#বৈধ_দৃষ্টি
#পর্বঃ২৩
#ফাতেমা_জান্নাত
নিকষ কালো অন্ধকার কে তাড়িয়ে সূর্য তার কিরণ ছড়িয়ে দিয়েছে ধরণীতে।আলোকময় করে দিয়েছে তার আলোকরশ্মি এর তেজ দিয়ে।দিন পঞ্জিকা বলে দিচ্ছে আজ শুক্রবার। চাকরি জীবি দের আজ ছুটির দিন।অধিকাংশ মানুষ এখন বেঘোরে ঘুমাচ্ছে। কেউ ফজর এর সালাত পড়ে পুনরায় ঘুমিয়েছে। কেউ বা নামাজ টা ও পড়েনি।অথচ কোরানুল কারীমে এবং হাদিসে শুক্রবারে কেয়ামত হবে বলা হয়েছে।হঠাৎ একদিন সূর্য পশ্চিম আকাশে উঠবে।কেয়ামত শুরু হবে সেই দিন।কিন্তু আমরা মানব জাতী তা গুর্ণা অক্ষরে মাথায় রাখি না।আল্লাহ আমাদের সকল কে বোঝ বুদ্ধি দান করুক।
সকাল এর সূর্যের ঝলমল করা আলো জানালা দিয়ে এসে পর্দার ফাঁক গলিয়ে সাফওয়ান রাফিয়ার রুমে প্রবেশ করেছে।ভোর রাতে নামাজ পড়তে উঠে দুই জনে।তখন -ই সাফওয়ান জানালা টা খুলে পর্দা টেনে দেয়।মসজিদ থেকে এসে আবার শুয়ে পড়ে।রাফিয়া ও শুয়ে পড়ে।রাত টা সুখ মিশ্রিত ভালোবাসায় কাটানোর ফলে ঘুম টা হয়নি।তাই ফজর নামাজপড়ে শুয়ে পড়তে- ই চোখে এসে ঘুম পরীরা ধরা দিয়ে ছিলো। যার ধরুন সকাল সাত টা বাজে।এখনো ঘুমাচ্ছে দুই জনে।
সূর্য এর আলো এসে রাফিয়ার চোখে পড়ে।আচমকা আলোর ঝলকানি সহ্য করতে না পেরে বিরক্তি তে চোখ মুখ কুঁচকে ফেলে রাফিয়া।আস্তে আস্তে চোখ পিট পিট করে তাকায় রাফিয়া। একহাত উঠিয়ে চোখ এর সামনে আড়া আড়ি ভাবে ধরে রোদের উজ্জ্বল আলো থেকে নিজে চক্ষু কে আড়াল করার প্রয়াস চালায়।উঠে বসতে গেলে বাঁধা পায়।অনুভূত হয় দুটো শক্ত হাতের বেষ্টনী দ্বারা সে আবদ্ধ। চোখ ফিরিয়ে তাকায় সাফওয়ান এর মুখ এর দিকে।সাফওয়ান নিদ্রাচ্ছন্ন,তবু ও দুই হাতে রাফিয়ার কোমড় জড়িয়ে ধরে আছে।যেন ছেড়ে দিলে- ই রাফিয়া পালিয়ে যাবে।সূর্যের মৃদু আলো সাফওয়ান এর মুখে এসে পড়াতে যেন সাফওয়ান কে আরো বেশি সুন্দর লাগছে।প্রকৃতি সাফওয়ান এর আরো একগুণ সৌন্দর্য বাড়িয়ে দিয়েছে।রাফিয়া ভাবে,”শুনেছি সকালে মেয়ে দের মুখে সূর্যের আলো পড়লে মেয়ে দের নাকি অধিক বেশি সুন্দর দেখায়।কিন্তু সাফওয়ান তো ছেলে হওয়া সত্ত্বেও মাশা আল্লাহ কম সুন্দর লাগছে না।অবশ্য সুন্দর যে লাগতে- ই হবে।আল্লাহর সৃষ্টির সেরা জীব বলে কথা।আল্লাহ এর সৃষ্টির সব কিছু- ই সুন্দর। আলহামদুলিল্লাহ!”
রাফিয়া সাফওয়ান এর দিকে তাকিয়ে থাকতে থাকতে- ই রাতের কথা মনে পড়ে যায়।লজ্জায় মিইয়ে যায় রাফিয়া। লজ্জা পেয়ে মুখ লুকায় সাফওয়ান এর বক্ষ স্থলে।একবার মাথা তুলে ড্রেসিং টেবিল এর দিকে তাকায়।বেলি ফুলের মালা আর লাল,সাদা গোলাপ গুলো ড্রেসিং টেবিল এর উপরে পড়ে আছে।রাতেই খুলে রেখে ছিলো যে।
বাইরে পাখির কিচিরমিচির ডাক কানে শব্দিত হতে- ই রাফিয়া সাফওয়ান এর বুক থেকে মাথা তুলে দেয়াল ঘড়ি টার দিকে তাকায়।সকাল সাড়ে সাতটা বাজতে দেখে- ই রাফিয়ার চক্ষু চড়ক গাছ।এত বেলা পর্যন্ত শুয়ে আছে?সবাই কি ভাববে?রাফিয়া হন্তদন্ত হয়ে উঠতে যেতেই আবার রাফিয়া কে এক টানে নিজের বুকের উপর ফেলে জড়িয়ে ধরে সাফওয়ান।সাফওয়ান এর ঘুম ভে’ঙে গেছে রাফিয়া বুঝতে পেরেছে। তাই করুণ স্বরে স্বগতোক্তি করে বলে,
—ছাড়ুন না।সাড়ে সাতটা বেজে গেছে।এত বেলা পর্যন্ত শুয়ে থাকলে খারাপ দেখায়।
সাফওয়ান রাফিয়ার কথা কে অগ্রাহ্য করে আরো নিবিড় ভাবে রাফিয়া কে জড়িয়ে ধরে ঘুমু ঘুমু স্বরে বলে,
—চুপ করে শুয়ে থাকুন। সুন্নত পালন করতে দিন।
রাফিয়া ভ্রু কিঞ্চিত কুঁচকে বলে,
—সুন্নত পালন?
—হুম।আপনি জানেন না? ঘুম থেকে উঠে বউ কে কিছুক্ষণ জড়িয়ে ধরে শুয়ে থাকা সুন্নত।
—জানি তো।আচ্ছা জড়িয়ে ধরেছেন। সুন্নত পালন ও হয়ে গেছে।এবার তো ছাড়ুন।
রাফিয়ার কথায় সাফওয়ান কিছুক্ষণ চুপ থেকে হুট করে রাফিয়ার ঠোঁটে আলতো চুম্বন দিয়ে ছেড়ে দেয়।রাফিয়া হতবিহম্বল হয়ে তাকিয়ে আছে সাফওয়ান এর দিকে।সাফওয়ান কাঁথা মুড়িয়ে দিয়ে শুয়ে আছে।রাফিয়া নিজে কে ধাতস্থ করে উঠে ওয়াশরুমে চলে যায়।ফ্রেশ হয়ে সোজা নিচে।চলে যায়।যাওয়ার আগে একবার সাফওয়ান এর দিকে তাকায়।এখনো ঘুমাচ্ছে লোকটা। ঘুম কাতুরে।
🌸🌸
ডাইনিং টেবিলে চেয়ার পেতে বসে আছে সাবিনা আর আমজাদ সাহেব। চম্পা এসে তাদের দুই জনের সামনে দুই কাপ চা রাখলো। আবার চলে গেলো কিচেনে নিজের কাজে।আমজাদ সাহেব হাতে থাকা খবর এর কাগজ টা ভাজ করে এক পাশে রাখে।সাবিনার দিকে জিজ্ঞাসু দৃষ্টি তে তাকিয়ে বলে,
—রাফিয়া মা যে আজ এখনো উঠেনি সাবু। শরীর খারাপ করলো না তো?
সাবিনা চা এর দিকে তাকিয়ে ছিলো। স্বামীর কথা শুনে তার দিকে তাকিয়ে বলে,
—চলে আসবে হয়তো একটু পর।শরীর খারাপ করলে সাফওয়ান ডাকতো আমা..
—ওই তো আমার মা চলে এসেছে।
রাফিয়া কে আসতে দেখে- ই আমজাদ সাহেব সাবিনা কে কথা সম্পূর্ণ করতে না দিয়ে কথা টা বলে উঠে।রাফিয়া এসে ডাইনিং টেবিল এর পাশে দাঁড়িয়ে মাথা নত করে বলে,
—সরি মা বাবা।দেরি হয়ে গেলো আজ।আমি এখনি নাস্তা রেডি করতে যাচ্ছি।
রাফিয়া যেতে নিলে সাবিনা হাত ধরে বলে,
—একদিন দেরি হলে কিছু হবে না।তুই বস আমাদের সাথে।চম্পা আমাদের চা দিয়ে গেছে।এত ব্যস্ত হতে হবে না তোকে।
রাফিয়া ভালো করে নজর ভুলাতেই দেখে সত্যি -ই চম্পা দিয়ে গেছে।এখন নাস্তা বানাচ্ছে চম্পা। চম্পার সাথে রাফিয়ার চোখাচোখি হতে- ই চম্পা রাফিয়া কে হেসে ইশারা দিয়ে বলে,”সে পারবে নাস্তা করতে,রাফিয়ার আসার প্রয়োজন নেই।” রাফিয়া চম্পার ইশারা বুঝতে পেরে সম্মতি সূচক হাসি দিয়ে একটা চেয়ার টেনে বসে।মশগুল হয় শ্বশুর শাশুড়ি বউ মা নিজে দের কথা বার্তায়। তাদের কথার মাঝে- ই চম্পা টেবিল ডিম পরোটা রাখে।
আমজাদ সাহেব কে উদ্দেশ্য করে সুধাল,
—সাফওয়ান এখনো উঠেনি? এত বেলা করে ঘুমাচ্ছে কেন ও?
—উনি সকালে উঠে ছিলো বাবা। ফজর নামাজ পড়েই আবার শুয়েছে।আজ কে অফ ডে তো তাই আমিও আর জাগায় নি উনা কে।
সাবিনা শ্বশুর বউ মার কথার মাঝে ফোড়ঁন কে’টে বলে,
—তুই যা গিয়ে ওকে ডেকে নিয়ে আয় মা।অফ ডে হলে ও এত বেলা করে ঘুমানোর দরকার নেই।এতে শরীর খারাপ করবে আরো।
—আচ্ছা, যাচ্ছি মা।
বলে -ই রাফিয়া উঠে যায়।সিঁড়ি বেয়ে নিজে দের রুমের দিকে পা বাড়ায়। রুমে গিয়ে দরজা আটকে দিয়ে বিছানার দিকে তাকিয়ে দেখে সাফওয়ান এখনো কাঁথা গায়ে দিয়ে ঘুমাচ্ছে। রাফিয়া ভাবছে একটা মানুষ কি ভাবে এতো ঘুমাতে পারে।রাফিয়া ওষ্ঠ দ্বয় কিঞ্চিত ফাঁক করে তপ্ত নিশ্বাস ছাড়ে।দেয়াল ঘড়ি টার দিকে আরেক বার চোখ ভুলিয়ে দেখে সাড়ে নয় টা বেজে গেছে প্রায়।রাফিয়া ধীর পায়ে সাফওয়ান এর পাশে গিয়ে বসে।মৃদু স্বরে স্বগতোক্তি করে সাফওয়ান কে ডেকে উঠে সুধাল,
—শুনছেন, এই যে উঠুন না।দেখুন অনেক টা সময় গড়িয়ে গেছে।সাড়ে নয়টা বেজে গেছে প্রায়।অথচ আপনি এখনো উঠছেন না।মা বাবা কি বলবে বলুন তো?ছুটির দিন টা তে তাদের সাথে কিছু টা সময় ব্যয় করার চেষ্টা করবেন তো না কি?অথচ আপনি শুয়ে শুয়ে ঘুমাচ্ছেন।মা আপনাকে ডেকে নিয়ে যেতে বলেছে।উঠুন।
রাফিয়া যে এত কথা বললো তার কোনো কথা কি সাফওয়ান এর কর্ণ কুহুরে গিয়ে প্রবেশ করেছে?উঁহু! কিচ্ছু শুনেনি সাফওয়ান। সে তো গভীর ঘুমে বিভোর হয়ে আছে।
রাফিয়া এবার এক হাত বাড়িয়ে সাফওয়ান এর গায়ে রেখে হালকা ঝাঁকিয়ে সাফওয়ান কে ডাকতে লাগলো।
—কি হলো উঠছেন না কেন?
ঘুমের ব্যাঘাত ঘটানো এর ফলে সাফওয়ান খানিক বিরক্ত হলো।মুখ এর উপর থেকে কাঁথা টা সরিয়ে রাফিয়ার একটা হাত টেনে জড়িয়ে ধরে অন্য দিকে ফিরে শুয়ে পড়ে আবার।আর মুখে বলে,
—উঁহু উঠাবো না।ঘুমাতে দিন রাফিয়া। স্বপ্ন বাকি আছে এখনো।
সাফওয়ান এর এহেন কথা এবং কাজে রাফিয়া যেন বেকুব বনে গেলো।আর কিসের স্বপ্ন দেখছে উনি?।রাফিয়া সাফওয়ান কে আরেকটু খতিয়ে দেখে বলে,
—কিসের স্বপ্ন দেখেছেন আপনি?
সাফওয়ান ও নির্নিমেষ ভাবে ঘুম ঘুম চোখে বলে উঠে,
—বিয়ের স্বপ্ন। আমার বিয়ে হচ্ছে।আমি আর আমার বউ বসে আছি পাশাপাশি। কবুল বলবে উনি এখন আ…
আর বলতে পারলো না সাফওয়ান। রাফিয়া সাফওয়ান এর হাত এর মাঝে থেকে নিজের হাত টা ছাড়িয়ে নেয়।রাফিয়ার আকস্মিক হাত টেনে নেওয়ার ফলে সাফওয়ান এর ঘুম এবার পুরো পুরি ভাবে বিদায় নিয়েছে।চট করে শোয়া থেকে উঠে বসে। রাফিয়ার তীক্ষ্ণ দৃষ্টি দেখে মুহূর্তে -ই মাথায় আসে ঘুমের ঘোরে কি বলে ফেলেছে।সাফওয়ান রাফিয়ার দিকে তাকিয়ে মেকি হাসি দিয়ে বলে,
—ইয়ে বলছিলাম কি রাফিয়া। শুনুন না আমি তো স্বপ্ন দেখেছি আমার আর…
রাফিয়া সাফওয়ান কে কথা শেষ করতে না দিয়ে বলে,
—ফ্রেশ হয়ে নিচে আসুন নাস্তা করতে।
বলেই রাফিয়া আর এক মুহূর্ত সাফওয়ান এর সামনে বসে না থেকে বের হয়ে আসে রুমে থেকে।সাফওয়ান এর সামনে আর একটু সময় বসে থাকলে- ই হয়তো সে সাফওয়ান মুখ এর এমন এক্সপ্রেশন দেখে হেসে ফেলতো। কেমন বো’কা বো’কা ফেইস করে কথা বল ছিলো সাফওয়ান। রাফিয়া নিচে ডাইনিং টেবিলের কাছে এসে দেখে সাবিনা আর আমজাদ সাহেব ড্রয়িং রুমে বসে কথা বলছে।রাফিয়া গিয়ে টেবিলে সাফওয়ান এর জন্য নাস্তা সাজাতে থাকে।
এই দিকে সাফওয়ান তো চিন্তাই শেষ।আবার বুঝি রা’গ করলো রাফিয়া ওর উপরে।কেন যে ঘুমের ঘরে কথা বলার অভ্যাস তৈরি হলো আমার?এসব বলেই সাফওয়ান নিজে কে আরো কিছুক্ষণ বকা ঝকা করে ওয়াশরুম থেকে ফ্রেশ হয়ে নিচের দিকে যায়।আর মাথায় ছক ক’ষতে থাকে কি ভাবে রাফিয়ার রাগ কিংবা অভিমান ভা’ঙা নো যায়।নিচে নেমে রাফিয়ার সাথে দৃষ্টি মিলতেই ক্যাবলা কান্তের মতো একটা হাসি দেয়।বিপরীতে রাফিয়া ভ্যাবলা কান্তের মতো সাফওয়ান কে ভেঙ্গিয়ে হাসি দিতে- ই সাফওয়ান এর মুখের হাসি মিলিয়ে যায়।তা দেখে রাফিয়া মুচকি হেসে দেয়।যা সাফওয়ান এর চোখ এড়িয়ে গিয়েছে।
চলবে ইনশাল্লাহ
ভুল হলে ধরিয়ে দিবেন,শুধরে নিবো ইনশাল্লাহ।গল্পটা কেমন হচ্ছে এবং আজকের পর্ব কেমন হলো জানাবেন। আসসালামু আলাইকুম।