#বৈধ_দৃষ্টি
#পর্বঃ২৫+২৬
#ফাতেমা_জান্নাত
—“অধিক মোহরানা আদায় এর উদ্দেশ্য করেই কি দুই বিয়ে করছো নাকি মেয়ে”?
রাফিয়ার দাদু শাশুড়ি নাজমা বেগম রাফিয়া কে কথা টা বলে-ই কটাক্ষ দৃষ্টি নিক্ষেপ করে রাফিয়ার দিকে তাকিয়ে থাকে।রাফিয়ার চোখে মুহূর্তে -ই পানি এসে তার উপস্থিতির জানান দেয়।
নিজে কে সামলে নিয়ে রাফিয়া নাজমা বেগম এর দিকে না তাকিয়ে ধরা গলায় বলে,
—দাদু আমি আপনাকে আগে ও বলে ছিলাম, দুই বিয়ে করার কোনো উদ্দেশ্য আমার ছিলো না।শুধু মাত্র সাফওয়ান এর ফ্যামিলি আর আমার ফ্যামিলি এর সবাই রাজি থাকায় আমি বিয়ে তে রাজি হয়ে ছিলাম। আমার শাশুড়ি মা আমাকে মেয়ের মতো ভালোবাসে, স্নেহ করে।সাইফ মা’রা যাওয়ার পর ইচ্ছে করলে আমি এখানে থাকতে- ই পারতাম। কিন্তু এতে পারি পার্শ্বিক সবাই কটু কথা বলতো বিধায় শাশুড়ি মা আমাকে সাফওয়ান এর স্ত্রী হিসেবে আনে।আমার তকদীরে যদি মহান রাব্বুল আল আমিন এভাবে লিখে রাখে তাহলে আপনি আমি কিছু- ই করতে পারবো না।আল্লাহ সুবাহানাল্লাহু তায়ালা হয়তো আমার কপালে ও দুই বিয়ে লিখে রেখে ছিলো।তাই দুই বিয়ে হয়েছে।তাই বলে কি আমি অধিক মোহরানা পাওয়ার লোভে দুই বিয়ে করলাম? এ কেমন চিন্তা ধারা আপনার?
রাফিয়ার কথায় নাজমা বেগম ক্ষিপ্ত হলেন।উনার মুখ এর উপর রাফিয়ার উত্তর দেওয়া টা উনি পছন্দ করলেন না।তাই কঠিন স্বরে বলে,
—তুমি মেয়ে দিন দিন বে’য়াদপ এর খাতায় নাম লেখছো। কি ভাবে আমার মুখে মুখে ত’র্ক করছো? দুই বিয়ে করে কি তুমি মহৎকর্ম করলে নাকি যে এত বড় বড় কথা বলছো?
রাফিয়া এর পরে আর কিছু না বলে নাজমা বেগম এর অনুমতি না নিয়ে- ই উনার রুম থেকে বের হয়ে নিজের রুমে গিয়ে দরজা আ’টকে বসে থাকে।চোখ থেকে অশ্রুকণা ফোয়ারা হয়ে বর্ষিত হচ্ছে।এই মহিলা টা আর কত অপমান করে ক্ষান্ত হবে?সু্যোগ পেলে একটু ও ছাড় দেয়না।সব কিছু নিয়ে- ই রাফিয়া কে কটু কথা শুনায়। কথা গুলো তার কতটুকু যুক্তি যুক্ত সেটা মাথায় এনে একবার ভাববার চেষ্টা ও করে না।আল্লাহ হেদায়েত দান করুক।
–
আজ কে সকালে আমজাদ সাহেব বলে,”সাইফ এর সাথে রাফিয়ার বিয়ে হওয়ার ক্ষেত্রে যেই মোহরানা ধরে ছিলো সেগুলো আগামীকাল রাফিয়া কে দিয়ে দিবে।মোহরানা তো মাফ করা যায় না”।
মোহরানা স্ত্রীর প্রাপ্য একটা ঋণ বিশেষ!
স্ত্রীর দেন-মোহর স্বামীর উপর অবশ্য পরিশোধ্য বিষয়।এটি ফরজ।
বিয়ের মোহরানা আদায় সম্পর্কিত কুরআনে বলা আছে যে,
“তোমরা নারীগণকে তাদের মোহরানা বা একটা নির্দিষ্ট উপহার দিবে। যদি তারা সন্তুষ্টচিত্তে মোহরানার কিছু অংশ ছেড়ে দেয়, তবে তোমরা তা স্বাচ্ছন্দে ভোগ করবে”।-(সূরা নিসা;আয়াত -০৪)
উক্ত আয়াত থেকে কিছু বিষয় প্রমাণিত হয়। তন্মধ্যে অন্যতম হল-
দেনমোহর আদায় করা ফরয। এটা আদায় না করে মারা গেলে এটা ঋন হিসেবে থেকে যাবে।এমনকি মৃত্যুর পর প্রথম দেনমোহর শোধ করে তারপর সম্পত্তি ভাগ করতে হবে। কেননা স্বয়ং আল্লাহ তাআলা মোহর আদায়ের আদেশ করেছেন। সুতরাং স্বামীর কর্তব্য যথাযথভাবে মোহর পরিশোধ করা।
পবিত্র কোরআনে আল্লাহ এ ও বলছেন ,
“মোহরানা ফিরিয়ে নেয়া বা এর অংশবিশেষ ফিরিয়ে নেয়াও তোমাদের জন্য বৈধ নয়। যদি তারা অর্থাৎ স্ত্রীরা নিজেরাই খুশী মনে মোহরানার কিছু অংশ ফিরিয়ে দিতে চায়, তাহলে তা গ্রহণ করা যেতে পারে”।
এই আয়াতের শিক্ষণীয় দিকগুলো হলো,
প্রথমত :”স্ত্রীর প্রাপ্য মোহরানা তার ক্রয় মূল্য নয়,বরং এটা স্ত্রীর প্রতি স্বামীর ভালবাসার নিদর্শন ও উপহার ।কোরআনের আয়াতে মোহরানা শব্দটিকে বলা হয়েছে,যা সাদাক্কাত বা আন্তরিকতা শব্দ থেকে উদ্ভূত”।
দ্বিতীয়ত:”মোহরানা স্ত্রীর অধিকার এবং স্ত্রী-ই এর মালিক।স্ত্রীকে মোহরানা দেয়া যেমন বন্ধ রাখা যায়না ,তেমনি তা ফেরতও নেয়া যায় না”।
তৃতীয়ত :”মোহরানা মাফ করার জন্য স্ত্রীর বাহ্যিক সন্তুষ্টি যথেষ্ট নয়। এজন্যে স্ত্রীর প্রকৃত বা আন্তরিক সন্তুষ্টি জরুরী”।
মহানবী (সা:) বলেছেন,
যে কোনও ব্যক্তি কোন মহিলাকে মোহরের বিনিময়ে বিবাহ করছে,
মনে মনে তার হক আদায় দেয়ার নিয়ত রাখেনি, তাকে ধোকাঁ দিয়েছে ,
অতঃপর তার হক আদায় না করেই মারা গিয়েছে,
সে ব্যক্তি কেয়ামতের দিন ব্যাভিচারী বা যেনাকার হয়ে আল্লাহর সংঙ্গে সাক্ষাৎ করবে।
(ত্বাবারানী সঃ তারগীব ১৮০৭ নং)
“দেনমোহর আদায় করা ফরজে আইন”!!!
বর্তমানে আধুনিকতার নামে নোংরামি পদ্ধতিতে যে বিবাহ অনুষ্ঠানের আয়োজন করে দুনিয়াবী মান মর্যাদার দোহাই দিয়ে কোরআন-হাদীসের আদেশ নিষেধকে এড়িয়ে গিয়ে গুরুত্ব না দিয়ে (বর) পক্ষকে অধিক পরিমাণে দেনমোহর ধার্য্য করতে বাধ্য করা হয়,তা ইসলামে আদৌ বৈধ বলে বিবেচিত হবে না।রেফারেন্স হিসেবে বলা যায় যে,
★সুন্নতি তথা মহানবী (সা.): এর দেখানো নিয়ম পদ্ধতিতে বিয়ে হলে পাত্রের সাধ্যমত দেনমোহর নির্ধারণ করা উচিত।কেননা অতিরিক্ত দেনমোহর চাপে পিষ্ট (বর) অবশেষে ব্যর্থ হয়ে বৌয়ের কাছেই ক্ষমা -মাফ চেয়ে নেয়।যা ইসলামী শরীয়তের সম্পূর্ন বিরোধী।
মোদ্দা কথা হলো যে,স্ত্রীর মোহরানার টাকা মাফ হয় না।এটা পরিশোধ করতে- ই হয়।যদি স্বামী মোহরানা পরিশোধ না করে মা’রা যায়।তবে স্বামীর সম্পত্তির ভাগ থেকে স্ত্রীর মোহরানা পরিশোধ করে দিতে হয়।
সেই জন্য সাইফ মা’রা যাওয়া সত্ত্বেও আমজাদ সাহেব সাইফ এবং সাফওয়ান এর মধ্যে সম্পত্তি ভাগ করে দিয়ে সাইফ এর সম্পত্তির অংশ থেকে সাইফ এর কাছে ধার্য কৃত রাফিয়ার মোহরানা পরিশোধ করে দেওয়ার কথা বলেছে।আর সকালে গ্রাম থেকে নাজমা বেগম এসে যখন কথা টা শুনলেন তখন উনি চটে যান।উনার ধারণা রাফিয়া সম্পত্তির লোভে পড়ে একই পরিবারে দ্বিতীয় বার বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হয়েছে।তাই রাফিয়া কে কয়েক টা কথা শুনানোর জন্য নিজের রুমে একান্তে ডেকে নেন।আর রাফিয়া কে নিজের মুখের বিষাক্ত কথা গুলো দিয়ে আ’ঘাত করে।
আধুনিকতার ছোঁয়া লাগিয়ে মানুষ এখন নিকৃষ্ট মন মানসিকতার পরিচয় দেয়।একটা মেয়ের সংসার,হালাল সম্পর্ক নিয়ে কি ভাবে আরেকটা মেয়ে এভাবে বাজে কথা বলতে পারে?আল্লাহর ভয় কি নেই এদের মাঝে?
🌸🌸
রুমের মধ্যে ঘুটি শুটি মে’রে বসে কাঁদছে রাফিয়া। আজ কে নাজমা বেগম এর কথা গুলো তে সে অনেক বেশিই কষ্ট পেয়েছে।চাইলে সে পারতো নাজমা বেগম কে আরো কিছু কথা শক্ত কণ্ঠ বলতে। কিন্তু বলেনি।তার একমাত্র কারণ হলো,সে সময় ও রাফিয়ার স্পষ্ট ভাবে নবীজি (সা:) এর হাদিস টা মনে আছে।আমাদের নবী কারীর (সা:) বলেছেন ;
“তোমাদের মধ্যে যার আচার ব্যবহার সুন্দর, সে আমার সব চেয়ে বেশি প্রিয় এবং আমার সব চেয়ে কাছে থাকবে”।(সুনানে তিরমিজি)
সেই জন্য- ই তো রাফিয়া চুপ করে সহ্য করে গিয়ে ছিলো নাজমা বেগম এর এমন কটাক্ষ শব্দ গুলো।
–
সাফওয়ান বাসায় আসে সন্ধ্যা সাত টায়।ড্রয়িংরুমে নাজমা বেগম কে দেখে সালাম দেয়।মনে মনে সাফওয়ান এর মাঝে আশংকার দানা বাধেঁ। “উনি আবার আমার রাফিয়া কে কিছু বলেনি তো”?
সাফওয়ান নাজমা বেগম এর সাথে কিছুক্ষণ কথা বলে রুমে চলে যায়।রুমের দরজা আটকানো ভেতর থেকে।সাফওয়ান দরজায় করাঘা’ত করে।দুই বার করাঘা’ত করার পর তিন বার এর সময় রাফিয়া দরজা খুলে।
রাফিয়ার দিকে তাকাতে- ই সাফওয়ান এর বুকটা ধক করে উঠে।রাফিয়ার চোখ মুখ ফুলে আছে।চোখ টা লাল হয়ে আছে।দেখে মনে হচ্ছে অনেকক্ষণ যাবত কান্না করেছে।সাফওয়ান দ্রুত রুমে ঢুকে। দরজার সিটকিনি লাগিয়ে দিয়ে রাফিয়ার দিকে তাকায়।রাফিয়া সাফওয়ান এর দিকে তাকাচ্ছে না।নিচের দিকে তাকিয়ে আছে।সাফওয়ান রাফিয়ার মুখ টা কে দুই হাতের আজালায় নিয়ে কপালে আদর দিয়ে বলে,
—কি হয়েছে রাফিয়া?আপনি কি কান্না করেছেন?আপনার চোখ মুখ এর এই অবস্থা কেন?
রাফিয়ার ইচ্ছা করছে সাফওয়ান কে জড়িয়ে ধরে কান্না করে সব কিছু উগলে বলে দিতে।কিন্তু সাফওয়ান যদি এতে রাগা রাগি করে নাজমা বেগম এর উপর?তাই সাহস পাচ্ছে না।
রাফিয়া ধরা গলায় অতি ক্ষীণ স্বরে স্বগতোক্তি করে বলে,
—কিছু হয়নি।অনেকক্ষণ ঝর্ণা নিচের দাঁড়িয়ে ছিলাম তো তাই চোখ মুখ এমন হয়ে আছে।
রাফিয়ার কথা শুনে সাফওয়ান রাফিয়া কে ভালো করে চোখ ভুলিয়ে দেখে।আর এই দেখাতেই সাফওয়ান পুরো ঘায়েল হয়ে গেছে।চক্ষু শীতল হয়ে গেছে।হৃদয় টা ফ্রিজের বরফ এর থেকে ও ঠান্ডা হয়ে গেছে।
সদ্য গোসল করেছে রাফিয়া।অতিরিক্ত কান্নার ফলে মাথা ব্য’থা করছিলো তাই গোসল করেছে।গোসল করলে মাথা ব্য’থা কমে এটা নিতান্ত -ই রাফিয়ার ভ্রান্ত ধারণা। তবু ও করলো।যেহেতু গরম ও পড়ছে।
আর এই সদ্য শাওয়ার নেওয়া রাফিয়া কে দেখে সাফওয়ান বিমোহিত হলো।রাফিয়ার চোখে মুখে ফোঁটা ফোঁটা পানি।চুল থেকে ছুঁয়ে ছুঁয়ে টপ টপ করে পানি পড়ছে।রাফিয়া কে যেন মোহনীয় লাগছে।সাফওয়ান রাফিয়া কে জড়িয়ে ধরে।রাফিয়ার চুল,দেহ থেকে মা’তাল করা নেশালো ঘ্রাণ টা নেয়।এক মুহূর্ত এর জন্য হলে ও সাফওয়ান যেন বাকহারা হয়ে গেলো। কি বলবে কি করবে কিছুই এই মুহূর্তে তার মাথায় আসছে না।
—যান ফ্রেশ হয়ে নিন।
রাফিয়ার কথায় সাফওয়ান এর হুশ আসে।রাফিয়া কে ছেড়ে সামনে দাঁড়িয়ে মুচকি হেসে বলে,
—উফ্ রাফিয়া আপনি কি কেলেঙ্কারি না করলেন?আমাকে মে’রে ফেলার প্ল্যান করেছেন নাকি আজ?আপনা কে বড্ড বেশি মোহনীয় লাগছে।কিউটি ফাই কিউটি ফাই।একদম আপনার স্বামী সাফওয়ান এর বউ বউ লাগছে।
বলে -ই সাফওয়ান রাফিয়ার ডান বাম দুই গালে চুমু বসিয়ে দিয়ে ব্যাগ টা রেখে ওয়াশরুমে চলে যায়।রাফিয়া কে বলে যায় তার ড্রেস বের করে রাখতে।
রাফিয়া ও আর কোনো কথা না বলে কার্বাড থেকে সাফওয়ান এর টাউজার,টি শার্ট বের করে বিছানায় রেখে নিচে চলে যায় খাবার আনতে সাফওয়ান এর জন্য।দুপুরে সাফওয়ান কে ফোন করে ছিলো রাফিয়া। সাফওয়ান তখন বলে,ছিলো আজ কাজ এর চাপে ক্যান্টিনে খেতে যেতে পারেনি।
তারমানে নিশ্চয় এখনো না খাওয়া সাফওয়ান। তাই রাফিয়া নিচে কিচেনে চলে যায়।
–
খাবার নিয়ে রুমে আসতে- ই রাফিয়া দেখে সাফওয়ান টি শার্ট পড়ছে।রাফিয়া ভাত এর প্লেট টা রেখে দরজা আটকে দিয়ে সাফওয়ান এর সামনে বিছানায় বসে।সাফওয়ান একটা বালিশ কোলে নিয়ে তার উপর ল্যাপটপ নিয়ে কাজ করতে থাকে।রাফিয়া হাত ধুয়ে সাফওয়ান কে খাইয়ে দিতে থাকে। সাফওয়ান স্মিত হেসে রাফিয়ার কপালে আদর দিয়ে রাফিয়ার হাতে খেতে থাকে।প্রতি লোকমা মুখে তোলার আগে সাফওয়ান রাফিয়ার কপালে, দুই গালে,নাকে,চিবুকে,ঠোঁটে, হাতে নিজ এর অধর ছোঁয়া দিবে।বিনিময়ে রাফিয়া হাসে।
খাওয়ার মাঝ পথে সাফওয়ান থেমে যায়।উঠে গিয়ে হাত ধুয়ে এসে রাফিয়ার হাত থেকে প্লেট টা নিয়ে নেয়।রাফিয়া কপালে জিজ্ঞাসা সূচক ভাজ পেলে।দুই ভ্রু কুঁচকে সাফওয়ান এর দিকে তাকিয়ে থাকে। সাফওয়ান ভাত মেখে রাফিয়ার মুখ এর সামনে তুলে ধরে রাফিয়া কে বলে,
—হা করুন রাফিয়া। আমি জানি আপনি দুপুরে খান নি।এত টা মাস আপনার সাথে একসাথে থাকছি,আর যাই হোক আপনার চোখ মুখ এর প্রতি টা অবস্থায় আমি কিছু টা হলে ও বুঝে নিতে পারি কি হয়েছে?আপনার মুখ দেখে- ই বুঝেছি আপনি খাননি।তাই এখন কোনো প্রকার দ্বিরুক্তি না করে খেয়ে নিন আমি খাইয়ে দিচ্ছি। খাওয়ার পর আপনার সাথে আমার কিছু কথা আছে।
রাফিয়া ছল ছল চোখে আর কিছু না বলেই খেয়ে নেয় সাফওয়ান এর হাতে।দুপুরে সত্যি -ই সে খায়নি।তার শাশুড়ি এসে ডেকে গিয়ে ছিলো।মাথা ব্য’থা ছিলো বিধায় মাথা ব্য’থার কথা বলেই আর রুম থেকে বের হয়নি।খায় ও নি।শুয়ে ছিলো রুমে।
সাফওয়ান হাত ধুয়ে প্লেট টা কিচেনে রেখে আবার রুমে আসে।অফিস ব্যাগ টা হাতে নিয়ে খুলে একটা ছোট সাইজ এর খামের মতো প্যাকেট বের করে।তবে প্যাকেট এর মধ্যে মোটা জাতীয় কিছু আছে বাইরে থেকে বুঝা যাচ্ছে।কারণ প্যাকেট টা উঁচু হয়ে আছে কিছু টা।
সাফওয়ান রাফিয়ার সামনে এসে রাফিয়ার ডান হাত টা টেনে নিয়ে হাতের উপর প্যাকেট টা দিয়ে হেসে বলে,
—এগুলা আপনার মোহরানার টাকা রাফিয়া। আমার সাথে বিয়ের সময় আপনার মোহরানা যা ধার্য্য করা হয়েছে এখানে সেই মোহরানার টাকা।আপনি চাইলে গণে নিতে পারেন।সম্পূর্ণ টাকা আছে কিনা?
সাফওয়ান এর কথা থামতেই রাফিয়া তাকায় সাফওয়ান এর দিকে।মোহরানার কথা বলতে- ই সকালে নাজমা বেগমের কথা গুলো পুনরায় মনে পড়ে যায় রাফিয়ার।এবার আর নিজে কে সামলা তে পারে না রাফিয়া। অক্ষম হয় নিজে কে ধাতস্থ করতে। হুট করে সাফওয়ান করে জড়িয়ে ধরে কেঁদে দেয় রাফিয়া।রাফিয়া হঠাৎ করে কাঁদায় অবাক হয়ে যায় সাফওয়ান।এখানে সে কি এমন বললো যে রাফিয়া কেঁদে দিয়েছে?
সাফওয়ান রাফিয়ার মাথায় ধীরে ধীরে হাত ভুলিয়ে দিয়ে রাফিয়া কে শান্ত করার প্রয়াস চালায়।মুখে বলে,
—কি হয়েছে রাফিয়া?আপনি কাঁদছেন কেন?আমি কি আপনাকে কষ্ট দিয়েছে কোনো কারণে?
রাফিয়া এখনো কেঁদে যাচ্ছে।সাফওয়ান ও আর কিছু বলেনি রাফিয়া কে।কাঁদতে দিলো। কিছুক্ষণ পর রাফিয়ার কান্নার গতি কমে আসতে- ই সাফওয়ান রাফিয়া কে নিজের থেকে ছাড়িয়ে নিয়ে চোখের পানি মুছে দেয়।কপালে অধর ছুঁয়ে দিয়ে বলে,
—আমার অর্ধাঙ্গিনী কে কেউ কিছু বলেছে?কান্না করছে কেন তিনি?
রাফিয়া সাফওয়ান কে বলে,
—আগে বলুন,আপনি কাউ কে কোনো প্রকারে কিছু বলবেন না?
—আচ্ছা।ঠিক আছে বলবো না।এবার বলুন কি হয়েছে?
সাফওয়ান সম্মতি দিতে- ই রাফিয়া নিচের দিকে তাকিয়ে মধ্যাহ্ন সময়ে নাজমা বেগম এর বলা সব কথা সাফওয়ান এর কাছে ব্যক্ত করে।আবারো কান্না রা দলা পাকিয়ে আসছে।
রাফিয়ার কথা শুনে সাফওয়ান এর রাগ উঠে।চোয়াল শক্ত হয়ে আসে।রাফিয়া কে আবার জড়িয়ে নিয়ে শান্ত কিন্তু কঠিন স্বরে বলে,
—আপনাকে আমি কথা দিয়েছে কোনো প্রকারে কিছু বলবো না কাউ কে।নয়তো আমি এখনি যেতাম আর উনাকে জিজ্ঞেস করতাম কেমন মন মানসিক তা নিয়ে তিনি বসবাস করে সমাজে?
—আপনি প্লিজ কিছু বলবেন না।আমি কোনো অশা’ন্তি চাই না।
—আচ্ছা ঠিক আছে।কিছু বলবো না।আপনি কান্না থামান।ইসলামি গান শুনবেন একটা?চলুন বেলকনি তে গিয়ে বসি।আমি শুনাবো গান আমার বেসুরা গলায় চলুন।
রাফিয়া স্মিত হাসার চেষ্টা করে বলে,
—আপনার কণ্ঠ মোটেও বেসুরা নয়।মাশা আল্লাহ অনেক সুন্দর।
—আচ্ছা, চলুন।
সাফওয়ান রাফিয়া কে এক হাতে জড়িয়ে ধরে বেলকনি তে গিয়ে বসে।রাফিয়া কে একটা চেয়ারে বসিয়ে দিয়ে নিজে আরেকটা চেয়ারে বসে রাফিয়ার পিছনে। রাফিয়ার ভেজা চুলের খোঁপা ছেড়ে দেয়।পিছন থেকে রাফিয়া কে জড়িয়ে ধরে রাফিয়ার কাঁধে থুতনি রেখে গেয়ে উঠে,
🎶কথাতে ভুল হলে,নিরবে যেও ভুলে,
খোঁপার ও চুল খুলে,এসো সে দিন।
আবারো ভালোবেসো,পরাণ ও খুলে হেসো,
শরমে ঘরে এসো,যে কোনো দিন।।
স্মরণে আসে যদি, ভালোবাসার নদী,
তোমাতে নিরবধী হবো বিলীন।
স্মরণে আসে যদি,ভালোবাসার নদী,
তোমাতে নিরবধী হবো বিলীন।
কথা তে ভুল হলে,নিরবে যেও ভুলে,
খোঁপার ও চুল খুলে,এসো সে দি।
আবারো ভালোবেসো,পরাণ ও খুলে হেসো,
শরমে ঘরে এসো,যে কোনো দিন।।
রোদেলা দুপুরে, খেয়ালি নুপুরে,হেয়ালি টুপুরে,পাশে রবো।
জরা পাতার গানে,কড়া ধোঁয়ার ঘ্রাণে, ভরা জোয়ার গাঙ্গে ভেসে যাবো।
রোদেলা দুপুরে, খেয়ালি নুপুরে, হেয়ালি টুপুরে, পাশে রবো।
জরা পাতার গানে,কড়া ধোঁয়ার ঘ্রাণে, ভরা জোয়ার গাঙ্গে ভেসে যাবো।
পরশে রেখো পাশে,ভরসে থেকো মিশে,হরশে জীবন আমার করো রঙ্গিন।
পরশে রেখো পাশে,ভরসে থেকো মিশে,হরশে জীবন আমার করো রঙ্গিন।
কথা তে ভুল হলে,নিরবে যেও ভুলে,
খোঁপার ও চুল খুলে,এসো সে দিন।
আবারো ভালোবেসো, পরাণ ও খুলে হেসো,
শরমে ঘরে এসো যে কোনো দিন।🎵
গান শেষ হতে- ই রাফিয়া সাফওয়ান এর দিকে তাকিয়ে দেখে সাফওয়ান তার দিকে মোহনীয় দৃষ্টি তে তাকিয়ে আছে।এই চোখে তে রাফিয়া নিজের জন্য অফুরন্ত ভালোবাসা খুঁজে পেয়েছে।এই মানুষ টা কে সে হারাতে চায় না।সাফওয়ান এর মতো যত্নবান, আদর্শবান,স্ত্রীর প্রতি দায়িত্ব কর্তব্যরত স্বামীর সাথে সে আরো সংসার করতে চায়।আল্লাহ ইচ্ছে পূরণ করুক।
সাফওয়ান রাফিয়া কে কোলে তুলে নেয়।রুমের মধ্যে চলে আসে।সাফওয়ান এর অপলক দৃষ্টি রাফিয়া তে নিবদ্ধ।সাফওয়ান নিবিড় হয়ে আসে রাফিয়ার মাঝে।দূরত্ব গুছিয়ে দুই জনে কাছাকাছি আসে।আরো একবার তাদের কাছে এই রাতের নাম হয় মধুচন্দ্রিমা এর রাত।ভালোবাসার রাত।
চলবে ইনশাল্লাহ
ভুল হলে ধরিয়ে দিবেন।শুধরে নিবো ইনশাল্লাহ। আসসালামু আলাইকুম।