#বৈধ_দৃষ্টি
#পর্বঃ১০+১১
#ফাতেমা_জান্নাত
—“আমার ভাইয়ার মৃ’ত্যু এর পিছনে আপনার ও হাত আছে তাই না মাফুজ আংকেল?”
ডাক্তার মাফুজ এর সামনে বসে কথা টা বলে উঠে সাফওয়ান। ডাক্তার মাফুজ তাদের পরিচিত ডাক্তার। সাইফ এর মৃ’ত্যুর সময় সাইফ কে ডাক্তার মাফুজ এর হসপিটালে আনা হয়ে ছিলো। তাই সাফওয়ান ডাক্তার মাফুজ এর কাছে এসেছে তার ভাই সাইফ কে মে’রে ফেলার কারণ জানতে। যত- ই পরিচিত মানুষ হোক না কেন।টাকার লোভ কেউ- ই সামলা তে পারে না।হয়তো রাফিয়া ও ডাক্তার মাফুজ কে টাকার লোভ দেখিয়ে সাইফ কে মে’রে ফেলেছে।এটাই সাফওয়ান এর ধারণা।
ডাক্তার মাফুজ সাফওয়ান এর মুখে এহেন কথা শুনে বিস্ময়ে চোখ বড় বড় করে ফেলে।অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করে,
—কি বলছো কি তুমি সাফওয়ান? আমি কেন সাইফ কে মা’রতে যাবো?
—রাফিয়ার থেকে কত টাকা নিয়েছেন আমার ভাইয়া কে মা’রার জন্য?
সাফওয়ান এর মুখোচ্চরিত কথায় এবার বেশ অনেক টায় অবাক হয়ে গেলেন ডাক্তার মাফুজ। তিনি সাফওয়ান এর দিকে অবাক নেত্র নিয়ে কিছু খানেক তাকিয়ে থাকে।উনি হয়তো সাফওয়ান এর বলা কথা গুলো বোধগম্য করতে পারছে না।নিজ এর মাথায় আর বেশি প্রেশার না দিয়ে সাফওয়ান কে আবার বলে উঠে,
—সত্যি কথা বলতে তোমার কোনো কথায় আমি ঠিক ভাবে বুঝতে পারছি না সাফওয়ান। কিসের সাইফ কে মে’রে ফেললাম আর কিসের রাফিয়া এর থেকে টাকা নিলাম।কিছুই আমার মাথায় ঢুকছে না।
সাফওয়ান এবার তার হাতে থাকা সাইফ এর অসুস্থ থাকা কালীন প্রেসক্রিপশন রিপোর্ট ফাইল টা ডাক্তার মাফুজ দিকে এগিয়ে ধরে।ফাইল এর পৃষ্ঠা উল্টিয়ে ডাক্তার মাফুজ কে দেখিয়ে বলে,
— ভাইয়া কে এই ওষুধ গুলো তো আপনি- ই দিয়ে ছিলেন তাই না আংকেল?
—হ্যাঁ।
—আমার ভাইয়ার অসুস্থতা কি ছিলো?
—সাইফ এর পেটে তো টিউমার হয়ে ছিলো। তাই তো ও মা’রা গিয়ে ছিলো।
—এর সত্যতা কত টুকু?
—মানে?
—আমার ভাইয়ার যে পেটে টিউমার ছিলো সেটার সত্যতা কত টুকু সেটা- ই জানতে চাইছি।
সাফওয়ান এর কথায় ডাক্তার মাফুজ কিছুক্ষণ চুপ করে থাকে।কিছুক্ষণ সময় গড়াতে -ই তিনি সাফওয়ান এর দিকে হাত বাড়িয়ে দিয়ে বলে,
—সাইফ এর রিপোর্ট গুলো দাও সাফওয়ান। এসো তোমাকে আমি দেখাচ্ছি।
সাফওয়ান রিপোর্ট গুলো ডাক্তার মাফুজ এর হাতে তুলে দেয়।ডাক্তার মাফুজ রিপোর্ট গুলো হাতে নিয়ে বেশ কিছুক্ষণ চুপ করে দেখে।সাফওয়ান এর উদ্দেশ্যে বুঝিয়ে বলে,
—“শুনো সাফওয়ান। আমি জানি না তুমি কেন হঠাৎ সাইফ এর মৃ’ত্যু এর পিছনে আমাকে দায়ী করছো এবং কেন বলছো আমি রাফিয়া এর থেকে টাকা নিয়েছি সাইফ কে মা’রার জন্য।তবে আমি যা বলছি সত্যি বলছি।উপরে এক আল্লাহ বসে আছে তিনি দেখছেন আমি সত্যি নাকি মিথ্যে বলছি।মিথ্যে বললে তিনি তো আছে- ই আমার বিচার করার জন্য, শাস্তি দেওয়ার জন্য।সাফওয়ান এর পেট এর বাম পাশে ছোট্ট আকার এর একটা টিউমার ছিলো।এটা পেটে ব্য’থার সৃষ্টি করতো।কিন্তু সাইফ সেটা কে এতো টা ও গুরুত্ব দেয়নি।ভেবে ছিলো গ্যাস্ট্রিক প্রব্লেম এর কারণে হয়তো পেট ব্য’থা হচ্ছে।এই জন্য সে এটা আমলে না নিয়ে গ্যাস্ট্রিক এর ওষুধ খেতো।ডাক্তার এর কাছে ও যায়নি সাইফ।টিউমার টা আস্তে আস্তে ওর পেট এর মাঝে বড় আকার ধারণ করে।এর পর থেকে- ই ওর ঘন ঘন বমি হতো।পেট এর ব্য’থা তীব্র থেকে তীব্র তর হতো।হঠাৎ করে যখন একদিন রাতে আনুমানিক নয় টা সাড়ে নয় টার দিকে সাইফ আমার কাছে আসে।।অসুস্থ তা নিয়ে আমাকে বলে।মনে সন্দেহ জাগায় আমি ওর চেক আপ করি,ওকে কিছু টেস্ট করতে দিই।ওকে বলে ছিলাম পর এর দিন সকালে কিংবা দুপুরে এসে রিপোর্ট নিয়ে যেতে। কিন্তু সাইফ পর এর দিন আসেনি।সাইফ এর রিপোর্ট আসার পর কি দেখতে পেয়েছি জানো?
সাইফ এর পেটে টিউমার। এবং যা এখন তার পুরো পেটে ছড়িয়ে পড়েছে।কিন্তু সাইফ জানতো না।সাইফ সাধারণ গ্যাস্ট্রিক ব্য’থা বলে গুরুত্ব দেয়নি। এর তিন দিন পর- ই আমজাদ, সাবিনা ভাবি,আর রাফিয়া বউ মা মিলে দেখলাম সাইফ কে নিয়ে হসপিটালে এসেছে।সাইফ এর তখন সেন্স নেই।অপারেশন থিয়েটারে সাইফ কে ঢুকানো হয়।তবে অপারেশন শুরু করার আগে- ই সাইফ শেষ নিশ্বাস ত্যাগ করে।সেই দিন শুধু আমি রাফিয়া বউ মা আর আমজাদ কে বলে ছিলাম সাইফ এর পেটে টিউমার ছিলো।সাবিনা ভাবি জানতো সাইফ ঘুম এর মধ্যে স্ট্রোক করেছে।যদি ও বেশির ভাগ মানুষ তিন বার এর সময় স্ট্রোক করে মা’রা যায়।কিন্তু আল্লাহ যখন যার হায়াত নেয় তার মৃ’ত্যু তো তখন -ই হয়।এসব বলে- ই সাবিনা ভাবি কে বুঝিয়ে ছিলাম।সাইফ মা’রা যাওয়ার এক মাস পরে- ই সাবিনা ভাবি কে আসল সত্য জানানো হয়।সাইফ এর অসুস্থ তার সিনড্রোম তোমার পরিবার এর সবার চোখে- ই পড়ে ছিলো। কিন্তু সাইফ অতটা গুরুত্ব না দেওয়ায় কেউ আর কিছু বলেনি।ভেবে ছিলো সত্যি – ই হয়তো গ্যাস্ট্রিক এর প্রব্লেম। সাফওয়ান তুমি চাইলে অন্য বড় কোনো ডাক্তার কে ও আমার দেওয়া প্রেসক্রিপশন টা দেখাতে পারো।যদি আমার কথা বিশ্বাস না হয় তোমার।যদি অন্যান্য ডাক্তার রা বলে আমি কোনো ভুল ওষুধ দিয়ে সাইফ কে মে’রে ফেলেছি।আমি কথা দিচ্ছি আমি মেনে নিবো আমি সাইফ এর মৃ’ত্যুর জন্য দায়ী। আমি ভুল ওষুধ দিয়ে সাইফ কে খু’ন করেছি। কিন্তু একটা কথা সত্যি যে আমি রাফিয়া এর থেকে কোনো টাকা নিই নি।আর না রাফিয়া সাইফ এর মৃ’ত্যুর জন্য আমাকে কোন টাকা অফার করে ছিলো। আমি তোমাকে শেষ বার শুধু একটা কথা- ই বলবো সাইফ এর মৃ’ত্যুর পিছনে আমার বা রাফিয়ার কোনো হাত ছিলো না।এখন বিশ্বাস করা সম্পূর্ণ তোমার উপর নির্ভর করছে।আমি অপেক্ষায় থাকবো তোমার অনুশোচনা এর ন্যায় চোখ এর চাহনির জন্য,নয়তো তোমার ক্ষিপ্ত চোখ এর চাহনি আর সাথে পুলিশ এর।দেখা যাক নেক্সট টাইম তুমি কি নিয়ে এসে আমার অপেক্ষার অবসান ঘটাও”””।
এতক্ষণে সম্পূর্ণ কথা বলে থামে ডাক্তার মাফুজ। সাফওয়ান তীক্ষ্ণ দৃষ্টি তে ডাক্তার মাফুজ এর দিকে তাকিয়ে আছে।কিয়তক্ষণ মৌনতা নিয়ে বসে থেকে ডাক্তার মাফুজ এর হাত থেকে সাইফ এর রিপোর্ট ফাইল টা নিয়ে হসপিটাল থেকে বেরিয়ে আসে।
হসপিটাল থেকে বের হয়ে- ই ডাইরেক্ট গাড়ি তে উঠে গাড়ি স্টার্ট দিয়ে পথ চলতে শুরু করে।মন একবার বলছে ডাক্তার মাফুজ এর কথা গুলো বিশ্বাস করতে। ডাক্তার মাফুজ সত্যি কথা বলছে।পরোক্ষণে- ই মন আবার বলে উঠে আর যাই হোক জিসান তো আর মিথ্যে কথা বলতে পারে না।জিসান তার ফুফাতো ভাই কম বন্ধু বেশি।দুই জনে- ই প্রায় সেইম এইজ এর।সাফওয়ান এর ফুফাতো ভাই তিন জন।তার মধ্যে জিসান মেজো। জিসান এর বড় এবং ছোট ভাই এর তুলনায় তার মন মানসিকতা অনেক ভালো। জিসান এর বড় ভাই শিয়ান আর জিসান এর ছোট ভাই রিয়ান দুই টার স্বভাব অনেক টা নিচু।দুই জনে- ই রাফিয়া কে কয়েক বার ডিস্টার্ব করতে চেয়ে ছিলো। ভাগ্য ক্রমে আল্লাহ হেফাজত করে ছিলো তাকে।
শিয়ান আর রিয়ান যদি এই কথা গুলা বলতো তাহলে কোনো দিন সাফওয়ান এই কথা গুলো বিশ্বাস করতো না।কিন্তু জিসান আর যাই হোক মিথ্যে বলবে না কাউ কে নিয়ে।তাই না চাইতে ও মন বলছে জিসান এর কথা বিশ্বাস করতে।আবার বলছে রাফিয়া কে বিশ্বাস করতে।কিন্তু রাফিয়া কে বিশ্বাস করলে যে তার ভাইয়ার সাথে অন্যায় করা হয়ে যাবে।তার ভাইয়ার খু’নি কে ছাড় দেওয়া হয়ে যাবে।
এতক্ষণ থেকে- ই এসব ভেবে চলছে সাফওয়ান। দ্বিধা দ্বন্ধে আছে সে।কি করবে বুঝে উঠতে পারছে।আজ সাইফ এর কথা বড্ড বেশি মনে পড়ছে তার।ভাই এর শেষ নিশ্বাস ত্যাগ করার সময় ও ভাই কে এক নজর দেখতে পারেনি সে।ভাই কে জড়িয়ে ধরতে পারে নি।এক মুহূর্ত এর জন্য খু’ন শুটি তে মেতে উঠতে পারেনি।হাসি দিয়ে ভাই এর মুষ্টিবদ্ধ হাত এর সাথে নিজ এর মুষ্টিবদ্ধ হাত এর পাঞ্চ করতে পারে নি।
–
সাফওয়ান রাস্তার এক পাশে দাঁড়িয়ে আছে।গাড়ি টা রাস্তার কিনারায় দাড়াঁ করিয়ে রেখেছে।সামনের মাঠ টার দিকে কিছুক্ষণ চেয়ে থেকে আবার আকাশ এর দিকে তাকায়।সাফওয়ান এর চোখ এর কার্ণিস ভেয়ে দুই ফোঁটা পানি পড়ে।নিজে কে যেন হেল্প লেস লাগছে আজ নিজ এর কাছে।।আকাশ এর দিকে তাকিয়ে সাফওয়ান বলে উঠে,
—আল্লাহ আমি শ’য়তান এর প্ররোচনায় জড়িয়ে গিয়ে ছিলাম। দ্বিতীয় বার যাতে আর আমি শয়’তান এর প্ররোচনায় না জড়ায়। আল্লাহ তুমি আমাকে হেফাজত করো।সব কিছু ঠিক করে দাও।আমাকে ধৈর্য্য ধারণ করার ক্ষমতা দিও।
বলেই সাফওয়ান চোখ নিচ এর দিকে নামিয়ে ফেলে।ভূমি তে দুই ফোঁটা পানি ঝরে পড়ে অক্ষি যুগোল থেকে।
🌸🌸
ঘড়ির কাঁ’টা রাত একটা ছুঁই ছুঁই করছে।টিক টিক শব্দ করে ঘড়ির কাঁ’টা বেজে চলছে।নিস্তব্ধ রাতে শুনশান পরিবেশ নিরব ঘর এর আনাচে কানাচে যেন ঘড়ির কাঁ’টার টিক টিক শব্দ টা পৌছে যাচ্ছে।বাইরে থেকে রাত জাগা পাখি দের ডাক আসছে।হিম শীতল বাতাস বয়ছে।মৃদু মন্দ ভাবে গাছ এর পাতা গুলো নড়ছে। অন্ধকার চাদরে ঘেরা রাত এর আকাশ।তার মাঝে- ই বাঁকা হেসে বসে আছে বাঁকা চাঁদের বুড়ি।তারা রা মিটি মিটি ভাবে জ্বলছে।মোট কথা ভালো লাগায় চেয়ে যাওয়ার মতো স্নিগ্ধ মনোরম পরিবেশ। কিন্তু বেলকনি তে দাঁড়িয়ে থাকা রাফিয়ার মনে এই স্নিগ্ধ মনোরম পরিবেশ স্নিগ্ধতা ছড়িয়ে দিতে পারে নি।মন টা কে স্নিগ্ধ করে তুলতে পারেনি।
সাফওয়ান এখনো বাসায় আসেনি।সেই কখন থেকে সাফওয়ান এর আসার অপেক্ষায় রাত জেগে বসে আছে রাফিয়া।সাফওয়ান এর আসার কোনো নাম গন্ধ নেই।রাফিয়া বেলকনি থেকে ঘর এর ভিতরে এসে আরেক বার ঘড়ির দিকে তাকায়।দেখে একটা পাচঁ বাজে।তপ্ত নিশ্বাস ছেড়ে ড্রয়িংরুম এর দিকে পা বাড়ায়। ড্রয়িংরুম এর সোফার উপর রাফিয়া বসে আছে।চোখে তার ঘুম নেই।একে তো সাফওয়ান তাকে সাইফ এর খু’নি ভেবে রে’গে বাসা থেকে বের হয়ে গেছে।এখন আবার এখনো বাসায় আসছে না সাফওয়ান। এই দিকে রাত বেড়ে চলছে।রাফিয়া চোখ দুটো বন্ধ সোফায় মাথা টা হেলিয়ে দেয়।
হঠাৎ কারো হাঁটার শব্দ পেতে- ই রাফিয়া চট করে চোখ খুলে দরজার দিকে তাকায়।কিন্তু না দরজা তো বন্ধ আছে।শব্দ টা আরো দৃঢ় ভাবে কানে এসে লাগতে- ই রাফিয়া শব্দ এর উৎস খুঁজে সেই দিকে তাকাতে -ই দেখে সাবিনা সিঁড়ি বেয়ে নিচে নামছে। হাতে ওয়াটার বোতল। রাফিয়া সাবিনা কে দেখে বসে থাকে থেকে দাঁড়িয়ে যায়।সাবিনা ও এতক্ষণে রাফিয়া কে দেখলো।রাফিয়া এর কাছে এসে অবাক নেত্রে তাকিয়ে রাফিয়ার উদ্দেশ্যে বলে উঠে,
—তুই এখনো জেগে আছিস কেন মা?ঘুমাস নি যে?
রাফিয়া কি বলবে ভেবে পাচ্ছে না।সত্যি টা কি বলে দিবে?রাফিয়ার ভাবনার মাঝে- ই সাবিনা আবার বলে উঠে,
—বলছিস না যে?
—আসলে মা আপনার ছেলে এখনো আসেনি।তাই বসে আছি।আর ঘুম ও আসছে না।উনি আসলে দরজা খুলতে হবে তো।
সাবিনা অবাক হয়ে বলে,
—সাফওয়ান এখনো বাসায় আসেনি?আমার কাছ থেকে সাইফ এর প্রেসক্রিপশন চেক আপ এর সব রিপোর্ট নিয়ে গেলো।আজ হঠাৎ এসব নিলো কেন?
—জানি না।হয় তো কোনো প্রয়োজন। আপনি গিয়ে ঘুমিয়ে পড়ুন মা।উনি এসে যাবে এখন।আসলে- ই আমি দরজা খুলে দিবো।
সাবিনা স্মিত হেসে রাফিয়া এর মুখে হাত ছুঁয়ে দিয়ে বলে,
—তুই যা গিয়ে ঘুমা মা।ওর কাছে এক্সট্রা চাবি আছে।ওটা দিয়ে দরজা খুলে ঢুকবে ও।
—আচ্ছা মা।
বলে- ই রাফিয়া ঘর এর দিকে যাওয়ার জন্য পা বাড়ায়। সাবিনা রাফিয়া এর যাওয়ার পানে তাকিয়ে কিছু একটা ভাবতে- ই রাফিয়া কে পিছন থেকে ডেকে উঠে বলে,
—রাফিয়া!
রাফিয়া পিছন ঘুরে তাকিয়ে বলে,
—জি মা।বলুন।
—সাফওয়ান এর সাথে তোর সব ঠিক আছে তো মা?
সাবিনা এর কথায় রাফিয়া চুপ করে যায়।রাফিয়া এর চুপ করে থাকা দেখে সাবিনা নিজেই নিজে কে আহাম্মক বলে রচিত করে।ছেলে বউ কে এই প্রশ্ন টা করা তো উচিত হয়নি।তিনি কিছু বলতে যাবে রাফিয়া কে।তার আগে- ই রাফিয়া বলে উঠে,
—ঠিক আছে মা।
—আচ্ছা তুই ঘরে যা ঘুমা।
সাবিনার কথা শেষ হতে- ই রাফিয়া ঘরে চলে যায়।রাফিয়া ঘরে গিয়ে- ই ওয়াশরুম থেকে ওযু করে এসে তাহাজ্জুদ নামাজ পড়তে দাঁড়ায়।আল্লাহর কাছে কান্না করতে করতে চাইতে থাকে আল্লাহ যেন সব ঠিক করে দেয়।শ’য়তান এর প্ররোচনার শি”কার যাতে তাদের না হতে হয়।
রাত একটা ত্রিশ মিনিটে সাফওয়ান বাড়ি এসে এক্সট্রা চাবি দিয়ে মেইন ডোর খুলে বাসার ভিতর ঢুকে সোজা নিজে দের ঘর এর দিকে যায়।রুমে ঢুকে -ই দেখে রাফিয়া জায় নামাজে সিজদারত হয়ে কান্না করছে।সাফওয়ান সেই দিকে তাকিয়ে যেন তার অনুশোচনা আরো বৃদ্ধি ফেলো।সাফওয়ান রাফিয়া এর দিক থেকে দৃষ্টি সরিয়ে কার্বাড থেকে জামা কাপড় নিয়ে ওয়াশরুম এর মধ্যে চলে যায় ফ্রেশ হতে।ওযু করে এসে সে নিজে ও তাহাজ্জুদ নামাজ পড়তে দাঁড়িয়ে যায়।নামাজ এর মাঝে- ই সাফওয়ান কান্না করে উঠে।সিজদারত হয়ে ও কান্না করে।
নামাজে সালাম ফিরানোর পর হঠাৎ পাশে কারো ফুঁপানো কান্নার আওয়াজ শুনে রাফিয়া সেই দিকে তাকায়।পাশে তাকিয়ে দেখে সাফওয়ান সিজদারত হয়ে কান্না করছে।সাফওয়ান কে কান্না করতে দেখে রাফিয়া এর ভ্রু কুঁচকে যায়।সাফওয়ান হঠাৎ এই ভাবে কান্না করছে কেন?সাফওয়ান কে সে আরো তাহাজ্জুদ নামাজ পড়তে দেখেছে।তবে এভাবে কখনো কান্না করতে দেখেনি।রাফিয়া কিছুক্ষণ তাকিয়ে থেকে আবার নিজ এর নামাজ পড়ায় মনোযোগ দেয়।আবার নামাজে দাঁড়ায়।
রাত দুইটা ত্রিশ বাজে।রাফিয়া নামাজ পড়ে উঠে গিয়ে জায় নামাজ ভাজ করে রেখে বিছানায় গিয়ে বসে।মাথা টা নিচের দিকে রেখে হাজার কিছু ভেবে চলছে।সাফওয়ান এর সাথে এক বিছানায় শুইলে আবার সাফওয়ান রা’গ করবে না তো?এখনো কি তাকে সাইফ এর খু’নি ভাবছে?স্বাভাবিক ভাবে কথা বলবে তো তার সাথে?নাকি সকাল বেলার মতো- ই তাকে খু’নি সম্বোধন করে রে’গে কথা বলবে?
এক আকাশ সমান অস্থিরতা বিরাজ করছে রাফিয়া এর মধ্যে। সাফওয়ান এখনো নামাজ পড়ে উঠে নি।রাফিয়া দ্বিধা দ্বন্ধে ভুগছে।সে কি শুয়ে যাবে নাকি সাফওয়ান এর জন্য অপেক্ষা করবে।
রাফিয়া এর ভাবনার মাঝে- ই সাফওয়ান এর নামাজ শেষ হয়।নামাজ শেষ করে জায় নামাজ রেখে রাফিয়ার দিকে তাকাতেই দেখে রাফিয়া বসে আছে নত মস্তক নিয়ে।দুই হাত ডলছে। সাফওয়ান ভ্রু কুঁচকে রাফিয়ার দিকে তাকিয়ে ভাবছে,”রাফিয়া কি নিয়ে এতো ভাবছে।”
সাফওয়ান ধীর পায়ে গিয়ে রাফিয়া এর সামনে এসে দাঁড়ায়।রাফিয়া এখনো সাফওয়ান কে খেয়াল করেনি।সাফওয়ান আলগোছে রাফিয়ার হাত টা ধরতেই রাফিয়া হকচকিয়ে যায়।বিস্ময় মাখা চক্ষু নিয়ে সাফওয়ান এর দিকে তাকায়।সাফওয়ান এর দৃষ্টি তে দৃষ্টি মিলায় রাফিয়া। সাফওয়ান এর দুই চোখে স্পষ্ট অনুশোচনা দেখছে।কিন্তু কি নিয়ে সাফওয়ান এর এত অনুশোচনা? তাকে যে খু’নি বলেছে সেটা নিয়ে?সেটা নিয়ে তো অনুশোচনা হওয়ার কথা না সাফওয়ান এর।সে তো রাফিয়া কে এখনো খু’নি ভেবে চলছে।
রাফিয়ার ভাবনার মাঝে- ই সাফওয়ান রাফিয়ার উদ্দেশ্যে স্বগতোক্তি করে বলে উঠে,
—রাফিয়া আপনার সাথে আমার কিছু কথা আছে।
রাফিয়া সাফওয়ান এর কথার প্রতি উত্তরে বলে উঠে,
—জি বলুন।
—এখন না।আল্লাহ বাচিঁয়ে রাখলে ইনশাল্লাহ কাল সকালে বলবো। আপনি শুনবেন তো?
—জি ইনশাল্লাহ শুনবো।
—আচ্ছা।তাহলে ঘুমিয়ে পড়ুন এখন।
—কোথায় ঘুমাবো?
—এত বড় বিছানায় নিশ্চয় আমি একা ঘুমাবো না রাফিয়া।
—না মানে।আপনি তো আমার উপর রেগে আছেন। তাই আর কি ভাবছিলাম বিছানায় ঘুমালে যদি আবার রেগে যান।
—রাগ টা শ’য়তান এর প্ররোচনা ছিলো রাফিয়া।সেই সময় এর বিষয় টা নিয়ে আমি এখন আর কথা বলতে চাইছি না রাফিয়া। আর রাগ করে আলাদা আলাদা বিছানায় শুয়ে শ’য়তান কে আমাদের মাঝে আনার মতো নির্বোধ আমি না রাফিয়া। তাই শুয়ে পড়ুন।
—জি আচ্ছা।
বলেই রাফিয়া এক পাশে শুয়ে পড়ে।সাফওয়ান ঘরের বাতি নিভিয়ে ড্রিম লাইট দিয়ে এসে নিজে ও শুয়ে পড়ে।মাথায় চলছে সাফওয়ান এর হাজার রকম চিন্তা।নিজ এর আপন মানুষ গুলা কি ভাবে এটা করতে পারলো তা যেন এখনো তার বিশ্বাস হচ্ছে না।মানুষ এত টা খারাপ কি করে হতে পারে।ভেবে পাচ্ছে না সাফওয়ান।
চলবে ইনশাল্লাহ
ভুল হলে ধরিয়ে দিবেন।শুধরে নিবো ইনশাল্লাহ। আসসালামু আলাইকুম।
নোট:রাগ উঠলে মানুষ নিজ এর মাঝে থাকে না।তখন মানুষ এর বোধ বুদ্ধি লোপ পায়।মানুষ তখন শ’য়তান এর প্ররোচনায় পড়ে শ’য়তান এর ইশারা মতো কাজ করে নিজের অজান্তে- ই।সাফওয়ান এর ক্ষেত্রে ও বিষয় টা তেমন। রাগের মাথায় সে রাফিয়া কে যা বলেছে।মূলত সে তা বলতে চায়নি।তখন সে শ’য়তান এর প্ররোচনায় জড়িয়ে গিয়ে ছিলো। আর এখনো সম্পূর্ণ বিষয় গুলো ক্লিয়ার করা হয়নি।তাই সাফওয়ান কে কেউ ভুল বুঝবেন না।