#বসন্তের_একদিন
#পর্বঃ১৩
#লেখিকাঃঅনন্যা_অসমি
” ভাবী?ভাবী?আমার নাস্তা কোথায়?এতবেলা হয়ে গেলো এখনো নাস্তা দিলে না কেন?” চিৎকার করে কথাগুলো বলতে বলতে রান্নাঘরে প্রবেশ করে তিথি।কিন্তু রান্নাঘরে যেয়ে সে যা দেখে তা দেখে সে ঘাবড়ে যায় তিথি।
” ভাবী ভাবী কি হয়েছে?ভাবী চোখ খোলো।”
তিথি দৌড়ে বাইরে এসে সবাইকে ডাকতে থাকে।
” কি হয়েছে কি এভাবে ষাঁড়ের মতো চিৎকার করছিস কেন?” নন্দিনী বলে।
” দেখোনা ভাবীর যেন কি হয়েছে।রান্নাঘরের মাটিতে পড়ে আছে।”
” কি বলছিস কি?দেখি দেখি সর।” ফাতেমা বেগম তাড়াতাড়ি রান্নাঘরে আসে।
” বউমা ও বউমা কি হয়েছে তোমার?ও তিথি তাড়াতাড়ি পানি দে।”
তিথি তাড়াতাড়ি পানির গ্লাস ফাতেমা বেগমকে দেয়।ফাতেমা বেগম তৃধার চোখে পানির ছিটে দেয় তবে তৃধা চোখ খোলেনা।
” কিরে তিথি এতো পানি দিলাম কিন্তু তাও তো ও চোখ খুললো না।কি হলো ওর আবার?”
” জানিনা মা কিছু বুঝতে পারছিনা।”
” আচ্ছা আগে ওরে ধর।রুমে নিয়ে যায় আগে তারপর দেখা যাবে।”
তিথি আর নন্দিনী ধরে তৃধাকে রুমে নিয়ে আসে।
” তিথি শোন তুই বাবুকে ফোন দে,দেখ ও কি বলে।”
তিথি দৌড়ে রুমে গিয়ে তেজবীনকে ফোন দেয়।প্রথমবার তেজবীন ফোন রিসিভ করেনা।কিন্তু তিথি আবারো ফোন দেয়।
” কি সমস্যা?এতোবার ফোন দিচ্ছিস কেন?” বিরক্তি নিয়ে বলে তেজবীন।
” ভাইয়া ভাবীর না কিছু হয়েছে।”
” কিছু হয়েছে মানে?”
” আমি ভাবীকে রান্নাঘরের মেজেতে অজ্ঞান অবস্থায় পেয়েছি।”
” তাহলে চোখে মুখে পানি দে।জ্ঞান চলে আসবে।”
” দিয়েছি তবে এখনো জ্ঞান ফিরছেনা।তুমি প্লিজ ডাক্তারকে ফোন করো।”
” আচ্ছা ঠিক আছে।আমি দেখছি কি করা যায়।তোরা ওর খেয়াল রাখ।”
” কি রে বাবু কি বললো?”
” বললো দেখছে।”
ফাতেমা বেগম আর তিথি হঠাৎ তৃধার অজ্ঞান হয়ে যাওয়াতে ভীষণ টেনশনে আছে।কিন্তু এদিকে এসবে নন্দিনীর কোন মাথাব্যথা নেয়।সে বিরক্তি নিয়ে রুমের এককোণায় দাঁড়িয়ে আছে।
পিটপিট করে চোখে খুলে তৃধা।মাথাটা তার প্রচুর ভারী লাগছে।সে আস্তে আস্তে উঠে বসে।
” আরে আরে তুমি উঠছো কেন?শুয়ে থাকো?” অস্থির হয়ে বলে তেজবীন।
” তেজবীন তুমি এখানে!এই সময়ে?আর আমি রুমে কি করে এলাম?আমি তো রান্নাঘরে ছিলাম।”
তেজবীন হাসিমুখে তৃধার পাশে এসে বসে।তারপর তৃধার ডান হাতটা তার পেটে রাখে।
” কি হলো?তুমি……” আর কিছু বলতে গিয়েও বলতে পারলোনা তৃধা।তেজবীন কি বুঝাতে চেয়েছে তা তৃধা বুঝতে পেরে গিয়েছে।
” আমার বাচ্চা?”
” হুম।” মাথা নাড়িয়ে বোঝায় তেজবীন।
তেজবীনের কথা শুনে তৃধা খুশিতে কান্না করে দেয়।তেজবীনের চোখেও পানি জমে যায়।
” আচ্ছা তুমি এবার কান্না বন্ধ করো।কান্না করা স্বাস্থ্যের জন্য যদি ভালো না হয় তো?এতে আমার বাচ্চার ক্ষতি হবে।চুপ করো।”
তৃধা কান্না বন্ধ করে তবে সে এখনো নাক টেনে যাচ্ছে।
” তুমি বসো আমি সবার জন্য মিষ্টি নিয়ে আসছি।”
” সাবধানে যেও।”
তেজবীন দ্রুত ঘর থেকে বেরিয়ে যায়।তৃধা নিজের পেটে হাত দিয়ে আবারো নীরবে কান্না করে।
.
.
.
” আমি আর খাবোনা না তেজবীন।অনেক খেয়েছি।”
” আচ্ছা আরেক পিস খাও।” আপেলের একটা টুকরো তৃধার মুখের সামনে নিয়ে বলে তেজবীন।তৃধা আপেলের টুকরোটা খেয়ে নেয়।তেজবীনের পাগলামি দেখে আনমনে হাসে তৃধা।তৃধা জানে তেজবীনের বাচ্চা খুব পছন্দ তাই তো বেবির কথা শুনে সে এতো পাগলামি করছে,তৃধার এতো খেয়াল রাখছে।
রাতে,
সবাই খাবার টেবিলে বসে পড়েছে।তৃধা সবাইকে খাবার বেড়ে দেওয়া জন্য দাঁড়িয়ে আছে।
” আরে তৃধা তুমি দাঁড়িয়ে আছো কেন?আজ থেকে সবকাজ কম কম করবে।বসো তুমি,এই কয়েকদিন না হয় সবাই নিজের কাজ নিজে করুক।”
” আমি পড়বো তেজবীন।মাত্রই তো ২ মাস।আমি ঠিক আছি।তুমি বসো,আমি সবাইকে খাবার দিচ্ছি।”
” চুপ একদম।আমি যেটা বলছি সেটাই হবে।বসো তুমি।” তেজবীন জোর করে তৃধাকে বসিয়ে দেয় এবং তার প্লেটে খাবার বেড়ে দেয়।
” চুপচাপ খাও আর আজ থেকে তাড়াতাড়ি খাবার খেয়ে শুয়ে পড়বে।”
সবাই বিরক্তিকর মুখ করে তেজবীনের কান্ড দেখছে।তবে তিথির এসবে কোন মাথাব্যথা নেই,সে নিজের মতো করে অনেক আগেই খাওয়া শুরু করে দিয়েছে।
” যেরকম করছিস,মনে হচ্ছে দুনিয়াতে আর কারো বাচ্চা হয়নি।” মুখ বাঁকা করে বলে নন্দিনী।
” দুনিয়াতে আর কারো হয়েছে কি হয়নি তা দিয়ে আমার কিছু যায় আসেনা।আমার বাচ্চা তাই আমি যেমন খুশি তেমন ভাবেই আমার বাচ্চার খেয়াল রাখবো।”
ফাতেমা বেগমে খাবার বেড়ে দিয়ে তেজবীন খেতে বসে যায়।নন্দিনী আর রুদ্র তেজবীনের ব্যবহারে খুবই অপমান বোধ করে।পরে বাধ্য হয়ে তারাও নিজের খাবার বেড়ে নেয়।
পরেরদিন সকালে,
” না তুমি অফিস যাবেনা আজ থেকে।” রেগে বলে তেজবীন।
” দেখো তেজবীন মাত্র ২ মাস,এখন আমি ঠিক আছি।আমি নিজের খেয়াল রাখবো তো।তুমি প্লিজ এরকম করোনা।”
” না আমি কোন কথা শুনবোনা,তুমি অফিস যাবেনা মানে যাবেনা।”
” কি সমস্যা তোদের?সকাল থেকে এতো চিৎকার চেঁচামেচি করছিস কেন?” ফাতেমা বেগম বলেন।
” দেখোনা মা ওকে বলছি আজ থেকে অফিস না যেতে কিন্তু ও আমার কোন কথা শুনছেনা।”
” বাবু তুই কিন্তু এখন একটু বেশিই করছি।অফিস যাচ্ছে তো কি হয়েছে?আমরা কি বাচ্চা জন্ম দিয়নি নাকি?”
” তোমরা কি করেছো না করেছো সেটা তোমাদের ব্যপার।আমি কিছুতেই ওকে আর চাকরি করতে দেবোনা,অনন্ত বাচ্চা না হওয়া পর্যন্ত।কারণ আমি আমার বাচ্চার ব্যপারে কোন রিক্স নিতে চাইনা।”
” মা তুমি চলে এসো তো।যতসব ঢং।তুমি কথা বলোনা,ওদের যা ইচ্ছে ওরা তাই করুক।” ড্রইং রুম থেকে চেঁচিয়ে বলে নন্দিনী।
ফাতেমা বেগম বিরবির করতে করতে চলে যান।তৃধা অনেক কাঠখড় পুড়িয়ে তেজবীনকে বোঝায়।আর অবশেষে তেজবীন রাজিও হয়ে যায় তবে শুধু ৫ মাস পর্যন্ত।এরপর তৃধা আর ঘর থেকে বের হতে পারবেনা।আপাততের জন্য তৃধাও তেজবীনের কথায় রাজি হয়ে যায়।
তেজবীন অফিস যাওয়ার সময় তৃধাকে তার অফিসে ছেড়ে দেয় আর যাওয়ার সময় বলে ছুটি হলে সেই নিতে আসবে।
বেশকিছু দিন পর,
এই কয়েকদিন তৃধার বেশ ভালোই কেটেছে।তেজবীন এখন আগের থেকে তৃধার আরো বেশি খেয়াল রাখছে।সে এখন যথাসম্ভব বাড়িতে থাকার চেষ্টা করে।তৃধা জানে তেজবীন যা করছে সব তার বাচ্চার জন্যই করছে।কিন্তু করছে এতেই তৃধা অনেক খুশি।
তৃধা তিথির রুমের পাশ দিয়ে যাচ্ছিলো তখন সে শুনতে পাই তিথি যেন কারো সাথে ফোন কথা বলছে।তৃধা একটু কাছে গিয়ে শোনার চেষ্টা করে তিথি কি বলছে কিন্তু শুনতে পাইনা।
” তিথি?তিথি?”
দরজা নক করার কিছুক্ষণ পর তিথি দরজা খুলে।
” কি হয়েছে?”
” কি করছো তুমি?”
” কাজ করছি?কেন?”
” না এমনি।তুমি তোমার কাজ করো।”
তিথি দরজা বন্ধ করে দেয়।এতোদিন বাচ্চার কথা ভাবতে ভাবতে তৃধার মাথা থেকে তিথির কথাটা বেরিয়েই গিয়েছিলো।
” আমাকে আবারো তিথির উপর নজর রাখতে হবে।যে করেই হোক আমার জানতে হবে তিথি কার সাথে এভাবে লুকিয়ে লুকিয়ে কথা বলে।”
৪ মাস পর,
তৃধা এখন ৬ মাসের প্রেগন্যান্ট।সামান্য ফুলেছে তার পেট।এখন তৃধা আর অফিসে যান না।অনেক বলেও সে তেজবীনকে অফিসের জন্য রাজি করাতে পারেনি।তাই বাধ্য হয়ে তৃধাও তেজবীনের কথা মেনে নেয়।
বাড়িতে এখন তিথি আর তৃধা ছাড়া কেউ নেই।ফাতেমা বেগম আর নন্দিনী বাইরে গিয়েছে।নন্দিনী এখনো না যাওয়ার কারণ তেজবীন এখন তৃধাকে খুব বেশি কাজ করতে দেয়না তাই ফাতেমা বেগমকে সাহায্য করার জন্য নন্দিনী রয়ে গিয়েছে।
তিথির সাথে কথা বলার জন্য তার রুমে আসে তৃধা।কিন্তু সে তিথিকে দেখতে পায়না।তৃধা সাবধানে বিছানায় বসে পড়ে।হঠাৎ করেই টুং করে একটা শব্দ হয়,মেসেজ আসার শব্দ।ঘাড় ঘুড়িয়ে তৃধা তিথির ফোনটা দেখতে পাই।তৃধা তাড়াতাড়ি উঠে ফোনটা হাতে নেয়।তৃধা তাড়াতাড়ি একটা পাসওয়ার্ড দেয়,আর ভাগ্যক্রমে ফোনের লক খুলে যায়।তৃধা তাড়াতাড়ি মেসেজটজ চেক করে কিন্তু মেসেজ দেখে তার মাথায় যেন বাজ পড়ে।
চলবে……