বসন্তের_একদিন (সিজনঃ০২) #পর্বঃ২০ #লেখিকাঃঅনন্যা_অসমি

0
321

#বসন্তের_একদিন (সিজনঃ০২)
#পর্বঃ২০
#লেখিকাঃঅনন্যা_অসমি

শায়লা খাতুন খুশি মনে হরেক রকমের পদ রান্না করে নিজে দাঁড়িয়ে থেকে মেয়ে এবং মেয়ের জামাইকে খাইয়েছিলেন। ভেবেছিলেন এবার বুঝি মেয়ের সুবুদ্ধি হয়েছে, সব ঝামেলা মিটিয়ে এবার হয়তো সে ফিরে যাবে। কিন্তু ওনার আশায় এক বাতলি পানি ঢেলে দিলো তৃধা।

তেজবীন খাওয়া শেষে তৃধার অপেক্ষায় দাঁড়িয়ে ছিলো। তৃধা তেজবীনের সাথে দরজা পর্যন্ত গিয়ে আর না এগোলে তেজবীনের ভ্রু-কুচকে গেলো।

” আর কখনোই এবাড়ি মুখো হবেনা। আজ এসেছো, দরজা থেকে বিদেয় দিতে বিবেকে বেঁধেছে বলে ঘরে ঢুকিয়েছি। বাড়িতে গিয়ে যেন তোমার মা-বোনকে বলতে না পারো তোমাকে খালি মুখে ফিরিয়ে দিয়েছি তাই আদরযত্ন করে খাইয়েছি। এবার আসতে পারো।”

” আসতে পারো মানে? তুমি যাবে না?”

তাচ্ছিল্যের হাসি হেসে তৃধা জবাব দিলো,

” তেজবীন তুমি আমাকে এতোটাই আত্মসম্মানহীন মনে করেছো যে এতো কিছুর পর, আমি আমার কথা ফিরিয়ে নিয়ে আবারো নিলর্জ্জের মতো ফিরে যাবো? তন্বীর দোহাই দিয়েও কোন লাভ নেই, আমি আমার সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলেছি। হয় তুমি নিজেকে ঠিক করবে, নিজের মা-বোনকে তাদের ভুল দেখিয়ে দিয়ে তাদের ঠিক করবে নয়তো চিরতরে আমাকে মুক্তি দেবে। দু’টোর মধ্যে একটা ঠিক করে তবেই দ্বিতীয়বার এ বাড়িমুখো হবে।”

তেজবীনের মুখের উপর দরজা বন্ধ করে দিলো তৃধা। অপমানিত হয়ে তৃধার থম থম করে চলে গেলো।

” তুই এটা কি করলি মুখপুরি? জামাইকে এতো কষ্ট করে মানিয়েছিলাম, তুই কিনা আবারো জিদ দেখিয়েছিস? হে খোদা এবার তো তোকে জীবনেও ওরা ঘরে তুলবে না। তুই কি সারাজীবন বাপের বাড়িতে পড়ে থাকার চিন্তা করছিস নাকি!”

” মা আজ যা করেছো দ্বিতীয়বার সেটা আর করোনা। তাহলে আমি এই বাড়ি কেন, এই শহর ছেড়ে এতোদূরে চলে যাবো যে আমার খোঁজও পাবে না। আমার কপালটাই খারাপ। যেখানে নিজের মা’ই মেয়ের কষ্ট বুঝতে পারেনা, সেখানে অন্যের থেকেই বা আমি কি আশা করবো।”

সন্ধ্যাবেলা মোহনাকে সব কথা বললে সেও শায়লা খাতুনের উপর রেগে আগুণ।

” দেখ তৃধা তোর মেয়েটা এখনো অনেক ছোট। তুই থাকিস অফিসে, এখন একা বাসা নিলে বিপদ হতে পারে। কেয়ারটেকারের কাছে রেখে গেলেও নিশ্চিয়তা নেই। টাকার জন্য তারাও যেকোন কিছু করতে পারে। আমার ছেলে কিছুটা বড় হয়েছে বলে আমি ওকে নিয়ে এখন একা থাকতে পারছি। আমি যখন হসপিটালে থাকি সে তখন স্কুলে থাকে বলে তেমন কোন সমস্যা হয়না। কিন্তু তুই তন্বীকে একা বাইরের কারোর ভরসায় রেখে যাওয়া আমার মতে ঠিক না। কারণ ওদের কোন ভরসা নেই, তোর অনুপস্থিতে তন্বীর ক্ষতি করতে পারে।”

মোহনার কথায় যুক্তি খুঁজে পেলো তৃধা।

” শোন মায়ের কাজটা একদমই ঠিক হয়নি কিন্তু ওনারই বা কি দোষ দেবো? বয়স হচ্ছে, তার উপর তোর ভবিষ্যত নিয়ে উনি এখন চিন্তিত। আশেপাশে মেয়েদের অবস্থা দেখে উনি তোকে নিয়ে দুঃশ্চিতায় আছেন। তোর ভাইও আমাকে বলেছে। বাঙালি মা উনি, এরকম প্রতিক্রিয়া দেখানোই স্বাভাবিক। উনি করবেন এরকম কিন্তু তুই এখনই আলাদা হয়ে যাস না। ও বাড়িতেই থাক, অনন্ত তন্বী নিরাপদ থাকবে।”

” ঠিক আছে আমি ভেবে দেখছি।”
.
.

আবারো চিৎকার করে কান্না করে উঠলো তন্বী। তৃধা দ্রুত বাথরুম থেকে বেরিয়ে এসে মেয়েকে কোলে তুলে নিলো। সারা বাড়ি হেঁটে, নানা বাহানা করে অনেক সময় পর তার কান্না থামাতে সক্ষম হলো তৃধা। ক্লান্তিতে মায়ের কোলেই ঘুমিয়ে পড়লো তন্বী। তৃধার চোখে মুখে চিন্তার ভাব। কয়েকদিন ধরে আচমকাই তন্বী কোন কারণ ছাড়া কান্না করে উঠছে। রাত নেই দিন নেই, ঘুমে থাকলেও আচমকা চিৎকার করে কান্না করতে থাকে সে।
.
.

কিছু কাজে এক আত্নীয়ের বাসা থেকে ফিরছিলো তৃধা। একটা ছোট গলি পার হতেই সে দেখলো ফাতেমা বেগম বেশ সরু একটা গলি দিয়ে কোথাও যাচ্ছেন। গলিটা এতোটাই সরু যে একজন মানুষ ব্যতিত দু’জন চলা সম্ভব নয়। এখানে ওনার কি কাজ সেটাই তৃধা অনুমান করতে পারছেনা। সে প্রথমে ভাবলো ওনাকে অনুসরণ করবে কিন্তু আশেপাশে চোখ বুলিয়ে নিজের সিদ্ধান্ত পরিবর্তন করে ফেললো। জায়গায়টা তার বেশি সুবিধার মনে হচ্ছেনা তাই সে নিজে থেকে আর বিপদের দিকে এগিয়ে গেলোনা৷ সারা পথ সে শুধু এটাই ভেবে গেলো ফাতেমা বেগম ওখানে কি করছিলেন?
.
.

” কিরে আপু তুই ভাইয়ার রুমে কি খুঁজছিস?”

আচমকা তিথির কন্ঠ শুনে ঘাবড়ে গেলো নন্দিনী।

” কি খুঁজবো? আমি তো ওর ঘর গুছিয়ে রাখছিলাম। তুই যা এখান থেকে।”

ঘরের দিকে তাকিয়ে সে দেখলো সব জিনিস অগোছালো হয়ে আছে। ঘরের এই দুর্দশা দেখে তিথি দীর্ঘশ্বাস ফেললো।

” জানিনা কবে এসব ঠিক হবে? আধো সব আগের মতো স্বাভাবিক হবে কিনা?”
.
.

দিনদিন তন্বীর অবস্থা আরো খারাপ হয়ে যাচ্ছে। আগের তুলনায় সে আরো বেশি কান্না করছে। না পারতে আজ তৃধা তার ভাইকে নিয়ে ডাক্তারের কাছে এসেছে।

” বাচ্চা কি ঠিক মতো খাবার খায়?”

” হুম খায় তবে মাঝে মাঝে খেতে খেতে কান্না করে ওঠে। ঘুমিয়ে থাকলেও আচমকা কান্না করে ওঠে, খেলাধুলা করছে তখনও কোন কারণ ছাড়া কান্না করে দেয় সে।”

সব শুনে কিছু টেস্ট করতে দিলো ডাক্তার। বেশ কিছুক্ষণ পর রিপোর্ট এলে সে ভয়ে ভয়ে আবারো ডাক্তারের কাছে গেলো।

” সে কি এ কয়েকদিনের মধ্যে কোন বড় রকমের আঘাত পেয়েছিলো?”

” না সেরকম কিছু তো হয়নি। তবে বেশ কিছুমাস আগে পড়ে গিয়ে কপালে কিছুটা আঘাত পেয়েছিলো, যার কারণে সেলাই করতে হয়েছে। সেই কারণে কি তার কোন সমস্যা হচ্ছে ডাক্তার?”

” রিপোর্টে তো সেরকম কিছু পাইনি। সব রিপোর্ট নরমাল। যেহেতু বলছেন সে মাথায় একবার আঘাত পেয়েছিলো তাই আমি সাধারণ কিছু ঔষধ লিখে দিচ্ছি। এগুলো কিছুদিন খাইয়ে দেখুন, না হলে অন্যপথ দেখতে হবে।”

তন্বীর কি হয়েছে সেটা ডাক্তারও সঠিকভাবে বলতে না পারার কারণে তৃধার চিন্তা আরো বেড়ে গেলো, মন কু ডাকছে তার।
.
.

দিন যেতে লাগলো। তন্বী এখনো ঠিক হয়নি। আগে একা একা খেলা করলেও এখন সারাদিন চুপচাপ কারো গায়ের সাথে ঘেসে বসে থাকবে এবং আচমকাই কান্না করে উঠবে৷ অফিস থেকে ফিরে তৃধা যতটা পারে তন্বীকে সময় দেওয়া চেষ্টা করে। মেয়ের আচমকা এধরণের পরিবর্তনে তৃধা বেশ চিন্তিত।

তন্বীর দেখাশোনায় তার বড় ভাইও কম সাহায্য করেনা। তিনি যতটা পারেন তন্বীর খেয়াল রাখার চেষ্টা করেন। মামা বলতে পাগল তন্বী, ভাগ্নীর এধরণের পরিবর্তনে তৃধার ভাই বেশ চিন্তিত।

বিছানার সব চাদর, কভার তুলছিলেন তৃধার ভাই, পরিকল্পনা সব ধুয়ে তিনি রোদে দেবেন। বেশ কয়েকমাস হয়ে গিয়েছে তাদের বিছানার জিনিসগুলো ধোঁয়া হয়নি। চাদর-কভার খোলার সময় বেশ কিছু খেলনার জিনিস, চুলের ক্লিপ পেলে তিনি সব একজায়গায় তুলে রেখে বাথরুমের দিকে যাবেন তখনই কিছু একটা দেখে থমকে গেলেন। সব একপাশে রেখে দ্রুত জিনিসটা হাতে তুলে নিলেন। অপরিচিত এবং অনাকাঙ্ক্ষিত জিনিস দেখে তিনি বেশ চিন্তিত হয়ে পড়লেন।

কিছুদিন পর,

” তন্বীর কি অবস্থান তৃধা?”

” আগের মতোই আছে ভাই। বুঝতে পারছিনা মেয়েটার হঠাৎ কি হলো? আগের থেকেও শুকিয়ে গিয়েছে, সারাদিন গা ঘেসে ঘেসে থাকে। চোখের আড়াল করতেই ভয় লাগে। ভাবছি আবারো ডাক্তারের কাছে নিয়ে যাবো।”

” হুম নিয়ে যাস তবে আমার তোকে কিছু বলার আছে।”

তৃধা ভেবেছিলো হয়তো তার ভাই সাধারন কিছু বলবে কিন্তু ভাইয়ের কথা শুনে সে ভয় পেয়ে গেলো সেইসাথে তার প্রচুর রাগ হলো।

চলবে……

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here