বৈধ_দৃষ্টি #পর্বঃ৩৪

0
276

#বৈধ_দৃষ্টি
#পর্বঃ৩৪
#ফাতেমা_জান্নাত

সময়,এই তো নিজ এর মর্জিতে পালাক্রমে যায়।সময় এর দ্বারপ্রান্তে আসার ও কারো জো নেই।এই তো সময় এলো আর এই তো সময় গেলো।বলতে না বলতে-ই অনেক গুলো দিন মাস পেরিয়ে গিয়েছে।রাফিয়ার প্রেগন্যান্সি এর সময় এখন আট মাস।চলতে ফিরতে কষ্ট হয় খানিক।তবে আলহামদুলিল্লাহ তুলনা মূলক কম-ই কষ্ট হয় রাফিয়ার। সাফওয়ান মাঝে মাঝে বাড়ি থাকে।অফিস থেকে ছুটি নেয়।অফিস এর বস তেমন একটা কাজ এর প্রেশার দেয় না সাফওয়ান কে।সাফওয়ান ছুটি চাইলে কাজ না থাকলে ছুটি দিয়ে দেয়।আর যাই হোক এই সময় টা তে সব থেকে স্বামী কে প্রয়োজন।স্ত্রীর পাশে।সাফওয়ান ও রাফিয়ার যথেষ্ট খেয়াল রাখে।সাথে ফ্যামিলি মেম্বার রা তো আছে-ই।রাফিয়ার মা এসে কয় দিন থেকে গিয়ে ছিলো।রাফিয়া কে দেখতে এসে ছিলো।রাফিয়া কে রাফিয়ার মা বাবা বলে ছিলো প্রেগন্যান্সি এর সময় টা তে না হয় রাফিয়ার বাবার বাড়ি তে থাকতে। কিন্তু রাফিয়া রাজি হয় নি।তার এক কথা আমার স্বামী আমার যত টুকু খেয়াল রাখে আর কেউ তেমন ভাবে ঠিক তত টুকু খেয়াল ও রাখতে পারবে না।রাফিয়ার এই কথার প্রতি উত্তরে কি আর কিছু বলার আছে?কেউ আর কিছু বলে নি।রাফিয়ার কথায় মেনে নিয়েছে।

রাত সাড়ে আট টা বাজে।সাফওয়ান মাত্র বাসায় এসেছে।রুমে ঢুকে দেখে রাফিয়া নামাজ পড়ছে।কষ্ট হচ্ছে আট মাস এর পেট টা নিয়ে নামাজ পড়তে।তবু পড়ছে।কোনো অবস্থা তে-ই যে নামাজ বাদ দেওয়া ঠিক না।সাফওয়ান রুমে এসে কার্বাড খুলে টাউজার আর টি শার্ট নিয়ে ওয়াশরুমে যায় ফ্রেশ হতে।

ফ্রেশ হয়ে ওয়াশরুম থেকে বের হয়ে দেখে রাফিয়া দুই হাত পিছন এর দিকে দিয়ে দুই পা সামনে এর দিকে মেলে কিছু টা হেলে বসে আছে।সাফওয়ান গিয়ে পিছন থেকে রাফিয়া কে জড়িয়ে ধরে।আস্তে আস্তে উঠিয়ে বিছানায় এনে বালিশ এর সাথে হেলান দিয়ে বসিয়ে দেয়।রাফিয়া সাফওয়ান এর দিকে তাকিয়ে হেসে দেয়।সাফওয়ান আবার ওয়াশরুমে যায়।ওযু করে কোরআন মাজিদ হাতে নিয়ে বিছানায় বসে।রাফিয়ার কোলে হেলান দিয়ে বসে কোরআন তেলাওয়াত করা শুরু করে।রাফিয়া চুপ করে বিছানার সাথে মাথা টা হেলিয়ে দিয়ে।সাফওয়ান এর কোরআন তেলাওয়াত শুনতে থাকে।হাদিসে এসেছে যে,

“স্ত্রীর কোলে।হেলান দিয়ে কোরআন তেলাওয়াত করা সুন্নাহ”(সহিহ বুখারী;২৭৯)

সাফওয়ান এর কোরআন তেলাওয়াত শেষ হতে-ই রাফিয়া চোখ মেলে তাকায় সাফওয়ান এর দিকে।সাফওয়ান একহাত এনে নিজ এর কপালের মধ্যে রেখে রাফিয়া কে কিছু একটা ইশারা করে।রাফিয়া বিনিময়ে হাসি দিয়ে সাফওয়ান এর কপালে অধর ছোঁয়া দেয়।
কিয়তক্ষণ পরে-ই সাফওয়ান রাফিয়া কে স্বগতোক্তি করে বলে,

—রাফিয়া এখনো কি পেটে খুব বেশি ব্য’থা করে আপনার?

রাফিয়া মলিন হাসে।সাফওয়ান কে বলে,

—হ্যাঁ তা তো একটু থাকবে-ই।আপনি চিন্তা করবেন না।আল্লাহ ভরসা।

—আপনার মুখ দেখে আমি কিছু টা হলে ও আন্দাজ করতে পাচ্ছি রাফিয়া। ব্য’থা টা কিছু টা নয়।অনেক টা বেশি-ই করে।আচ্ছা আপনি একটু বসুন। আমি আসছি।

—কই যাচ্ছেন?

—আসছি।

সাফওয়ান পানি এনে সে পানি তে কিছু পড়ে ফু দিয়ে রাফিয়া কে খাইয়ে দেয়।এর পর বিড়বিড় করে দুই ঠোঁট কিঞ্চিত নাড়িয়ে কিছু পড়ে।রাফিয়ার গায়ে ফু দিয়ে দেয়।রাফিয়া ভ্রু কুঁচকে তাকিয়ে আছে সাফওয়ান এর দিকে।সাফওয়ান কে বলে উঠে,

—কি পড়ছেন?আর কি করছেন এসব?

সাফওয়ান হাসি দিয়ে বলে,

—আপনার যাতে কষ্ট টা কিছু টা হলে ও লাঘব হয় তার জন্য দোয়া করছি।
শায়খ ইবনু ঊছাইমীন (রহ.) বলেন, ‘গর্ভবতীর সন্তান প্রসবের ক্ষেত্রে কষ্টের সময় এ সমস্ত আয়াত পড়ার মাধ্যমে আল্লাহ্ অনেকের উপকার দান করেছেন।

একজন মহিলা এআয়াতগুলো পাঠ করে সন্তান প্রসবীনীর উপর ফুঁক দিবে।অথবা যে কোন লোক তা পাঠ করে পানিতে ফুঁক দিবে। তারপর সে পানি গর্ভবতীকে পান করাবে এবং তা দিয়ে তার পেট মালিশ করবে।’

এই আয়াতগুলো পাঠ করে মহিলার উপর ফুঁক দিবে:★সূরা রা‘দের ৮নং আয়াত
★সূরা ফাতির ১১ নং আয়াত
★সূরা নাহাল ৮৭নং আয়াত এবং
★সূরা যিলযাল।

প্রিয়নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম হাদিসে ইরশাদ করেন, ‘আল্লাহ তাআলার ৯৯টি গুণবাচক নাম রয়েছে; যে ব্যক্তি এ গুণবাচক নামগুলোর জিকির করবে; সে জান্নাতে যাবে।’ আল্লাহ তাআলার এ গুণবাচক নামগুলোর দৈনন্দিন জীবনে পালনীয় আলাদা আলাদা আমল এবং অনেক ফজিলত ও উপকারিতা রয়েছে।

আল্লাহ তাআলার গুণবাচক নাম সমূহের মধ্যে (اَلْمُبْدِئُ) ‘আল-মুবদিয়ু’ একটি। এ পবিত্র নামের আমলের মাধ্যমে গর্ভের সন্তানের হেফাজত এবং সহজে নিরাপদে নারীদের সন্তান প্রসব হয়।

কুরআন হল সিফা/রহমত/বরকত তাই এই আমল করা যেতে পারে।তাই এসব পড় ছিলাম। যদি একটু হলে ও আপনার কষ্ট টা কমে।আচ্ছা সন্তান তো বাবার ও।তাহলে মা কেন একা একা কষ্ট পায়?বিশ্বাস করুন রাফিয়া। যদি এমন কোনো উপায় থাকতো যে স্ত্রীর গর্ভ কালীন সময় এর কিছু কষ্ট স্বামী ও ভাগ করে নিতে পারে,তাহলে সর্ব প্রথম আমি আপনার এই কষ্টের ভাগীদার হতাম।কিন্তু আল্লাহ তো এমন কোনো উপায় দেয়নি।আল্লাহ তো স্ত্রীর জন্য স্বামী দোয়া করার উপায় টা দিয়েছে।আমি বরং দোয়া করে-ই আল্লাহর কাছে চাইবো আপনার কষ্ট কম হওয়ার জন্য।

সাফওয়ান এর কথা গুলো শুনে রাফিয়ার চোখে অয়ানি আসে।ছলছল চোখে সাফওয়ান এর দিকে তাকিয়ে বলে,

—এত ভালোবাসেন আমায়?আপনার অনাগত বাচ্চার মা বলে?

সাফওয়ান কিছুক্ষণ চুপ থাকে রাফিয়ার কথায়।বিছানা ছেড়ে উঠে গিয়ে রাফিয়ার ওষুধ আর পানি নিয়ে এসে রাফিয়ার হাতে দিয়ে বলে,

—আমি আপনা কে আগ থেকে-ই ভালোবাসি রাফিয়া। আমাদের বিয়ের পর থেকে-ই।তাছাড়া সন্তান কে ভালোবাসার আগে সন্তান এর মা কে ভালোবাসতে হয় রাফিয়া।আর আমি কি ভাবে আমার অনাগত বাচ্চার মা কে ভালো না বেসে থাকি?এতে যে আমার আল্লাহ ও খুশি হবে না।

—আপনার মনে হয় না?আমি তো কালো
যদি আমাদের বাচ্চা টা ও কালো হয়?এতে সবাই ও কে অপছন্দ করবে।

—করলে করুক।আল্লাহর সৃষ্টির সব-ই সুন্দর। আল্লাহর সৃষ্টির কিছু কখনো অসুন্দর হতে পারে না।আর আল্লাহর সৃষ্টির সব চেয়ে সুন্দর হচ্ছে মানুষ।আর মানুষ এর মধ্যে সব চেয়ে সুন্দর সৃষ্টি হচ্ছে নারী।তাই আপনি কখনো কালো কিংবা অসুন্দর হতে পারেন না।নিজ এর সৌন্দর্য নিয়ে কখনো আফসোস করবেন না রাফিয়া।শুধু আলহামদুলিল্লাহ বলবেন। এতে আর কেউ খুশি না হলে ও আল্লাহ খুশি হবে।আর আমাদের সন্তান কালো হলে ও আলহামদুলিল্লাহ।সে সুস্থ ভাবে দুনিয়া তে আসুক।সেটাই আমি চাই।যদি সে কালো হয়।সারা দুনিয়া তাকে কালো বললে ও তার মা বাবা তার পরিবার তো তাকে কালো বলবে না।সে এটা নিয়ে-ই হ্যাপি থাকবে ইনশা আল্লাহ। আর আপনি ও কখনো নিজে কে কালো বলবেন না।আপনি আমার কাছে সব সময় সুন্দর।

রাফিয়া হাসি দিয়ে বলে,

—তাই?আপনার কাছে সুন্দর হওয়ার কারণ?

—কারণ আমি আপনাকে মনের চোখ দিয়ে দেখি।ভালোবাসার চোখ দেখি।

সাফওয়ান এর কথায় রাফিয়া দু’ষ্টামি হাসি দেয়।হাসি দিয়ে সাফওয়ান কে বলে,

—দেখি দেখ আপনার মন এর চোখ আর ভালোবাসার চোখ টা দেখি।

সাফওয়ান বিপরীতে হেসে দিয়ে বলে,

—এই চোখ দেখতে হলে হলে আপনাকে ও যে আমাকে ভালোবাসার আর মনের চোখ দিয়ে দেখতে হবে।

রাফিয়া সাফওয়ান কে জড়িয়ে ধরে।সাফওয়ান ও দুই হাতে রাফিয়া কে নিজ এর বাহুডোরে আবদ্ধ করে নেয়।রাফিয়া আবেশে চোখ বুঝে থাকে সাফওয়ান এর প্রশস্ত বক্ষে।

চলবে ইনশা আল্লাহ

ভুলত্রুটি মার্জনীয়। রিচেক দেওয়া হয়নি।আসসালামু আলাইকুম।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here