বৈধ_দৃষ্টি #পর্বঃ১৯

0
313

#বৈধ_দৃষ্টি
#পর্বঃ১৯
#ফাতেমা_জান্নাত

—“বিয়ে ছেলে করেছে তাহলে,মেয়ে কে কোলে করে ছেলের বোন এর স্বামী কেন নিবে?এসব কি?”

কথা টা বলে- ই রাফিয়া রুম এর মাঝে উপস্থিত সকল মহিলার মুখ এর দিকে তাকায়।রুম এর মাঝে উপস্থিত সবার দৃষ্টি ও রাফিয়ার মধ্যে নিবদ্ধ।এমন ভাবে সকলে তাকিয়ে আছে যেন রাফিয়া মাত্র কাউ কে মে’রে এখানে এসে উপস্থিত হয়েছে।সে খু’নি আর সকলে গোয়েন্দা। এমন চিন্তা ভাবনাই রাফিয়ার মাথায় চলছে।

সুবর্ণা কে সাজানো শেষ হয়েছে।খাওয়া দাওয়া ও শেষ সকল এর।তাই এখন ছেলের বাড়ি থেকে আসা লোক জন এর মাঝে ছেলের চাচাতো ভাই এর বউ বলছে,”সুবর্ণা কে কোলে তুলে গাড়ি তে নিয়ে যাওয়ার জন্য ছেলের বোন এর স্বামী কে ডাকতে।উনি -ই সুবর্ণা কে কোলে করে নিবে।”তাই রাফিয়া ছেলের চাচাতো ভাই এর বউ এর কথার পরিপেক্ষিতে কথা টা বলে।

ছেলের ভাবি আবারো বলে উঠে,

—সমস্যা কি?সুবর্ণার তো দেবর নেই।নয় তো দেবর -ই কোলে করে নিতো। কিন্তু সুবর্ণার ননদ জামাই তো আছে।উনি- ই নিবে কোলে করে।এমন করে -ই আরো আগ থেকে আমাদের ওখানে হয়ে আসছে।তাহলে সুবর্ণার সময় নিয়ম বদলাবে কেন? আমার বিয়ের সময় ও তো আমাকে আমার দেবর আমাকে কোলে করে গাড়ি তে নিয়ে তুলছে।

রাফিয়া ছেলের ভাবির কথা শুনে হতাস হয়।মানুষ এসব কি সব নিয়ম শুরু করেছে?নাউজুবিল্লা। আর মামা সুবর্ণা কে এরকম একটা ফ্যামিলি তে কি করে বিয়ে দিতে রাজি হয়েছে।রাফিয়া ছেলের ভাবির উদ্দেশ্যে সুধাল,

—দেবর এর কোলে করে আপনি গাড়ি তে উঠেছেন। এটার জন্য কি আপনি খুব গর্ববোধ করছেন?নাউজুবিল্লা।আপনি জানেন একজন দেবর ভাবির সম্পর্কে ইসলামে কি বলেছে?
“”দেবর ও ভাবীর মধ্যে সীসা ঢালা প্রাচীরের মতো পর্দা হওয়া উচিত। দুনিয়াতে যে মানুষের সামনে সবচেয়ে বেশি পর্দা করতে হয় তিনি হলেন দেবর।সমাজ বলে দেবর ভাইয়ের মত ইসলাম বলে দেবর হলো মৃ’ত্যু সমতুল্য।
(সহিহ বুখারীঃ ৫২৩২)””

আফসোস আপনারা দুনিয়ার সুখ আনন্দ নিয়ে পড়ে আছেন।আর যেখানে নিজ এর দুলাভাই কে দেখা দেওয়া জায়েজ নেই।সেখানে স্বামীর বোন এর জামাই এর কোলে করে গাড়ি তে উঠবে?এসব কিসের নিয়ম?এসব নিয়ম কে চালু করেছে?যে সব নিয়ম এর কোনো ভিত্তি নেই।ইসলাম সমর্থন করে না।সে সব নিয়ম নিয়ে আপনা দের কিসের এত মাতামাতি। একটু বলবেন আমায়?আমার কথায় আপনার কেউ কষ্ট পেলে মাফ করবেন আমায়।আজ আপনা দের কারণ এই আমি এসব বলতে বাধ্য হয়েছি।নয়তো এসব আমি বলতাম না।আপনা দের কাছে একটা অনুরোধ, নিজে দের নিয়ম এর দোহাই দিয়ে অন্তত আমার বোন টাকে নিজে দের সাথে গুনাহ এর শামিল করবেন না।ও ছোট বেলা থেকে -ই পর্দা করে আসছে।আপনা দের মাঝে গিয়ে যাতে অন্তত তাকে পর্দা বিহীন যাতে থাকতে না হয়।আর একটা কথা।আপনা দের বাড়ি তে কিন্তু সুবর্ণা এখন বোরকা পরেই যাবে।আশা করি আপনারা কোনো বাঁধার সৃষ্টি করবেন না এতে।

রাফিয়া কথা গুলো বলে থামতে -ই সুবর্ণার শাশুড়ি হুড়মুড়িয়ে ঘরে প্রবেশ করে।সুবর্ণা কে বোরকা পরে নেওয়ার কথা উনি শুনে ছিলেন। তাই তেঁতে উঠে তিক্ত তা মাখা সুরে রাফিয়া কে উদ্দেশ্য করে সুধায়,

—এই মেয়ে,তোমার মতো কি আমি আমার ছেলের বউ কে এসব বোরকা বারকি পরিয়ে নিবো না কি?

রাফিয়া অত্যন্ত নম্রতার স্বরে স্বগতোক্তি করে বলে,

—আন্টি সুবর্ণা ছোট থেকে -ই পর্দা করে আসছে।ওকে এভাবে বোরকা ছাড়া বেগানা পুরুষ দের সামনে নিয়ে গিয়ে ওর এত বছর এর পর্দা করে আসা আমল গুলা আপনারা একদিনে নষ্ট করে দিবেন না।এতে কিন্তু মহান রাব্বুল আল আমিন এর দরবারে কিন্তু আপনাদের জবাব দিতে হবে।আচ্ছা ঠিক আছে আপনা দের কোনো কথা বলতে হবে না।যা জিজ্ঞেস করার এবার ছেলে কে জিজ্ঞেস করা হবে।সে তার স্ত্রী কে কি ভাবে রাখতে চায়।তার মুখ থেকে -ই না হয় আমরা শুনে নিবো। তবে ছেলে যা বলবে তা -ই শেষ সিদ্ধান্ত।এর বাইরে আপনারা কিছু বলতে পারবেন না।

বলেই রাফিয়া ঘর থেকে বের হয়ে যায়।নিজ এর রুমে গিয়ে সাফওয়ান কে ফোন করে উপরে রুমে একবার আসতে বলে।ফোন কেটে দিয়ে রাফিয়া বেলকনি তে যায়।বেলকনি থেকে -ই নিচে পাত্রের বাড়ির সকল কে দেখা যাচ্ছে।সকল পুরুষ কে দেখা যাচ্ছে বিধায় রাফিয়া রুমে চলে আসে।রুমে আসতে- ই সাফওয়ান রুমে এসে দরজা টা লক করে দিয়ে হেসে দিয়ে রাফিয়ার কাছে আসতে থাকে।দূরত্ব গুছিয়ে রাফিয়ার একে বারে সামনে দাঁড়িয়ে স্বগতোক্তি করে বলে,

—আমাকে বুঝি মিস করছিলো আমার বউ?

—অন্য কেউ মিস করার কথা ছিলো না কি?

—আরে না না।তা হবে কেনো। তা হঠাৎ আপনার স্বামী কে মিস করার কারণ।

—একটা দায়িত্ব পালন করতে হবে আপনা কে পারবেন?

—আমার অর্ধাঙ্গিনী বলেছে।আমি অন্তত চেষ্টা করে তো দেখতে পারি।ইনশাল্লাহ চেষ্টা করবো। আপনি বলুন।

সাফওয়ান এর কথা শুনে রাফিয়া হেসে দেয়।মুহূর্তে -ই মুখ এর হাসি মিলিয়ে মাত্র সুবর্ণার রুমে ঘটে যাওয়া সব গুলো কথা সাফওয়ান কে বলে।সাফওয়ান সম্পূর্ণ কথা মনযোগ দিয়ে নিজ এর কর্ণ কুহুরে প্রবেশ করে নেয়।রাফিয়া সব কিছু বলে থামতে -ই সাফওয়ান বলে উঠে,

—আমি বুঝতে পারছি রাফিয়া আমাকে কি করতে হবে।ছেলের সাথে এই ব্যাপারে কথা বলতে হবে তাই তো?আমি যাচ্ছি।শুধু খারাপ লাগছে একটা বিষয় ভেবে যে,আমার মামা শ্বশুর এমন একটা ফ্যামিলি তে সুবর্ণার বিয়ে দিচ্ছে।যাই হোক ভাগ্য।সুবর্ণার ভাগ্যে হয়তো এমন ফ্যামিলি তে বিয়ে হওয়া টাই লেখা ছিলো। দোয়া করুন যাতে ছেলের পক্ষ থেকে সমস্ত মতামত আমাদের সাথে মিলে যায়।তাহলে আলহামদুলিল্লাহ। স্বামী ঠিক থাকলে স্ত্রী নির্দ্বিধায় পর্দা করা,ইসলাম এর সমস্ত কিছু মেনে চলতে পারবে।কোনো সমস্যা হবে না।দোয়া করি যাতে সুবর্ণার স্বামীর মতামত গুলো আমাদের মতামত এর সাথে মিলে যায়।

কথা গুলো বলে -ই সাফওয়ান থামে।রাফিয়া সাফওয়ান দুই জন এর মুখে চিন্তার ভাজ।চিন্তা একটা- ই সুবর্ণার হাজবেন্ড এর মতামত না জানি কেমন হয় তা নিয়ে।রাফিয়া সাফওয়ান কে তাড়া দিয়ে বলে,

—আপনি তাড়াতাড়ি যান।গিয়ে ছেলে কে জিজ্ঞেস করুন ছেলের কি মতামত। ওই দিকে সকলে অপেক্ষা করছে।

—জি আচ্ছা।যাচ্ছি।

সাফওয়ান দরজা খুলে বের হওয়ার জন্য।কিছু একটা মনে করে আবার দরজা টা বন্ধ করে দেয়।রাফিয়া ভ্রুলতা কুঁচকে সাফওয়ান এর দিকে তাকিয়ে আছে।ইশারায় যেন প্রশ্ন ছু’ড়ে দিলো, ” কি হলো?দরজা কেন বন্ধ করলেন আবার”? সাফওয়ান রাফিয়ার ইশারা কে উপেক্ষা করে দ্রুত তার সাথে রাফিয়ার সামনে এসে দাঁড়িয়ে রাফিয়া কে জড়িয়ে ধরে বলে,

—আল্লাহর কাছে যতই শুকরিয়া করি ততই যেন কম পড়ে যাবে বলে আমার মনে হয়।তবু ও আল্লাহর কাছে হাজার শুকরিয়া যে আল্লাহ আপনার মতো একজন স্ত্রী নেয়ামত হিসেবে আমাকে দিয়েছেন। আলহামদুলিল্লাহ! আলহামদুলিল্লাহ! আলহামদুলিল্লাহ!

রাফিয়া ছেড়ে সোজা হয়ে দাঁড়ায় সাফওয়ান। রাফিয়ার কপালে আর ডান বাম দুই গালে নিজ এর অধর যুগোল এর উষ্ণ পরশ দিয়ে বলে,

—যদি ও জানি না সুবর্ণার স্বামীর মতামত কি?তবু ও যদি মতামত আমাদের সাথে না মিলে তাই মাথা ঠান্ডা রাখার জন্য এই পদ্ধতি গ্রহণ করলাম।আপনার মতো শান্ত থাকার জন্য আপনার ছোঁয়া লাগিয়ে নিলাম। ইনশাল্লাহ মাথা ঠান্ডা রাখবো। আপনার এখন বর্তমান কাজ হলো আপনার স্বামীর জন্য দোয়া করা যাতে সে সুবর্ণার স্বামীর সামনে ঠান্ডা মাথায় সব কিছু গুছিয়ে বলতে পারে।আর আমার কাজ আমি যাতে আমার স্ত্রীর ছোঁয়া সাথে নিয়ে তার দেওয়া দায়িত্ব যথাযথ ভাবে পালন করতে পারি।আসছি কেমন?

বলেই সাফওয়ান এবার দরজা খুলে বের হয়ে যায়।রাফিয়া মুচকি হেসে দেয় সাফওয়ান এর বলা কথা আর কাজ পুনরায় ভেবে।লোক টার কথা গুলো শুনে মাঝে মাঝে তার বড্ড হাসি পায়।সাফওয়ান এর মতো সে আল্লাহর কাছে যতই শুকরিয়া আদায় করুক না কেন?যেন কম হয়ে যাবে।স্বামী তো হওয়া দরকার সাফওয়ান এর মতো।পৃথিবী গোল্লায় যাক।তবু ও স্ত্রীর পর্দার যাতে কোনো অসুবিধা না হয় সেই দিকে নজর তার অত্যন্ত বেশি।পারি পার্শ্বিক হাজার জনে হাজার কথা বলবে তবু ও স্ত্রী কে ইসলাম এর পথে চলতে বাঁধা না দিয়ে আরো সাহায্য করে।আলহামদুলিল্লাহ সাফওয়ান ও সেই রকম -ই একজন স্বামী।

চলবে ইনশাল্লাহ

আসসালামু আলাইকুম।
ছোট করে দিয়েছি বলবেন না।১২০০+ শব্দ আজকের পর্বে।আরো লেখার ইচ্ছা থাকলে ও লেখতে পারেনি সময়ের অভাবে +বৃষ্টি তে ভিজে মাথা ব্য’থা করছে এখন।আর একটা কথা আপনাদের স্থানে এমন নিয়ম আছে কিনা জানি না।তবে গ্রামে এমন নিয়ম অহরহ চলছে যে,দেবর কিংবা ননদ জামাই নতুন বউ কে কোলে করে গাড়িতে তুলে আবার গাড়ি থেকে নামিয়ে ঘরে নিয়ে যায়।যা নিতান্ত-ই মানুষের বানানো প্রথা আর ইসলাম বিরোধী। তাই আজকের পর্বে এই নিয়ম টার কথা বললাম। ভুল হলে ধরিয়া দিবেন।শুধরে নিবো ইনশাল্লাহ।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here