বৈধ_দৃষ্টি #পর্বঃ২১+২২

0
285

#বৈধ_দৃষ্টি
#পর্বঃ২১+২২
#ফাতেমা_জান্নাত

দেখতে না দেখতে -ই সময় আরো দুই মাস পেরিয়ে গেলো।মনে হলো এই যেন সময় এলো আর এই গেলো।সময় এর ধরা বাঁধা নেই বিধায় সে তার নিজ এর মতোই বহমান থাকে।আর মানুষ সময় এর সাথে পাল্লা দিয়ে চলার চেষ্টা করে।
রাফিয়া সাফওয়ান দুই মাস আগে- ই সুবর্ণার বিয়ে শেষ হওয়ার পরের দিন-ই নিজে দের বাসায় ফিরে আসে।ভালো-ই যাচ্ছে রাফিয়া সাফওয়ান এর খু’ন শুটিময় সময় গুলো। সাফওয়ান রাফিয়া কে কিছু বলতে গেলে ইচ্ছে করে রাগিয়ে দেয়।আবার নিজে -ই রাফিয়ার রা’গ ভাঙাবে।এই তো বেশ ভালো জুটির নাম রাখছে তারা।

সাফওয়ান অফিস যাওয়ার জন্য তৈরি হয়েছে।রাফিয়া সাফওয়ান এর দিকে তাকিয়ে বলে,

—আজ কে কি দেরি হবে বাসায় আসতে?

রাফিয়ার কথায় সাফওয়ান নিজ এর ঠোঁট কোলে হাসির রেখা টানে।রাফিয়ার মুখ টা কে নিজ এর দুই হাতের আজালায় নিয়ে বলে,

—আমার বউ টা কি আমাকে মিস করবে?

—করলে ও করতে পারে মিস।তাড়াতাড়ি আসার চেষ্টা করবেন কেমন?

—বউ যখন বলেছে তখন চেষ্টা করবো আসার।বাকি টা দেখা যাক।অন্যের তত্ত্বাবধান এ চাকরি করি তো।নিজের মন গড়া চলতে পারি না।

—আচ্ছা।আল্লাহ হাফেজ।

—আল্লাহ হাফেজ। ফি আমানিল্লাহ তাওয়াককুল তু আলাল্লা।

বলে -ই সাফওয়ান রাফিয়ার কপালে আদর দিয়ে বাসা থেকে বের হয়।রাফিয়া সাফওয়ান এর পিছন পিছন নিচে নেমে আসে।নিচে সাবিনা আর চম্পা বসে বসে কথা বলছে।মূলত সাবিনা কথা বলছে না।চম্পায় নন স্টপ কথা বলে যাচ্ছে।সাবিনা শাইখ ড. আয়িয আল-কারনী এর লেখা “নবীজি (সা:)” টা পড়ছে।রাফিয়া ও গিয়ে সাবিনার পাশে বসে।এবার চম্পা রাফিয়ার দিকে তাকিয়ে কথা বলা শুরু করেছে।সাবিনা বই এর থেকে একবার মুখ তুলে তাকিয়ে হেসে দেয়।

🌸🌸

সাফওয়ান অফিস থেকে বের হয়েছে।রাত সাড়ে আট টা বাজে।আজ কে অফিস এর কাজ গুলো তাড়াতাড়ি শেষ করেছে তাড়াতাড়ি বাড়ি ফেরার জন্য।গত দুই সপ্তাহ থেকে -ই কাজের চাপ বেশি।যার দরুন দেরি করে বাসায় ফিরতে হয়।আজ কাজের চাপ ও প্রতিদিন এর তুলনায় মোটামুটি কম ছিলো। তাই রাফিয়ার কথার মতো তাড়াতাড়ি বাসায় যাওয়ার কাজ গুলা শেষ করে বস কে বলেই বেরিয়ে পড়েছে।

সাফওয়ান রিক্সায় করে বাসায় যাচ্ছে।পথিমধ্যে দেখে যা সুবর্ণার স্বামী জাবের দাঁড়িয়ে আছে।বোধহয় রিক্সার জন্য।সাফওয়ান জাবের এর সামনে গিয়ে রিক্সাওয়ালা মামা কে রিক্সা দাড়াঁ করাতে বলতে- ই রিক্সা থামে।সাফওয়ান জাবের এর সামনে গিয়ে এক হাত বাড়িয়ে দিয়ে বলে,

—আসসালামু আলাইকুম ভাইয়া। কেমন আছেন?

সাফওয়ান কে দেখে জাবের প্রথমে বিস্ময় নিয়ে তাকায়।পরোক্ষণেই বিস্মিত চাহনির পরিবর্তন ঘটিয়ে হেসে দিয়ে সাফওয়ান এর সাথে হাত মিলিয়ে মোলাকাত করে বলে,

—-ওয়ালায়কুম সালাম।আলহামদুলিল্লাহ ভালো ভাইয়া। আপনি কেমন আছেন?

—আলহামদুলিল্লাহ।

বলেই সাফওয়ান জাবের কে ছেড়ে সোজা হয়ে দাঁড়ায়। সাফওয়ান পুনরায় আবার স্বগতোক্তি করে জাবের কে বলে,

—দাঁড়িয়ে আছেন যে এখানে?

—রিক্সার জন্য।বাসা পর্যন্ত রিক্সা যেতে রাজি হচ্ছে না।

—চলুন আমার রিক্সায় উঠুন। কথা বলা যাবে কিছুক্ষণ।

—আচ্ছা চলুন ভাইয়া।

দুই জনে রিক্সায় উঠে বসে।রিক্সা ওয়ালা মামা কে রিক্সা চালাতে বলতে- ই আবার রিক্সা চলতে শুরু করে।দুই জন এর মাঝে দুই পরিবার এর খোঁজ খবর নেয় দুই জনে।কথা বলার এক পর্যায়ে জাবের সাফওয়ান কে বলে উঠে,

—বিয়ের পরের দিন আপনা দের দেখলাম না যে ভাইয়া?চলে গেলেন কেন?

জাবের এর কথায় সাফওয়ান মৃদু হাসি দেয়।মৃদু হাসির রেখা টানে।সামনের দিকে তাকিয়ে থেকে আবার দৃষ্টি ফিরিয়ে জাবের এর দিকে তাকিয়ে বলে,

—দৃষ্টি হেফাজত এর জন্য ভাইয়া। দৃষ্টি কে হেফাজত রাখার জন্য চলে এসে ছিলাম পরের দিন সকালে।

সাফওয়ান এর কথা জাবের বুঝতে পারেনি।তাই নিজ এর দুই ভ্রু কুঁচকে ফেলে সাফওয়ান কে বলে,

—মানে?ঠিক বুঝতে পারিনি ভাইয়া। কি বলছেন?

—আপনি নিজ এর চোখে দেখেছেন ভাইয়া আপনার আর সুবর্ণার বিয়ে তে সবার পোশাক আষাক এর কি অবস্থা ছিলো। সবাই হালাল বিয়ে টা কে আধুনিক এর ছোঁয়া লাগা তে গিয়ে কি অবস্থা করে ছিলো।আর একজন পুরুষ এর একজন নারীর দিকে তাকানো মানে সেটা চোখ এর যিনা, ফিতনা।
আমরা যেই দিন চলে এসে ছিলাম সেই দিন
বাড়ি তে তখনো বিয়ের আমেজ চল ছিলো।চার দিকে পুরুষ মহিলার আনাগোনা চলছিলো।যার জন্য নিজে দের দৃষ্টি হেফাজতে রাখা দায় হয়ে পড়ে ছিলো। সবার দিকে দৃষ্টি নিবদ্ধ করা কখনো বৈধ দৃষ্টি হতে পারে না।আপনি আপনার গায়রে মাহরম দের উপর প্রথম বার বেখেয়ালি দৃষ্টি ফেললে তা গুনাহ হিসেবে ধরা না হলো দ্বিতীয় বার তাকানো টা চোখ এর যিনা এর অন্তর্ভুক্ত হবে।তাই নিজ এর দৃষ্টি হেফাজতে রাখা টা জরুরি হয়ে পড়ে ছিলো।আমি যত -ই নিজের দৃষ্টি কে হেফাজত রাখি না কেন?শ’য়তান আমাকে তার প্ররোচনার শিকারি বানাতে কতক্ষণ।জানেন পুরুষ এর জন্য সব থেকে বড় ফিতনা কি?পুরুষ এর জন্য সব থেকে বড় ফিতনা হলো নারী।কিন্তু আপসোস টা কি জানেন?এটা আমরা কেউ- ই আমলে নিই না।একটা মেয়ে কে দেখলে শ’য়তান আমাদের তার প্ররোচনায় শিকার করার উঠে পড়ে লাগে।আর আমরা যখন শ’য়তান এর প্ররোচনায় শিকার হয়ে যায় তখন ঠিক- ই মেয়ে টার সাথে কথা বলার জন্য উদগ্রীব হয়ে পড়ি।নাউজুবিল্লা!আল্লাহ আমাদের শ’য়তান এর প্ররোচনা থেকে হেফাজত রাখুক।আমাদের দৃষ্টি কে হেফাজতে রাখার তৌফিক দান করুক।

হাদিস শরীফে বলা আছে যে,

রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, “আমার পর আমি পুরুষের জন্য নারীর ফেতনার চেয়ে অধিক ক্ষতিকারক
কোনো ফিতনা রেখে যাইনি”
(বুখারী, ৫০৯৬ ; মুসলিম, ২৭৪০)

বলে -ই সাফওয়ান থামে।দেখে যে জাবের তার দিকে এখনো তাকিয়ে আছে।মুখে কোনো কথা নেই।সাফওয়ান গলা একটু খাকাড়ি দিয়ে আবার বলা শুরু করে,

—নারী পুরুষ উভয়েই পরস্পরের জন্য ফিতনা। বরং কুরআনে তাদেরকে এর চাইতেও বড় কিছু হিসেবে ঘোষণা দেওয়া হয়েছে। একে অপরের শত্রু বলা হয়েছে।
যেমন এ আয়াতে লক্ষ্য করুণ।

আল্লাহ বলেন, হে ইমানদারগণ! তোমাদের স্বামী, স্ত্রী ও সন্তান সন্ততিদের কেউ কেউ তোমাদের দুশমন ( সুরা তাগাবুন ৬৪/১৪)

তাছাড়া হাদীসে বর্ণিত ফিতনাকে নারীর মাঝে সীমাবদ্ধ রাখার মানে এই না যে, পুরুষ কোন ফিতনা হতে পারে না; বরং পুরুষও নারীর জন্য ফিতনা।
এজন্যই আল্লাহ নারীদেরকে আদেশ করেছেন তারা যেন চলাফেরার সময় তাদের দৃষ্টিকে অবনত রাখে (সুরা নূর ২৪/৩১)

উল্লেখ্য, এর মানে এই না যে পুরুষ দের দিকে নারীরা দৃষ্টিপাত করতে পারবে না, বা তাকানো হারাম, ফিতনা সৃষ্টির আশংকা না থাকলে তাকানো যায়েজ ( বুখারী হা/৪৫৫)

তবে বাস্তবাতা এটাই যে আমরা পুরুষ রাই সবচেয়ে বেশী নারী কেন্দ্রিক ফিতনায় পতিত হই, একজন পুরুষ আরেক জন নারীকে যতটা তীব্র ও প্রবল ভাবে কামনা করে, এবং ফিতনা পতিত হয় এর সামান্যও নারীদের মাঝে দেখা যায় না। খুব কম নারীই কোন পুরুষের প্রতি তার আকর্ষণের বিষয়টি প্রকাশ করেন। আর এজন্য হাদীসে

রাসুলুল্লাহ ﷺ সরাসরি বলেছেন,

“আমি আমার ওফাতের পরে পুরুষদের জন্য নারীদের চাইতে অধিক ক্ষতিকর কোন ফিতনা রেখে যাচ্ছি না (মুসলিম হা/৬৬৯৪ তিরমিযী হা/২১৯১ ইবনে মাজাহ হা/৪০০০ বুখারী হা/৫০৯৬)”

একটা কথা মনে রাখবেন ভাইয়া। ইসলাম কিন্তু নারীর পর্দার আগে পুরুষ এর পর্দার কথা বলেছে।পুরুষ এর পর্দা বলতে কি বুঝানো হয়েছে জানেন? দৃষ্টির পর্দা।সামনে দিয়ে কোনো নারী যাওয়ার সময় দৃষ্টি কে নত রাখতে হবে।এটাই পুরুষ এর দৃষ্টির পর্দা।কিন্তু বিয়ে বাড়ি তে তা কি সম্ভব বলুন?চার দিকে নারী পুরুষ এর এমন অগাধ মিলা মেশা য় ঠিক কোন দিকে দৃষ্টি নিবদ্ধ করলে নিজ এর দৃষ্টি কে হেফাজত রাখতে পারবো সে টা যেন বুঝা কঠিন হয়ে পড়ে ছিলো। তাই পরের দিন সকাল সকাল পরিবার নিয়ে বাসার ফিরে এসেছি।

সাফওয়ান এবার সম্পূর্ণ কথা বলে থামতে -ই জাবের সাফওয়ান এর দিকে তাকিয়ে হেসে দেয়।হাসি দিয়ে বলে,

—ধন্যবাদ ভাইয়া! আমি এত কিছু জানতাম না।জানানোর জন্য আপনাকে অনেক অনেক ধন্যবাদ। এবার থেকে আমার ও মিশন শুরু দৃষ্টি হেফাজত রাখার। কারো দিকে তাকানো যাবে না।ভুলে চোখ পড়লে ও সরিয়ে ফেলতে হবে।আল্লাহ হেফাজত রাখুক সকলদ কে এবং সকলের দৃষ্টি কে।দৃষ্টি নিবদ্ধ হোক তার উপর যার উপর দৃষ্টি রাখা বৈধ।

সাফওয়ান জাবের এর কথার প্রি উত্তরে হেসে বলে,

—আমিন।

বাসার সামনের রাস্তায় আসতে- ই সাফওয়ান রিক্সা থেকে নেমে যায়।রিক্সা ভাড়া দুই জন এর মিটিয়ে দিয়ে রিক্সাওয়ালা কে বলে জাবের কে ওর বাসায় পৌছে দিতে।আরো একবার দুই জনে হ্যান্ড শেক করে সালাম বিনিময় করে দুই জন দুই দিকে চলে যায়।

সাফওয়ান বাসার রাস্তা দিয়ে হাটছে আর গুন গুন গাইছে,

‘‘মেহেরবান, তুমি মেহেরবান,মেহেরবান,তুমি মেহেরবান!
মেহেরবান,তুমি মেহেরবান,মেহেরবান,তুমি মেহেরবান।
আমি পাপী গুনাহগার, তুমি ছাড়া কে আছে আর?
ক্ষমা করো ওগো প্রভু,তাওবা করি বারে বার।
ইয়া রাহীমু রহমান, ইয়া কারীমু মেহেরবান।
ইয়া রাহীমু রহমান,ইয়া কারীমু মেহেরবা…’’

গাওয়ার আগে- ই সাফওয়ান এর সামনে একটা মেয়ে আর ছেলে এসে দাঁড়ায়। মেয়ে টার বয়স আনুমানিক ভাবে বলা যেতে পারে এগারো বছর আর ছেলে টার বয়স সাত কিংবা আট বছর।এক জনের হাতে বেলি ফুল এর মালা।আরেক জন এর হাতে সাদা আর লাল গোলাপ। সাফওয়ান কিছুক্ষণ ওদের দিকে তাকিয়ে থেকে বুঝতে পারে যে ওরা দুই জনে- ই ফুল বিক্রেতা। সাফওয়ান হাটু গেড়ে বসে তাদের দুই জনের সামনে।মেয়ে টা কে উদ্দেশ্য করে বলে,

—কিছু বলবে?

মেয়ে টা ও একটা চমৎকার হাসি দেয়।সাফওয়ান দেখে সেই হাসি।মেয়ে টা সাফওয়ান এর বেলি ফুলের মালা গুলো বাড়িয়ে দিয়ে হাত দিয়ে নাড়িয়ে দেখাতে দেখাতে বলে,

—ফুল নিবেন ভাইজান? ভাবির জন্য ফুল এর মালা নিয়ে যান এক দুইটা।ভাবি খুশি হবে ভাইজান।আজ কে ফুল বিক্রি হয় নাই তেমন।

সাফওয়ান হেসে দেয় মেয়ে টার কথায়।সাফওয়ান একটা জিনিস লক্ষ করেছে।মেয়ে টা খুব সুন্দর ভাবে কথা বলে।আনমনে -ই সাফওয়ান মনে মনে বলে,

“ওরা তো নিজেরা-ই আস্ত একটা ফুল,তার মধ্যে ফুল বিক্রেতা।বলা যায় ফুলের হাতে ফুল।’’

সাফওয়ান মেয়ে টার আর ছেলে টার গাল নিজের দুই হাত দিয়ে টেনে দিয়ে বলে,

—নাম কি তোমাদের??

মেয়ে তা হেসে বলে,

—“আমার নাম শিউলি। (পাশের ছোট ছেলে টার দিকে তাকিয়ে বলে)আর ও আমার ছোট ভাই।নাম পুষ্প।

সাফওয়ান পাচঁ লাল গোলাপ আর পাচঁ টা সাদা গোলাপ নেয় ছেলে টার হাত থেকে।মেয়ে টার হাত থেকে পাচঁ টা বেলি ফুল এর মালা নেয়।নিজ এর প্যান্ট এর পকেট থেকে ওয়ালেট টা বের করে পুষ্প এর হাতে একটা পাঁচশ টাকার নোট আর শিউলি এর হাতে একটা পাঁচশ টাকার নোট দিয়ে হেসে বলে,

—“তোমরা দুই জন তো নিজেরা -ই ফুল।তাই তোমাদের এই ভাইয়া তোমাদের দুই জন কে এই টাকা গুলো দিলো। সাবধানে রেখো।এখন বাড়ি যাও।অনেক রাত হচ্ছে।

পুষ্প টাকার সংখ্যা বুঝতে না পারলে ও শিউলি বুঝতে পেরেছে।তাই না সূচক মাথা নাড়িয়ে বলে,

—ভাইজান ফুলের দাম তো এত টাকা আসে নাই।এত টাকা কেন দিলেন?

সাফওয়ান আবার হেসে বলে,

—ওই যে তোমরা দুই জন -ই তো আরেক ফুল।তাই ভাইয়া এই দুই ফুল কে খুশি হয়ে এই অল্প কিছু টাকা দিলো।

সাফওয়ান এর কথায় শিউলির চোখ ছল ছল করে উঠে।সাফওয়ান তা দেখে ব্যতিব্যস্ত হয়ে হয়ে বলে,

—কি হলো কাদছো কেন?

শিউলি ঢোক গিলে কান্না দমানোর চেষ্টা করে বলে,

—এই ফুল দের কেউ কদর করে না ভাইজান। আপনার হাতের ফুল গুলোর কদর এক দুই ঘন্টা থাকলে ও এই ফুল গুলোর কদর কেউ এক সেকেন্ড ও করে না ভাইজান। পেটের দায়ে অনেক রাত পর্যন্ত ফুল বিক্রি করার জন্য বসে থাকি।এতে অনেক জনে বাজে কথা শুনায়।ভাবে ছোট কিছু বুঝি না তাদের কথার মানে।কিন্তু পরিস্থিতি আমাদের বড় বানায় দিছে ভাইজান। তাই তাদের সব কথা -ই বুঝে ও চুপ করে থাকি।

সাফওয়ান এর মন টা মুহূর্তে -ই খারাপ হয়ে গেলো মেয়ে টার কথা শুনে।তাই শিউলি কে শান্ত করার জন্য বলে,

—কাঁদিস না।তোরা দুই জন ও এক একটা ফুল।সব মানুষ এর কথায় কান দিস না।সবার কথায় কান দিতে নেই।

শিউলি মুহূর্তে -ই ফিক করে হেসে দিয়ে বলে,

—জি ভাইজান আমরা ও ফুল।সবার ভাষ্যমতে নোংরা ফুল।

বলে -ই পুষ্প এর হাত ধরে সাফওয়ান এর সামনে থেকে সরে উলটা পথে হাটা ধরে।সাফওয়ান উঠে দাঁড়ায়। কিছু একটা ভেবে মেয়ে টা কে ডেকে উঠে,

—শিউলি!

শিউলি দাঁড়িয়ে যায়।পিছন ঘুরে তাকিয়ে সাফওয়ান এর উদ্দেশ্যে বলে,

—জি ভাইজান বলেন।

—পুষ্প যে একটা কথা ও বলল ও না।

শিউলি আবার একটা হাসি দেয়।হাসি টা হয়তো কষ্ট মিশ্রিত ছিলো। তেমনি বোধগম্য হলো সাফওয়ান এর।শিউলি বলে উঠে,

—পুষ্প কথা বলতে পারে না ভাইজান।

বলে- ই আবার পা চালালো।সাফওয়ান কষ্ট অনুভূত হলো পুষ্প এর জন্য।একে তো গরীব। তার মধ্যে কথা বলতে পারে না।চাইলে ও তো চিকিৎসা করতে পারবে না।আল্লাহ ওদের সহায় হও।যার কেউ নেই তার আল্লাহ আছে।

সাফওয়ান আবার বাসার দিকে রওনা দিলে।নয়টা পনেরো বাজে অলরেডি। সাফওয়ান জোরে পা চালানো শুরু করলো। হাত এর বেলি ফুল এর মালা থেকে ঘ্রাণ ছড়াচ্ছে।যা সাফওয়ান নাসারন্ধ্র দিয়ে গ্রহণ করছে।

🌸🌸

রুমে বসে বার বার দেয়ালে ঝুলানো ঘড়ি টার দিকে তাকাচ্ছে রাফিয়া। সাফওয়ান অনেক আগে তাকে ফোন করে বলে ছিলো বাসায় আসছে।তাহলে এত দেরি কেন হচ্ছে।এত টা দেরি হওয়ার কথা তো না।পথে ঘাটে আবার কোনো বিপদ হলো না তো?আল্লাহ হেফাজত করো।
রাফিয়া বেল কনি তে চলে গেলো।বেলকনি দিয়ে বাইরে তাকিয়ে গেইট এর দিকে নজর রাখছে।সাফওয়ান ঢুকলো কিনা গেইট দিয়ে সেটাই বার বার দেখছে রাফিয়া। মন এর মধ্যে অজানা আশংকা এসে বার বার হানা দিচ্ছে।সাফওয়ান এর এত সময় লাগছে কেন আসতে?বুঝে আসছে রাফিয়ার। দোয়া দুরুদ পড়তে শুরু করলে রাফিয়া।

হঠাৎ পিছনে কারো উপস্থিতি টের পেতে -ই রাফিয়া পিছন ঘুরে তাকিয়ে দেখে সাফওয়ান। সাফওয়ান রাফিয়ার দিকে হেসে তাকিয়ে আছে।রাফিয়া সাফওয়ান এর দিকে তাকিয়ে ভিতর থেকে আসা একটা বড় উষ্ণ নিশ্বাস ত্যাগ করে।যেন নিশ্বাস টা এতক্ষণ আটকে ছিলো। রাফিয়া “আলহামদুলিল্লাহ “বলে -ই সাফওয়ান কে জড়িয়ে ধরে।মন টা এখনো যেন তার দুরু দুরু করছে।হার্ট দ্রুত বিট করছে।

সাফওয়ান রাফিয়ার চুল এর খোঁপার এক পাশে সাদা গোলাপ লাগিয়ে দেয় কাটা ভে’ঙে। অন্য পাশে লাল গোলাপ লাগিয়ে দেয় কাটা ভেঙে।দুই হাতে বেলি ফুলের মালা গুলো পরিয়ে দেয়।রাফিয়া কে ছাড়িয়ে নিয়ে সামনে দাড় করিয়ে তাকিয়ে থাকে।রাফিয়ার দৃষ্টি নিচে নত।চোখ এর পল্লব বার বার ফেলছে।

সাফওয়ান এর কাছে রাফিয়া কে বড্ড আবেদন ময়ী লাগছে বলে মনে হলো।অজানা ভাবে নিজের ভিতরের সত্ত্বা টা যেন আজ রাফিয়া তে মত্ত হওয়ার আবেদন করলো। রাফিয়া আগের ন্যায় দাঁড়িয়ে আছে।সাফওয়ান রাফিয়া কে এসে জড়িয়ে ধরে।কপালে অধর ছোঁয়া দেয়।আরেকটু নিবিড় ভাবে জড়িয়ে বলে,

—ভয় পাচ্ছেন কেন রাফিয়া? রাস্তায় দুটো ফুল এর সাথে কথা হয়েছিলো তাই দেরি হয়ে গেলো আসতে।এতে বুঝি এত ভয় পেতে হয়?

সাফওয়ান এর কথায় রাফিয়া কিছুক্ষণ চুপ থেকে বলে,

—আপনি ফোন দিয়ে বলে ছিলেন অফিস থেকে বের হয়েছেন। রিক্সায় আছেন, আসছেন। তাই আপনার দেরি দেখি ভয় হচ্ছিলো।

সাফওয়ান চুপ থাকে।বেশ খানিক সময় পার হলে সাফওয়ান রাফিয়া কে নিজের সামনে এনে রাফিয়ার চোখের দিকে তাকিয়ে বলে,

—আজ যদি একে অপরে তে মত্ত হওয়ার জন্য আবেদন করি।তবে কি আপনি আমাকে ফিরিয়ে দিবেন রাফিয়া?

সাফওয়ান এর কথায় রাফিয়ার লজ্জা হলো বেশ।লজ্জায় সাফওয়ান এর দিক থেকে নজর ঘুরালো অন্য দিকে।রাফিয়ার লজ্জা পাওয়া, নিরবতা তে সাফওয়ান নিজের উত্তর পেয়ে গেছে।রাফিয়ার নিরব “হ্যাঁ” সম্মতি পেয়ে সাফওয়ান আগ বাড়ায় রাফিয়ার দিকে।একে অপরে তে মত্ত হয়। ভালোবাসা ছড়িয়ে পড়ে দুই জনের মাঝে।এই তারা জ্বলমল রাতের নাম হয় তাদের কাছে ভালোবাসার রাত বলে।নিজের সাথে এক করে নেয় জীবনসঙ্গী কে।অবশেষে হলো কাছাকাছি আসা।বৈধ দৃষ্টি থেকে ফেলো বৈধ ছোঁয়া।

চলবে ইনশাল্লাহ

ভুল হলে ধরিয়ে দিবেন।রিচেক দেওয়ার সময় হয়নি আজ।কষ্ট করে বুঝে নিবেন।আসসালামু আলাইকুম।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here