#বৈধ_দৃষ্টি
#পর্বঃ০৭
#ফাতেমা_জান্নাত
সময় বদলায়। বদলায় জীবন। বদলে যায় মানুষ এর জীবন এর গতি দ্বারা।সেকেন্ড এর কাঁটা পেরিয়ে যায় মিনিট এর ঘরে।মিনিট এর কাঁটা ঘুরে ঘুরে গিয়ে যায় ঘন্টার ঘরে।আর ঘন্টার টিক টিক আওয়াজ এর মাধ্যমে পি.এম,এ.এম এর পরিবর্তন ঘটে।আর সূচনা ঘটে এক নতুন দিন এর।সেটা হয় কারো জন্য সুখকর। আর কারো জন্য হয় দুঃখে ঝর্ঝরিত।তবু ও সবুর করে আল্লাহ সুবহানাল্লাহু তায়ালা এর উপর বিশ্বাস রেখে ধৈর্য্য ধরে রাখলে আল্লাহ তাকে ও এক সুন্দর সকাল উপহার দিবে।সেই জন্য সময় যেমন -ই যাক আল্লাহ এর উপর ভরসা রাখতে হবে।
রাফিয়া সাফওয়ান এর বিয়ের চার মাস হয়েছে।বিয়ের প্রথম দিক এর তুলনায় দুই জনে- ই এখন অনেক টা স্বাভাবিক হয়ে গেছে।অতীত ভুলে বর্তমানে চলে এসেছে।সাজাতে শুরু করেছে বর্তমান এর সুন্দর কিছু মুহূর্ত।রাফিয়া ও এখন সাফওয়ান এর দৃষ্টি তে দৃষ্টি রেখে কথা বলছে।ইতস্তত তা বোধ কে’টে গেছে তার।কাছাকাছি আসার প্রয়াস চালায়।তবে তত টা কাছাকাছি আসতে পারে নি দুই জন এই।
—রাফিয়া শুনুন!
বেলকনি থেকে সাফওয়ান এর কথা শুনে রাফিয়া সেখানে যায়।সাফওয়ান বাইরের প্রকৃতির মনোরম স্নিগ্ধ পরিবেশ অবলোকন করছে।হঠাৎ পিছনে কারো উপস্থিতি টের পেতেই পিছন এর দিকে তাকায়।রাফিয়া দাঁড়িয়ে আছে দেখে ঠোঁট কোলে মুচকি হাসির রেখা টানে সাফওয়ান। রাফিয়া এর দিকে ঘুরে দাঁড়ায়। মুচকি হেসে ডান হাত টা বাড়িয়ে রাফিয়া কে নিজ এর কাছে টেনে আনে দূরত্ব গুছিয়ে। সাফওয়ান রাফিয়া এর মুখ এর দিকে তাকায়। রাফিয়া নত মস্তক নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে।রাফিয়ার এক হাত সাফওয়ান এর মুঠো বন্দি। সাফওয়ান একটা জিনিস খেয়াল করছে ইদানীং খুব বেশি।সে যখন- ই রাফিয়া এর হাত ধরে বা একটু ছুঁয়ে দেয়।রাফিয়া এর মুখশ্রী তে র’ক্তিম লালাভ আভায় পরিণত হয়।রাফিয়া কালো চাঁদনি। তবু ও তার মুখ এর লজ্জায় রাঙা লালাভ আভা যেন ঠিক- ই সাফওয়ান দেখতে পাচ্ছে।সাফওয়ান মাঝে মাঝে ভাবে, মেয়ে টার এতো এতো সৌর্ন্দয থাকতে সবাই কেন তার শরীর এর চামড়া টা দেখে?সবাই দেখতে পাচ্ছে না?মেয়ে টার হাসি,চোখ,লজ্জায় লাল হওয়া মুখ সব- ই তো যেন এক অদ্ভুত সুন্দর। অথচ সবাই পড়ে আছে রাফিয়া এর শরীর এর কালো চামড়া নিয়ে।
রাফিয়া সাফওয়ান কে চুপ করে থাকতে দেখে মৃদু ধীরে ধীরে স্বগতোক্তি করে বলে,
—কিছু বলছেন না যে?ডাকলেন কেন?
সাফওয়ান ও রাফিয়ার দিকে তাকিয়ে আনমনা হয়ে বলে,
—আপনাকে দেখতে ইচ্ছে করছিলো।
রাফিয়া হকচকিয়ে যায়।হত বিহম্বল চেহারা নিয়ে রাফিয়া বলে উঠে,
—মানে?
রাফিয়ার মুখোচ্চরিত শব্দ এ সাফওয়ান সম্বিৎ ফিরে আসে নিজ এর মাঝে।নিজে কে ধাতস্থ করে।ঠোঁটে মিহি হাসির রেখা টেনে সাফওয়ান বলে উঠে,
—ইয়ে না কিছু না।
কিছুক্ষণ থেমে আবার বলে উঠে,
—রাফিয়া একটা কথা বলি?
—জি বলুন।
—কিছু মনে করবেন না কেমন?
—আচ্ছা।
—আমি আপনাকে বিয়ের আগে ও একবার দেখেছি রাফিয়া।
সাফওয়ান এর কথা শুনে রাফিয়া অবাক হয়ে তাকায় সাফওয়ান এর দিকে।সে অবাক নেত্র নিয়ে- ই সাফওয়ান কে বলে,
—“কবে?কখন?কি ভাবে?”
—আস্তে রাফিয়া। এত টা উত্তেজিত হবেন না।কত প্রশ্ন করলেন এক সাথে?ভাইয়ার সাথে বিয়ে হওয়ার আগেই আপনাকে আমি দেখেছি।ভার্সিটি ক্যান্টিন এ দেখেছি।
বলেই সাফওয়ান সব কিছু রাফিয়া কে বলতে থাকে।কি ভাবে রাফিয়া কে দেখেছে।রাফিয়ার দৃষ্টি নিচের দিকে।কি বলবে সে।এটা তো অনাকাঙ্ক্ষিত ভাবে দেখেছে সাফওয়ান। রাফিয়া তো নিজ ইচ্ছাকৃত ভাবে সাফওয়ান এর সামনে যায় নি।বা কখনো যাওয়ার চেষ্টা ও করেনি।যথারীতি পর্দা মেনে চলার চেষ্টা করতো।
সাফওয়ান এর ফোন এর কর্কশ শব্দে রাফিয়া এর ভাবনার বিচ্যুত হয়।সাফওয়ান রাফিয়া কে ছেড়ে দিয়ে প্যান্ট এর পকেট থেকে মোবাইল টা বের করে নেয়।মোবাইল স্কিনে “নয়ন” নাম টা দেখে হেসে দেয়।রিসিভ করে কানে এটে ধরে ফোন।সাফওয়ান তার বেস্ট ফ্রেন্ড “নয়ন” এর সাথে কথা বলছে।আর পাশে- ই গ্রিল ধরে দাঁড়িয়ে বাইর এর দিকে তাকিয়ে আছে রাফিয়া। বাহিরে হিম শীতল বাতাস বয়ছে।এক একটা বাতাস এর ঝাপটা এসে গায়ে লাগতে- ই পুরো শরীর যেন শির শির করে উঠে শীতল করে দেয়।
সাফওয়ান কথা বলা শেষ করে রাফিয়া এর দিকে তাকিয়ে বলে,
—রাফিয়া আমাকে একটু বের হতে হবে এখন।
রাফিয়া সাফওয়ান এর দিকে তাকিয়ে বলে উঠে,
—কোথায় যাবেন এখন?
—আমার ফ্রেন্ড সবাই দেখা করতে চাইছে।তাই ভাবছি একবার দেখা করে আসি।
—আচ্ছা।
সাফওয়ান মুচকি হেসে ঘরে চলে যায়।বাইরে যাওয়ার জন্য তৈরি হয়ে নেয়।পুরোপুরি ভাবে রেডি হয়ে রুম থেকে বের হয়ে যায়।রাফিয়া এত ক্ষণ ধরে সাফওয়ান কে পর্যবেক্ষণ করছিলো। সাফওয়ান বের হতেই রাফিয়া ঘর গুছানো তে মনোযোগ দেয়।
সাফওয়ান কি মনে করে আবার রুমে ফিরে আসে।রুমে ঢুকে দরজা আটকে দিয়ে রাফিয়া কে ডাক দেয়,
—রাফিয়া শুনুন।
রাফিয়া পিছন ফিরে সাফওয়ান কে দেখে ভ্রু কুটি কুঁচকে স্বগতোক্তি করে বলে,
—ফিরে এলেন যে?
—এক টা কাজ করতে ভুলে গিয়েছি।
—কি?
রাফিয়ার কথা তে সাফওয়ান এগিয়ে আসে রাফিয়ার দিকে।রাফিয়া প্রশ্নাত্মক দৃষ্টি নিয়ে সাফওয়ান এর দিকে তাকিয়ে আছে।সাফওয়ান রাফিয়া র সেই দৃষ্টি কে উপেক্ষা করে স্মিত হেসে রাফিয়ার কপালে অধর ছোঁয়া দিয়ে সরে এসে দাঁড়ায়। হেসে দিয়ে বলে,
—এটা দিতে ভুলে গিয়েছি।এবার আমি আসি।আল্লাহ হাফেজ।
বলেই সাফওয়ান আর এক মুহূর্ত না দাঁড়িয়ে বের হয়ে যায় রুম থেকে। আর পিছনে ফেলে যায় বিস্মিত নয়নে চেয়ে থাকা রাফিয়া কে।
রাফিয়ার বুঝে আসছে না সাফওয়ান শুধু মাত্র এই স্পর্শ টা দিতে পারে নি বলে বাইরে থেকে ফিরে এসেছে?রাফিয়া আনমনে আলতো হাতে নিজ এর কপালে ডান হাত টা রাখে।কিয়তক্ষণ মৌনতা থেকে -ই হেসে উঠে।
নিচ থেকে সাবিনা এর কণ্ঠ স্বর শুনে রাফিয়া নিজ এর ভাবনা থেকে বেরিয়ে আসে।দ্রুত পায়ে ছুট লাগায় নিচ এর দিকে।
🌸🌸
বন্ধু মহল এর সকলে মিলে বসে আছে একটা নির্জন বিল এর ধারে।সেখানে উপস্থিত আছে সাফওয়ান, নয়ন,মেহেদি, লিমন,আনাস। বাকি আছে শুধু আয়ান।আয়ান এখনো আসেনি।কর্ম ক্ষেত্রে ব্যস্ত থাকায় এখন আর দেখা হয় না কারো সাথে কারোর- ই।তাই আজ সময় করে পুরনো বন্ধু গুলোর সাথে দেখা করার ইচ্ছা জাগলো। তাই সবাই এক জোট হয়েছে আজ।
সাফওয়ান আর আনাস চুপ করে আছে।বাকিরা সকলে নিজে দের সংসার বউ নিয়ে কথা বলছে।সাফওয়ান মাঝে মাঝে বিরক্ত হচ্ছে খুব।সংসার এর কথা এখানে এসে শেয়ার করার কি আছে?আর ইন্টিমেট সময় গুলো নিয়ে ও বা এই তিন জন এসব কি বলছে?নাউজুবিল্লা।এই যে নয়ন এখন বলছে,
—আমার বউ কে তো গালে আদর দিলে সে বেশি খুশি হয়।
নয়ন এর কথার সাথে তাল মিলিয়ে লিমন বলে উঠে,
—শা’লা তুই এখনো ব্যাকডেটেড হয়ে আছিস।এখন কি আর গালে আদর দেওয়ার যুগ আছে?এখন তো চলে ঠোঁটে আ….
লিমন পুরো কথা শেষ করার আগে- ই সাফওয়ান বলে উঠে,
—নাউজুবিল্লা! তোরা এসব কি বলছিস সবার মাঝে?স্বামী স্ত্রীর মাঝের যে কোনো বিষয় এর কথা কারো সাথে বলা,শেয়ার করা সম্পূর্ণ নিষেধ।
তাহলে তোরা সবাই কিসের ভিত্তিতে এসব কথা বলছিস। নিজে দের পার্সোনাল কথা গুলো নিজে দের মাঝে রাখ না।সবার সাথে শেয়ার করা টা বাধ্যতা মূলক না।
সাফওয়ান এর কথা শেষ হতে- ই নয়ন আর লিমন চুপ করে যায় মাথা নিচু করে।আসলে -ই তো তারা যা করছে তা তো ঠিক না।নয়ন অপরাধী ন্যায় স্বগতোক্তি করে বলে,
—সরি রে! দোস্ত।
সাফওয়ান স্মিত হেসে বলে,
—সামনের দিকে কথা গুলো মনে রাখিস। আর এমন টা করিস না।
সাফওয়ান এর কথার বিপরীতে আর কেউ কিছু বলে না।নিরবতা এর উপসংহার ঘটিয়ে আনাস সাফওয়ান কে বলে উঠে,
—একটা কথা জিজ্ঞেস করি দোস্ত। কিছু মনে করিস না।
সাফওয়ান সম্মতি সূচক মাথা নাড়িয়ে বলে,
—বল না।কিছু মনে করবো না।
—তোর বিয়ে টা হলো কি ভাবে?আর কাকে – ই বা বিয়ে করেছিস? বিয়ে তে তো আসেনি। আর তুই কিছু জানাস ও নি।তোদের বিয়ের চার মাস হলো এখনো জানতে পারলাম না তুই কাকে বিয়ে করেছিস বা হুট করে তোর বিয়ে টা হলো কি ভাবে?তুই তো শুধু বিয়ের দিন রাতে বলেছিস আজ কে তুই বিয়ে করেছিস। এর বেশি তো আর কিছুই জানি না।বা তুই বলিস নি।
বলেই থামে আনাস। প্রশ্নাত্মক দৃষ্টি তে তাকিয়ে আছে সাফওয়ান এর দিকে।শুধু আনাস না মেহেদি,লিমন,নয়ন ও সাফওয়ান এর দিকে তাকিয়ে আছে।সবাই – ই জানতে চাই সাফওয়ান এর থেকে আনাস এর করা প্রশ্নের উত্তর। সাফওয়ান সবার দিকে একবার তাকিয়ে সামনের দিকে শূন্য দৃষ্টি তে তাকিয়ে থাকে।বিয়ের দিনটা কে পুনর্বার কল্পনা করে নেয়।ফিরে যায় চারমাস আগের বিয়ের সেই দিন টা তে।
চলবে ইনশাল্লাহ
ভুল হলে ধরিয়ে দেবেন।শুধরে নিবো ইনশাল্লাহ। আসসালামু আলাইকুম।