#বৈধ_দৃষ্টি
#পর্বঃ৩৫(অন্তিম পর্ব)
#ফাতেমা_জান্নাত
হসপিটালে দিক বিদিক ছুটে চলছে সাফওয়ান। রাফিয়ার লেভার পেইন শুরু হয়ে ছিলো দুপুর এর পরে-ই। সাফওয়ান তখন মাত্র মসজিদ থেকে এসে বাসায় ঢুকেছে।বাসার সবাই একসাথে খেতে বসে ছিলো। দুই কিংবা তিন লোকমা ভাত মুখে তোলার সাথে সাথে-ই রাফিয়ার পেইন শুরু হয়।সাড়ে নয় মাস এর অন্তঃসত্ত্বা রাফিয়া। দুই দিন পরে-ই ডেলিভারি এর ডেট দিয়ে ছিলো ডাক্তার। আলহামদুলিল্লাহ ডেট এর আগে-ই রাফিয়ার পেইন শুরু হয়।রাফিয়ার পেইন উঠতে-ই সাফওয়ান আর ভাত গলাধঃকরণ করেনি।কোনো মতে হাত টা ধুয়ে রুম থেকে রাফিয়ার বোরকা নিয়ে এসে পরিয়ে দেয়।বড় উড়না দ্বারা রাফিয়ার শরীর সহ মুখ ঢেকে দেয়।সাবিনা কে সাথে নিয়ে রওনা দেয় হসপিটাল এর উদ্দেশ্যে।আমজাদ সাহেব অফিসে তখনো।রাফিয়া কে নিয়ে সাবিনা আর সাফওয়ান গাড়ির পিছনে বসে।রাফিয়া কে সাফওয়ান এক পাশ থেকে জড়িয়ে ধরে রাখে।সূরা দোয়া পড়ে রাফিয়া কে ফু দেয়।রাফিয়ার মাথা টা কে নিজের বুকে জায়গা করে দেয়।রাফিয়া ও সাফওয়ান এর বুকে মাথা এলিয়ে দুই হাতে সাফওয়ান এর পাঞ্জাবি মুঠ করে ধরে।রাফিয়ার চোখ দিয়ে পড়ছে অঝোর দ্বারায় পানি।কিন্তু মুখ দিয়ে বিন্দু মাত্র শব্দ নিঃসৃত হচ্ছে না।
হসপিটালে আনতে-ই রাফিয়ার ড্রেস চেঞ্জ করে হসপিটাল ড্রেস পরিয়ে অপারেশন থিয়েটারে নিয়ে যায়।সাফওয়ান কে বলে যায় রক্তের ব্যবস্থা করতে।সাফওয়ান চারদিকে ফোন করে দিচ্ছে র’ক্ত এর খোঁজে।র’ক্ত কেনা বেচা না জায়েজ। তাই সাফওয়ান ব্লা’ড ব্যাংকে র’ক্ত থাকা সত্ত্বে ও নিচ্ছে না।আগে চারদিকে খোঁজ করে নিক।যদি পেয়ে যায় আলহামদুলিল্লাহ।ডাক্তার বলেছে তিন ঘণ্টার মধ্যে রাফিয়া কে র’ক্ত দিতে হবে।সেই হিসেবে সাফওয়ান তার বন্ধু বান্ধব সকল কে র’ক্ত এর খোঁজ নিতে বলেছে।আজ যদি সাফওয়ান বিপদে পড়েও টাকার বিনিময়ে রক্ত সংগ্রহ করে তাহলে যিনি রক্ত বিক্রয় করতেন তিনিই গুনাহগার হবে।আর একারনেই সাফওয়ান রক্ত ক্রয় করতে নারাজ
” রক্ত কেনাবেচা ইসলামে নিষেধ রয়েছে। ইসলামে কোনো বিনিময় ছাড়া রক্তদান বৈধ, তবে কেনাবেচা অবৈধ। আরব-অনারবের সব আলেমের ঐকমত্যেই মানব অঙ্গের ক্রয়-বিক্রয় হারাম। উপমহাদেশের প্রখ্যাত ফকিহ আল্লামা মুফতি শফি (রহ.) ‘জাওয়াহিরুল ফিকহ’ গ্রন্থে লিখেছেন, ‘যেহেতু কোনো রকমের কাটাছেঁড়া ছাড়াই রক্তের দেহান্তর সম্ভব, তাই ইসলামে রক্তদান বৈধ। একজন মুসলিম অমুসলিমকেও রক্ত দিতে পারবে। তবে তা বিক্রি করা সম্পূর্ণ হারাম। এর যৌক্তিকতা হলো, রক্ত ও মায়ের দুধ দুটোই শরীর থেকে বের হয়ে যাওয়ার পর দ্রুতই তার অভার পূরণের ব্যবস্থা আল্লাহপাক কুদরতিভাবে মানবদেহে করে রেখেছেন। রোগীর সংকটাপন্ন পরিস্থিতিতে অর্থ ছাড়া রক্ত পাওয়া না গেলে অর্থের বিনিময়ে রক্ত সংগ্রহ করা বৈধ। কিন্তু যে ব্যক্তি এর বিনিময় গ্রহণ করল, সে হারাম গ্রহণ করল”।
আলহামদুলিল্লাহ রাফিয়াকে ব্লা’ড দেওয়ার জন্য পেয়ে গেছে দুই জনকে।দুই জনে-ই সাফওয়ান এর কলেজ লাইফের বন্ধু ছিলো। যাদের সাথে এখন আর তেমন যোগাযোগ নেই।কিন্তু আজ।প্রয়োজনে তাদের-ই লাগলো।এর মাঝে ডাক্তার এসে বললো রাফিয়ার সিজার করানোর কথা বলতে-ই সাফওয়ান কড়াকড়ি ভাবে নিষেধ করে দিয়েছে।সাফওয়ান ডাক্তার দের কে জিজ্ঞেস করেছিলো,”রাফিয়ার শারীরিক কন্ডিশন কেমন”? ডাক্তার যখন বলে ছিলো ভালো। এর পরে তো সাফওয়ান আরো নারাজ সিজার করাতে।সাফওয়ান এর এক কথা নরমালে ট্রাই করুন।আল্লাহ ভরসা আল্লাহ সহায় হবে।ডাক্তার রা আর কিছু না বলে চলে যায় আবার অপারেশন থিয়েটারে।
একান্ত অপারগতাবশত সিজার করতে কোনো সমস্যা নেই। অর্থাৎ যখন বাচ্চা বা মায়ের জীবননাশের বা বড় কোনো ক্ষতির আশঙ্কা হয় এবং কোনো বিজ্ঞ চিকিৎসক সিজার করাতে বলেন, তখন সিজার করানো যাবে। তবে নরমাল ডেলিভারি সম্ভব হলে সিজার করা জায়েজ নেই। কোনো চিকিৎসক বা প্রতিষ্ঠান নিজেদের স্বার্থে সিজার করাতে বাধ্য করলে তারা অবশ্যই গুনাহগার হবেন। দুনিয়াবি দিক থেকেও এটা মারাত্মক অপরাধ।
অপারেশন থিয়েটার এর ভিতরে রাফিয়ার অপারেশন চলছে।এখনো পর্যন্ত কেউ বের হয় নি ওটি থেকে।সাবিনা এক পাশে একটা চেয়ারে বসে দোয়া পড়ছি।সাফওয়ান একটা বেঞ্চের উপর বসে একমনে দোয়া পড়ছে আর চোখ এর পানি ফেলছে।একজন সত্যিকার অর্থের স্বামী স্ত্রীর প্রশব বেদনা দেখে স্থির থাকতে পারেনা।সাফওয়ান ও ঠিক তাই।রাফিয়ার জন্য আল্লাহর কাছে দোয়া চাচ্ছে আর চোখ এর পানি ফেলছে।ইশ্ কি সুন্দর হালাল ভালোবাসা।স্ত্রী অপারেশন থিয়েটার সন্তান প্রশব বেদনায় কাঁদছে। আর স্বামী বাইরে স্ত্রীর কষ্ট মাখা মুখ টা বার বার মনে।আল্লাহর কাছে স্ত্রীর জন্য দোয়া চেয়ে কাঁদছে।
সাফওয়ান যখন মাথা নিচের দিকে নামিয়ে রেখে একমনে দোয়া করছে আর কাঁদছে। ঠিক তখনি সাফওয়ান এর সামনে এসে।একজন নার্স দাঁড়ায়।সাফওয়ান মাথা তুলে তাকায় না।নার্স হেসে দিয়ে বলে,
—“হয়েছে,এবার নিজের কান্না বন্ধ করে মেয়ের কান্না শুনুন”।
সাফওয়ান চট করে মাথা তুলে তাকায়।দেখে নার্সের কোলে শুভ্র তোয়ালে দ্বারা মুড়ানো একটা ছোট্ট বাবু।সাফওয়ান চোখ মুছে উঠে দাঁড়ায়।নার্সের কোল থেকে মেয়ে কে নিজের কোলে নেয় বিসমিল্লাহ্ বলে।চোখে পানি ঠোঁটে হাসি সাফওয়ান এর।মেয়ে টা চোখ পিটপিট করে সাফওয়ান এর দিকে তাকিয়ে আছে।
যেন বুঝে গেছে যার কোলে আছে সেই তার বাবা।সাফওয়ান হেসে দিয়ে মেয়ের ললাটে চুমু দিয়ে কানের কাছে আজান দেয়।আজান দেওয়া শেষ হলে আবার মেয়ের মুখে চুমু দেয়।নার্সের দিকে না তাকিয়ে-ই বলে,
—“আমার আহেলিয়া কেমন আছে?
—আলহামদুলিল্লাহ ভালো। একটু পরে কেবিনে দেওয়া হবে উনাকে।
সাফওয়ান এর থেকে মেয়ে কে নিয়ে রাফিয়ার কাছে চলে যায় নার্স।সাফওয়ান পাশের মসজিদে চলে যায় শুকরিয়া নামাজ পড়তে।
–
সাফওয়ান নামাজ পড়ে এসে হসপিটালে রাফিয়ার কেবিনে গিয়ে দেখে রাফিয়া তার বাবা মা এর সাথে কথা বলছে।সাফওয়ান কে তারা দেখতে-ই কেবিন থেকে বেরিয়ে যায়।রাফিয়ার পাশে-ই তাদের মেয়ে শুয়ে আছে।নিশ্চিন্তে ঘুমাচ্ছে সে।একটা আঙুল মুখের ভিতরে।সাফওয়ান হেসে দেয়।কেবিন এর দরজা টা ভালো করে আটকে দিয়ে রাফিয়ার পাশে গিয়ে বসে।রাফিয়া নির্লিপ্ত দৃষ্টি তে সাফওয়ান এর দিকে তাকিয়ে আছে।ঠোঁটে হাসির রেখা লেগে আছে।সাফওয়ান রাফিয়ার আর মেয়ের কপালে অধর ছুঁয়ে দিয়ে পাশে চেয়ার টেনে বসে।রাফিয়ার একটা হাত নিজের দুই হাতের মাঝে নিয়ে মুঠোবন্দি করে।হাতের পিঠে বেশ কয়েকবার নিজের ওষ্ঠদ্বয় এর স্পর্শ দেয়।রাফিয়া সাফওয়ান এর দিকে তাকিয়ে স্মিত হেসে বলে,
—আপনার মেয়ের সাথে কথা বলেছেন?
—জি।একদম ছোট্ট রাফিয়া।
—হ্যাঁ।বড় রাফিয়ার মতো কালো।
রাফিয়ার মুখে ‘কালো’ কথা টা সাফওয়ান মুখ এর হাসি মিলিয়ে নেয়।ভেজায় রে’গে যায় খানিক। রাফিয়া কে বলে,
—আপনাকে না আমি বলেছি একদম কালো বলবেন না।আমার মেয়ে মাশা আল্লাহ অনেক সুন্দর।মেয়ের আম্মু ও সুন্দর। কিন্তু এটা মেয়ের আম্মু বুঝে না।আর যাতে কোনো দিন আপনার মুখে আমি না শুনি আপনি আর আমাদের মেয়ে কালো।যেমন আছেন আল্লাহর কাছে শুকরিয়া আদায় করুন।
—আলহামদুলিল্লাহ।
—রাফিয়া আমাদের মেয়ের কি নাম রাখা যায় বলুন তো?
—আপনি-ই ভেবে রাখুন।
—আচ্ছা সাফিয়া নামটা কেমন বলুন তো?সাফওয়ান এর “সা” আর রাফিয়ার “ফিয়া” মিলে সাফিয়া।তাছাড়া নাম টার অর্থ ও মাশা আল্লাহ সুন্দর।সাফিয়া নাম এর অর্থ: খাঁটি,পূর্ণ্যবান,বিশুদ্ধ,নির্দোষ।
—আচ্ছা তাহলে সাফিয়া রাখুন।আপনি খুশি হয়েছেন আল্লাহ আমাদের মেয়ে দেওয়া তে?
সাফওয়ান হাসি দেয় রাফিয়ার কথার বিপরীতে। আলগোছে মেয়ে কে কোলে তুলে নিয়ে মেয়ের কপালে আদর দিয়ে বলে,
—আলহামদুলিল্লাহ আমি অনেক খুশি রাফিয়া।আল্লাহ আমাদের প্রথম সন্তান রাজকন্যা দিয়েছে।যেখানে আল্লাহ খুশি হয়ে মেয়ে সন্তান দেয়,সেখানে আমি কিভাবে আমাদের রাজকন্যা আসাতে খুশি হবো না রাফিয়া?ইসলামের কন্যা সন্তান নিয়ে বলা আছে যে,
আল্লাহ তাআলা ইরশাদ করেন- তিনি যাকে ইচ্ছা কন্যা সন্তান দান করেন এবং যাকে ইচ্ছা পুত্র সন্তান দান করেন। অথবা তাদেরকে দান করেন পুত্র ও কন্যা উভয়ই এবং যাকে ইচ্ছা করে দেন বন্ধ্যা। (সূরা শুরা ৪২: ৪৯)
আল্লাহ তাআলা কুরআনে পাকে কন্যা সন্তানের আগমনকে সুসংবাদ বলে উল্লেখ করেছেন। এ সুসংবাদ হলো জান্নাতের দাওয়াতনামার সুসংবাদ। অথচ অজ্ঞতার যুগের মতো আজও কন্যা সন্তান জন্ম নিলে অনেকের মুখ কলো হয়ে যায়। অজ্ঞতার যুগে কন্যা সন্তান ও নারীর প্রতি বর্বর চিন্তা-ভাবনার মূলে কুঠারাঘাত করে আল্লাহ তাআলা ঘোষণা করেন-
‘যখন তাদের কাউকে কন্যা সন্তানের সুসংবাদ দেয়া হয়, তখন তারা মুখ কালো করে এবং মনে অসহ্য কষ্ট ভোগ করতে থাকে। তাকে শোনানো সুসংবাদের দুঃখে সে মানুষের কাছ থেকে মুখ লুকিয়ে থাকে। সে ভাবে, অপমান সহ্য করে তাকে (কন্যা সন্তানকে) থাকতে (বাঁচতে) দেবে, নাকি তাকে মাটির নিচে পুতে ফেলবে। শুনে রাখ, তাদের ফয়সালা খুবই নিকৃষ্ট।’ (সুরা নাহল : আয়াত ৫৮-৫৯)
কন্যা শিশুর প্রতি বিশেষ গুরুত্ব ও লালন পালনে যত্নবান হলেই রয়েছে জান্নাত প্রাপ্তির সুসংবাদ ও বিশেষ ঘোষণা। হাদিসে পাকে এসেছে-
প্রিয় নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম কন্যা সন্তানের পালনকারীর জন্য তিনটি পুরস্কার ঘোষণা করেছেন-
★জাহান্নাম থেকে মুক্তি।
★জান্নাতে প্রবেশের নিশ্চয়তা।
★ জান্নাতে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের সঙ্গী হওয়ার সৌভাগ্য অর্জন।
হযরত আবু সাঈদ খুদরি রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, ‘তোমাদের মধ্যে যার তিনটি কন্যা অথবা তিনটি বোন আছে, তাদের সঙ্গে স্নেহপূর্ণ ব্যবহার করলে সে বেহেশতে প্রবেশ করবে।(তিরমিজি)
আল্লাহ তাআলা কাউকে এক বা একাধিক কন্যা সন্তান উপহার দিলে সন্তুষ্ট চিত্তে তাদের লালন-পালন করা আবশ্যক। তাদের প্রতি অবহেলা বা এ কারণে মনে কষ্ট নেওয়ার কোনো কারণ নেই। হাদিসে পাকে এ ব্যাপারেও সুসংবাদ দেওয়া হয়েছে,
হযরত আনাস রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেন, ‘রাসুলুল্লাহসাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেন, যে ব্যক্তি দুজন কন্যা সন্তানকে লালন-পালন ও দেখাশোনা করল (বিয়ের সময় হলে ভালো পাত্রের কাছে বিয়ে দিল) সে এবং আমি জান্নাতে এরূপ এক সঙ্গে প্রবেশ করব, যেরূপ এই দুটি আঙুল (এ কথা বলার সময় তিনি নিজের দুই আঙুল মিলিয়ে দেখালেন)।’(তিরমিজি)
কন্যাসন্তানে কোনরূপ অসন্তোষ প্রকাশ পরিহার করা উচিত। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাই সাল্লাম যেমন কন্যাসন্তানকে আল্লাহর রহমত বলেছেন এবং কন্যাসন্তানের প্রতি যে ভালোবাসা প্রকাশ করেছেন এটা আমাদের আদর্শ। তার অনুসরণ আমাদের কর্তব্য।তাহলে আমি কি ভাবে অসন্তুষ্ট হবো আমার রাজকন্যা আসাতে?আলহামদুলিল্লাহ আমি অনেক অনেক খুশি রাফিয়া।আল্লাহ আমার ঘরে একটা জান্নাত পাঠিয়েছে।
রাফিয়া হেসে দেয় সাফওয়ান এর কথায়।রাফিয়া জানে সাফওয়ান কখনো মন খারাপ করবে না তাদের মেয়ে আসাতে।তবুও রাফিয়া সাফওয়ান কে জিজ্ঞেস করলো আরকি।
রাফিয়া সাফওয়ান কে নিজের দিকে ঢেকে নেয়।সাফওয়ান কাছে আসতে-ই রাফিয়া সাফওয়ান এর দুই গালে,কপালে অধর ছুঁয়ে দেয়।সাফওয়ান মুচকি হাসে।
🌸🌸
সময়ের পালা বদলে বদলে যায় অনেক কিছু,বদলে যায় মানুষ, বদলে যায় পরিবেশ। বদলে যায় পারিপার্শ্বিক সব কিছু।ঠিক তেমনি সময় কে’টে গিয়েছে পাচঁ বছর।কোন ফাঁকে যে সময় টা পার হলো বুঝা যায়নি।সাফিয়া এখন পাচঁ বছরের ছোট্ট বুড়ি।সারাদিন পুরো বাড়ি দাদা দাদুর হাত ধরে ঘুরে বেড়ায় আর এটা সেটা কথা বলবে।তার এই কথা গুলো-ই সবার মনে প্রশান্তির ঢেউ তুলে।
আজকে সাফওয়ান,রাফিয়া,সাফিয়া রাফিয়া দের বাড়ি যাবে।রাফিয়ার মা যেতে বলেছে।নাতনি কে দেখতে ইচ্ছে করছিলো তাই।সকাল এখন সাড়ে নয়টা বাজে।রাফিয়া নিজে দের ঘরে এদিক সেদিক ঘুরে প্রয়োজনীয় এটা সেটা নিচ্ছে।রাফিয়ার পিছনে পিছনে সাফিয়া ও হাটছে আর মুখে।বলছে,
—“আম্মু আমার বোরকা দাও।আমি বোরকা পরে যাবো নানু বাড়ি”।
রাফিয়ার হাতে কাজ। তাই মেয়ে কে বোরকা টা দিতে পারছে না।কিন্তু সাফিয়া তো স্থির ভাবে থাকার মতো মেয়ে না।সেই একই কথা বলে বলে রাফিয়ার পিছনে ছুটছে।
আধ ঘণ্টা পরে-ই সাফওয়ান আসে রুমে। মেয়ে কে এভাবে রাফিয়ার পিছনে হাটতে দেখে হেসে দেয় সাফওয়ান। আদর করে মেয়ে কে ডাক দেয়,
—সাফু,মামনি।এই দিকে আসো কি করছো তুমি?
বাবার কথা শুনে সাফিয়া বাবার দিকে ঘুরে তাকিয়ে উৎফুল্ল হয়ে ছুটে আসে।বাবার কাছে বিচার এর ঝুলি নিয়ে বসে।মা তাকে বোরকা দিচ্ছে না কেন?সাফওয়ান উঠে কার্বাড থেকে মেয়ের বোরকা আর হিজাব নিয়ে মেয়ে কে সুন্দর করে পরিয়ে দেয়।এই ফাঁকে রাফিয়া ও রেডি হয়ে নেয়।সাফওয়ান ও কার্বাড থেকে পাঞ্জাবি নিয়ে চেঞ্জ করে আসে।তিন জনে মিলে বেরিয়ে পড়ে নিজেদের গন্তব্যে।
পথে তিনজনে একটা অটোতে উঠে। সাফওয়ান মেয়ে কে কোলে নিয়ে একহাতে ধরে রেখে অন্য হাতে রাফিয়া কে ধরে রেখেছে।সাফওয়ান এর চোখ হঠাৎ সাফিয়ার দিকে পড়তেই দেখে সাফিয়া তার দিকে তাকিয়ে আছে।সাফওয়ান হেসে দিয়ে বলে,
—আমার মা তার বাবার দিকে তাকিয়ে আছে কেন?
সাফিয়া হেসে দিয়ে বলে,
—বাইরের দিকে তাকালে কোনো ছেলের দিকে চোখ পড়লো তো গুনাহ হবে বাবা।তাই তোমার দিকে তাকিয়ে আছি।
সাফওয়ান হেসে দেয় মেয়ের কথায়।মেয়ের কপালে আদর দিয়ে দেয়।পিছন থেকে আলগোছে রাফিয়া কে আরেকটু জোড়ালো ভাবে ধরে বলে,
—“এই হলো আমাদের জান্নাত”।
রাফিয়া হেসে দেয় সাফওয়ান আর সাফিয়ার দিকে তাকিয়ে।মাশা আল্লাহ এই অল্প বয়স এই মেয়ে টা বুঝে গেছে কার দিকে তাকানো বৈধ আর কার দিকে তাকানো গুনাহ। অবশ্য এই সব কিছু সাফওয়ান -ই সাফিয়া কে শিখিয়েছে।সাফিয়া কে সাফওয়ান এর কোল থেকে নিয়ে রাফিয়া নিজের বুকের সাথে জড়িয়ে ধরে বলে,
—আমাদের ঘরের রাজকন্যা আমাদের জান্নাত।আল্লাহ আমাদের রাজকন্যা কে সঠিক পথে অগ্রগামী করুক।
সাফওয়ান হাসি দিয়ে বলে,
—আমিন।
বৈধতা নিয়ে থাকুক প্রতিটা সম্পর্ক। বৈধ ব্যক্তির উপর থাকুক বৈধ দৃষ্টি।ফিতনার জগৎ থেকে হোক সবার আত্মার নিষ্কৃতি।হেফাজত করুক আল্লাহ সকল এর দৃষ্টি।ফিতনা,যিনা এবং অন্যান্য সব গুনাহ থেকে মুক্ত রাখুক সকলকে।
💙সমাপ্ত🖤
আলহামদুলিল্লাহ গল্পটা শেষ হলো।জানি না কার কেমন লেগেছে গল্পটা।আমি চেষ্টা করেছি আমি যা জানি,তা সবাইকে জানানোর।জানি না কতটুকু জানাতে পেরেছি।আমি যা যা হাদিস বলেছিলাম সব গুলোর সাথে রেফারেন্স সহ দিয়ে ছিলাম যাতে কেউ বিভ্রান্ত না হয়।চলার পথে আমরা ফিতনায় যিনায় জড়িয়ে যায়।যা আমি গল্পে তুলে ধরার চেষ্টা করেছিলাম এবং অনেকে ইসলাম এর নাম করে হাজার প্রথা চালু করেছে বা করছে সেটা ও তুলে ধরার চেষ্টা করেছিলাম।জানি না কতটুকু সঠিক ভাবে তুলে ধরেছি।ভুল।মানুষ-ই করে।তাই আমার ও ভুল হতে পারে অনেক ক্ষেত্রে। আশা করি তা আপনারা ক্ষমা সুন্দর দৃষ্টি তে দেখবেন।
আজকে আবার শেষ বারের মতো এই গল্প সম্পর্কে আপনাদের কিছু মন্তব্য পাওয়ার আশা করবো।আমিও ইনশাআল্লাহ মন্তব্য গুলো পড়বো। ইনশাআল্লাহ ঈদের পর নতুন গল্প নিয়ে আসার চেষ্টা করবো।ভালো থাকবেন আপনারা সবসময়। আসসালামু আলাইকুম ওয়া রাহমাতুল্লাহ।