বইছে আবার চৈতী হাওয়া ১১.

0
372

১১.

মায়ের সঙ্গে কথা বলে যতটা না মন খারাপ হয়েছিল শুভর সঙ্গে কথা বলে মীরার আরো বেশি মন খারাপ হয়ে গেল। শুভ ব্যাপারটাকে পাত্তাই দিল না। হাসতে হাঁসতে বলল
– ভালই তো। আমাকে ইনভাইট করো কিন্তু
মীরার ভীষণ কষ্ট হলো কথাটা শুনে। শুভ সব সময় ওকে, ওর ইচ্ছাকে এত হালকা ভাবে কেন নেয়? মীরা কথা বাড়ানো না। ইচ্ছে করে অন্য প্রসঙ্গে দু-একটা কথা বলে উঠে গেল। মন খারাপ নিয়েই বিকেলবেলা টিএসসি গেল।

বাকিরা এখনো এসে পৌঁছায়নি। আশিক একাই বসে ছিল ক্যাফেটেরিয়ায়। ওকে দেখে বলল
– বস মিরা। কিছু খাবে?
– না ভাইয়া
– চা খাও
– চা খাওয়া যায়

আশিক হাতের ইশারায় চা দিতে বলল। এখানে সবাই ওকে চেনে। মীরা ওর লিস্টটা বের করে আশিককে দেখাল। আশিক একবার চোখ বুলিয়ে নিল। বেশ গুছিয়ে লেখা।
– কোথা থেকে কিনবে?
– এলিফ্যান্ট রোড থেকে কিনলে দাম বেশি পরবে। নিউমার্কেট থেকে নিলে কিছুটা খরচ কম হবে।
আশিকের ভালো লাগলো।মেয়েটা বেশ হিসেবি। স্টেজ ডেকোরেশন পুরো টাকাটাই আশিকের পকেট থেকে যায়। আগেও তাই হত। তখনতো এর মধ্যে চা সিঙ্গারার টাকাও যোগ হত। কেউ কখনো টাকা বাঁচানোর কথা ভাবেনি।

আশিক এবার একটু অন্যরকমভাবে করতে চেয়েছিল। ভেবেছিল অন্যান্যবারের তুলনায় খরচ বেশি পড়বে। ডিপার্টমেন্ট থেকে শুধু স্টেজ বানানোর আর সাউন্ড সিস্টেমের টাকা দেয়া হয়েছে, তাও যেটা দিয়েছে তা দিয়ে মানসম্মত কোন সাউন্ড সিস্টেম পাওয়া যাবেনা। প্রতিবার সাউন্ড সিস্টেমের ব্যবস্থা রাসেল করে। সেখানেও এক্সট্রা কিছু টাকা চলে যায়। আবৃত্তি উপস্থাপনা মধ্যে হঠাৎ করে শো শো শব্দ আশিকের ভীষণ অপছন্দ। কাজের শুরুতে ঘন্টাখানেক হ্যালো হ্যালো মাইক টেস্টিং ব্যাপারটা ও ওর অসহ্য লাগে। সাউন্ড সিস্টেমের লোককে নিয়ে রাসেলের এতক্ষণে চলে আসা উচিত। আশিক মোবাইল বের করে কল দিল। চা এসে গেছে। মীরা চায়ের কাপে চুমুক দিল। শীতের বিকেলে চা টা বেশ আরামদায়ক লাগছে।

রাসেল ফোনে জানিয়েছে ওর আসতে দেরি হবে। ট্রাফিক জ্যামে ফেঁসে আছে। শুভর ও আসার কথা ছিল। মীরার কেন যেন ফোন করতে ইচ্ছা করলো না। চা শেষ করে ও উঠে দাঁড়ালো।
– আমি তাহলে যাই
আশিক মীরার হাতে টাকা দিয়ে বললো
– চলো তোমাকে এগিয়ে দিই
তখনো বিকেলের আলো ফিকে হয়ে যায়নি, কিন্তু পশ্চিম আকাশে মেঘ জমেছে। কেমন মন খারাপ করা সন্ধ্যা। মীরা বললো
-আপনাকে আসতে হবে না। মেঘ করেছে, মনে হয় বৃষ্টি নামবে
– আমার রোদ বৃষ্টিতে ভেজার অভ্যাস আছে
কিছুক্ষণ নীরবে হাঁটল দুজন। আশিক বলল

-তুমি কি কোন কারনে আপসেট মীরা?
মীরা একটু চমকালো, তবে মুখে বলল
– না তেমন কিছু না
ভেতরে ঢোকার আগে বলল
– এখনই বৃষ্টি নামবে। তাড়াতাড়ি চলে যান
আশিক একটু হাসলো, তারপর বললো

তুমি ভাবছ মেঘ করেছে
বৃষ্টি পড়বে অনেকক্ষণ

আসলে তো মেঘ করেনি
মন খারাপের বিজ্ঞাপন”

চলবে….
আজকের কবিতাটা রুদ্র গোস্বামীর লেখা।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here