বসন্তের_একদিন #পর্বঃ০৪

0
410

#বসন্তের_একদিন
#পর্বঃ০৪
#লেখিকাঃঅনন্যা_অসমি

” কোথায় গিয়েছিলে গো মেয়ে?”

দরজা খোলা পরপরই তৃধাকে প্রশ্ন করে নন্দিনী।

” অফিসে গিয়েছিলাম আপু।” হাসিমুখে বলে তৃধা।

” ও আমি তো আবার ভুলে গিয়েছিলাম তুমি আবার অফিসেও যাও।তা তোমার বেতন যেন কত?”

” আপু আমাকে দরজা থেকে একটু সরে দাঁড়াবেন।আমাকে দুপুরের রান্নাও করতে হবে।” শান্ত স্বরে বলে তৃধা।নন্দিনী মুখ বাঁকা করে দরজা থেকে সরে দাঁড়ায়।জুতো খুলে তৃধা দ্রুত পায়ে রুমে এসে ব্যাগ রেখে গোসল করতে চলে যায়।

গোসল শেষ করে রান্নার জন্য রুম থেকে বের হওয়ার পর তৃধা খেয়াল করে নন্দিনী সোফার উপর পা তুলে বসে বসে আচার খাচ্ছে আর টিভি দেখছে।

” আপু আপনি এই অসময়ে আচার খাচ্ছেন যে?”

” তোমার কোন সমস্যা?আমার বাপের বাড়ি,আমার যা ইচ্ছে আমি করবো।আর আমি আমার ভাইয়ের টাকায় খাচ্ছি।তোমার সমস্যা হলে তুমি চলে যেতে পারো।”

” না আপু আমি সেভাবে বলিনি।আসলে দুপুরের খাবার সময় হয়ে এলো,আপনি এই অসময়ে খাচ্ছেন তাই আরকি।”

” আমি খাচ্ছি তোমার এতো জ্বলছে কেন?সহ্য হচ্ছে না তাই না যে আমি আমার বাপের বাড়িতে এসেছি।বুঝেছি,বুঝেছি আমাকে তাড়াহুড়ো ধান্দা।”

” আপু আমি মোটেও…… ”

” হয়েছে হয়েছে আর আমাকে বলতে হবেনা।যাও নিজের কাজে যাও।”

নন্দিনী টিভি দেখায় মন দেয়।তৃধাও আর কোনকিছু না বলে রান্না ঘরে চলে আসে।

তরকারির জন্য নিচে বসে সবজি কাটছে তৃধা।তখন নন্দিনী রান্নাঘরে আসে।সে আচারের জারটা তুলে রেখে ফ্রিজ খুলে আর একটা আপেল নিয়ে খেতে শুরু করে।

” আপু আপনি কি দুপুরে ভাত খাবেন না?”

” আমি কি তোমাকে একবারো বলেছি যে আমি খাবোনা?” আপেল চিবোতে চিবোতে রেগে বলে নন্দিনী।

” না মানে একটু আগে আচার খেলেন আর এখন আপেল।তাই জিজ্ঞেস করলাম আরকি।”

” এই মেয়ে তুমি আমার খাবারের দিকে নজর দিচ্ছো কেন হ্যাঁ?আমি খাচ্ছি যে এটা তোমার সহ্য হচ্ছেনা তাই না?দাঁড়াও আজ তেজ আসুক বাড়িতে খুব বাড় বেরেছে তোমার।”

” কিরে নন্দু কি হয়েছে কি?এই ভরদুপুরে এতো চিৎকার করছিস কেন?” তৃধার শাশুড়ী ফাতেমা বেগম রান্নাঘরের দরজার সামনে এসে বললেন।

” চিৎকার কি আর সাধে করছি মা?তোমার এই বউ তো আমার খাবারে নজর দিচ্ছে।তখন একটু আচার খেয়েছি বলে তখন কতটা বললো আর এখন একটা আপেল খাচ্ছি দেখেও কত কথা শোনাচ্ছে।বুঝি বুঝি সব বুঝি,আমি বাপের বাড়িতে এসেছি দেখে,একটু খাবার খাচ্ছি দেখে ওর সহ্য হচ্ছেনা।ভাইয়ের বাড়িতে এসেছি বলে এই মেয়ে জ্বলছে।”

” এসব আমি কি শুনছি বউমা?তুমি নন্দুকে এসব বলেছে?”

” না মা আমি তো শুধু জিজ্ঞেস করেছিলাম কারণ এখন দুপুর হয়ে গিয়েছে।আপু এতো কিছু খাচ্ছেন উনি কি দুপুরে খাবেন।আমি শুধু….. ”

” দেখেছো মা কি মিথ্যা কথা বলছে।এই মেয়েকে দেখলে মনে হয় যেন ভাজা মাছটাও উলটে খেতে সে জানেনা কিন্তু আসলে তো প্রচুর সেয়ানা।খাবোনা আমি আর কিছু।তুমি তোমার বউমাকেই খেতে বলো।”

আপেলটা তৃধার পায়ের নিচে ছুড়ে মেরে নন্দিনী ধুপধাপ পা ফেলে চলে যায়।তৃধা অসহায় দৃষ্টিতে আপেলটার দিকে তাকিয়ে আছে।

” আমার মেয়েটা যদি না খেয়ে থাকে তাহলে আজ তোমার কপালে ভালো কিছু নেই এটা মনে রেখো।”

কথাটা বলে ফাতেমা বেগমও চলে যায়।তৃধা নিচে থেকে আপেলটা তুলে ডাস্টবিনে ফেলে দেয়।তৃধা মনে মনে চিন্তা করতে থাকে,

” কবে যে এসব স্বাভাবিক হবে।কেন যে ওনারা আমার কথাগুলোকে সোজাভাবে নেয়না।আমি যেটা বলি সবসময় সেটার উল্টোটা ভাবে আর কথাকে লম্বা করে সবাইকে বলে।”

দুপুরের সব খারাপ টেবিলে ঘুছিয়ে রেখে ফাতেমা বেগমে ডেকে আনে তৃধা।তিথি বাড়িতে নেই এখন,কলেজ গিয়েছে সে।ফাতেমা বেগমকে খাবার বেড়ে দিয়ে একপাশে দাঁড়িয়ে থাকে তৃধা।

” নন্দু কোথায় বউমা?” খেতে খেতে জিজ্ঞেস করে ফাতেমা বেগম।

” সেটা তো আমি জানি না মা।”

” জানোনা মানে কি?আমার মেয়েটা এতোদিন পর বাড়িতে এসেছে তুমি তার খেয়াল না রেখে গায়ে হাওয়া লাগিয়ে ঘুরে বেড়াচ্ছো।” রেগে বললেন ফাতেমা বেগম। “যাও এখুনি গিয়ে দেখো নন্দু কোথাই আর ওকে খাওয়ার জন্য ডেকে নিয়ে এসো।”

তৃধা তিথির রুমে এসে দেখে নন্দিনী উল্টো হয়ে শুয়ে আছে।

” আপু আসবো?”

কিন্তু নন্দিনী কোন উওর দেয়না।তৃধা আবারো জিজ্ঞেস করে।

” কি সমস্যা?দেখছো না শুয়ে আছি।”

” মা আপনাকে খাওয়ার জন্য ডাকছেন।তাই ডাকতে এসেছি।”

” যে বাড়িতে খাওয়া নিয়ে আমাকে খোঁটা দেওয়া হয় সে বাড়িতে আমি খাবোনা।”

” আপু আপনি আমাকে ভুল বুঝচ্ছেন।আমি এরকম….”

” চুপ।যাও এখন এখান থেকে।” চিৎকার করে বলে নন্দিনী।তৃধা আর কিছু না বলে আবারো খাবার টেবিলের কাছে চলে আসে।ফাতেমা বেগম তখনো খাচ্ছেন।

” নন্দু কোথায়?”

” আপু বলেছে উনি নাকি খাবেন না।”

” অর্ধেক কথা কেন বললে?তুমি কি ভেবেছো আমি কিছু শুনতে পাইনি।যাও প্লেটে খাবার বেড়ে নন্দুকে দিয়ে এসো।”

” কিন্তু মা আপু যে বললেন উনি খাবেন না।”

” তোমাকে আমি জবাব দিতে বলেনি কাজটা করতে বলেছে।চুপচাপ গিয়ে দিয়ে এসো।যতক্ষণ না নন্দুকে তুমি খাবার দিয়ে আসবে ততক্ষন তুমিও খাবেনা।”

ফাতেমা বেগমের কথায় তৃধার মুখে স্পষ্ট বিরক্তির চাপ প্রকাশ পায়।তবে সে মুখে কিছু বলেনা,একটা প্লেটে খাবার নিয়ে আবারো তিথির রুমে আসে।

” আপু খাবারটা খেয়ে নিন।” বিছানায় পাশে প্লেট হাতে দাঁড়িয়ে বলে তৃধা।কিন্তু নন্দিনী উঠেনা।

” আপু প্লিজ খাবারটা খেয়ে নিন নয়তো মা রাগ করবেন।আপু…..” এবার তৃধা নন্দিনীকে হালকা ধাক্কা দিয়ে ডাকাতে।নন্দিনী তৃধার হাতটা সরিয়ে দেয় আর চোখ বড় বড় করে তার দিকে তাকাই।খাবারের প্লেটটা নন্দিনীর দিকে করে তৃধা বলে,”নিন আপু খাবারটা খেয়ে নিন।মা রাগ করবেন আর অনেক বেলাও হয়ে গিয়েছে।” নন্দিনী রেগে প্লেটটা ফেলে দেয়।মূহুর্তেই পুরো রুমে ঝনঝন করে একটা শব্দ শোনা যায়।শব্দটা শুনে তৃধা নিজের চোখ বন্ধ করে ফেলে।কয়েক সেকেন্ড পর তৃধা চোখ খুলে মাটির দিকে তাকিয়ে দেখে পুরো মেঝেতে ভাত,তরকারি আর ঝোলে ভরা।তৃধা বিরক্তি নিয়ে নন্দিনীর দিকে তাকাই।তৃধা কিছু বলবে তার আগেই নন্দিনী হুংকার দিয়ে বলে উঠে,

” তোকে না একবার বলেছি আমি খাবোনা,তাও কেন খাবার নিয়ে এসেছিস?তোর খাবার তুই খা।যে বাড়িতে আমাকে খাবার নিয়ে খোঁটা দেওয়া হয় সে বাড়িতে আমি মরে গেলেও খাবোনা।দু’টাকার চাকরি করিস বলে তোর এতো দেমাগ তাইনা।দাঁড়া আজকে তেজবীন আসুন তোর দেমাগ আমি বের করছি।আমার সামনে থেকে দূর হ হতচ্ছাড়ি।” কথাগুলো বলে বিছানার অন্যসাইড দিয়ে নেমে ওয়াশরুমে চলে যায় নন্দিনী।তৃধা একটা দীর্ঘশ্বাস নিয়ে নিচে পড়ে থাকা খাবারগুলো তুলে প্লেটে নেয়।তার এখন খুব আফসোস।না নন্দিনীর ব্যবহারে বা তার ভাগ্যের উপর নয় বরং খাবারের জন্য।কতগুলো খাবার নষ্ট হলো।খাবে না বলতেই পারতো,শুধু শুধু খাবারগুলো নষ্ট করলো।

নন্দিনীর খাবারগুলো ডাস্টবিনে ফেলে দিয়ে নিজে খেতে বসে।কয়েকমিনিট পর ফাতেমা বেগম পান চিবোতে চিবোতে নিজের রুমে থেকে বেরিয়ে আসে।

” কি গো বউমা নন্দু খেয়েছে?”

” না মা।”

” কি?আমার মেয়ে খাইনি তাহলে তুমি খাচ্ছো কোন সাহসে?তোমাকে না বলেছি নন্দু না খাওয়া পর্যন্ত তুমি খাবেনা।” রেগে বলেন ফাতেমা বেগম কিন্তু তৃধা সেদিকে মনযোগ না দিয়ে নিজে খাওয়ায় মন দেয়।ফাতেমা বেগম তৃধার প্লেটটা টেনে নিয়ে যেতে নিলে তৃধা শক্ত করে প্লেটটা ধরে রাখে।

” আপনার মেয়ে খাইনি বলে যে আমি খাবোনা এটা মোটেও ভাবেন না।কই আমি না খেয়ে থাকলে তো আপনার মেয়ে না খেয়ে থাকেনা।তাহলে আমি কেন না খেয়ে থাকবো?আর এমনতো না যে আমি ওনাকে খাবার দিয়নি।আমি তো খাবার নিয়ে গিয়েছিলাম কিন্তু উল্টো উনি তা ছুঁড়ে ফেলে দিয়েছেন।আপনার এতো মায়া হলে নিজেই গিয়ে খাইয়ে দিয়ে আসুন।আমার খাবার সময় ডির্স্টাব করবেন না।” শক্ত গলায় জবাব দেয় তৃধা।সে মা-মেয়ের নাটক দেখতে দেখতে এখন প্রচুর বিরক্ত।সে আর চুপ করে না থাকতে পেরে মুখের উপরই ফাতেমা বেগমকে কথাগুলো বলে দিয়েছে।ফাতেমা বেগম তৃধার কথা শুনে রেগে গজগজ করতে করতে চলে যান।তৃধা একটা দীর্ঘশ্বাস নিয়ে খাওয়া শুরু করে।

চলবে……

(আমি দুঃখিত এই কয়েকদিন গল্প একেক সময় একেক টাইমে দেওয়ার জন্য।হঠাৎ করে স্কুল, কোচিং সব খুলে দেওয়াতে আমার টাইম ম্যানেজ করতে একটু সমস্যা হচ্ছে।আর ২/৩ দিন এরকম হবে,এরপর থেকে আমি আবারো আগের মতো একটা নির্দিষ্ট টাইমে গল্প দেবো।)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here