নিভৃত_কুহক (পর্ব ৫)

0
302

#নিভৃত_কুহক (পর্ব ৫)

মে, ২০২২

১.
সাব্বির আজ সকালেই ঘুম থেকে উঠেছে। মাথাটা কেমন ভার ভার লাগছে, কাল শেষ রাতে বৃষ্টি হয়েছিল। ঠান্ডা লাগছিল খুব, উঠে যে কাঁথা বের করে গায়ে দেবে আলিস্যিতে সেটা আর করা হয়নি। মুনিয়া থাকলে ঠিক কাঁথা বের করে গায়ে দিয়ে দিত। সেদিনের ঝগড়ার পর ও আর ওর সাথে আর ঘুমায় না। কথাও বলে না ঠিক করে। তাতে অবশ্য সাব্বিরের সুবিধেই হয়, এলিটার সাথে রাত জেগে কথা বলতে পারে।

সাব্বির দ্রুত গোসল সেরে বের হতেই জোরে কয়েকটা হাঁচি দেয়। ইশ, ঠান্ডা লেগে গেল। ওর একবার ঠান্ডা লেগে গেলে খুব ভোগায়। টাওয়েল দিয়ে ভালো করে আরেকবার মাথা মুছে নেয়। দেয়াল ঘড়ির দিকে তাকাতেই একটা তাড়া অনুভব করে, দ্রুত রেডি হতে থাকে ও। পিউকে স্কুলে নামিয়ে দিয়ে এলিটার অফিসে একবার যেতে হবে আজ। একটা বড় অর্ডার কনফার্ম হবার কথা আছে। কাজটা পেলে আর চিন্তা নেই, ভবিষ্যতের পথে অনেকটাই এগিয়ে যাবে। একটাই দুশ্চিন্তা, ইদানিং এলিটা কেমন যেন এড়িয়ে এড়িয়ে চলে। তা চলুক, ও কাজটা পেলেই হলো।

সাব্বির শার্ট ইন করতে করতে টের পায় রান্নাঘর থেকে আলু ভাজির ঘ্রাণ আসছে। তার মানে মুনিয়া ইতোমধ্যেই নাস্তা বানিয়ে ফেলেছে। ওর হাতের রুটি আলুভাজি অসাধারণ হয়। ডাইনিং রুমে আসতেই দেখে পিউ স্কুল ড্রেস পরে বসে আছে। নাহ বসে নেই ঠিক, সাত সকালেই বই খুলে স্কুলের পড়া পড়ছে।

ওকে দেখে হাসে, ‘গুড মর্নিং বাবা।’

সাব্বির একটা জোরে হাঁচি দেয়, তারপর বসতে বসতে বলে, ‘গুড মর্নিং আম্মু। নাস্তা করেছ তুমি?’

পিউ মাথা দোলায়, ‘হ্যাঁ বাবা। তুমি তাড়াতাড়ি নাস্তা করে নাও, আমার স্কুলের কিন্তু দেরি হয়ে যাচ্ছে তো।’

সাব্বির রান্নাঘরের দিকে একবার উঁকি দেয়। মুনিয়া ব্যস্ত হাতে নাস্তা রেডি করছে। সেদিকে তাকিয়ে বলে, ‘এই তো, নাস্তাটা পেলেই পাঁচ মিনিট লাগবে।’

মুনিয়া কথাটা শুনতে পায়, মনে মনে গজগজ করতে থাকে। চাকরি তো ও নিজেও করে, কিন্তু এই রান্নার ঝামেলা ওকে একাই সামলাতে হয়। কোনো কথা না বলে একটা প্লেটে দু’টো রুটি আর আলুভাজি দিয়ে যায়।

সাব্বির একবার তাকায়, মুখ গম্ভীর মুনিয়ার। মুনিয়া এমন, একবার রাগ করলে দশ পনের দিন কথা বন্ধ করে রাখে। সাব্বির এক টুকরো রুটি ছিঁড়ে আলুভাজি দিয়ে মুড়িয়ে মুখে দেয়। আলুটা ডিম দিয়ে ভেজেছে, তাই খুব স্বাদ লাগছে।

খাওয়া প্রায় শেষ পর্যায়ে। খুব ইচ্ছে হচ্ছে এক কাপ আদা চা লং দিয়ে খেতে, তাতে ওর ঠান্ডার উপকার হতো। কিন্তু মুনিয়া যেমন মুখ থমথমে করে রেখেছে তাতে চা চাইতে সাহস হয় না। রুটির শেষটুকু মুখে দিতেই মুনিয়া চা দেয়। সাব্বির অবাক হয়ে খেয়াল করে চা’টা আদা লং দিয়ে বানানো। তারমানে ওর যে ঠান্ডা লেগেছে সেটা মুনিয়া ঠিক খেয়াল করেছে। সাব্বিরের মন ভালো হয়ে যায়। আয়েশ করে চায়ে চুমুক দিতে থাকে।

পিউকে নিয়ে যখন গাড়িতে উঠে ততক্ষনে আটটা বেজে গেছে। মুনিয়া গাড়ি পর্যন্ত আসে। মেয়ের কপালে চুমু খেয়ে বিদায় দেয়। সাব্বিরের দিকে একবার তাকিয়ে চোখ সরিয়ে নেয়।

পিউয়ের স্কুল ৮.৩০টা থেকে। হাতে সময় আছে, ওর স্কুলটা কাছেই। গাড়িতে উঠেই পিউ বই খুলে বসে। মেয়েটা ইদানিং সারাক্ষণ মুখের সামনে বই ধরে থাকে। আগে তো অন্তত গাড়িতে বই পড়ত না। ভ্রু কুঁচকে বলে, ‘পিউ, পড়ার চাপ কি খুব বেশি? ইদানিং গাড়িতেও বই পড়ছিস।’

পিউ মুখ তোলে, চিন্তিত গলায় বলে, ‘বাবা, আমি যদি পড়াশোনায় অনেক ভালো করি তাহলে মাকে আর কেউ কিছু বলতে পারবে না। আমি কালো হলেও তখন সবাই আমাকে আদর করবে।’

সাব্বির একটা ধাক্কা খায়। ওর ছোট্ট মেয়েটাও এমন করে ভাবছে! এমন করে পৃথিবীটাকে সাদা কালোতে ভাগ করে ফেলছে !! মনটা ভীষণ খারাপ হয়ে যায়। নাহ, সেদিন আসলে মায়ের কথার প্রতিবাদ করা উচিত ছিল।

পিউকে নামিয়ে দিয়ে ও চিন্তিত মুখে এলিটার অফিসের দিকে যেতে থাকে। আজ দিনটা ভালো, নাকি খারাপ? বুঝতে পারে না সাব্বির।

এলিটার অফিসে এসেই ও ফোন দেয়। কয়েকবার রিং হয়ে কেটে যায়। ভ্রু কুঁচকে একবার ফোনের দিকে তাকায়। পাঁচ মিনিট পর আবার ফোন দিতেই কেটে যায়। একটা মেসেজ আসে, ‘আমি মিটিংয়ে।’

সাব্বির অপেক্ষা করতে থাকে। এর মাঝেই এলিটার ডিপার্টমেন্টের একজন অফিসার এসে ওকে একটা খবর দেয়। আর তাতে ও বজ্রাহত হয়ে বসে পড়ে। কাজটা ও পায়নি!! কয়েক কোটি টাকার কাজ ছিল। কেন পেল না? হঠাৎ করেই ওর মনে পড়ে এই কাজের কমিশন নিয়ে এলিটা এবার দর কষাকষি করছিল খুব। শেষ পর্যন্ত একটু বেশি দিয়েই রাজি করিয়েছিল ওকে। তাহলে? সাব্বিরের ভীষণ অসহায় লাগছিল। ও বার বার ফোন করেও সেদিন এলিটার দেখা পায় না। যত সময় গড়ায় জেদ বাড়তে থাকে।

সেদিন বিকেলে এলিটাদের অফিস যখন ছুটি হয় সাব্বির গাড়ি নিয়ে ওর পিছু ছোটে। সাব্বির আজ এর শেষ দেখে ছাড়বে। এলিটা আজ অফিসের মাইক্রোবাসেই বাড়ি ফিরছে। অল্প কিছুদূর যাওয়ার পর গাড়িটা একটা স্টপেজ থামে। একজন সহকর্মী নামে, সাথে এলিটাও। আজ এলিটা একটা গোলাপি শাড়ি পরেছে। কী যে সুন্দর লাগছে ওকে!

একটা তৃষ্ণা টের পায় সাব্বির। ও বুভুক্ষের মতো তাকিয়ে থাকে। কিন্তু এটা তো এলিটার স্টপেজ না। সাব্বির দূর থেকে দেখে এলিটা ওর সহকর্মীকে বিদায় দিয়ে পাশের শপিং মলের দিকে এগোয়। তার মানে ও অন্য কারও সাথে দেখা করবে? ভাবনাটা ভাবতেই মনের ভেতর একটা রাগ টের পায়। এক্সিলেটরে চাপ বাড়ে, সাঁই করে গাড়িটা ওর একদম গা ঘেঁষে থামে। এলিটা ভয়ে এক লাফ দিয়ে সরে যায়। সাব্বির গাড়ি থেকে নেমে সজোরে গাড়ির দরজা লাগায়।

এলিটা ভয়ার্ত চোখে সাব্বিরকে এগিয়ে আসতে দেখেই চাপা গলায় বলে, ‘রাস্তায় কোনো সিনক্রিয়েট করবে না।’

সাব্বির রাগে কাঁপতে কাঁপতে বলে, ‘তুমি আমার ফোন ধরছ না কেন? এত বড় একটা কাজ হাত ফস্কে গেল কী করে?’

এলিটা নিজেকে সামলে নিয়ে বলে, ‘আমি সব বুঝিয়ে বলছি তোমাকে। আমার পেছন পেছন আসো, ওই কফিশপটায় বসি।’

সাব্বিরের রাগ একটু কমে। ও এলিটার পিছু পিছু কফিশপটায় গিয়ে বসে। দু’কাপ কফি অর্ডার করে এলিটা। সাব্বির মাথা নিচু করে বসে আছে।

এলিটা নিজেই কথা তোলে, ‘সাব্বির, এবারের কাজটা তোমাকে দিতে পারলাম না, সরি। মি. নাদিম ইকবাল তোমার চেয়ে দ্বিগুণ কমিশন দিয়েছেন।’

সাব্বির অবাক গলায় বলে, ‘নাদিম দ্বিগুণ কমিশন দিয়েছে! কই বলোনি তো আমাকে।’

এলিটা জিজ্ঞাসু গলায় বলে, ‘বললে, কী করতে?’

সাব্বির ওর দিকে ঝুঁকে এসে বলে, ‘আমিও তাহলে দ্বিগুণ কমিশন দিতাম।’

এলিটা হাসে, তারপর বলে, ‘তুমি গাড়ি কিনে দিতে?’

সাব্বির হতভম্ব গলায় বলে, ‘নাদিম ইকবাল গাড়ি কিনে দিয়েছে তোমাকে! অসম্ভব!’

এলিটা একটা তাচ্ছিল্যের হাসি হাসে, বলে, ‘জানতাম তুমি পারবে না। তাই তোমাকে বলিনি। কাজটা পাবার যোগ্য মানুষ ওই নাদিম ইকবালই।’

সাব্বির যেন ভেতরে ভেতরে ভেঙে পড়ে, ভাঙা গলায় বলে, ‘আমাদের মধ্যে কি শুধুই দেওয়া নেওয়ার সম্পর্ক? আমি তোমাকে ভালোবাসি এলিটা, তুমিও তো আমাকে ভালোবাসো। আমার জন্য এতটুকু মায়া হলো না তোমার?’

এলিটার চোখে কৌতুক দেখা যায়, ওর দিকে ঝুঁকে বলে, ‘ভালোবাসি? কে বলল? আর মায়া দিয়ে আমি কী করব? আমাকে যে বেশি দেবে আমি তারই কাজ করব। আর নাদিম তোমার মতো না, ওর মন অনেক বড়।’

সাব্বিরের মাথায় আগুন ধরে যায়, হিসহিসিয়ে বলে, ‘আমি তোমার সব কুকীর্তি ফাঁস করে দেব। তুমি যে কমিশন নিয়ে কাজ দাও, বলে দেব।’

এলিটা ছোট্ট একটা নিঃশ্বাস নেয়, তারপর কঠিন গলায় বলে, ‘এ ব্যাপারটা নিয়ে আমি নাদিমের সাথে কথা বলেছি। ও বলেছে তোমার ব্যাপারটা ও দেখবে। ওর হাত কিন্তু অনেক লম্বা। জানো তো, এই লাইনে মানুষজন কত নিষ্ঠুর হতে পারে।’

শেষ কথাটা থ্রেটের মতোই শোনায়। সাব্বিরের মনে হয় ওর সবকিছু যেন ভেঙেচুড়ে যাচ্ছে। একটা ব্যাপার পরিস্কার, ও এতদিন ভুল ভেবে এসেছে। এলিটার ওর জন্য একবিন্দু ভালোবাসা নেই, মায়া নেই। কেন জানি সামনে বসে থাকা মোহময়ী এলিটাকে একটা বিষাক্ত সাপ মনে হচ্ছে এখন।

ও আর দাঁড়ায় না, বেরিয়ে আসে। টের পায় এলিটার বিদ্রুপাত্মক হাসি ওর পিঠে ছুরির মতো বিঁধছে।

২.
বাসায় ফিরে সাব্বির সেদিন না খেয়েই ঘুমিয়ে পড়ে। মুনিয়া একবার বলতে যেয়েও বলে না। নিশ্চয়ই স্বার্থপরের মতো একা খেয়ে এসেছে। মুনিয়া তাও এক দু’বার ওর সামনে দিয়ে ঘোরে, কিন্তু আজ সাব্বির কিছুই বলে না। কেমন মুখ গোমড়া করে শুয়ে আছে। ঘুমায়নি যে এটা সত্যি। কোনো ঝামেলা হয়েছে? এবার একটু দুশ্চিন্তা হতে থাকে মুনিয়ার।

রাত একটু বাড়তেই মুনিয়া পিউয়ের রুম থেকে উঠে আসে। সাব্বির কাল নিশ্চয়ই কাঁথা বের করে গায়ে দেয়নি, তাই ঠান্ডা লেগেছে। ক’দিন ধরেই ঝুম বৃষ্টি হচ্ছে, শেষ রাতে ঠান্ডা পড়ে। সাব্বিরের আবার ঠান্ডার খুব ধাঁত। কথাটা মনে হতেই ও শব্দ না করে আলমারি থেকে পাতলা কাঁথা বের করে আলগোছে সাব্বিরের পাশে রেখে দেয়। তারপর বের হতে যেতেই একটা নিচু গলা পাওয়া যায়, ‘মুনিয়া, ক্ষুধা পেয়েছে। ভাত কি আছে?’

মুনিয়া থমকে দাঁড়িয়ে পড়ে, সাব্বির আজ খায়নি! কেন? তাহলে নিশ্চয়ই কোনো ঝামেলা হয়েছে। সাব্বির ক্ষুধা সহ্য করার মানুষ না। যেহেতু না খেয়েই ঘুমিয়ে পড়েছে তার মানে নিশ্চয়ই বড় ধরনের কোনো ঝামেলা হয়েছে। এবার মুনিয়ার খুব মায়া হয়।

মন খারাপ গলায় বলে, ‘তুমি না খেয়ে শুয়ে আছ! আশ্চর্য, আমাকে বলবে না একবার?’

সাব্বির অভিমানী গলায় বলে, ‘তুমি তো আমার সাথে কথাই বলো না।’

মুনিয়া রাগ করে কিছু বলতে যেয়েও বলে না, নিচু গলায় বলে, ‘এসো, খেতে এসো।’

সাব্বির মুনিয়ার গলায় একটা মায়া টের পায়। যে মায়া মানুষকে বাঁধে, কাছে টানে। আজ এলিটা ওকে চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিয়েছে গায়ের রঙটা আসল না, মনের মায়াটাই আসল। মায়ার জন্যই বুঝি মানুষ সুন্দর হয়ে ওঠে। জীবনে এই প্রথম ওর একটা উপলব্ধি হয়, যেটা অনেক আগেই ওর হওয়া উচিত ছিল।

সেদিন রাতে মুনিয়া অনেক যত্ন করে খাবার বেড়ে দেয়। সাব্বির কোনো কথা না বলে গোগ্রাসে খেতে থাকে। ভীষণ ক্ষুধা পেয়েছিল। খাওয়া শেষে মুনিয়া সব গুছিয়ে যখন শুতে যাবে সাব্বির পেছন থেকে হাত টেনে ধরে বলে, ‘মুনিয়া, সরি।’

ছোট্ট একটা শব্দ, কিন্তু সেটাই যেন অনেক বড় হয়ে ধরা দেয়। মনের ভেতর সব অভিমানের পাহাড় নিমিষেই উধাও। গলা বুজে আসে, চোখের কোণে জল জমা হয়।

একটা হাত দিয়ে আলগোছে চোখ মুছে নরম গলায় বলে, ‘কি হয়েছে তোমার, বলো তো। কোনো বড় ধরনের সমস্যা?’

সাব্বির চিন্তিত গলায় বলে, ‘আজ বড় একটা অর্ডার পাবার কথা ছিল, কিন্তু শেষ মুহুর্তে কাজটা ফস্কে গেছে।’

মুনিয়া শান্ত গলায় বলে, ‘তাতে এত মন খারাপ করছ কেন। একটা কাজ ফস্কে গেছে সামনে আরও কাজ আসবে।’

সাব্বির হতাশ হয়ে মাথা নাড়ে, বলে, ‘ব্যাপারটা যত সহজ ভাবছ অতটা সহজ না। যে কোম্পানি থেকে আমি বেশিরভাগ অর্ডার পেতাম ওরা আর আমাকে অর্ডার দেবে না হয়ত। সেক্ষেত্রে একদম পথে বসে যাব। এরই মধ্যে আমি অনেক টাকা ইনভেস্ট করে ফেলেছি।’

মুনিয়া ভ্রু কুঁচকে তাকিয়ে থাকে, এবার ও বিপদটা বোঝে। সেইসাথে এটাও বোঝে কেন সাব্বির এত দুশ্চিন্তাগ্রস্ত। মুনিয়া এবার ওর পাশে এসে বসে।

আলতো করে একটা হাত ধরে বলে, ‘তুমি এত চিন্তা করছ কেন? একটা সময় তো কিছুই ছিল না। শুন্য থেকেই শুরু করেছিলে। একটা কোম্পানি কাজ না দিক, আরও শত শত কোম্পানি আছে। আর টাকা পয়সা নিয়ে চিন্তা করো না একদম। আমি তো আছিই।’

সাব্বিরের হঠাৎ করেই বিয়ের প্রথম দিনগুলোর কথা মনে পড়ে যায়। ও তখন টুকটাক কাজ করে। মুনিয়াই ওকে তখন ধার করে টাকা এনে দিল। বড় বড় কাজগুলো সাহস করে নিতে বলল। মূলত ওর জন্যই তখন একটা একটা করে কাজ পেতে শুরু করল। আজও মুনিয়া ঠিক তেমন করেই পাশে থাকতে চাচ্ছে, সাহস দিচ্ছে। হঠাৎ করেই ওর মনের দুশ্চিন্তাগুলো যেন মিলিয়ে যায়। মুনিয়াকে বুকে টেনে নিতে নিতে ভাবে ও বড্ড ভুল পথে ছিল এতদিন। মুনিয়ার মতো মায়ার মানুষকে ও ঠকিয়েছে, তাই বুঝি এমন হলো। জীবনের এই বড় ধাক্কাটা ওর পাওনা ছিল।

সেদিন রাতে সাব্বিরের বুকে মুনিয়া মুখ গুঁজে ঘুমিয়ে পড়ে, শান্তির ঘুম। সাব্বির অনেক মায়া নিয়ে ওর পিঠে হাত বুলিয়ে দিতে থাকে। ঘুমিয়ে পড়তে পড়তে মুনিয়ার হঠাৎ করেই রেহনুমার কথা মনে হয়। যে তার মায়ার মানুষ খুঁজে পেয়েছিল। আজ কেন জানি মনে হচ্ছে ও নিজেও আজ বহুদিন পর সেই নিভৃত মায়ার সন্ধান খুঁজে পেল। নাহ, রেহনুমা আর ওর হাসব্যান্ড আরিফের সাথে দেখা করতে হবে। সামনেই তো ওদের বিয়ের উনিশ বছর পূর্তি হবে। তখন ও নিজেই যাবে বিয়ের কার্ড নিয়ে। সেই সুযোগে একবার ওদের মায়ার বসতবাড়িতে ঢুঁ মেরে দেখে আসতে হবে, ওরা কি এখনও মায়ার বাঁধনেই জড়িয়ে আছে, না কি জীবনের বাস্তবতা সেটা কেড়ে নিয়েছে।

(চলবে)

মোহাম্মদ হাবিবুর রহমান সুবাস
শিমুলতলী, গাজীপুর
১৯/০৪/২০২৩

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here