#বৈধ_দৃষ্টি
#পর্বঃ২৪
#ফাতেমা_জান্নাত
—“রাফিয়া চলুন আজ কোথাও থেকে ঘুরে আসি”।
রুমে এসেই কিছু একটা খুজছিলো আর কথা টা রাফিয়া কে বলছিলো সাফওয়ান। কিন্তু
সাফওয়ান এর কথা রাফিয়ার কর্ণপাত হলো কিনা কে জানে?কিন্তু সে নির্নিমেষ ভাবে বাইরের দিকে তাকিয়ে বসে আছে বিছানায়। মূলত সে অভিনয় করছে সে সাফওয়ান এর উপর অভিমান করে আছে।রাফিয়া কে এভাবে কথা বিহীন বসে থাকতে দেখে সাফওয়ান আবার বলে,
—কি হলো যাবেন না?
এতক্ষণে রাফিয়া নিজ এর মুখ খুললো। নির্লিপ্ত স্বরে স্বগতোক্তি করে বলে উঠে,
—নাহ,যাবো না।ইচ্ছে করছে না।
বলে-ই রাফিয়া বিছানায় শরীর এলিয়ে দিয়ে শুয়ে পড়ে।রাফিয়া কে এই অবেলায় শুতে দেখে সাফওয়ান ভ্রু কিঞ্চিত কুঁচকে ফেলে।সাফওয়ান এর মাথায় নতুন ভাবনার আগমন ঘটে।”রাফিয়ার শরীর খারাপ করছে না তো “? ভেবে- ই সাফওয়ান গট গট করে হেটে বিছানার পাশে এসে দাঁড়ায়। হাত বাড়িয়ে দিয়ে রাফিয়ার কপাল আর গালে নিজ এর হাত ছুঁয়ে দিয়ে পরখ করার চেষ্টা করে রাফিয়ার জ্বর টর এসেছে কিনা?কিন্তু নাহ! শরীর এর তাপমাত্রা তো ঠিক- ই আছে।নরমাল তাপমাত্রা। তবে এই অবেলায় শুয়েছে কেন?
সাফওয়ান কিছুক্ষণ ভাবার পর সকাল এর কথা মাথায় আসে।মুহূর্তে -ই বুঝে যায় রাফিয়ার শরীর খারাপ নয় বরং মন খারাপ। কিছুক্ষণ কিছু একটা ভাবে সাফওয়ান। হয়তো রাফিয়ার অভিমান ভা’ঙা নোর জন্য কোনো পন্থা খুঁজছে।
সাফওয়ান কে চুপ থাকতে দেখে রাফিয়া কিছু টা অবাক হয়।মাথা ঘুরিয়ে দেখে সাফওয়ান কি করছে?কিন্তু আকস্মিক সাফওয়ান রাফিয়া কে কাতুকুতু দেওয়া শুরু করে।রাফিয়া হাসতে হাসতে শেষ।দুই হাত দিয়ে সাফওয়ান কে বাঁধা দেওয়ার চেষ্টা অব্যাহত রাখছে।কিন্তু সাফওয়ান এর বলিষ্ঠ পুরুষ মানুষ এর সাথে কি তার দুই হাত এর শক্তি যথেষ্ট? উঁহু কখনো -ই না।
এক পর্যায়ে সাফওয়ান রাফিয়া কে ছেড়ে দিয়ে রাফিয়া কে বুকে জড়িয়ে ধরেই শুয়ে পড়ে।রাফিয়া সাফওয়ান এর বুকের উপর শুয়ে আছে।রাফিয়া ঘন ঘন নিশ্বাস ফেলছে। হার্ট দ্রুত স্পন্দন করছে।মনে হচ্ছে বুক ছিঁড়ে হার্ট টা এই বুঝি লাফিয়ে বের হয়ে এলো।আচ্ছা সাফওয়ান ও কি তার হৃদ স্পন্দন এর শব্দ শুনছে?যা সাফওয়ান এর কাছাকাছি আসার পর থেকে প্রতিবার এর তুলনায় বেশি -ই বিট করছে।কে জানি হয়তো শুনছে হয়তো, শুনছে না।
সাফওয়ান রাফিয়ার চোখ এর কার্ণিস বেয়ে গড়িয়ে পড়া তরল পদার্থ টা নিজ এর দুই হাতের বুড়ো আঙ্গুল দিয়ে মুছে দেয়।এতক্ষণ অতিরিক্ত হাসার ফলে -ই রাফিয়ার চোখে পানি এসে গিয়ে ছিলো। সাফওয়ান রাফিয়া কে নিজ এর বুকের উপর থেকে সরিয়ে একটা হাতের উপর নেয়।মাথাটা হাতের উপর এই রাখে।নিজে একপাশ হয়ে শুয়ে রাফিয়ার এর চুলে মুখ গুঁজে।কিছুক্ষণ চুলের ঘ্রাণ নিয়ে বলে,
—রাফিয়া জানেন পৃথিবীর সব থেকে নেশালো ঘ্রাণ কি?
রাফিয়া কিছুক্ষণ মৌনতা নিয়ে থাকে।কিছু সময় গড়াতেই মিহি স্বরে বলে উঠে,
— কি?
—স্ত্রীর চুলের ঘ্রাণ। যা এক অন্যরকম নেশা।যে ঘ্রাণ নাসারন্ধ্র দিয়ে প্রবেশ করলে নেশা ধরে যায়।
রাফিয়া নিশ্চুপ হয়ে আছে।সাফওয়ান রাফিয়ার মাথায় চুমু দিয়ে বলে,
—অভিমান কমেছে? সরি!আচ্ছা আমি ঘুমের ঘোরে কথা বলে ফেলেছি।এতে কি আমার দোষ?তাছাড়া আমি তো দেখেছি আপনার সাথে আমার আবার বিয়ে হচ্ছে।আপনি তো পুরো কথা না শুনে ই রে’গে গিয়েছেন।
সাফওয়ান কথার প্রত্যুত্তর এ রাফিয়া মুচকি হাসে।সাফওয়ান সেই হাসি টা খেয়াল করেনি।রাফিয়া সাফওয়ান হাত এর উপর থেকে উঠেই হুট করে সাফওয়ান এর বুক এর বাঁ পাশে চুমু একে দেয়।বিছানা ছেড়ে উঠতে উঠতে বলে,
—বলে ছিলেন না ঘুরতে যাবেন?চলুন, আমি ও রেডি হচ্ছি।
বলে-ই ওয়াশরুমে চলে যায় ফ্রেশ হয়ে আসতে।এই দিকে এই প্রথম রাফিয়ার নিজ থেকে সাফওয়ান কে আদর করায় হতবিহম্বল হয়ে পড়েছে সাফওয়ান। সে যেন এখনো বিশ্বাস করা উঠতে পারছে না রাফিয়া নিজে থেকে তাকে চুমু দিয়েছে।কিয়তক্ষণ সময় গড়াতেই সাফওয়ান সম্বিত ফিরে আসে।মাথা চুলকে মুচকি হেসে বিছানা ছেড়ে নামে।কার্বাড থেকে পাঞ্জাবী পায়জামা নিয়ে চেঞ্জ করে নেয়।মনে মনে সে ভেজায় খুশি।রাফিয়া আর তার সাথে রাগ করে নেই।ঘুরতে যাওয়ার জন্য রাজি হয়েছে।আর কি লাগে?এখানে একটা সুন্নত পালন হয়ে গেলো। মাঝে মাঝে সময় করে স্ত্রী নিয়ে বেড়াতে যাওয়া সুন্নত।স্ত্রীর সাথে খু’নশুটি,দু’ষ্টামি করা ও সুন্নত।
🌸🌸
নির্জন জায়গা। সামনে আছে একটা বিল।যার পানি প্রবাহমান রয়েছে।পরিবেশ টা সুন্দর -ই।রাফিয়া সাফওয়ান সবুজে ঘেরা ঘাসের উপর বসে আছে।তাদের থেকে অনেক দূরে কিছু কপোত কপোতী অবস্থান করেছে।সাফওয়ান এর এক হাতে হাওয়াই মিঠাই। অন্য হাতে আইসক্রিম। রাফিয়া আড়াল হয়ে বসেছে যাতে নিকাব খুললে ও তার চেহারা কারো কাছে প্রকাশ্য না হয়।রাফিয়া কে আরো একটু আড়াল করার জন্য সাফওয়ান রাফিয়ার এক পাশে নিবিড় ভাবে বসেছে।যদি ও আশে পাশে কোনো পুরুষ নেই।তবুও যদি হুট করে কারো আগমন ঘটে?
সাফওয়ান একটা হাওয়ায় মিঠাই এর প্যাকেট পুরো খুলতে না খুলতে- ই হাওয়ায় মিঠাই চুপসে গেছে।বাতাসের কারণে হাওয়ায় মিঠাই পুরো চুপসে কাঠির সাথে লেগে গেছে।সাফওয়ান আহাম্মক এর মতো একবার রাফিয়ার দিকে তাকায় একবার তার হাতের হাওয়ায় মিঠাই এর কাঠির দিকে তাকায়।রাফিয়া হেসে দেয় সাফওয়ান এর এমন মুখো ভঙ্গি দেখে।সাফওয়ান হাতের কাঠি টা ফেলে দিয়ে একটা আইসক্রিম রাফিয়ার দিকে এগিয়ে দেয়।নিজ এর হাতের আইসক্রিম টার প্যাকেট ছিঁড়তে -ই গলে যাওয়া আইসক্রিম সাফওয়ান এর পাঞ্জাবী তে এসে পড়ে।রাফিয়া নিজের হাতের আইসক্রিম টা কোনো রকমে ম্যানেজ করে খাচ্ছে আর সাফওয়ান এর কাণ্ড দেখে হেসে যাচ্ছে।রাফিয়া কে হাসতে দেখে সাফওয়ান ঠোঁটের কোণে হাসির কিঞ্চিত রেখা টেনে সামনের বিল এর দিকে যায় পানি দিয়ে পাঞ্জাবী তে পড়া আইসক্রিম গুলো মুছে ফেলবে। কিন্তু আজ মনে হয়ে সব কিছু তার বিপক্ষে। সেই জন্য বিলে নামতে গিয়ে অল্পের জন্য পড়তে পড়তে বেচেঁ গেছে।পাঞ্জাবি না মুছেই ফানসে মুখ করে রাফিয়ার সামনে এসে দাঁড়ায়। রাফিয়া নিজ এর হ্যান্ড ব্যাগ থেকে রুমাল টা বের করে সাফওয়ান এর দিকে বাড়িয়ে দেয়।মুখে তো তার হাসি লেগেই আছে।সাফওয়ান রাফিয়ার হাত থেকে রুমাল নিয়ে বলে,
—“রাফিয়া আপনি হাসছেন?আজ কে সব কিছু এত আমার বিপক্ষে গেলো কেনো?”
রাফিয়া হাসি থামিয়ে নেয় কোনো রকমে।নিজ এর অর্ধেক খাওয়া আইসক্রিম টা সাফওয়ান এর দিকে বাড়িয়ে দেয় খাওয়ার জন্য।সাফওয়ান মুখ ঘুরিয়ে নিয়ে বলে,
—খাবো না।পরে দেখা যাবে এবার আইসক্রিম পুরো পাঞ্জাবি তে পড়ে নষ্ট করে ফেলছি।
রাফিয়া সাফওয়ান এর মুখ টা নিজ এর এক হাত দিয়ে ঘুরিয়ে নিয়ে নিজের দিকে ফেরায়। মুখে হাসি রেখে বলে,
—আমি খাইয়ে দিচ্ছি পড়বে না।
সাফওয়ান ও আর দ্বিরুক্তি প্রকাশ করেনি।রাফিয়া অর্ধেক আইসক্রিম টা সাফওয়ান কে খাইয়ে দিয়ে রুমাল দিয়ে হাত মুছে নেয়।আরো একবার নিজ হাতে ভালো করে সাফওয়ান এর পাঞ্জাবী তে পড়া আইসক্রিম দাগ গুলো মুছে দেয়।
সাফওয়ান চার দিকে একবার সতর্ক দৃষ্টি তে দেখে নেয়।কাউ কে নজরে না পড়তে- ই টুপ করে রাফিয়ার হাতে একটা আদর দিয়ে দেয়।বিনিময়ে রাফিয়া হেসে দেয়।
বাসার উদ্দেশ্যে পা বাড়ায় দুই জনে।এখন পনে বারো টা বাজে।আজ শুক্রবার। সাফওয়ান মসজিদে যেতে হবে।তাই এখনি বাসার উদ্দেশ্যে পা চালালো দুই জনে।
🌸🌸
—রাফিয়া শুনুন না?
সাফওয়ান পাঞ্জাবি পরে মসজিদে যাওয়ার জন্য সম্পূর্ণ রেডি হয়ে গিয়েছে। বের হতে নিয়ে- ই রাফিয়া কে ডেকে উঠে।রাফিয়া কাছে আসতে- ই রাফিয়ার কপালে আদর দিয়ে সালাম দিয়ে বের হয়ে যায় মসজিদ এর উদ্দেশ্যে। রাফিয়া হেসে দিয়ে নিজের জামা কাপড় নিয়ে ওয়াশরুমে ঢুকে শাওয়ার নেওয়ার জন্য।
.
আমজাদ সাহেব আর সাফওয়ান মসজিদ থেকে আসতে- ই সবাই খাবার খেয়ে যার যার রুমে চলে যায়।দুপুর সময়ে খাওয়ার পর ঘুম আসে বেশ।হয়তো এখন যে যার রুমে গিয়ে ঘুমাবে।
রাফিয়া রুমে আসতে- ই মাথার উড়না টা খুলে ফেলে দিয়ে শুধু গায়ে জড়িয়ে নেয়।চুল গুলো এখনো ভিজে আছে।বেলকনি তে চলে যায় রোদে চুল শুকানোর জন্য।এমনি তেই বিকেলে তার ঘুম আসে না।তাই আর শুবে ও না।সাফওয়ান নিচে গিয়েছে আবার কোনো প্রয়োজনে।
সাফওয়ান রুমে এসে দেখে রাফিয়া রুমে নেয়।রুমের চার দিকে চোখ ভুলিয়ে বেলকনির দিকে তাকাতে -ই দেখে রাফিয়া চেয়ারে বসে চুল শুকাচ্ছে।সাফওয়ান হেসে দেয় সেই দিকে তাকিয়ে। দরজা টা আটকে দিয়ে বেলকনির দিকে পা বাড়িয়ে যায়।
সাফওয়ান রাফিয়া কে পিছন থেকে জড়িয়ে ধরে।রাফিয়া কিছু টা চমকে উঠে।পর মুহূর্তে নিজেকে সামলে নিয়ে সাফওয়ান কে বলে উঠে,
—চুল গুলো ভিজে আছে।চুল গুলো শুকাচ্ছে তো।
রাফিয়ার কথায় সাফওয়ান একটু ও সরেনি।আগের ন্যায় রাফিয়া কে জড়িয়ে ধরেই মোহনীয় স্বরে বলে,
—ভালোবাসি রাফিয়া।আল্লাহর দেওয়া এই “স্ত্রী” নামক নেয়ামত কে ভালোবাসি।
রাফিয়া চুপ করে থাকে।তার ও ইচ্ছে করছে সাফওয়ান কে বলতে সে ও ভালোবাসে তার স্বামী নামক মানুষ টা কে।কিন্তু কথা গুলো তার কণ্ঠনালী তে এসেই দলা ফাকিয়ে আটকে যাচ্ছে।যার ধরুন রাফিয়া নিশ্চুপ হয়ে আছে।সাফওয়ান রাফিয়া কে নিশ্চুপ থাকতে দেখে একটা উষ্ণ নিশ্বাস ফেলে রাফিয়ার কাঁধের থেকে চুল সরিয়ে সেখানে চুমু দিয়ে বলে,
—আপনি কিছু না বললেও আমি আপনাকে ভালোবাসি রাফিয়া। পরকালে ও আপনাকে স্ত্রী হিসেবে চাই।আপনার সাথেই জান্নাতে থাকতে চাই ইনশাল্লাহ।বাকিটা আল্লাহর ইচ্ছা।
বলেই সাফওয়ান রাফিয়ার মাথায় চুমু দিয়ে রুমে চলে যায়।রাফিয়া চুপ করে থেকে তা দেখে দীর্ঘ নিশ্বাস ত্যাগ করে।আজ হঠাৎ করে আবার সাইফ এর কথা মনে পড়লো তার।মুহূর্তে -ই আকাশ এর দিকে তাকিয়ে হেসে দিয়ে বলে,
কুরানুল কারীমে বলা আছে,
“আল্লাহ তুমিই উত্তম পরিকল্পনাকারী”।(সূরা,আনফাল;আয়াত নং ৩০)
তাই তো আমাদের জীবন টা এভাবে সাজিয়েছো।তবুও আলহামদুলিল্লাহ।
চলবে ইনশাল্লাহ
ভুল হলে ধরিয়ে দিবেন।শুধরে নিবো ইনশাল্লাহ।আসসালামু আলাইকুম