বইছে আবার চৈতী হাওয়া ১০.

0
265

বইছে আবার চৈতী হাওয়া
১০.
সকাল থেকে হালিমা বেগমের মেজাজ খারাপ হয়ে আছে। এমনিতেই বাড়ির সমস্ত কাজ তাকে করতে হয়, বড় ভাবি পায়ের ওপর পা তুলে বসে থাকে তার উপর আজকে আবার এমন একটা ঘটনা ঘটালো। প্রাথমিকভাবে হালিমা ইচ্ছা করেই সব কাজের ভার নিজের হাতে তুলে নিয়েছিল। ভেবেছিল এতে করে সংসারের কর্তৃত্বটা তার হাতে থাকবে কিন্তু আদতে সেটা হয়নি। বড় ভাবি সম্পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ নিজ হাতে রেখেছেন। টাকার হিসাব থেকে শুরু করে বাজারের ফর্দ সবকিছুই তাঁর হাতে। এমনকি, কি রান্না হবে সেটাও তিনিই ঠিক করে দেন। আগে দুই জা ভাগাভাগি করে রান্না করতো। হালিমা ইচ্ছা করেই পুরো কাজের দায়িত্ব নিজের কাঁধে তুলে নিয়েছিল যাতে করে পুরো দখলদারিটা তার হাতে থাকে। কিন্তু লাভের লাভ কিছুই হয়নি বরং কাজের চাপ বেড়েছে। আজকাল তো নিজেকে বাড়ির কাজের বুয়া মনে হয়। তবু দাঁতে দাঁত চেপে সহ্য করেছিল। শুধু এই ভেবে যে একদিন তো পুরো কর্তৃত্বটা তার মেয়ের হাতেই আসবে। সেদিন সে ও দেখিয়ে দেবে মাতব্বরি কাকে বলে। কিন্তু সকালে যে খবরটা পেল তাতে তার মাথা ঘুড়ে গেছে। বড় ভাবি নাকি সৌরভের বিয়ে ঠিক করেছেন। আজ সন্ধ্যায় পাত্রী দেখতে যাবেন। সকাল সকাল এসে দুপুরের রান্নার মেনু দিয়ে গেছেন আর সেইসঙ্গে সুসংবাদ ও শুনিয়ে গেছেন।

সুসংবাদ না ছাই। ইচ্ছা করছে চুলায় পানি ঢেলে দিতে। এর মধ্যে তার ছোট মেয়ে সুমনা এসে বলল
– মা, বড় চাচী চা দিতে বলেছে
হালিমার মাথায় মাথায় আগুন ধরে গেল। কোন মতে মেয়ের হাতে চা দিয়ে, কড়াই খুন্তি আছড়ে ফেলে জোরে জোরে বলল
-তোর চাচিকে গিয়ে বল আমার শরীর ভালো নেই। আজ রান্না হবে না
পাশের ঘর থেকে মীরার বড় চাচী সব শুনলেন মুখ বেঁকিয়ে বললেন
– কিসের এত পোরানী মনে হয় আমি বুঝিনা? নিজের মেয়েকে মৌচাকের মহারানী বানাতে চেয়েছিল, এখন চাকে ঢিল পড়েছে। খা মৌমাছির কামড়

হালিমা রেগে মেগে ঘরে গিয়ে মেয়েকে ফোন দিল। মায়ের ফোন পেয়ে মিরা বেশ অবাক হলো। সাধারণত এই সময় মা খুব ব্যস্ত থাকে। ফোন করলেও ধরতে পারেনা। ফোন ধরে বলল
– কেমন আছো মা?
হালিমা সে কথার জবাব না দিয়ে পাল্টা প্রশ্ন করল
– তুই সৌরভকে কি বলেছিস?
– আমি কি বলবো? আমার সঙ্গে তো কতদিন কথাই হয় না
– একটু কথা বললে কি এমন ক্ষতি হয়? এখন ভালো হয়েছে না? অন্য জায়গায় বিয়ে ঠিক করে ফেলেছে।
– ভাইয়ার বিয়ে নাকি? এটা তো ভাল খবর। মিরা আনন্দিত গলায় বলল। হালিমা তেলেবেগুনে জ্বলে উঠল। চিৎকার করে বললো
– তাহলে তোর কি হবে?
-এর সঙ্গে আমার কি সম্পর্ক?
রাগে হালিমর কথা বন্ধ হয়ে গেল। মিরা বার দুয়েক হ্যালো হ্যালো বলে বুঝলো মা ফোন রেখে দিয়েছে। আরেকবার ফোন দিতে আর সাহসে কুলালো না।সাতপাঁচ ভেবে মিরা সৌরভকে ফোন দিলো। দুটো রিং হতেই সৌরভ ফোন ধরে খুশি খুশি গলায় বলল
– কিরে মিরা, কি খবর তোর?
– ভালো। ভাইয়া তোমার নাকি বিয়ে? কিছু জানালে না যে? যাই হোক কংগ্রাচুলেশনস! আমি খুব খুশি হয়েছি।
-থ্যাঙ্ক ইউ তোকে কে বললো ?
– মা ফোন করেছিল
– আচ্ছা! তাই বল
– ভাইয়া একটা কথা বলবো?
– হ্যাঁ। বল না
– মা মনে হয় ঝামেলা করতে পারে
– আমারো তাই মনে হয়। দেখ মীরা, তুই তো জানিস তোকে আমি ছোটবেলা থেকে পছন্দ করতাম। তুই ঢাকা যাবার পর চাচিকে সে কথা বলেছিলাম ও। চাচি খুব খুশি হয়েছিল। বাবার সঙ্গে কথা বলেছিল এই বিষয়ে।
– বল কি? এত কিছু হয়েছে?
– হ্যাঁ। এজন্যই আমি যখন শুভর ব্যাপারটা জানতে পারি, আমার খুব রাগ হয়েছিল। শুধু রাগ না, এক ধরনের ভয় ও হয়েছিল। তুই যদি খারাপ কারো হাতে পরিস। কিন্তু শুভর ব্যাপারে খোঁজ আমি নিশ্চিন্ত হয়েছি। শুভ খুব ভালো ছেলে।
মিরা একটু লজ্জা পেল, তারপর বলল
– তুমি এত খোঁজ খবর নিয়ে ফেলেছ?
– নিব না কেন ? তুই আমাদের বাড়ির মেয়ে। তোর প্রতি আমাদের একটা দায়িত্ব আছে।
-বড় চাচা ও কি ঝামেলা করবে?
– জানি না। এটা নিয়ে আমি একটু টেনশনে আছি
– কিছু হবে না। চাচি সব ম্যানেজ করে নেবে। মেয়েটা কে ভাইয়া?
– ও রত্নার কথা বলছিস? ওকে তো তুই চিনিস মিজানের ছোট বোনে
– আচ্ছা আচ্ছা, স্কুলে আমাদের এক ব্যাচ জুনিয়ার ছিল। কি করে হল ভাইয়া?
– এই হয়ে গেল আর কি। তোর মতই
– খুব ভালো হয়েছে। আমি খুব খুশি হয়েছি
– শোন মিরা, বিয়ের সব দায়িত্ব কিন্তু তোর। সব কিন্তু তোকে করতে হবে
– সে তুমি না বললেও আমি করব। আমাকে জানিও কি হলো
– আচ্ছা, রাখছি এখন

মীরার মনটাই ভালো হয়ে গেল। অনেক রাত পর্যন্ত যখন সৌরভের কোন ফোন এলোনা , মিয়া ভাবলো হয়তো ফিরতে দেরি হচ্ছে। কিন্তু পরদিন সকালবেলা মায়ের কথা শুনে মিরার মাথায় আকাশ ভেঙ্গে পড়ল। মা জানাল বড় চাচা ওই মেয়ের সঙ্গে বিয়েতে রাজি নন। তার ইচ্ছে মীরার সঙ্গে সৌরভের বিয়ে হোক। এই তারিখ মীরা বাড়ি এলে ওদের কাবিন করিয়ে ফেলা হবে। মীরা কি বলবে কিছুই বুঝতে পারলো না।

চলবে……
বইছে আবার চৈতী হাওয়া
প্রথম পর্ব
https://www.facebook.com/permalink.php?story_fbid=pfbid02forZNEeu7ppiE8vKanPM111m7AubGNjjWkCZvboHYCfPoQjbRVDYtZxVo9skFda7l&id=100080433460025
দ্বিতীয় পর্ব
https://www.facebook.com/permalink.php?story_fbid=pfbid0xjDcidbrt1qKfoV8eoAg9croyL2nMA6ziCAPzPcCnyuRx4GFb7s8TFC8kwHK7cuAl&id=100080433460025
তৃতীয় পর্ব
https://www.facebook.com/permalink.php?story_fbid=pfbid02ioAussRESW4oyxxen2sc5p2kzSTMx85rATg91Jost3JmQ6wgQ74tuzYnAjoeBvjal&id=100080433460025
চতুর্থ পর্ব
https://www.facebook.com/permalink.php?story_fbid=pfbid0qvo4QakBFACYfTfvE2YBAJwpTkd1qGkH6vj7CVoZVL7cV8Drpzf4woT9FXx9PFTol&id=100080433460025

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here