#বৈধ_দৃষ্টি
#পর্বঃ৩১
#ফাতেমা_জান্নাত
রাফিয়া কে হসপিটাল থেকে ডিসচার্জ করে বাড়ি তে নিয়ে এসেছে আজ তিন দিন।দুই দিন রাফিয়া কে হসপিটালে রেখে ছিলো। এখনো চলা ফেরা করতে খানিক কষ্ট হয়।পেটের অপারেশন তো,তাই মাঝে মাঝে হাটা চলা করতে গেলে ব্য’থা ও করে পেটে। আর সেই জন্য-ই সাফওয়ান এর কড়া নির্দেশ পুরোপুরি সুস্থ হওয়া ছাড়া প্রয়োজন ব্যতিত যেন হাটা হাটি যেন না করে রাফিয়া।
আজ তিন দিন পরে-ই সাফওয়ান অফিস যাচ্ছে।রাফিয়ার অসুস্থতা কে কেন্দ্র করে অফিস থেকে ছুটি নিয়ে ছিলো। এখন আর অফিস কামায় করা যাবে না।আজ-ই বস ফোন দিয়ে ছিলো অফিস যাওয়ার জন্য।কাজ সব জমে আছে।
ড্রেসিং টেবিল এর সামনে দাঁড়িয়ে সাফওয়ান রেডি হয়ে নিয়ে রাফিয়ার সামনে এসে দাঁড়ায় চিরুনি হাতে।রাফিয়া বিছানায় বসে আছে।সাফওয়ান ও বিছানায় বসে রাফিয়ার হাতে চিরুনি ধরে দেয়।রাফিয়া ও নির্নিমেষ ভাবে সাফওয়ান এর মাথার চুল আছড়িয়ে দিয়ে গলার টাই টা আরেকটু ঠিক করে দেয়।সাফওয়ান হেসে দেয় রাফিয়ার দিকে তাকিয়ে। হুট করে পকেট থেকে ফোন বের করে রাফিয়ার সাথে বসে একটা ছবি তুলে নেয়।রাফিয়া ভ্রুকুটি কুঁচকে নিয়ে বলে,
—ছবি তুললেন কেন?
সাফওয়ান হেসে দিয়ে বলে,
—গত পাচঁ দিন সারা দিন আপনার সাথে থেকে অভ্যাস খারাপ হয়ে গিয়েছে।এখন অফিস যেতে ইচ্ছা করছে না।অফিসে কাজ এর মধ্যে দিয়ে ও আপনার কথা মনে পড়বে।তখন তো আর ফোন দিতে পারবো না।তাই ছবি তুলে নিলাম।আপনার কথা মনে পড়লে-ই ছবি টা দেখবো। যদি ও আমার কাছে আপনার ছবি আছে।তবু ফ্রেশ ফ্রেশ একটা ব্যাপার আছে না?তাই এটা তুলে নিলাম। ভালো করেছি না?
সাফওয়ান এর কথায় রাফিয়া চুপ করে তাকিয়ে আছে সাফওয়ান এর দিকে।কি বলবে সে বুঝতে পাচ্ছে না।রাফিয়া কে এভাবে তাকিয়ে থাকতে দেখে সাফওয়ান হেসে দিয়ে বলে,
—রাফিয়া এভাবে তাকিয়ে থাকবেন না।আমার ও তো লজ্জা বলতে একটা ব্যাপার না কি?
সাফওয়ান এর কথা শুনে রাফিয়ার কাশি উঠে গেলো।বলে কি এই ছেলে?এর আবার লজ্জা?রাফিয়া নিজে কে ধাতস্থ করে সাফওয়ান এর উদ্দেশ্যে স্বগতোক্তি করে বলে,
—আপনি যাবেন অফিসে?যত্ত সব অদ্ভুত কথা বলছেন আপনি।
—আমাকে তাড়ানোর আপনার এত তাড়া রাফিয়া?অথচ আমি ভেবেছি আজকে অফিস থেকে ছুটি নিবো।
—আমি খুব ভালো করে জানি।আপনাকে আর ছুটি দিবে না।তাই দেরি না করে তাড়াতাড়ি যান অফিসে।
—আচ্ছা যাবো।আগে কপাল একটু আপনার অধর যুগোল এর ছোঁয়া দিন না।
কথা টা বলে-ই সাফওয়ান কপাল টা রাফিয়ার দিকে এগিয়ে দেয়।রাফিয়া ও কোনো বাক্য ব্যয় না করে স্মিত হেসে সাফওয়ান এর কপালে নিজ এর ওষ্ঠ যুগোল এর ছোঁয়া দিয়ে দেয়।সাফওয়ান হেসে দিয়ে উঠে গিয়ে অফিস ব্যাগ টা কাঁধে নিয়ে আবার রাফিয়ার কাছে ফিরে আসে।রাফিয়ার ললাটে গভীর চুম্বন দিয়ে বলে,
—কোনো সমস্যা হলে সাথে সাথে আমাকে ফোন করে দিবেন। আমি।চলে আসবো ইনশা আল্লাহ।
—আচ্ছা বলবো।আল্লাহ হাফেজ। সাবধানে যাবেন।
সাফওয়ান হেসে দিয়ে বলে,
—আল্লাহ হাফেজ।
সাফওয়ান বেরিয়ে যায় অফিস এর উদ্দেশ্যে।রাফিয়া সাফওয়ান যাওয়ার পানে তাকিয়ে থাকে।যখন সাফওয়ান দৃষ্টির বাইরে চলে যায়।রাফিয়া একটা দীর্ঘ নিশ্বাস ত্যাগ করে।জীবন টা তার একটু অন্য রকম হয়েছে।তাতে ও আলহামদুলিল্লাহ।
🌸🌸
দুপুর এর খাবার জন্য চম্পা রাফিয়া সাফওয়ান এর রুমে এসেছে রাফিয়া কে ডাকতে। রাফিয়া মাত্র নামাজ পড়ে একটু শুয়েছে। চম্পা এসে রাফিয়ার পাশে দাঁড়িয়ে বলে,
—ভাবি।খাবেন না?শরীর খারাপ লাগছে?
চম্পার কথা শুনে রাফিয়া চোখ মেলে তাকায় চম্পার দিকে।হেসে দিয়ে শোয়া থেকে উঠে বসে।চম্পার উদ্দেশ্যে বলে উঠে,
—নাহ।শরীর খারাপ লাগছে না।চল।
চম্পা যেতে নিয়ে আবার থেমে গিয়ে রাফিয়ার দিকে তাকিয়ে বলে,
—আচ্ছা ভাবি একটা কথা জিজ্ঞেস করি?
চম্পার কথা তে রাফিয়া উঠতে নিয়ে না উঠে-ই আবার বসে যায়।চম্পার দিকে তাকিয়ে বলে,
—হ্যাঁ বল।
চম্পা এবার নড়েচড়ে রাফিয়ার পাশে এসে বসে রাফিয়ার দিকে উৎসুক দৃষ্টি ফেলে বলে,
—ভাবি আমি যে দারোয়ান এর ছেলে রে পছন্দ করি।এখন তো তাকে আর দেখি না।বোধহয় হারায় গিয়েছে।এখন কি আমাকে ইদ্দত পালন করতে হবে?
চম্পার কথা শুনে রাফিয়া যেন পুরো তাজ্জব বনে গেলো।এই মেয়ে কি বলে কি?পছন্দ করা ব্যক্তি কে না দেখতে পেয়ে ইদ্দত পালন করবে?আল্লাহ এদের নিয়ে যে কোন দুনিয়া তে যাবে?ভেবে-ই রাফিয়া হতাশ হয়ে যাচ্ছে।রাফিয়া চম্পার দিকে তাকিয়ে বলে,
—চম্পা তুই কি জানিস যিনা কি?
চম্পার দুই দিকে মাথা নাড়িয়ে বলে,
—না ভাবি।জানি না।
—সাধারণত যিনা বলতে বলা হয় কোনো ছেলে এবং মেয়ে মানে একে অপরের গায়রে মাহরম এর সাথে কোনো প্রকার সম্পর্কে লিপ্ত হওয়া কে যিনা বলে।যিনা কয়েক প্রকার এর আছে। রাসুলুল্লাহ (স) বলেছেনঃ
★কোন বেগানা নারীর প্রতি দৃষ্টি দেওয়া চোখের যিনা।
★অশ্লীল কথাবার্তা বলা জিহ্বার যিনা,
★অবৈধভাবে কাউকে স্পর্শ করা হাতের যিনা,
★ব্যাভিচারের উদ্দেশ্যে হেঁটে যাওয়া পায়ের যিনা,
★খারাপ কথা শোনা কানের যিনা, আর
★যিনার কল্পণা করা ও আকাঙ্ক্ষা করা মনের যিনা।
★অতঃপর লজ্জাস্থান একে পূর্ণতা দেয় অথবা অসম্পূর্ণ রেখে দেয়।
—[সহীহ আল-বুখারী, মিশকাত:৮৬, সহীহ আল-মুসলিম:২৬৫৭, সুনানে আবু দাউদ, সুনানে আন-নাসায়ী]
★রাসুলুল্লাহ (স) বলেছেন, “যিনাকারী যখন যিনা করে, তখন তার ঈমান থাকে না।”
—[বুখারি ও মুসলিম]
যিনা সম্পর্কে আল্লাহ তায়ালা বলেন,
.”তোমরা যেনার নিকটবর্তীও হয়োনা, এটা অশ্লীল ও নিকৃষ্ট পথ।”
—[সুরা বানী-ইসরাঈল : ৩২]
আর সেই ক্ষেত্রে তুই দারোয়ান এর ছেলের দিকে তাকিয়ে থাকতি,তাকে পছন্দ করতি। এতে তোর চোখ এর যিনা হয়েছে।আর ইদ্দত পালন করে শুধু মাত্র বিয়ে হওয়ার পর স্বামীর কিছু হলে।এসব ক্ষেত্রে ইদ্দত পালন করে না।যিনার শাস্তি ভ’য়ংকর। তাই এখনি এসব চিন্তা মাথা থেকে ঝেড়ে ফেল।আল্লাহর কাছে মাফ চেয়ে নে।যিনা হারাম।তাই এসব এর দিকে আর পা বাড়াস না।চল খেতে চল।
বলে-ই রাফিয়া চম্পা কে নিয়ে খেতে চলে যায় নিচে।
🌸🌸
রাত নয়টা বাজে।সাফওয়ান মাত্র বাসায় ফিরেছে।রুমে এসে দেখে রাফিয়া একটা বই হাতে বিছানায় হেলান দিয়ে ঘুমাচ্ছে। সাফওয়ান হেসে দেয় রাফিয়া কে এভাবে ঘুমাতে দেখে।কিছু না বলে কার্বাড থেকে ড্রেস নিয়ে ওয়াশরুমে চলে যায়।চেঞ্জ করে ফ্রেশ হয়ে এসে-ই আলগোছে বিছানায় উঠে রাফিয়া কে আস্তে শুইয়ে দেয়।নিজে ও রাফিয়ার পাশে শুয়ে পড়ে রাফিয়া কে শক্ত পোক্ত ভাবে জড়িয়ে ধরে।
হঠাৎ নিজে কে কারো বাহু বন্ধনে আবদ্ধ মনে হতে-ই চোখে মেলে তাকায় রাফিয়া।সাফওয়ান কে নিজে এর পাশে দেখে কিছু টা চমকে উঠলে ও পর মুহূর্তে নিজে কে ধাতস্থ করে সাফওয়ান কে বলে,
—আপনি?কখন এসেছেন?
সাফওয়ান হেসে দিয়ে বলে,
—একটু আগে-ই আসলাম। এখন চুপ করুন আহেলিয়া। আমাকে একটু আপনাকে জড়িয়ে ধরে রেখে বিশ্রাম নিতে দিন।
রাফিয়া চুপ করে যায়।সাফওয়ান রাফিয়ার দুই গালে অধর ছোঁয়া দিয়ে বলে,
—এত কেন ইচ্ছে করে আপনার দিকে তাকিয়ে থাকতে রাফিয়া?
সাফওয়ান এর কথায় রাফিয়া কিছু বলে না।হেসে দেয়।সাফওয়ান এর বুকেই মুখ লুকায় লজ্জা পেয়ে।সাফওয়ান হেসে দিয়ে বলে,
—আহেলিয়া আমি আপনার লজ্জা পাওয়ার কারণ, আবার আমার বক্ষে-ই মুখ লুকিয়ে করছেন লজ্জা নিবারণ।কি সুন্দর না?
বলে সাফওয়ান আরেকটু জড়িয়ে নেয়ে রাফিয়া কে নিজের বাহু বন্ধনে।
চলবে ইনশাআল্লাহ
আজকের পর্বে ১১০০+ শব্দ।এর থেকে ও বেশি লেখা ছিলো। ডিলেট হয়ে গিয়েছে।আবার লেখতে হয়েছে।গতকাল গল্প না দেওয়ার জন্য দুঃখিত।আজকের পর্ব অগোছালো বানান ভুল থাকতে পারে।রিচেক দেওয়া হয়নি।কষ্ট করে মানিয়ে নিবেন।আসসালামু আলাইকুম ওয়া রাহমাতুল্লাহ