\
#পর্বঃ০৮
#ফাতেমা_জান্নাত
রাফিয়া কিচেন রুমে তার শ্বাশুড়ি সাবিনা এর সাথে সবজি কা’টছে।চম্পার গত কাল থেকে জ্বর।তাই চম্পা কে আর রান্না করতে দেয় নি আজ।তারা শাশুড়ি বউ রান্না করবে আজ।সাবিনা হাত এর কাজ করতে করতে একবার রাফিয়া এর দিকে তাকায়।কিছুক্ষণ মৌনতা নিয়ে থেকে সাবিনা রাফিয়া কে উদ্দেশ্য করে বলে উঠে,
—রাফিয়া, মা তুই কি আমার সাথে রা’গ করে আছিস?
সাবিনার কথা কর্ণ কুহুরে গিয়ে পৌঁছাতে -ই রাফিয়া মাথা তুলে শাশুড়ির দিকে তাকায়।অপ্রস্তুত হয়ে গেছে সে সাবিনা র এমন প্রশ্নে। তবু ও সেটা সাবিনা এর সামনে প্রকাশ না করে নিজে কে ধাতস্থ করে নিয়ে সাবিনা কে ফের প্রশ্ন করে,
—কেন মা?আমি আপনার উপর রাগ করবো কেন?
সাবিনা অপরাধী এর ন্যায় বলে,
—এই যে সাফওয়ান এর সাথে তোমার বিয়ে দিলাম।
রাফিয়া তপ্ত নিশ্বাস ছাড়ে।ঠোঁট এর কোণে মৃদু হাসির রেখা টেনে বলে,
—আল্লাহ ভাগ্যে যা লিখে রেখে ছিলো তাই -ই হয়েছে মা।এতে এখন আমার রা’গ করে থাকা মানায় না।আল্লাহ যা করে তা তো বান্দার ভালোর জন্য- ই করে।
—তোকে নিজ এর বউ কম মেয়ে মনে করি বেশি আমি।আমার মেয়ে নেই।সাইফ এর সাথে তোর বিয়ে এর পর থেকে তোকে মেয়ে হিসেবে- ই জেনেছি। তাই সাইফ মা’রা যাওয়ার পর ও তোকে কাছ ছাড়া করতে চাই নি।তাই তো সাফওয়ান এর সাথে বিয়ে দিয়ে তোকে আবার নিজ এর কাছে রাখতে চাইছি।এমনি রাখলে আমাদের লোক সমাজ কে চিনিস -ই মা।তারা তোর নামে বদনাম রটাতো।এটা যে আমি চাই নিরে মা।তুই কোনো মনে কষ্ট রাখিস না আমার এই সিদ্ধান্তে।
বলে- ই সাবিনা শাড়ির আচঁল দ্বারা চোখ এর পানি মুছলেন। রাফিয়া উঠে সাবিনার কাঁধে হাত রেখে বলে,
—কাঁদবেন না মা।আমার ভাগ্যে এমন টা লেখা ছিলো তাই জন্য- ই হয়েছে।এর পিছনে তো কারো হাত নেয়।ভাগ্য কে মেনে নিতে হবে।তাছাড়া আমি তো খারাপ নেই।আলহামদুলিল্লাহ ভালো- ই আছি।
সাবিনা রাফিয়া এর কথায় মলিন হাসে।প্রসঙ্গ পাল্টানোর জন্য সাবিনা রাফিয়া কে বলে উঠে,
—সাফওয়ান কখন আসবে?
রাফিয়া প্রতি উত্তরে বলে,
—জানি না মা।বলে ছিলো বন্ধুরা সবাই মিলে দেখা করবে আজ।
—ও আচ্ছা। তাহলে আজ আসতে দেরি হবে।আজ আর তাকে তাড়াতাড়ি বাসায় পাওয়া যাবে না।
বলে- ই সাবিনা হেসে দেয়।সাবিনার সাথে রাফিয়া ও হেসে উঠে।বউ শ্বাশুড়ি দুই জনে- ই টুক টাক কথা বলতে বলতে রান্না করছিলো।
🌸🌸
—কিরে সাফওয়ান বলছিস না যে কাকে বিয়ে করে ছিলি?
বলে- ই সাফওয়ান এর দিকে তাকায় নয়ন।সাফওয়ান সবার দিকে তাকিয়ে মৃদু হেসে স্বগতোক্তি করে বলে,
—“বড় ভাইয়া মা’রা যাওয়ার দুই মাস আগে সিঙ্গাপুর যাই চাকরি সূত্রে।অফিস এর হেড অফিসার কাজের জন্য সিঙ্গাপুর পাঠায়।সব কিছু ঠিকঠাক -ই চলছিলো। আমি সিঙ্গাপুর যাওয়ার দুই মাস আগে- ই ভাইয়ার বিয়ে হয়েছিলো। ভাইয়ার বিয়ের যখন চার মাস শেষ হলো তখন আমি সিঙ্গাপুর এ।আমি সিঙ্গাপুর এ থাকার তিন মাস এর সময় হঠাৎ করে একদিন বাংলাদেশ থেকে মা ফোন করে জানায় ভাইয়া হঠাৎ অসুস্থ হয়ে পড়েছে।ভাইয়া কে নিয়ে হসপিটালে আছে তারা এখন।সেই ফোন টার আধ ঘন্টা পর আবার মা ফোন করে।কান্না জড়িত কণ্ঠে মা বলে উঠে, ভাইয়া মা’রা গেছে।ভাইয়া আর আমাদের মাঝে নেই।সেই দিন সেই সময় ইচ্ছা কর ছিলো ছুটে এসে ভাইয়া কে জড়িয়ে ধরতে।কিন্তু হাত পা বাধা ছিলো। অন্যের তত্ত্বাবধান এ কাজ করলে যে নিজ এর মর্জি মতো চলা যায় না।সেই টা সেই দিন আরো একবার বুঝতে পেরে ছিলাম ।সেই দিন শত চেয়ে ও সিঙ্গাপুর থেকে আসতে পারি নি।অফিস এর হেড কে বলে ছিলাম।তবু ও তিনি রাজি হয়নি।উলটো বলে ছিলো, “তার যদি এই ডিল ক্যান্সেল হয় তাহলে আমাকে জেলে যেতে হতে পারে”।তাই আমাকে ও বাধ্য হয়ে সেখানে- ই থেকে যেতে হয়েছে।
বিয়ের পাচঁ মাস ও পুরো পুরি সংসার করতে পারেনি ভাইয়া। ভাইয়া মা’রা যাওয়ার তিন মাস পর বাংলাদেশে আসি। সিঙ্গাপুর এর ছয় মাস এর ট্রেনিং শেষ করে।বাড়ি তে আসতে -ই মা কিছুক্ষণ আমাকে জড়িয়ে ধরে কান্না করে।মা এর কাছে ভাবির কথা জিজ্ঞেস করতে -ই মা বলে যে,”ভাবি আমাদের বাসায় -ই আছে।ইদ্দত পালন করছে”।আমি ও আর কিছু বলি নি।হঠাৎ একদিন মা এসে আমাকে বলে,”বড় বউ মা কে তুই বিয়ে করবি?এমনি তেই তো তোর বিয়ের জন্য মেয়ে খুঁজ ছিলাম।তাই বলছি বড় বউ মা কে বিয়ে করতে।সাইফ তো এখন আর বেচেঁ নেই।বড় বউ মা আমার মেয়ে এর মতো।ওকে আমি চাইলে এমনি তে ও আমার কাছে রাখতে পারি।কিন্তু সবাই যে ওকে কটাক্ষ চোখে দেখবে।বাবা তুই ওকে বিয়ে করে নে।আমি ওকে আমার কাছ ছাড়া করতে চাই না।তুই রাজি হলে আমি বড় বউ মা আর তার বাবা মা কে বলবো। তোর বাবা ও চাইছে তুই বড় বউ মা কে বিয়ে টা কর”।সেই দিন আমি মায়ের মুখোচ্চরিত প্রতি টা শব্দে অবাক হয়ে গিয়ে ছিলাম। আমি বিয়ে করবো বড় ভাবি কে?আমি মা কে না করে দিয়ে ছিলাম।মা আমার কাছে বার বার অনুরোধ করে ছিলেন। শেষে মা এর কান্না মাখা মুখ দেখে আমি সময় চেয়ে নিয়ে ছিলাম মা এর কাছ থেকে। মা ও আমাকে ভাবার সময় দিয়ে ছিলো। আমার ভাবনা চিন্তার সময় কাল এর মাঝে- ই ভাবির ইদ্দত শেষ হলো। মা ভাবি কে ও বলে ছিলো আমাকে বিয়ে করার কথা।ভাবির মা বাবা রাজি ছিলো। কিন্তু ভাবি রাজি ছিলো না।পরে আমার এবং তার মা বাবার বুঝানো তে তিনি ও রাজি হয়ে ছিলো। ভাবি রাজি হতে- ই মা আবার আমার কাছে আসে সেই এক ই প্রস্তাব নিয়ে।পুরো দুটো ফ্যামিলি রাজি।ভাবি ও রাজি। তাই আমি ও আর না করে নাই।রাজি হয়ে গিয়ে ছিলাম।আমার ‘হ্যাঁ’ বোধক সম্মতি পেয়ে মা ও আর দেরি করে নি।সবাই কে দুই পরিবার এর সদস্য আর ঘুটি কিছু লোক নিয়ে তার পর এর দিন -ই আমার আর বড় ভাবির বিয়ে দেওয়া হয়।অতি তাড়াতাড়ি বিয়ে টা হয়ে যাওয়ার ফলে কাউ কেই দাওয়াত দিতে পারিনি।সব থেকে বড় কথা হলো অতি তাড়াতাড়ি বিয়ে হওয়ার কারণে আমরা দুই জন -ই অপ্রস্তুত হয়ে গিয়ে ছিলাম।তবু ও আলহামদুলিল্লাহ। বর্তমান এ আল্লাহর রহমতে ভালো আছি,আল্লাহ ভালো নিচ্ছে।কথায় বলে না হালাল সম্পর্ক এর ভীত অনেক মজবুত হয়।এতে আল্লাহ রহমত বর্ষণ করে।কথা টা সত্য।এখন আমি আর উনি মেনে নিয়েছি হয়তো আমাদের ভাগ্য টা কে আল্লাহ এভাবে লিখে রেখে ছিলো তাই এভাবে – ই হয়েছে সব।তবু ও আলহামদুলিল্লাহ। আল্লাহর কাছে শুধু একটা- ই প্রার্থনা করি আল্লাহ আমার ভাইয়া টা কে যেন জান্নাত বাসী করুক””।
সাফওয়ান এতক্ষণে সম্পূর্ণ বিষয় গুলো বলে থামে। সাফওয়ান এর কথা শেষ হতে- ই মেহেদি উৎকণ্ঠিত স্বরে বলে উঠে,
—তোর ভাবি কে বিয়ে করেছিস মানে?রাফিয়া ভাবি কে?
সাফওয়ান মৃদু হেসে বলে,
—হ্যাঁ আমি রাফিয়া কে বিয়ে করেছি।বর্তমানে সে আমার ভাবি নয় আমার অর্ধাঙ্গিনী। আমার প্রিয়তমা স্ত্রী।আমার জীবন সঙ্গী।
—“শেষ পর্যন্ত নিজ এর ভাই এর খু’নি কে বিয়ে করেছিস তুই”?
সবার পিছন থেকে কথা টা বলতে বলতে এসে পাশে এসে দাঁড়ায় আয়ান।আয়ান এর মুখে রাফিয়া কে ” সাইফ এর খু’নি” সম্বোধন করায় সবাই অবাক হয়ে তাকিয়ে আছে।সব থেকে বেশি অবাক হয়ে আছে সাফওয়ান। কি বলতে বা বুঝাতে চাইছে আয়ান?সাফওয়ান এর মস্তিষ্ক এখনো তারা বুঝতে পারছে না।সাইফ এর খু’নি রাফিয়া? এটা কেন বললো আয়ান?
চলবে ইনশাল্লাহ
ভুল হলে ধরিয়ে দিবেন, শুধরে নিবো ইনশাল্লাহ। আসসালামু আলাইকুম।