#বসন্তের_একদিন
#পর্বঃ০৮
#লেখিকাঃঅনন্যা_অসমি
রিকশা করে বাড়ি ফিরছে তৃধা।হঠাৎ তার চোখ পড়ে রাস্তার অপরপাশে।তৃধা তাড়াতাড়ি রিকশাওয়ালাকে বলে,
” দাঁড়ান,দাঁড়ান।”
রিকশা চালক একটু দূরে গিয়ে রিকশা দাঁড় করায়।তৃধা তাড়াতাড়ি পেছন ফিরে তাকাই।রাস্তার অপরপাশে একটা মোটরসাইকেল দাঁড়ানো।তাতে একটা ছেলে বসা আর সাইডে একটা মেয়ে দাঁড়ানো।তৃধার মনে হচ্ছে মেয়েটা তিথি।তৃধা নেমে মোটরসাইকেলটার কাছে যাবে তার আগেই মেয়েটাকে মোটরসাইকেল বসে ছেলেটার সাথে চলে যায়।
” এটা কি আমার মনের ভুল?নাকি আসলেই ওটা তিথি ছিল?আর তিথি হলে ওই ছেলেটা কে?”
” আফা,রিকশা টানবো?”
” হ্যাঁ আপনি চলুন।”
রিকশা থেকে নেমে তৃধা তাড়াতাড়ি বাড়িতে আসে।বেল বাজলে নন্দিনী দরজা খুলে দেয়।নন্দিনী কিছু বলার জন্য মুখ খুলবে কিন্তু তৃধা সেদিকে মনোযোগ না দিয়ে তাড়াতাড়ি ভিতরে ঢুকে পড়ে।
তৃধা ভেবেছিলো তিথি রুমে নেই কিন্তু সে তিথির রুমে এসে অবাক।কারণ তিথি রুমেই আসে।সে বিছানায় বসে মোবাইল চালাচ্ছে।
” তিথি।”
” বলো কি বলবে।”
” তুমি এতোক্ষণ কোথায় ছিলে?”
” কোথায় ছিলাম মানে?” ভ্রু-কুচকে প্রশ্ন করে তিথি।
” মানে তুমি কি বাইরে ছিলে?”
” তুমি মনে হয় এই বাড়িতে নতুন এসেছো।তুমি জানোনা বিকেলে আমার কোচিং থাকে।”
তিথি বলার পর তৃধার মনে পড়ে আসলেই তো তিথির তো ওই সময়ে কোচিং থাকে।
” ও আচ্ছা।”
” কি হয়েছে বলো তো?হঠাৎ বাইরে থেকে এসেই এই প্রশ্ন করছো কেন?”
” না মানে আসলে…”
” আসলে কি?খোলসা করে বলোতো একটু।”
” না মানে আমি অফিস থেকে আসার সময় রাস্তার পাশে একটা মেয়েকে একটা ছেলের সাথে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখেছি।আমি ভেবেছিলাম ওটা তুমি তাই।” ইতস্তত হয়ে বলে তৃধা।
” আমি?আমি কেন হতে যাবো?আমি তো ওই সময়ে কোচিং-এ ছিলাম।তুমি ভুল দেখেছো।যাও এখন এখান থেকে।কাকে না কাকে রাস্তা দেখে বলছে ওটা আমি।”
তৃধা তিথির রুম থেকে বের হয়ে আসে।সে মনে মনে চিন্তা করে,
” আসলেই তো তিথি তো কোচিং-এ ছিল।হয়তো আমারিই মনের ভুল।একটু বেশিই ভাবি আমি।”
বৃহস্পতিবার রাতে,
সবার খাবার পর তৃধা সব ঘুছিয়ে রাখছে।তখন সেখানে পান চিবোতে চিবোতে ফাতেমা বেগম আসে।
” বউমা,ও বউমা।”
” জ্বি মা বলুন।”
” বেচে যাওয়া খাবারগুলো গুছিয়ে রেখো তো নাকি?”
” হ্যাঁ মা।”
” ভালো।তো যেটা বলতে আসলাম ফ্রিজে মাংস আছে না?”
” হ্যাঁ মা আছে তো।কিন্তু কেন?”
” কাল তো শুক্রবার,তোমার অফিস বন্ধ।কাল সকাল সকাল উঠে মাংস রান্না শুরু করে দিও।আর বিরিয়ানিও রান্না করো।”
” তা না হয় করবো কিন্তু হঠাৎ করে বিরিয়ানি আর মাংস কেন রান্না করতে বলছেন মা?”
” সেটা তোমার জানতে হবে না।যা বলেছি তাই করো শুধু।কাল সকাল সকাল উঠে রান্না শুরু করে দেবে।”
ফাতেমা বেগম চলে যায় রান্নাঘর থেকে।এদিকে তৃধা দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে ভেবে চলেছে হঠাৎ করে ফাতেমা বেগম এতো কিছু কেন রান্না করতে বলছেন।তৃধা বুঝতে পেরেছে নিশ্চয়ই কাল কেউ বাড়িতে আসছে কিন্তু কে আসছে সেটাই বড় প্রশ্ন।
পরেরদিন সকালে,
সকাল সকাল উঠেই রান্না শুরু করে দেয় তৃধা।এখন বাজে সকাল নয়টা।ফাতেমা বেগমকে চা দিতে হবে।তৃধা তাড়াতাড়ি একটা কাপে চা নিয়ে ফাতেমা বেগমের ঘরে নিয়ে আসে।
” মা আপনার চা।”
” দাও।” ফাতেমা বেগম চায়ের কাপে চুমুক দিয়ে তৃধার দিকে তাকালো। ” কাল যা রান্না করতে বলেছি করছো তো?”
” হ্যাঁ মা।”
” হুম ভালো।যাও এবার তাড়াতাড়ি বাকি কাজগুলোও শেষ করো।বারোটার মধ্যে যেন রান্না শেষ হয়ে যায়।”
বিরিয়ানি রান্নার জন্য চাল ধুচ্ছিলো তৃধা।তখন বেলটা বেজে উঠে।তৃধা চালগুলো সাইডে রেখে হাত মুছতে মুছতে দরজা কাছে আসে।কিন্তু দরজা খুলে যাকে দেখে তাকে দেখে তৃধা মুখটা কালো হয়ে যায়।
” কেমন আছেন তৃধা সাহেবা?” হাসিমুখে প্রশ্ন করে রুদ্র।রুদ্র হচ্ছে নন্দিনীর স্বামী। ” কিগো তৃধা সাহেবা বাইরে দাঁড় করিয়ে রাখবে নাকি ভেতরেও যেতে দেবে?”
” আসুন।”
রুদ্র জুতো খুলে ভিতরে প্রবেশ করে কিন্তু তৃধা এখনো দরজার কাছেই দাঁড়িয়ে আছে।রুদ্র আসাতে তৃধা মোটেও খুশি হয়।এই লোকটাও খুব একটা সুবিধার নয়।তৃধা আর দাঁড়িয়ে না থেকে দরজা বন্ধ করে তাড়াতাড়ি ভেতরে চলে আসে।
মেয়ের জামাইকে দেখে তো ফাতেমা বেগমের খুশি যেন ধরেনা।
” আরে বাবা তুমি এসেছো।এসো এসো,আমি তো সকাল থেকে তোমারই অপেক্ষা করছিলাম।কবে আসবে তুমি।আজ কত দিন পর এলে আমাদের বাড়িতে।আমাদের কথা কি তোমার মনে পড়েনা?”
” কে বলেছে মা মনে পড়েনা?অবশ্যই পড়ে।আমি কি আপনাদের ভুলতে পারি।কিন্তু কি করবো বলুন ব্যবসা ফেলে কি আর আসা যায়।তবে এবার আমি সবকাজ শেষ করে এসেছি।এবার আমি এক সপ্তাহের আগে যাবোনা।”
” ওমা তা তো খুবই ভালো খবর।তুমি থাকবে এটা যেনে মনটা আমার খুশিতে ভরে গেলো।”
” আচ্ছা মা এগুলো কোথাও রাখবো বলুন তো।”
” আরে আরে এতো কিছু কেন আনতে গেলে বলো তো।”
” মা আমি আপনাদের জন্য না আনলে আর কাদের জন্য আনবো বলুন তো।”
” আমার জামাইটা আমাদের কত চিন্তা করে,কত কিছু না চাইতেও আমাদের দেয়।কিন্তু আবার কিছু মানুষ আছে যারা তো কখনো কিছু দেয় না আর চাইলেও নানা বাহানা করে।”
তৃধা এতক্ষণ এখানে দাঁড়িয়ে ছিল।ফাতেমা বেগম যে শেষের কথাগুলো তৃধাকেই উদ্দেশ্য করে বলেছে তা তৃধার বুঝতে অসুবিধা হয়নি।
” বউমা তুমি এখনো সঙের মতো দাঁড়িয়ে আছো কেন?জামাইয়ের হাত থেকে ব্যাগগুলো নাও।বেচারা জামাইটা কত দূর থেকে এলো।এতো ভারি ব্যাগগুলো নিয়ে সে আর কতক্ষণ দাঁড়িয়ে থাকবে।নাও তাড়াতাড়ি।”
তৃধা ব্যাগ নেওয়ার জন্য সামনে আসে।রুদ্র হাসিমুখে ব্যাগগুলো তৃধার দিকে এগিয়ে দেয়।তৃধা তাড়াতাড়ি ব্যাগগুলো রুদ্রের হাত থেকে নিয়ে রান্নাঘরে চলে আসে।
ব্যাগগুলো নিচে ফেলে রেখে বেসিনে ঘষে ঘষে হাত ধুচ্ছে তৃধা।তার এখন ঘেন্নায় গা গুলিয়ে উঠছে।আসলে তৃধা যখন রুদ্র থেকে ব্যাগগুলো নিচ্ছিলো তখন রুদ্র ফাতেমা বেগমের আড়ালে তৃধার হাত ধরেছিল।
” ছিঃ,দুঃশ্চিত্র লোক একটা।যখনই আসে কোন না কোনভাবে আমাকে হেরাস করে।আজ তো আমি ওর একটা ব্যস্তটা করেই ছাড়বো।”
দুপুরে হলে সবাই খেতে বসে।তবে সবাই বসলেও তৃধা বসেনা কারণ সে বসলে খাবার কে বেড়ে দেবে।তৃধা এক এক করে সবাইকে খাবার বেড়ে দেয়।খাবার দেওয়া হলে তৃধা একটু দূরে গিয়ে দাঁড়ায়।
” আরে বউমা তুমি অতো দূরে দাঁড়িয়ে আছো কেন?জামাইয়ের পাশে এসে দাঁড়াও।দেখো জামাইয়ের কি কি লাগবে।”
তৃধা অনিচ্ছা সত্ত্বেও রুদ্রের পাশে এসে দাঁড়ায়।
” রান্নাটা কে করেছে মা?”
” কেন বাবা?খাবার ভালো হয়নি নাকি?” তাড়াহুড়ো করে জিজ্ঞেস করে ফাতেমা বেগম।
” আরে না মা তেমন কিছু না।উল্টো রান্নাটাতো খু্ব ভালো হয়েছে।”
” রান্না তো ন….”
” সব রান্না ভাবী করেছে।” খেতে খেতে বসে তিথি।
” তাই তো বলি এতো সুস্বাদু খাবার তৃধা সাহেবা ছাড়া আর কে রান্না করবে।”
রুদ্রের মুখে তৃধার প্রশংসা শুনে ফাতেমা বেগমের ভালো লাগেনা।তিনি বলতে চেয়েছিলেন যে রান্নাগুলো নন্দিনী করেছে কিন্তু তার আগেই তিথি সত্যিটা বলে দিলো।
” তৃধা সাহেবা আপনি দাঁড়িয়ে আছেন কেন?আপনিও বসুন আমাদের সাথে।”
” না ঠিক আছে।আপনারা আগে খেয়ে উঠুন তারপর আমি খাবো।”
” তৃধা,মাংসের বাটিটা দাও তো।” গম্ভীর স্বরে বলে তেজবীন।তৃধা তাড়াতাড়ি বাটিটা নিয়ে তেজবীনের পাশে দাঁড়ায়।তৃধা তেজবীনের প্লেটে মাংস দিয়ে আবারো রুদ্রের পাশে যেতে নিলে তেজবীন সবার আড়ালে তৃধার হাত ধরে তাকে আটকে নেয়।
” কিছু বলবে?” নিচু স্বরে বলে তৃধা।
” কোথায় যাচ্ছো?”
” মা যে বললো জামাইবাবুর পাশে….”
” যেতে হবেনা।চুপচাপ এখানে দাঁড়িয়ে থাকো।”
তৃধা তেজবীনের কথা শুনে খুবই খুশি হয়।সে নিজেও রুদ্রের পাশে দাঁড়াতে চাইছিলোনা।শুধু মাত্র শাশুড়ীর কথা রাখতে দাঁড়িয়েছিল।
” এই মেয়ে তুমি ওখানে দাঁড়িয়ে আছো কেন?সারাদিনই তো স্বামীর কাছে এতো।এখন একটু স্বামীর কাছে থেকে সরে এসে বাকিদেরও দেখো।দেখছোনা রুদ্রের মাংস লাগবে।তুমি না দিয়ে দাঁড়িয়ে আছো কেন?” রেগে কথাগুলো বলে নন্দিনী।
” আপু তুই তো আছিস জামাইবাবুর পাশে।আর হাসবেন্ডটা যেহেতু তোর তাই তুই দেখ ওনার কি লাগবে।আমার বউ নাহয় আমারটা দেখুক।” গম্ভীর ভাবে বলে তেজবীন।তেজবীনের কথা শুনে সবাই অবাক হয়ে তার দিকে তাকিয়ে আছে।তবে তেজবীন নিজের মতো খেয়ে চলেছে।তেজবীনের কথায় তৃধা মুচকি হাসে।
চলবে……