বৈধ_দৃষ্টি #সূচনা_পর্ব

0
1369

লাল টুকটুকে বেনারসি শাড়ি পড়ে বাসর ঘরে বসে আছে রাফিয়া।অপেক্ষা করছে সদ্ব্য বিয়ে করা স্বামী নামক দেবর এর জন্য।বাইরে এখনো সবার চি’ৎকার চেঁচামেচি এর আওয়াজ ভেসে আসছে রাফিয়ার কর্ণ কুহুরে।দরজার বাইরে রাফিয়ার সদ্ব্য বিবাহ করা স্বামী নামক দেবর কে তার ছোট ভাই এরা টাকা নেওয়ার জন্য ধরেছে।টাকা না দিলে তারা কোনো মতেই রুমের ভিতরে প্রবেশ করতে দিবে না।এই যেন সবাই পণ করেছে।

রাফিয়া দুরু দুরু মন নিয়ে একবার পুরো ঘরে চোখ ভুলিয়ে নেয়।ঘর এর চার পার্শে ফুলে ফুলে সজ্জিত হয়ে আছে।ঘর এর ভিতর এর প্রতি টা ফুল দানি তে গোলাপ এবং রজনীগন্ধা ফুল রেখে দেওয়া আছে।ঘর এর ফ্লোরে লাল গোলাপ এর পাপড়ি ছড়ানো। ছোট ছোট মোম বাতি ও জ্বালানো আছে ঘর এর চতুর্দিক ঘিরে।তাই লাইট বন্ধ থাকা সত্ত্বেও ঘর টা আলোকিত করে রেখেছে মোমের অগ্নিশিখা।

ঘরের চারদিক দেখে রাফিয়া বিছানার চাদর এর দিকে তাকায়।বিছানায় ঠিক মাঝ খানে লাভ শেইফ এর মাঝে ইংরেজি তে R+S লেখা।রাফিয়া বিছানার এক পাশে বসে থেকে-ই লেখা টার দিকে তাকিয়ে আছে।চোখ জ্বলে উঠেছে তার।অশ্রু ভরে উঠেছে চক্ষু কোটরে।মুহূর্তে- ই অবাধ্য অশ্রু জল কপাল বেয়ে জলপ্রপাত এর ন্যায় গড়িয়ে পড়ে।মনে পড়ে যায় তার প্রথম বিয়ের প্রথম বাসর এর কথা।ঠিক প্রথম বার এর মতো তার এই বার এর বাসর ঘর টা ও সাজিয়েছে। প্রথম বার এর চাইতে ও অধিক বেশি ফুল এবং সুন্দর করেই সাজিয়েছে দ্বিতীয় বার এর বাসর ঘর টা।কিন্তু প্রথম বার এর মতো মন টা প্রফুল্ল হতে পারেনি রাফিয়া এর।মনের কোনো এক জায়গায় সুক্ষ্ম চিনেচিনে ব্য’থা করছে যেন।

হঠাৎ খট করে দরজা খোলার আওয়াজ কানে এসে বা’রি খেতেই রাফিয়া ঘোম টার আড়ালে চোখ মুখ মুছে নেয়।মুখ থেকে মুছে নেয় কান্নার রেশ।মেকি হাসার রেখা টেনে নেয় মুখশ্রী তে।বুঝতে পারে তার দেবর নাহ! এখন তো আর দেবর নয় তার স্বামী।ঘর এর মাঝে এসে দাঁড়িয়েছে।রাফিয়ার সদ্ব্য বিবাহিত স্বামী নামক দেবর এর নাম টা হচ্ছে সাফওয়ান।

সাফওয়ান ঘর এর চার দিকে চোখ ভুলিয়ে নিয়ে বিছানায় বসা তার সদ্ব্য বিবাহিত স্ত্রী নামক বড় ভাবির দিকে তাকায়।একটা তপ্ত নিশ্বাস ত্যাগ করে গলা খাকাড়ি দেয়।ঘোমটা দেওয়া রাফিয়া এর দিকে তাকিয়ে মৃদু স্বরে সালাম দেয়।

—“আসসালামু আলাইকুম “!

—“ওয়ালায়কুম সালাম “!

সাফওয়ান এর সালাম এর উত্তর ও রাফিয়া মৃদু স্বরে নেয়।রাফিয়া ঘামছে।কেন যেন ঘামছে সেটা তার ও অজানা।অস্বাভাবিক ভাবে তার হাত এবং পা এর পাতা ঘেমে যাচ্ছে।এরকম টা তার প্রথম বিয়ের বাসর রাতে হয় নি।রাফিয়া চাইলে ও স্বাভাবিক কিংবা স্থির থাকতে পারছে না।তার মন টা খনে খনে অস্থির হয়ে উঠছে। অজানা ভয়ে মন টা শিটিয়ে যাচ্ছে। কেন এমন হচ্ছে তার- ই অজানা।

এই দিকে সাফওয়ান দোটানা তেই ভুগছে। কি কথা বলবে তার মাথায় আসছে না।যদি মেয়ে টা অন্য কোনো মেয়ে হতো তাহলে হয়তো তাকে এত টা ভাবতে হতো না।কিন্তু যাকে বিয়ে করেছে সে আগে তার বড় ভাইয়ার বিবাহিত স্ত্রী ছিলো। তাকে সে ভাবি বলে সম্বোধন করতো।আর সেই ভাবি যদি হঠাৎ করে তার -ই রুমে তার বিবাহিত স্ত্রী এর রূপে বাসর ঘরে বউ সেজে বসে থাকে।তাহলে তো মাথার মধ্যে ভাবনারা ঝট পাকাবেই।সাফওয়ান তার বড় ভাইয়া “সাইফ” এর কথা মনে আসতেই যেন কোথাও একটা অপরাধ বোধ জেগে উঠেছে।বার বার মনে এসে বাঁধছে সে অজান্তেই কোনো অপরাধ করে ফেলছে না তো?

সাফওয়ান কিছুক্ষণ চুপ থেকে নিজেকে ধাতস্থ করে।ধীরে ধীরে রাফিয়ার উদ্দেশ্যে স্বগতোক্তি করে বলে,

—“ভাইয়ার কথা ভেবে আপনি নিজের মধ্যে অপরাধ বোধ জন্ম দিবেন না।আমি জানি আপনার ও নিজের মধ্যে অপরাধ বোধ জন্ম নিয়েছে।যেখানে আমি ভাই হয়ে আমার নিজের -ই ভাইয়ার কথা ভেবে অপরাধ বোধ কাজ করছে।নিজে কে বড্ড অপরাধী মনে হয়।তারপর ও দিন শেষে আমাদের দুই জন কেই এটা মেনে নিতে হবে যে আল্লাহ যা করে ভালোর জন্য- ই করে।আল্লাহ উত্তম পয়সালা কারী।তিনি যা সিদ্ধান্ত নেন তা বান্দার ভালোর জন্য- ই নেন।

সাফওয়ান এর কথা শুনে রাফিয়ার মনে পড়ে যায় তার প্রথম স্বামী সাইফ এর কথা।না চাইতে ও আবার তার পুরো মনে যেন ঝেকে বসে সাইফ এর কথা।

সাফওয়ান আবার গলা খাকাড়ি দিয়ে রাফিয়া এর মনযোগ ফিরিয়ে আনার চেষ্টা করে নিজের কথার মাঝে।রাফিয়া কে উদ্দেশ্য করে মিহি স্বরে বলে,

—“চলুন দুই রাকাত শুকরিয়া নামাজ পড়ে নিই”।

সাফওয়ান এর কথার পৃষ্ঠে কিছু না বলে ঘোমটা মাথা রেখে- ই বিছানা থেকে নিচে নেমে দাঁড়ায় রাফিয়া।সাফওয়ান এসে দাঁড়ায় রাফিয়া এর সামনে।রাফিয়া মাথা নিচু করে দাঁড়িয়ে আছে সাফওয়ান এর সামনে। সাফওয়ান রাফিয়া কে বলে,

—আমি কি আপনাকে ছুতে পারি?আপনি যদি অনুমতি দেন তবেই আমি আপনাকে স্পর্শ করবো। আপনার অনুমতি ছাড়া আমি আপনাকে স্পর্শ করবো না।

রাফিয়া সাফওয়ান এর কথার প্রত্যুত্তর দেয়,

—জ্বি।আপনি যেহেতু এখন আমার স্বামী। সেহেতু আপনাকে বাধাঁ দেওয়ার কোনো কথায় আসে না।

রাফিয়ার থেকে “হ্যাঁ” সূচক উত্তর পেতেই সাফওয়ান ঠোঁট কোলে হাসির রেখা টানে।আলগোছে রাফিয়ার কপালে হাত দেয়।চোখ বন্ধ করে দোয়া পড়ে।ঘোমটা দিয়ে ঢাকা অবস্থায়- ই কপালে তার অধর ছোঁয়া দেয়।

সাফওয়ান রাফিয়ার ঘোম টা টা তুলে দেয় মুখ থেকে।ঘোমটা তুলে সাফওয়ান রাফিয়ার মুখের দিকে তাকাতেই বিস্ময়ে চোখ বড় বড় করে ফেলে। রাফিয়া চোখ বন্ধ করে আছে।চোখ খুললে হয়তো দেখতে পেতো তার দিকে- ই বিস্মিত নয়নে তাকিয়ে আছে সাফওয়ান।

সাফওয়ান রাফিয়া কে দেখে অবাক হচ্ছে।কারণ রাফিয়া হচ্ছে তার- ই ভার্সিটি তে তার দুই বছর এর সিনিয়র আপু ছিলো।তার বড় ভাই সাইফ এর সাথে রাফিয়া এর বিয়ের সময় ও সাফওয়ান রাফিয়া কে দেখেনি।কারণ রাফিয়া পর্দা করে চলতো। কিন্তু ভার্সিটি তে পড়া শুনায় থাকা কালীন সময়ে -ই একদিন সাফওয়ান ভুল ক্রমে রাফিয়ার মুখ দেখে ফেলেছিলো। আর দেখতে পেয়ে ছিলো ভার্সিটি ক্যান্টিন এ। ক্যান্টিন এর এক পাশে পর্দা টানানো কেবিন এর মধ্যে রাফিয়া এবং তার ফ্রেন্ডরা বসে খাচ্ছিলো।
পর্দার বাইরের কেবিন গুলোর এক পাশে বসে ছিলো সাফওয়ান। সাফওয়ান এর হঠাৎ চোখ যায় পর্দা টানানো কেবিন টার দিকে।

যদিও ভিতরে কে কে আছে সেই সময় সেটা বুঝা যাচ্ছিলো পর্দার কারণে। কিন্তু সেই মুহূর্তে রাফিয়া দের কেবিন এর পর্দা কিছু টা সরিয়ে দিয়ে কেবিন এর মধ্যে প্রবেশ করে আরো একটা মেয়ে।আর সেই মুহূর্তে- ই পর্দা সরে যাওয়ায় রাফিয়া কে দেখতে পায় সাফওয়ান।সাথে সাথেই সাফওয়ান নিজের চোখ সরিয়ে ফেলে।সেই ছিলো লাস্ট দেখা।আর কখনো সাফওয়ান রাফিয়া কে দেখেনি। রাফিয়া কে দেখেনি বলতে রাফিয়ার মুখ দেখেনি।এবং কি সাইফ এর সাথে বিয়ের সময় ও সে জানতো না তার ভার্সিটির তার সিনিয়র আপুর সাথেই তার বড় ভাইয়ের বিয়ে।আর আজ দ্বিতীয় বার এর মতো সাফওয়ান রাফিয়া কে দেখতে পাচ্ছে।রাফিয়ার মুখ টা দেখতে পাচ্ছে এবং মুখ টা স্পর্শ ও করতে পাচ্ছে।তা ও স্বামী এর পরিচয় নিয়ে তাকে স্পর্শ করছে।

সাফওয়ান ঠিক কি বলবে বা কি করবে বুঝে পাচ্ছে না সে।একে তো ছিলো বড় ভাইয়ার বউ, তার বড় ভাবি। এখন তো আবার জানতে পারলো তার সিনিয়র আপু ও ছিলো রাফিয়া। অস্থির তা যেন পুরো দেহ কে বশ করে নিয়েছে। সাফওয়ান রাফিয়া কে ছেড়ে দিয়ে কিছু টা দূরত্ব নিয়ে দাঁড়ায়।কণ্ঠে খাদে নামিয়ে ধরা গলায় ভেঙে ভেঙে বলে,

—“আপনি গিয়ে ফ্রেশ হয়ে চেঞ্জ করে ওযু করে আসুন।তারপর আমি যাবো ওযু করতে”।

রাফিয়া ও কোনো বাক্য ব্যয় না করে ট্রলি ব্যাগ থেকে একটা শাড়ি নিয়ে ওয়াশরুমে চলে যায়।সাফওয়ান সেই দিকে তাকিয়ে এতক্ষণ আটকে রাখা তপ্ত নিশ্বাস টা ত্যাগ করে।মনে মনে কিছু ভাবে।কিয়তক্ষণ সময় গড়াতেই মিনমিনে স্বরে বলে উঠে,

—“আমাকে ক্ষমা করো বড় ভাইয়া “।

চলবে ইনশাল্লাহ

#বৈধ_দৃষ্টি
#সূচনা_পর্ব
#ফাতেমা_জান্নাত (লেখনীতে)

আসসালামু আলাইকুম। কেমন আছেন সবাই? নতুন গল্প নিয়ে আবার ফিরে আসা।কেমন হয়েছে জানাবেন?এবং রেসপন্স করবেন আশা রাখছি।ভুল হলে ক্ষমা না করে ধরিয়ে দিবেন।ইনশাল্লাহ শুধরে নিবো।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here