলে মুরাদের কি অবস্থা হবে?
এবার সে আর ভণিতা করল না। ভূমিকা ছাড়াই রিহান বলল – বস, আপনার নামে টেলিভিশনে সংবাদ হচ্ছে। আপনার বিরুদ্ধে খু ন, লা-শ গুম এবং চাঁদাবাজির অভিযোগ আছে। আপনার সকল তথ্য পুলিশের কাছে কেউ পৌঁছে দিছে ইভেন আপনার ছবিও। যেকোন সময় এরেস্ট ওয়ারেন্ট আসতে পারে।
আচমকা এমন খবরে নির্বাক মুরাদ। তার বিরুদ্ধে আনা সকল অভিযোগ মিথ্যে। মুরাদ ঘূর্ণাক্ষরেও বুঝতে পারেনি তার প্রতিপক্ষ এত ঘৃণ্য খেলায় নামতে পারে। দীর্ঘনিশ্বাস ছেড়ে কলটা ডিসকানেক্ট করে ভাবতে লাগলো তার পরিচয় কে পুলিশকে দিল, তার ছবি পুলিশের হাতে কিভাবে গেল। সেতো সর্বক্ষণ মুখোশের আড়ালেই ছিল।
বসা থেকে উঠে দাঁড়াতেই মায়া জিজ্ঞেস করলো – কোথাও যাচ্ছেন?
মায়া খেয়াল করলো তার স্বামীর ঐ চাঁদমুখে কালো মেঘেরা ভিড় করেছে।
মুরাদ মায়ার দিকে তাকিয়ে বলল – বলোনা মায়া তুমি কার কাছে শুনেছ, কাকে ফোনে কথা বলতে শুনেছ?
মায়া ভাবছে সে কি ফোনের কথা বলে দিবে? মায়ার চুপ করে থাকাটা সহ্য হলোনা মুরাদের। আবার জিজ্ঞেস করলো – ও মায়া, বলোনা। তাহলে আমি সেজ জ্যেঠার সাথে আলোচনা করতাম।
মায়া অনেকটা জোর দিয়ে বলল – কাউকে কিছু বলবেন না। আপনি এটা কারো সাথেই আলোচনা করবেন না।
মুরাদ ভ্রু কুঁচকে বলল – মায়া তুমি জানোনা জ্যেঠা আমার সবচেয়ে বড় শুভাকাঙ্ক্ষী, আমি তার শুভাশিষ। তিনিই আমাকে সমাধান দিতে পারেন।
কথাটা বলেই মুরাদ ছুটে গেল, মায়া পিছু ডাকল কিন্তু মুরাদ থামলো না।
মায়া নিজেকে বলল – এজন্যই ফোনের কথাটা বলতে সাহস পাইনি, আপনি আমাকেই অবিশ্বাস করতেন আমি জানি। এতটুকু আপনাকে চিনেছি। কেন বুঝতে পারছেন না এখন কাউকেই বিশ্বাস করা উচিত না।
খানিক বাদে ফিরে এল মুরাদ। অস্হির পায়চারি করছে সে। ইমতিয়াজের কথা মনে পড়ল। ফোনটা হাতে নিয়ে লিস্ট থেকে তার নামে টাচ করতেই দেখলো কলিং হচ্ছে। ওপাশ থেকে ফোন রিসিভ হলো না। এবার নিজেকে শান্ত করে মায়ার পাশে বসে বলল – জ্যেঠাকে পাইনি। ঘরে নেই উনি।
মায়া সাহস সঞ্চার করে বলল – কি হয়েছে আমাকে কি বলা যাবে?
মায়ার দিকে তাকিয়ে মুরাদ বলল – আমায় ছাড়া বাঁচতে পারবে না মায়া? আমি না থাকলে তুমিও কি এ বাড়ি ছাড়বে?
মায়া কিছু বলল না কিন্তু ফের প্রশ্ন করল – কি হয়েছে?
মুরাদ এগিয়ে এসে মায়াকে বুকে জড়িয়ে বলল – তোমায় ছাড়া কি করে থাকব? তোমায় ছাড়া যে ওপারেও ভালো থাকব না।
মায়া নিজেকে ছাড়িয়ে বলল – আপনাকে একটা জিনিস দেয়ার আছে। এক মিনিট।
মুরাদ চেয়ে রইল মায়ার গতিপানে। মেয়েটা ছুটে গিয়ে আলমারির নিচ থেকে কিছু একটা বের করে এনে মুরাদের হাতে দিল। ছোট্ট বাটন ফোনটা এপিঠ ওপিঠ ঘুরিয়ে জিজ্ঞেস করল – কি এটা?
মায়া বলল – অন করে দেখেন?
ফোনটা আনলক করতে করতে মুরাদ বলল – কার ফোন?
মায়া বলল – জানিনা, পেয়েছি। আপনি মেসেজ আর কল লগটা দেখেন।
মুরাদ মেসেজ অপশনের ইনবক্স ওপেন করতেই বিস্ফোরিত চোখে দেখতে থাকল মেসেজগুলো। মেসেজের সেন্ড অপশনে কিছু পেলোনা সে। ফোনটা কার তাও বুঝতে পারলো না। তার একটাই চিন্তা হচ্ছে তাকে মোটামুটি বিভিন্ন অভিযোগে ফাঁ-সি-য়ে দেয়া হয়েছে। যেকোন মুহূর্তে সে গ্রেফতার হতে পারে।
মায়ার দিকে কৃতজ্ঞতার দৃষ্টি রেখে বলল – আমার অপেক্ষায় থেকো মায়া। আমি ফিরব। কিছুদিন বাদেই ফিরব। আমি কোন অন্যায় করিনি, আমার কোন অপরাধও নেই। তাই আমাকে কেউ আ ট কে রাখতেও পারবে না। কিন্তু তোমায় নিয়ে আমার যত ভয়। তোমায় আমি কার কাছে রেখে যাব। বিশ্বাসঘাতকের ধর্মই হলো দূর্বলতায় আঘাত করা। মায়া তুমি আমার সেই দূর্বলতা যার দিকে কেউ তাকালেও আমি কা বু হয়ে যাই।
নিজের পরিকল্পনার ছক একে একে সাজিয়ে নিল মুরাদ। তাকে আত্মসমর্পণ করতে হবে। বাদ বাকি কাজটায় রিহান আর ইমতিয়াজকে দায়িত্ব দিয়ে যাবে। মুহূর্তে মন পড়ল প্রশ্ন যদি আসে বিশ্বাসের তাহলে ফোনটা দেখার পর সকল ভরসাই শুন্য।
হঠাৎ মনে হানা দিলো – যদি সব প্রমাণের পরেও ক্ষমতার জোরে তাকে আ ট কে রাখা হয়? আজ তার প্রয়োজনে কেউ নেই তার পাশে। বোনের খু নি কে শাস্তি দেয়া হলোনা।
____
দরজায় কারো খটখট শব্দ শুনে দরজা খুলে রায়হান বলল – কি রে আবার এলি যে? বাবা এখনো আসেনি তো।
তানভীর ভেতরে গেল। বলল – তোর সাথে কথা আছে রায়হান ভাই।
রায়হান তানভীরকে নিজের ঘরে নিয়ে গেল। বসতে দিয়ে বলল – এবার বল, কি বলবি।
তানভীর বসল। মুখে হাসি টেনে বলল – সত্যি করে একটা কথা বলবি?
রায়হান ইতস্ততভাবে বলল – হেয়ালি করিস না বল।
তানভীর ছোট্ট একটা বাটন সেট বের করে তার সামনে ধরল। ছোট্ট করে বলল – এটা কার ফোন, রায়হান ভাই?
ফোনটা পরখ করে রায়হান বলল – কোন জাদুঘর থেকে এনেছিস? বাবা ছাড়াতো এ ফোন কেউ চালায় না। বুড়োটা এখনো সেকেলে রয়ে গেছে আর ছোট ছেলেটাকে বানিয়েছে ল ম্প ট।
ধনুকে মধু মাখিয়ে তীর ছুড়লেও তা যেমন বিদ্ধ করে বুকটায় ঠিক তেমনি রায়হানের কথাটাও তানভীরকে বিদ্ধ করল।
কথা না বাড়িয়ে তানভীর বলল – একটা উপকার করবি রায়হান ভাই?
রায়হান বলল – আমারও একটা উপকার করতে হবে।
তানভীর বলল – সময় হলে তোর উপকার করব।
রায়হান হেসে বলল – আরে বল বল। কি করতে হবে।
তানভীর চোখজোড়া বন্ধ করে বলল – আমি যদি না ফিরি আমার মায়াকে তোর বাবার হাত থেকে বাঁচাস। সিরাজ উদ দৌলার পতনে মীর জাফর ছিল ইংরেজের সহযোগী আর আমার যুদ্ধে তোর বাবা আমার প্রতিপক্ষ।
রায়হানের ভাবান্তর হলো না। নীরবে চাপা নিশ্বাসটা ফেলে সে বলল – টিভিতে নিউজটা দেখেছি আমি। পরবর্তী আপডেট অনুসারে তোর নামে এরেস্ট ওয়ারেন্ট জারি হয়েছে। খুব সম্ভবত তোর ঠিকানা অনুযায়ী আজ রাতেই তোকে তুলে নিবে, বাবাকে কারো সাথে বলতে শুনেছি। তুই আত্মসমর্পণ করে নিস।
তানভীর হেসে বলল – বীর কখনো মাথা নত করেনা, আমি ফিরব আমি জানি। আমাকে কেউ আড়ালে থেকে সাহায্য করছে। এই দেখ।
নিজের ফোনের মেসেজটা রায়হানকে দেখিয়ে বলল।
রায়হান চমকে উঠে বলল – আরিব্বাস, তোর কাছে তো পুরা প্রাণভোমরা রে। কে সে? কে এই শুভাকাঙ্ক্ষী?
তানভীর হেসে বলল – নিরুপমা। লেডি গোয়েন্দা। শখের বশে কাজ করে। সাদমানের ডান হাত ছিল।
রায়হান বিস্ময়ের চরম শিখরে পৌঁছাল। তানভীর হো হো করে হেসে বলল – সাদমানের ঠিকানাটাই পেয়ে গেছি, বর্তমানে তাকে নিয়ে আসা হচ্ছে। সে জানেও না সে যমের দুয়ারে আসছে। আর তোর বাবা আজ আর আসবে না। নিরুপমা জানিয়েছে – জ্যেঠু তার জিম্মায় আছে।
চলবে…….
টাইপোগ্রাফি: রত্নাপা