#বৈধ_দৃষ্টি
#পর্বঃ২
#ফাতেমা_জান্নাত
—“আমাদের বড় ছেলে টা কে মে’রে বুঝি ক্ষান্ত হও নি তুমি?সেই জন্য- ই কি ছোট ছেলে টা কে ও এবার বিয়ে করে মে’রে ফেলতো চাইছো”?
কথা গুলো রাফিয়া কে বলেই চুপ হলো সাফওয়ান এর ফুপু মনিরা। রাফিয়া মাত্র এসে নাস্তার টেবিলে বসছিলো নাস্তা করার জন্য।আর তাকে দেখেই মনিরা কথা গুলো বললো। মনিরা বরাবর এই রাফিয়া কে প্রথম থেকে পছন্দ করতো না।সাইফ এর সাথে বিয়ে হয়ে ছিলো যখন রাফিয়ার। তখন ও মনিরা এমন করে রাফিয়া কে নানান কথা শুনিয়ে যেতো।
মনিরার এমন কথায় রাফিয়ার চোখ ভরে উঠে।চোখে জ্বালা করতে শুরু করে।এই বুঝি অশ্রু কণা পড়লো বলে। রাফিয়া কিছুক্ষণ চুপ থাকে।এদিক ওদিক নজর ভুলিয়ে চোখের পানি আড়াল করে।আলগোছে চোখের পানি আড়াল করে মুছে নিয়ে ঠোঁট কোলে সুক্ষ্ম হাসির রেখা টানে।মনিরা এর উদ্দেশ্যে স্বগতোক্তি করে বলে,
—ফুপু আপনাদের বড় ছেলের হায়াত যেই পর্যন্ত আল্লাহ রেখে ছিলো। সেই পর্যন্ত -ই তাকে দুনিয়া তে উপস্থিত রাখা হয়ে ছিলো। তার মৃ’ত্যুর পিছনে আমার বা কারো হাত তো নেই।আপনি বার বার কেন আমাকে দোষ দিচ্ছেন ওর মৃ’ত্যুর জন্য?তাছাড়া সাফওয়ান কে বিয়ে করার জন্য আমার শাশুড়ি মা আর শ্বশুর বাবা-ই আমাকে বলে ছিলো। আমি তো নিজ থেকে আগ বাড়িয়ে বলি নি সাফওয়ান কে বিয়ে করবো।
রাফিয়া থামতেই মনিরা তেলে বেগুনে চেঁতে উঠে বলে,
—এই মেয়ে তুই আমার মুখে মুখে কথা বলছিস কোন সাহসে?দোষ তো করলি -ই আবার মুখে মুখে কথা বলছিস?
—ফুপু আমি না কোনো দোষ করেছি আর না কোনো আপনার মুখে মুখে তর্ক করছি।আমি তো আপনাকে আপনার ভুল ধারণা টা শুধরে দিচ্ছি।
মনিরা কিছু বলতে যাবে বিপরীতে এমন সময় সাফওয়ান এসে বসে রাফিয়ার পাশের একটা চেয়ার টেনে।বলা বাহুল্য সাইফ এর থেকে ও সাফওয়ান অনেক টা রগচটা টাইফের।রা’গ তার নাক এর ডগায় থাকে যেন।সাইফ এর রাগ বেশি।তবে সাইফ ছিলো ঠান্ডা মেজাজ এর।রা’গ হলে ও সেটা প্রকাশ করতো না।আর অন্য দিকে সাফওয়ান পুরো সাইফ এর বিপরীত।কারো উপর রাগ হলে তাকে মুখের উপর জবাব দিয়ে দেয়।তাই তো মনিরা সাফওয়ান এর সামনে আর কিছু না বলে চুপ করে যায়।তবু ও মুখ তো।মুখ এর মধ্যে হিসহিস করতে থাকে,দাঁতে দাঁতে কিড়মিড় করতে থাকে কিছু বলার জন্য।অবশেষে নিজেকে আর দমিয়ে রাখতে না পেরে এতক্ষণ মন এর মধ্যে সাজানো তিক্ত কথা গুলো উগলে দেয় সাফওয়ান এর দিকে।সাফওয়ান কে বলে,
—এমন কালো মেয়ে কে বিয়ে করেছিস কি ভাবে তুই?আবার মেয়ে তা তোর বড় ভাবি ও।
সাফওয়ান এর রা’গ উঠে যায়।তবুও চুপ করে থাকে।পাশে রাফিয়া বসে আছে।আর যাই হোক রাফিয়ার সামনে সে মাথা গরম করতে চায় না।তাই সহ্য করে নিচ্ছে তার ফুপুর তিক্ততা জড়ানো কথা গুলো।
রাফিয়ার নাস্তা করা শেষ হতেই রাফিয়া উঠে চলে যায় নিজে দের রুমে।কিচেনে কাজের মেয়ে চম্পা দুপুর এর রান্না বসাবে সেই কাজ করে যাচ্ছে।রাফিয়ার শ্বশুর আমজাদ সাহেব তার স্ত্রী সাবিনা কে নিয়ে হসপিটালে গিয়েছে সকালে নাস্তা সেরে- ই।বিয়ের এই কয় দিন কাজ কর্ম তে ব্যস্ত থাকায় সাবিনার পা এর ব্য’থা ক্রমান্বয়ে বেড়ে যাচ্ছিলো। তাই আমজাদ সাহেব নিজেই স্ত্রী কে নিয়ে হসপিটালে চলে যায়।
ডাইনিং টেবিলে এখন বসে আছে মনিরা আর সাফওয়ান। সাফওয়ান দুই তিন বার শুষ্ক কাশি দিয়ে গলা ঝেড়ে নেয়।মনিরা এর মনোযোগ নিজের দিকে স্থির করার প্রয়াস চালায় সাফওয়ান। আরো একবার গলা খাকাড়ি দিয়ে মনিরা এর উদ্দেশ্যে বলে,
—ফুপু তুমি কি বলে ছিলে?এমন কালো মেয়ে মানে রাফিয়া কে-ই ইঙ্গিত করেছো কালো বলে,মোট কথা তুমি বলতে চেয়ে ছিলে রাফিয়ার মতো কালো মেয়ে কে আমি বিয়ে করেছি কি ভাবে?তাহলে তোমার প্রশ্নের উত্তর হিসেবে আমি বলি,রাফিয়া কে আমি আলহামদুলিল্লাহ তিন বার কবুল এবং রেজিস্টার পেপারে সাইন করে হালাল ভাবে বিয়ে করেছি।আল্লাহ রাজি ছিলো বিধায় রাফিয়ার সাথে আমার বিয়ে হয়ে ছিলো। আর দ্বিতীয় কি বলে ছিলে? রাফিয়া আমার বড় ভাবি।তাকে কেন বিয়ে করলাম? তো বলি।রাফিয়া আমার বড় ভাবি ছিলো। আর সেটা অতীত। বর্তমানে রাফিয়া আমার স্ত্রী আমার অর্ধাঙ্গিনী। এখন আর সে আমার ভাইয়ার বউ নয় আর না আমার ভাবি।মনে রেখো রাফিয়া এখন বর্তমানে শুধু সাফওয়ান এর স্ত্রী।
সাফওয়ান এর কথা শেষ হতেই মনিরা চেঁচিয়ে বলে উঠে,
—বুঝবি,বুঝবি।তুই ও বুঝবি। ওই কালো কপাল পো-ড়া মেয়ে কে সাইফ বিয়ে করে সে ও অকালে দুনিয়া থেকে বিধায় নিলো। কোন দিন জানি ওই মেয়ে এর জন্য তোকে ও হারাতে হয় আমাদের। সেটা ভেবেই আমার চিন্তা লাগছে।
—ফুপু কেউ অকালে মৃ’ত্যু বরণ করে না।আল্লাহ যার হায়াত যত টুকু রেখেছে।সে তত টুকু- ই পায়। হায়াত শেষ হলে দেহ থেকে রুহ বিদায় নিবেই।কুরআনে বলা আছে যে,
“অকাল মৃত্যু বলে কিছু নেই, মৃত্যু আগে থেকেই সুনির্ধারিত! আমি তোমাদের জন্য মৃত্যুকাল নির্ধারিত করেছি!,(সূরা ওয়াকিয়াঃ ৬০)
তাহলে ফুপু তুমি কিসের ভিত্তিতে বলছো ভাইয়া অকাল মৃ’ত্যু পেয়েছে।নাউজুবিল্লা! আর কিসের কপাল পো’ড়ার কথা বলছো তুমি? যেই কপালে আল্লাহ ভাগ্য লেখে সেই কপাল কখনো খারাপ কিংবা পো-ড়া হতে পারে না।তুমি কি এসব জানো না?
সাফওয়ান এর কথা শুনে মনিরা চুপ করে যায় কিয়তক্ষণ। তারপর ও তিনি ছেড়ে দিবেন না।থামবেন না। আজ যখন বলতে শুরু করেছে।তাহলে সব বলেই ক্ষান্ত হবেন তিনি।তাই আবার তেঁতে উঠে বলে,
—তোরা দুই ভাই- ই এক।কখনো আমি কিছু বললে আমার কথায় গুরুত্ব দেওয়ার প্রয়োজন মনে করিস না তোরা।ওই মেয়ের মাঝে কি পেয়ে ছিস তোরা আল্লাহ জানে।কত করে সাইফ কে বললাম আমার বড় মেয়ে কে বিয়ে করতে রাজি হয়নি।তোকে ও বলে ছিলাম আমার ছোট মেয়ে কে বিয়ে করতে রাজি হোস নি।সেই ওই কালো মেয়ে টাকে -ই বিয়ে করলি তোরা।
—ফুপু তুমি কি আল্লাহর কাছে মেয়ে চাইতে আমাদের সাথে বিয়ে দেওয়ার জন্য নাকি?
সাফওয়ান এর কথা মনিরা প্রথমে বুঝতে পারেনি।তাই বলে,
—মানে?
—মানে হলো এই যে তোমার বড় মেয়ের সাথে ভাইয়ার বিয়ে দিতে চেয়ে ছিলে ছোট মেয়ের সাথে আমার বিয়ে দিতে চেয়ে ছিলে।তা আল্লাহর কাছে কি মেয়ে এই জন্য চাইতে? নাহ মানে একদিন দেখলাম তুমি মায়ের সাথে বলেছিলে তুমি নাকি আল্লাহর কাছে মেয়ে চাইছিলে।
বলেই সাফওয়ান আর এক মুহূর্ত সেখানে বসে না থাকে উঠে চলে যায় ঘরে।পিছনে রেখে যায় তার কথায় হতবাক হয়ে তব্দা খেয়ে যাওয়া মনিরা কে।মনিরা ভাবতে পারে নি ছেলে টা তাকে এভাবে বলবে।
🌸🌸
—“আপনি ফুপুর কথায় কিছু মনে করবেন না রাফিয়া। উনি তো এমনি আপনি তো তা জানেন।”
রাফিয়া কে উদ্দেশ্য করে কথা গুলো বল ছিলো সাফওয়ান। রাফিয়া ড্রেসিং টেবিল এর সামনে বসে আছে।হাতে চিরুনি। রাফিয়া হালকা স্বরে বলে,
—আমি জানি।সমস্যা নেই।আমি কিছু মনে করি নি।
সাফওয়ান গিয়ে বিছানায় বসে।রাফিয়া সাফওয়ান কে কিছু বলতে চায়।কিন্তু কথা গুলো গলায় এসে আটকে যায় তার।ইতস্তত তা কাজ করছে তার মাঝে।
সাফওয়ান তাকায় একবার রাফিয়ার দিকে।রাফিয়ার দিকে দীর্ঘক্ষণ তাকিয়ে থাকতে যেন তার কেমন লজ্জা লজ্জা লাগে।আর যাই হোক তার দুই বছর এর সিনিয়র রাফিয়া। আবার তার বড় ভাই এর বউ। তার ভাবি ছিলো। তাই কম্পোটেবল ফিল হতে একটু সময় তো লাগবেই। তবে সাফওয়ান এখন বেশ বুঝতে পারছে রাফিয়া তাকে কিছু বলতে চাচ্ছে। কিন্তু জড়তাগ্রস্ত হয়ে বলতে পারছে না।
সাফওয়ান রাফিয়া কে অভয় দিয়ে বলে,
—আপনি কি কিছু বলবেন রাফিয়া?
সাফওয়ান এর কথায় রাফিয়া সাহস পায় কথা বলার।তাই নিজেকে ধাতস্থ করে বলে,
—আপনার কাছে কিছু চাইবো। দিবেন?
—আপনি বলুন। আমার সাধ্যের মধ্যে হলে ইনশাল্লাহ আমি দিবো।
—আমি পর্দার হেফাজত চাই।আপনার ফুফাতো ভাই এরা দরজায় নক না করে অনেক সময় রুমে চলে আসতো।আল্লাহর কাছে শুকরিয়া তারা যখন রুমে আসতো তখন আমি রুমে থাকতাম না।আপনার ভাইয়া থাকতো। আপনার ভাইয়া বেচেঁ থাকা কালীন ও ওরা অনেক সময় এমন করতো।আমি আপনার ভাইয়া কে বলে ছিলাম। তিনি ও যথাযথ ব্যবস্থা করে দিয়েছিলো আমার পর্দা করার।এখন আপনি ও যদি একটু….
বলেই থামে রাফিয়া। রাফিয়ার দৃষ্টি নিচের দিকে।এখনো পর্যন্ত সাফওয়ান এর চোখের দিকে তাকিয়ে রাফিয়া কথা বলেনি।সাফওয়ান রাফিয়ার কথা শুনে কিছুক্ষণ চুপ করে থাকে তারপর কিছু একটা মাথায় আসতেই রুমের পড়ার টেবিল এর পাশে তার আর্ট পেপার ছিলো। সাদা কালারের একটা আর্ট পেপারে কালো মার্কার পেন দিয়ে বড় করে লিখে দেয়,”ছোট বাচ্ছা এবং নারীরা ব্যতিত সকল পুরুষ এর রুমের ভিতরে প্রবেশ নিষেধ। অতি প্রয়োজন হলে বাইরে দাঁড়িয়ে সালাম দিয়ে কথা বলতে হবে।”
কাগজ টা নিয়ে রুমের বাইরে দরজার পাশের দেয়ালে আঠালো ঘাম দিয়ে লাগিয়ে দেয়।
রুমে এসে রাফিয়ার দিকে তাকিয়ে স্মিত হেসে বলে,
—আপনি চিন্তা করবেন না।আপনাকে পর্দার মাধ্যমে হেফাজতে রাখা আমার দায়িত্ব। আপনি আমার অর্ধাঙ্গিনী এখন।আর যাই হোক এই সাফওয়ান তার অর্ধাঙ্গিনী কে বেগানা পুরুষ এর সামনে প্রকাশিত হতে দিবে না ইনশাল্লাহ।আল্লাহ যাতে আমার সৎ উদ্দেশ্য কবুল করে।
সাফওয়ান এর কথায় রাফিয়া মিহি হেসে বলে,
—“আমিন”।
চলবে ইনশাল্লাহ✨🖤
আসসালামু আলাইকুম। আজকের পর্বে ১৩০০+ শব্দ।অনেক ব্যস্ত তার মাঝে সময় যাচ্ছে আমার।তাই এর থেকে বেশি লেখা ও সম্ভব হয়ে উঠছে না।ভুল হলে ধরিয়ে দিবেন, ইনশাল্লাহ শুধরে নিবো।