#বৈধ_দৃষ্টি
#পর্বঃ৩০
#ফাতেমা_জান্নাত
সন্ধ্যা রাত।চার দিকে শুনশান অবস্থা বিরাজ মান।হসপিটাল বরাবর-ই নির্জীব আওয়াজ বিহীন থাকে।হসপিটালে ফেনাইল এর গন্ধ চারদিকে হাওয়ার সাথে যেন ভেসে আসছে।সার্জিকাল ওষুধ এর গন্ধে শরীর গুলিয়ে আসার উপক্রম।এক ঘণ্টা আগে-ই রাফিয়ার অপারেশন শেষ হয়েছে।আলহামদুলিল্লাহ অপারেশন সাকসেসফুল হয়েছে।তবু ও সর্তক থাকতে হবে বলে জানিয়েছে ডাক্তার। রাফিয়া কে কেবিনে শিফট করা হয়েছে।স্যালাইন চলছে।ঘুমাচ্ছে রাফিয়া।
সাফওয়ান আমজাদ সাহেব আর সাবিনা কে বাসায় পাঠিয়ে দিয়েছে।হসপিটালে থাকলে উনারা ও অসুস্থ হয়ে পড়বে।তাই সাফওয়ান তাদের বাসায় পাঠিয়ে দিয়েছে।সাফওয়ান রাফিয়ার কেবিন এর মধ্যে যায়।সাফওয়ান মুগ্ধ দৃষ্টি তে তাকিয়ে থাকে রাফিয়ার দিকে।মেয়ে টা কে এভাবে ও সুন্দর লাগছে বেশ।সাফওয়ান যখন রাফিয়ার দিকে মুগ্ধ দৃষ্টি তে তাকিয়ে ছিলো তখন রাফিয়ার কেবিনে একজন নার্স আসে।
সাফওয়ান কে রাফিয়ার দিকে তাকিয়ে থাকতে দেখে সাফওয়ান এর পাশে এসে দূরত্ব বজায় রেখে দাঁড়িয়ে বলে,
—স্যার ম্যাম তো আপনার থেকে বয়সে বড় তাই না?
হঠাৎ পাশ থেকে কথার আওয়াজ পেতে-ই সাফওয়ান হকচকিয়ে যায়।তবু ও নার্সের দিকে ফিরে তাকায় না।আগের ন্যায় রাফিয়ার তে দৃষ্টি নিবদ্ধ রেখে-ই নার্স এর উদ্দেশ্যে বলে,
—জি।আর কিছু জিজ্ঞেস করবেন না।আপনার সাথে কথা বলে আমি গুনাহ এর ভাগীদার হতে চাই না।আর এসব কথা কোনো প্রয়োজনীয় কথা বলে আমার কাছে মনে হয় না।যে এসব কথার উত্তর দেওয়া টা বাধ্যতা মূলক বা আপনার কোনো প্রকার উপকার আসবে।তাই না বলা টাই ভালো। মাফ করবেন।
সাফওয়ান কথা গুলো থামতে-ই নার্স নিজ এর কাজে লেগে পড়ে।সাফওয়ান যে এভাবে মুখ এর উপর তাকে কথা গুলো বলবে তার ভাবনা তে ও ছিলো না সেটা।তাই নিজ এর কাজে মনোযোগ দেয়।রাফিয়ার স্যালাইন টা শেষ হয়ে গিয়েছে।নতুন আরেক টা লাগিয়ে দিয়ে নার্স বেরিয়ে যায়।আর এই এতক্ষণ নার্স এর উপস্থিতি থাকা সত্ত্বে ও সাফওয়ান এক সেকেন্ড এর জন্য নার্স দিকে তাকায়নি। কেন তাকাবে সে?নার্স এর দিকে তাকানো টা তো তার জন্য বৈধ নয়।অবশ্য-ই সেটা হারাম। আর সে জেনে শুনে একটা হারাম কাজে কি ভাবে নিপতিত হতে পারে?
সাফওয়ান রাফিয়ার পাশে এসে বসে।রাফিয়ার একটা হাত কে টেনে নিজ এর দুই হাত এর মুঠো বন্দি করে।রাফিয়ার হাত এর এই পিঠ ওই পিঠ ঠোঁট এর ছোঁয়া দেয়।রাফিয়ার মুখ এর দিকে কিয়তক্ষণ তাকিয়ে থাকে।হুট করে কিছু একটা ভেবে-ই রাফিয়ার মুখশ্রী তে নিজ এর ওষ্ঠ যুগোল এর উষ্ণ ছোঁয়া দিয়ে আদরে আদরে ভরিয়ে দেয়।ঘুম এর মাঝে ও রাফিয়া মৃদু কেঁপে উঠে।সাফওয়ান এই টা দেখে হেসে দেয়।
মসজিদ থেকে মুয়াজ্জিন এর কণ্ঠে আজান এর সুর কানে ভেসে আসতে-ই সাফওয়ান নড়েচড়ে সোজা হয়ে বসে।নামাজ পড়তে যেতে হবে।তাই সাফওয়ান কপালে আর ওষ্ঠ দ্বয়ে আলতো চুমু দিয়ে-ই মসজিদে এশার নামাজ পড়ার উদ্দেশ্যে বেরিয়ে যায়।
–
এশার নামাজ পড়ে সাফওয়ান সাথে আরো দুই রাকাত নফল নামাজ পড়ে। আল্লাহ তার রাফিয়া কে আলহামদুলিল্লাহ সুস্থ রেখেছো। সাফওয়ান নামাজ পড়ে-ই মসজিদ থেকে বেরিয়ে আসে।ফার্মেসি তে গিয়ে রাফিয়ার সকল ওষুধ কিনে হসপিটাল এর উদ্দেশ্যে পা চালায় আবার।
সাফওয়ান হসপিটাল আসতে আসতে রাত সাড়ে নয় টা বাজে।এসে দেখে রাফিয়া জেগে শুয়ে আছে।সাফওয়ান কেবিন এর দরজা ঠেলে ভিতরে ঢুকতে-ই রাফিয়া মাথা ঘুরিয়ে সাফওয়ান এর দিকে তাকায়।সাফওয়ান রাফিয়ার দিকে তাকিয়ে মুচকি হাসি দেয়।কিন্তু রাফিয়া হাসে না।মুখ টা কেমন শুকিয়ে আছে।সাফওয়ান গিয়ে রাফিয়ার পাশে বসে রাফিয়ার মাথায় হাত ভুলিয়ে বলে,
—খিদে পেয়েছে?
রাফিয়া উপর নিচ মাথা নাড়িয়া বলে,
—হ্যাঁ খুব।
রাফিয়া ছোট্ট ছোট্ট মিহি স্বর এর কথা শুনতে সাফওয়ান এর কাছে বেশ লাগছে।তবু ও এই মুহূর্ত রাফিয়া খিদার কষ্টে তার খারাপ লাগছে।ডাক্তার বলেছে অপারেশন শেষ হওয়ার আট ঘণ্টা কিছু খেতে দেওয়া যাবে না।সাফওয়ান রাফিয়ার মাথায় হাত ভুলিয়ে দিতে দিতে বলে,
—এখন খাওয়া যাবে না রাফিয়া। ডাক্তার বলেছে আট ঘণ্টা কিছু খেতে দেওয়া যাবে না।এখনো তিন ঘণ্টা বাকি আছে।আরেকটু কষ্ট করুন। এর পরে ইনশাল্লাহ আমি আপনাকে খাইয়ে দিবো নিজ হাতে।
রাফিয়ার খারাপ লাগলো। তার খুব বেশি খিদা লেগে ছিলো। মনে হচ্ছে পেটের ভিতর এর ইঁদুর গুলো আন্দো’লন শুরু করে দিয়েছে খাবার দেওয়ার জন্য।তবু ও আরো তিন ঘণ্টা ধৈর্য্য ধরে থাকতে হবে।তাই আর কিছু না বলে চুপ করে যায় রাফিয়া। সাফওয়ান রাফিয়ার দিকে তাকিয়ে স্বগতোক্তি করে বলে,
—আপনি ঘুমানোর চেষ্টা করুন রাফিয়া। জেগে থাকলে বেশি খিদে লাগবে।
রাফিয়া সাফওয়ান এর দিকে অসহায় করুন দৃষ্টি তে তাকিয়ে করুন স্বরে বলে,
—খালি পেটে ঘুম আসছে না তো।
সাফওয়ান কি বলবে ভেবে পাচ্ছে না।এর মধ্যে-ই রাফিয়া সাফওয়ান এর একটা হাত আঁকড়ে ধরে বলে,
—কুরআন তেলাওয়াত করুন আর মাথায় হাত ভুলিয়ে দিন।ইনশাল্লাহ ঘুম এসে যাবে।
সাফওয়ান স্মিত হাসে।রাফিয়া চোখ বন্ধ করে।সাফওয়ান রাফিয়ার মাথায় হাত ভুলিয়ে দিয়ে কুরআন তেলাওয়াত করা শুরু করে।পাচঁ মিনিট পার না হতে-ই রাফিয়া ঘুম এর দেশে পাড়ি জমায় সাফওয়ান হেসে দিয়ে উঠে কেবিন থেকে বেরিয়ে যায়।রাফিয়ার জন্য খাবার আনতে যায়।
🌸🌸
নিশুতি রাত।পরিবেশ টা আগের থেকে ও নিরিবিলি। সাফওয়ান রাফিয়ার জন্য খাবার নিয়ে বসে আছে।আট ঘণ্টা সময় পেরিয়ে গিয়েছে।এখন রাফিয়া কে খাবার খাওয়া নো যাবে।তবে তরল খাবার কিংবা নরমা জাতীয় খাবার খাওয়া তে হবে।এখনো শক্ত পোক্ত খাবার খাওয়ানো যাবে না।এতে সমস্যার সৃষ্টি হবে।তাই সাফওয়ান স্যুফ নিয়ে এসে ছিলো রাফিয়া কে খাওয়ানোর জন্য।কিন্তু রাফিয়ার এখন ঘুম থেকে উঠার নাম গন্ধ নেই।
সাফওয়ান রাফিয়া কে ধরে উঠিয়ে বালিশ এর সাথে হেলান দিয়ে শুইয়ে দেয়।ঘুমে চোখ মেলে তাকাতে পাচ্ছে না রাফিয়া।সাফওয়ান হালকা পানির ছিটা দেয় রাফিয়ার চোখ মুখে।তাতে-ই রাফিয়ার ঘুম উড়ে গিয়ে হাওয়া। চোখ পিট পিট করে তাকায় সাফওয়ান এর দিকে।সাফওয়ান হাসি দেয় রাফিয়ার দিকে তাকিয়ে। রাফিয়ার চোখ মুখ দেখে এই মুহূর্তে বেশ বুঝা যাচ্ছে যে,সে বিরক্ত হয়েছে তার ঘুম ভাঙ্গানো তে।সাফওয়ান রাফিয়ার সামনে বসে স্যুফ এর বাটি নিয়ে।রাফিয়া কে খাইয়ে দিয়ে রাফিয়ার রাতের ওষুধ খাইয়ে দেয়।
রাফিয়া সাফওয়ান এর দিকে তাকিয়ে বলে,
—ঘুম ভাঙ্গালেন কেন আমার?এখন সারা রাতে আর আমার ঘুম আসবে?ঘুমে রেখে-ই খাবার খাইয়ে দিতেন।ছোট বেলা থেকে-ই ঘুমের মধ্যে খাওয়া অভ্যাস আছে আমার।
রাফিয়ার কথা শুনে সাফওয়ান হেসে দেয়।রাফিয়া কে বলে,
—সাইকোলজি বলে যে,ঘুম এর মধ্যে খাওয়া নিষেধ। এতে খাবার সঠিক ভাবে পাকস্থলী তে পৌছায় না।যা ক্ষতি করে মানব দেহে।তাই ঘুমিয়ে ঘুমিয়ে খাওয়া নিষেধ।
—ওহ আচ্ছা। আপনি খেয়েছেন কিছু?নাকি এখনো কিছু খাননি আপনি?
—এখনো খাওয়া হয়নি।আপনি না খেয়ে আছেন এতক্ষণ। আর আমি কিনা খেয়ে নিবো শান্তি তে?
—আমার হিসাব ভিন্ন।এখনি গিয়ে খেয়ে নিন যান।
—পরে খাবো। এখন থাকি আপনার কাছে।
—নাহ।হসপিটালে বোধহয় ক্যান্টিন আছে।আপনি ক্যান্টিন থেকে খাবার নিয়ে এসে আমার সামনে বসে খাবেন।
—আচ্ছা।খাবার নিয়ে আসছি আমি।
বলে-ই সাফওয়ান কেবিন থেকে বেরিয়ে গিয়ে ক্যান্টিনে চলে যায়।খাবার নিয়ে আবার কেবিনে এসে ঠিক রাফিয়ার সামনে বসে।রাফিয়ার দিকে তাকিয়ে হেসে দিয়ে বলে,
—আমি তো জানি রাফিয়া আপনার আমাকে দেখতে খুব ইচ্ছা করছে তাই আপনার সামনে বসে খেতে বলেছেন.।
সাফওয়ান এর এমন কথা শুনে রাফিয়া অবাক নেত্র যুগোল নিয়ে তাকায় সাফওয়ান এর দিকে।তার মাথা তে এসব বিন্দু মাত্র ছিলো না।
সাফওয়ান হেসে দিয়ে খাওয়া শুরু করেছে।রাফিয়া হেসে দিয়ে সাফওয়ান এর দিকে তাকিয়ে বলে,
—শুনছেন। একটা কথা বলার ছিলো জরুরি।
সাফওয়ান খাবার মুখে নিয়ে-ই বলে,
—জি বলুন শুনছি।
—ভালোবাসি।
রাফিয়া কথা টা বলতে-ই সাফওয়ান গলায় খাবার আ’টকে কাশতে থাকে।রাফিয়া হকচকিয়ে গিয়ে বলে,
—কি হলো কাশছেন কেন?আপনি-ই বোধহয় একমাত্র স্বামী যে স্ত্রীর মুখ থেকে ভালোবাসার কথা শুনে হতবিহম্বল হয়ে যায়।
সাফওয়ান পানি পান করে কাশি নিয়ন্ত্রনে এনে বলে,
—হাজার অপেক্ষার স্ত্রীর মুখ থেকে অনাকাঙ্ক্ষিত শব্দ টা শুনলে হতবিহম্বল হয়ে যাওয়া টা-ই কি স্বাভাবিক নয় রাফিয়া? আগে তো আমার অর্ধাঙ্গিনী একবার ও বলতো না।অথচ আজ দুই বার বলেছে।সেই ক্ষেত্রে অতিরিক্ত খুশিতে হতবিহম্বল হয়ে পড়েছি।
সাফওয়ান এর কথায় রাফিয়া মুচকি হাসে মাথা নিচু করে।সাফওয়ান এর এড়ানো না রাফিয়ার ঠোঁট কোলে মিশে থাকা হাসি।সাফওয়ান নিজে ও হেসে দেয়।
চলবে ইনশাল্লাহ
ভুল হলে ধরিয়ে দিবেন।আসসালামু আলাইকুম ওয়া রাহমাতুল্লাহি ওয়া বারাকাতুহু।