বৈধ_দৃষ্টি #পর্বঃ২৯

0
255

#বৈধ_দৃষ্টি
#পর্বঃ২৯
#ফাতেমা জান্নাত

—“মা আজকের এই তারিখে এক বছর আগে আমরা সাইফ ভাইয়া কে হারিয়ে ছিলাম, আবার আজকে-ই আমার রাফিয়া অসুস্থ হয়ে পড়েছে।মা ওর কিছু হবে না তো”?

সাফওয়ান এর করুণ বাণী তার মা এর নিকট। সাবিনা ছেলে কে এভাবে কষ্ট পেতে দেখে নিজ এর ও খুব কষ্ট হচ্ছে।এখনো ডাক্তার রাফিয়ার কেবিন থেকে বের হয়নি।কিছু এখনো বলে ও নি রাফিয়ার কি হয়েছে?এর মধ্যে সাফওয়ান এসে সাবিনার সামনে করুণ কণ্ঠ স্বরে কথা টা বলে।সাবিনা কি বলে ছেলে কে আশ্বাস দিবা তা উনার জানার ভাণ্ডারে নেই।কারণ উনি নিজে ও এখনো জানে না রাফিয়ার কি হয়েছে।তবু ও সাবিনা ছেলের পিঠে হাত ভুলায়।মাথায় হাত ভুলিয়ে বলে,

—চিন্তা করিস না বাবা।আল্লাহ ভরসা।আল্লাহ আমার মেয়ে কে সুস্থ করে দিবে।আল্লাহর কাছে দোয়া কর।

সাফওয়ান সাবিনা কে কিছু বলার জন্য উদ্যত হয়।ঠিক সেই সময় ডাক্তার এসে সাফওয়ান এর সামনে দাঁড়িয়ে বলে,

—সাফওয়ান তোমার ওয়াইফ এর অপারেশন করা লাগবে ইমিডিয়েটলি।

“অপারেশন করা লাগবে” কথা টা শুনে-ই সাফওয়ান আতকে উঠে?কি হয়েছে তার রাফিয়ার?অপারেশন কেন করা লাগবে?এই অপারেশন থিয়েটার এর ভিতরে এক বছর আগে তার ভাইয়া ঢুকে ছিলো। ফিরে ও এসে ছিলো। কিন্তু জীবিত ফিরেনি।নিথর নিশ্বাস বিহীন শরীর নিয়ে ফিরে এসে ছিলো। তবে আজ কেন আবার তার রাফিয়া কে এই অপারেশন থিয়েটারে নিবে?সাফওয়ান মাথা যেন হ্যাং হয়ে গেছে।মাথা ঝিমঝিম করছে।পড়ে যেতে নিলে ডাক্তার ওকে ধরে একটা চেয়ারে বসিয়ে দেয়।দুই ভ্রু কুঁচকে সাফওয়ান কে বলে,

—তুমি ঠিক আছো সাফওয়ান?

সাবিনা সাফওয়ান কে পানির একটা বোতল হাতে ধরিয়ে দিয়ে পানি খেতে বলে।সাফওয়ান সাবিনার থেকে পানির বোতল নিয়ে পানি খেয়ে কিছুক্ষণ চুপ করে থাকে।কিছু টা স্বাভাবিক হতে-ই ডাক্তার এর দিকে তাকিয়ে মৃদু কণ্ঠে বলে,

—আমি ঠিক আছি আংকেল। আমার রাফিয়ার কি হয়েছে?

সাফওয়ান এর গলা ধরে আসছে।কথা যেন মুখ দিয়ে বের হতে চাচ্ছে না।

ডাক্তার সাফওয়ান এর দিকে তাকিয়ে বলে,

—তোমার ওয়াইফ এর এপেন্ডিসাইটিস ধরা পড়েছে।এপেন্ডিসাইটিস এর উপসর্গ আগে থেকে-ই হয়তো দেখা দিয়ে ছিলো তোমরা খেয়াল করো নি।তবে আল্লাহর কাছে শুকরিয়া যে মাঝামাঝি স্ট্রেসে তোমরা হসপিটালে এসেছো।এর থেকে বেশির দিকে গেলে হয়তো খারাপ কিছু হতে পারতো। তবে তার পরে ও অপারেশন করা লাগবে।আপাতত তোমার ওয়াইফ কে ইঞ্জেকশন দিয়ে ঘুমা পাড়িয়ে রাখা হয়েছে।ব্য’থায় বার বার চি’ৎকার করছিলো। তাছাড়া এপেন্ডিসাইটিস এর অপারেশন খালি পেটে করতে হয়।এত সময় ওকে জাগিয়ে রাখা টা ঠিক হতো না।ব্য’থা ও সহ্য করতে পারতো না।
তুমি তাড়াতাড়ি হসপিটালে রিসেপশনে গিয়ে সব কিছু জেনে আসো কি কি করা লাগবে।

বলে-ই ডাক্তার নিজ এর কেবিনে চলে যায়।

রাফিয়ার অপারেশন না করে ও কোনো উপায়ান্তর নেই।এইতো আর কিছু ঘন্টা সময় এর পরে-ই রাফিয়া কে ‘ল্যাপারোস্কোপিক অ্যাপেনডেকটমি’ করতে নিয়ে যাওয়া হবে। সকল ব্যবস্থা প্রায় হয়েই গিয়েছে। সাধারণত অ্যাপেনডেকটমি করার আগে আট ঘন্টা না খেয়ে থাকতে হয় এবং বেশ কিছু নিয়মাবলি মানতে হয়, এরপরই অ্যাপেনডেকটমি করা হয়।রাফিয়া বাড়ি তে-ই চার ঘন্টা আগে -ই সকাল এর নাস্তা করে ছিলো। এর পরে আর কিছু খাওয়া হয়নি।চার ঘণ্টা খালি পেটে ছিলো। আর এখন চার ঘণ্টা অপেক্ষা করতে হবে এর পরে-ই অপারেশন।

সাফওয়ান দ্রুত রিসেপশনে যায়।হসপিটাল এর যা যা কিছু তে তার প্রয়োজন ছিলো সব কিছু শেষ করে আবার রাফিয়ার কেবিন এর সামনে দাঁড়ায়।ডাক্তার কে বলে রাফিয়ার কেবিন এর ভিতরে প্রবেশ করে।চোখ এর পানির দ্বারা চোখ চিকচিক করছে সাফওয়ান এর।শুভ্র রঙ্গা বেডে রাফিয়া সাদা চাদর বুক অব্ধি দিয়ে শুয়ে আছে।চোখে মুখে ব্য’থাতুর ছাপ।রাফিয়ার বেডের পাশে একটা টুল টেনে নিয়ে বসে সাফওয়ান। রাফিয়ার একটা হাত টেনে নেয় নিজে এর দুই হাত এর মুঠোয়। ঠোঁট ছোঁয়ায় রাফিয়া হাতের উল্টো পিঠে।রাফিয়া ঘুমে থাকলো পেটে ব্য’থায় কুঁকিয়ে উঠছে মাঝে মাঝে।

সাফওয়ান বুক এর চিনে চিনে ব্য’থা টা যেন বাড়ছে রাফিয়া কে এমন কষ্ট পেতে দেখে।মনে মনে হাজার বার বলে ফেলেছে,”আল্লাহ তুমি হয়তো আমার রাফিয়ার কষ্ট নিবারণ করো,নয়তো ওর কষ্টের অল্প কিছু ভাগ হলে অ আমাকে দেও।ওর এমন কষ্ট সহ্য করতে পারছি না আমি”।পর মুহূর্তে-ই মনে পড়ে হতাশ হওয়া যাবে না।কারণ কুরআনে মহান রাব্বুল আল আমিন বলেছে,

নিরাশ হয়ো না, দুঃখিত হয়ো না তুমিই জয় লাভ করবে যদি তুমি বিশ্বাসী হও”।
(সূরা আল ইমরান ;আয়াত -১৩৯)

“দুঃখ করো না আল্লাহ্ আমাদের সাথে আছেন”। (সূরা তাওবাহ-৪০)

সাফওয়ান রাফিয়ার কপালে অধর ছোঁয়া দিয়ে বের হয়ে আসে।মসজিদে চলে যায়।একটু পরে-ই আছর এর আজান দিবে মুয়াজ্জিন মসজিদে। সাবিনা কে বলে যায় রাফিয়া কে অপারেশন থিয়েটারে নেওয়ার আগে তাকে ফোন দিয়ে বলতে।সাফওয়ান
চোখ এর পানি মুছে নেয় সবার আড়ালে।
হসপিটাল থেকে বের হয়ে মসজিদ এর দিকে চলে যায়।

🌸🌸

ডাক্তার এসে মাত্র আমজাদ সাহেব আর সাবিনা কে বলে গিয়েছে ওটি রেডি হয়ে গেছে।আর আধ ঘণ্টা পরে-ই রাফিয়া কে অপারেশন থিয়েটারে নিয়ে যাওয়া হবে অপারেশন এর জন্য।অফিস এর কাজ শেষ করে-ই আমজাদ সাহেব ডাইরেক্ট হসপিটালে চলে আসে।

এই দিকে সাফওয়ান এখনো আসেনি।মসজিদে বসে আছে।প্রিয়তমার সুস্থতার জন্য আল্লাহর কাছা দোয়া চাইছে।হঠাৎ ফোনে ভাইব্রেট হওয়ায় সাফওয়ান সম্বিৎ ফিরে আসে।ফোন হাতে নিয়ে দেখে আমজাদ সাহেব ফোন দিয়েছে।তাড়াতাড়ি কল রিসিভ করে কানে লাগাতে-ই আমজাদ সাহেব বলে উঠে,

—তাড়াতাড়ি হসপিটালে আয়।রাফিয়া মা কে অপারেশন এর নিয়ে যাবে একটু পর।

—আচ্ছা আমি এখুনি আসছি।

বলে-ই সাফওয়ান বের হয়ে যায় হসপিটাল এর উদ্দেশ্যে। হসপিটাল থেকে মসজিদ এর দূরত্ব পাচঁ মিনিট এর পথ।কিন্তু এখন যেন পথ শেষ হচ্ছে না বলে মনে হয় সাফওয়ান এর কাছে।তবু ও অতি দ্রুত পা চালিয়ে যাচ্ছে সে।অল্পতে-ই কেমন যেন হাপিয়ে যাচ্ছে।

অবশেষে হসপিটালে এসে ঢুকে হন্তদন্ত হয়ে রাফিয়ার কেবিন এর সামনে এসে দাঁড়ায়।রাফিয়া কে মাত্র কেবিন থেকে বের করার প্রস্তুতি নিচ্ছিলো অপারেশন থিয়েটারে নেওয়ার জন্য।দেখে যে রাফিয়ার গায়ে অপরেশন থিয়েটার এর ড্রেস।
রাফিয়া সাফওয়ান এর দিকে তাকিয়ে আছে সিক্ত দৃষ্টি তে।সাফওয়ান ধীর পায়ে এসে রাফিয়ার পাশে দাঁড়ায়। রাফিয়ার দিকে তাকিয়ে আছে সে।রাফিয়ার চোখ এর কার্ণিস বেয়ে পানি পড়ছে।সাফওয়ান তা দিয়ে মুছে দিয়ে রাফিয়ার কপালে ছোট্ট করে চুমু দিয়ে বলে,

—আল্লাহ ভরসা।একদম ভয় পাবেন।ইনশাল্লাহ আপনি সুস্থ হয়ে আবার ফিরে আসবেন।আল্লাহর উপর ভরসা রাখুন।

রাফিয়া শুনে সাফওয়ান এর কথা।রাফিয়া ঠিক-ই বুঝতে পারছে সাফওয়ান মনে মনে যে কত টা ভয় নিয়ে আছে তার জন্য।তবু ও কি সুন্দর হাসি মুখে রাফিয়া কে সাহস জুগিয়ে যাচ্ছে।রাফিয়া সাফওয়ান কে ইশারায় কাছে ডাকে।

সাফওয়ান মাথা টা একটু নিচু করে ঝুকে আনতেই রাফিয়া সাফওয়ান কে আর ও কাছে আসতে বলে।সাফওয়ান রাফিয়ার একদম মুখের কাছে মুখ আনলে রাফিয়া অতি ধীরে মিহি স্বরে সাফওয়ান এর কানে কানে বলে,

—ভালোবাসি আমার জীবনসঙ্গীকে।আমার সাফওয়ান নামক স্বামীকে ভালোবাসি।

বলে সাফওয়ান এর কপালে রাফিয়া একটা চুমু দেয়।কিছুক্ষণ পরে-ই ডাক্তার,আমজাদ সাহেব, সাবিনা আসতে-ই ডাক্তার নার্স কে বলে,রাফিয়া কে নিয়ে যেতে।নার্সরা ও রাফিয়া কে নিয়ে যায়।মূলত এতক্ষণ তাদের পাশে কেউ ছিলো না।তাদের প্রাইভেসি দেওয়া হয়ে ছিলো।

রাফিয়ার মুখোচ্চরিত “ভালোবাসি আমার জীবনসঙ্গীকে।আমার সাফওয়ান নামক স্বামীকে ভালোবাসি”। কথা টা শুনার পর ও যেন সাফওয়ান খুসি হতে পারছে না।আমজাদ সাহেব এসে সাফওয়ান এর কাঁধে হাত দিতে-ই সাফওয়ান বাবা কে জড়িয়ে ধরে কান্না করে দেয়।এটা দুঃখের কান্না না কি সুখের সেটা সে উপলব্ধি করতে পারছে না।

চলবে ইনশাল্লাহ।

ভুলত্রুটি মার্জনীয়।আজ রিচেক করার সময় হয়ে উঠেনি।আসসালামু আলাইকুম।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here