বইছে আবার চৈতী হাওয়া ১৮.

0
218

বইছে আবার চৈতী হাওয়া

১৮.

আশিক বাড়ি ফিরেই বুঝল বাড়ির পরিবেশ ঠিক স্বাভাবিক নেই। আরিফ সাহেব হলরুমে পায়চারি করছেন। আফসিন মুখ ভোঁতা করে ডাইনিং টেবিলে বসে আছে। বাবার মুখ দেখেই বোঝা যাচ্ছে দীর্ঘ বক্তৃতার প্রস্তুতি নিয়ে রেখেছেন।

আশিক এক পলকে সবার দিকে দৃষ্টি বুলিয়ে সিঁড়ির দিকে পা বাড়ালো। আরিফ সাহেব পেছন থেকেই ডাক দিলেন
– কোথায় যাচ্ছ?
আশিক জবাব দিল না, তবে থমকে পেছন ফিরে তাকালো। আরিফ সাহেব কথা শুরু করলেন
-এটাই শুধু বাকি ছিল। মদ গাঁজা তো খেতেই , এখন মারামারিও শুরু করেছে। তুমি জানো যার গায়ে হাত দিয়েছে সে কে?
– না জানি না। জানার প্রয়োজনও বোধ করি না।
– তা করবে কেন? যে ছেলের গায়ে তুমি হাত দিয়েছো তার বাবা একজন প্রতিমন্ত্রী। এ খবর জানা আছে তোমার?
– প্রতিমন্ত্রীর ছেলে হলেই কি সে মেয়েদের সঙ্গে অসভ্যতামি করা লাইসেন্স পেয়ে যায়?
আরিফ সাহেব একটু থমকালেন। বিষয় তাহলে এই। তবে দমলেন না। বললেন

-ঠিক আছে মানলাম সেই ছেলে অসভ্য আচরণ করেছে। কুকুরের কাজ কুকুর করেছে। তাই বলে তুমি কুকুরের পায়ে কামড়াবে? এই প্রবাদ কি তুমি শোনোনি?

-আমি এই প্রবাদ শুনেছি কিন্তু আপনি মনে হয় ওই প্রবাদটা শুনেননি, যে যেমন কুকুর তেমন মুগুর। আমি কুকুরের পায়ে কামড় দেই না কিন্তু মুগুর দিয়ে পিটিয়ে কুকুর শায়েস্তা করতে জানি।

আরিফ সাহেব তাকিয়ে আছেন। তার রাগ হওয়া উচিত ছেলে মুখে মুখে তর্ক করছে। অপমানিত বোধ করা উচিত। তিনি তর্কে হেরে গেছেন। কিন্তু তার মধ্যে রাগ অপমান বোধ কিছুই হচ্ছে না, বরং ছেলের যুক্তি শুনে তিনি মুগ্ধ হয়ে গেলেন। এই ছেলে কি বুঝে সাহিত্য নিয়ে পড়ে আছে? তার তো উচিত ছিল ওকালতি পড়া। প্রতিপক্ষের উকিলকে ধরাশায়ী করে দেবার জন্য ওর উপস্থিত বুদ্ধিই যথেষ্ট। তবে ছেলেটার মাথা গরম। এই নিয়ে একদিন ওর সঙ্গে বসতে হবে।

আরিফ সাহেব আর একটা কথাও বললেন না। ধীরে ধীরে টেলিফোনের দিকে এগিয়ে গেলেন ছেলেকে তিনি খুব ভালো করেই চেনেন। আশিক মিথ্যা বলে না। ছোটবেলায় অনেক অপকর্ম করেছে স্কুলে। ভাঙচুর মারামারি করে এসেছে। ঘাড়তেড়ামি করে সত্য কথা বলেছে এবং বাড়িতেও মার খেয়েছে। তবু মিথ্যে বলেনি। এই শিক্ষা সে পেয়েছে তার মায়ের কাছ থেকে। আশিয়া ও এমনই ছিল। আপমান সহ্য করত, কটু কথা শুনত, তবু মিথ্যে বলত না।

আরিফ সাহেব টেলিফোন তুলে ডায়াল করলেন। আফসিন ডাইনিং টেবিল থেকে উঠে এসে ভাইয়ের পাশে দাঁড়িয়েছে। ওর খুব ভয় করছে। বাবা কি পুলিশে ফোন করছে?

আরিফ সাহেব ফোন কানে ঠেকিয়ে আছেন। অপর পাশের রিং বাজছে। একটা ভারি কন্ঠস্বর টেলিফোন তুলে হ্যালো বলতেই আরিফ সাহেব শীতল গলায় বললেন

-আপনার ছেলেকে শিখিয়ে দেবেন কি করে মেয়েদের সঙ্গে বিহেভ করতে হয়। যদি না পারেন তো আমার কাছে পাঠিয়ে দেবেন।

অপর পাসের কথা শোনা যাচ্ছে না। আফসিন চোখ বড় বড় করে তাকিয়ে আছে। আরিফ সাহেব আরো ঠান্ডা গলায় বললেন

-অবশ্যই। আর একটা কথা, যদি আমার ছেলের গায়ে একটা আচরও লাগে তাহলে মনে রাখবেন আপনার ইনকাম ট্যাক্সের কেসটা কিন্তু এখনো আমার হাতেই আছে। আপনি আমার পুরনো ক্লায়েন্ট তাই ভালোভাবে বললাম।

আফসিন খুশিতে ভাইকে জড়িয়ে ধরে কেঁদে ফেলল। আরিফ সাহেব টেলিফোন রেখে হাক দিলেন
-রোজিনা

রোজিনা এতক্ষন ভয়ে রান্না ঘরের ভিতর ঘাপটি মেরে বসে ছিল। ডাক শুনে উঁকি দিয়ে বলল
-জি খালুজান

টেবিলে ভাত দে। আমরা আজকে একসঙ্গে খেতে বসব।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here