#যে_বর্ষণে_প্রেমের_ছোঁয়া
#আনিশা_সাবিহা
পর্ব ২
“তোকে বারবার মানা করেছিলাম গিয়ে ঝামেলা বাঁধাস না। তুই কারোর কথা শুনিস না কেন বল তো? আমার তো এখন ভয়ে লোম দাঁড়িয়ে আছে। ওই ছেলেটার বন্ধুরা তোর দিকে কীভাবে তেড়ে আসছিল দেখেছিস?”
হাঁটতে হাঁটতে উত্তেজিত সুরে মোহকে উদ্দেশ্য করে কথাটা বলল তানিয়া। মোহ বিরক্তি ভাব নিয়ে বলে,
“আশ্চর্য! আমি কী করে জানব ওটা সেই লোক না? তুই-ই তো উনাকে দেখিয়ে দিয়েছিলি। আর ভয় পেয়ে কী আর হবে? ঘটনা সেখানেই চুকে গেছে।”
“চুকে গেছে? তুই কী করে সিউর হলি? আমার তো মনে হচ্ছে ব্যাপারটা চুইংগামের মতো বড়ো হয়ে যাবে। যখন তোরা ঝগড়া করছিলি একটা লোককে বলতে শুনেছিলাম কোন যেন মন্ত্রীর ছেলে। নাম কী যেন! ওহ হ্যাঁ মি. সরোয়ার সাহেরের ছেলে। যদি তাই হয় তাহলে ব্যাপারটা অনেকদূর গড়াতে পারে, মোহ! অনেক কিছু ঘটতে পারে।”
মোহের টনক নড়ে এবার। হাঁটার গতি ধীর হয়। বৃষ্টির বেগ বাড়তে লাগে পাল্লা দিয়ে। মোহ বলে,
“আগে থেকে এসব ভেবে ভয় পেয়ে লাভ নেই। তাছাড়া আমি উনাকে সরি বলেছি। বদৌলতে বলেছি থা/প্পড় মে/রে শোধ তুলতে। উনি সেটা করেননি। বাকিটা পরে দেখা যাবে। আমি আর এই বিষয়ে কোনো কথা শুনতে চাইছি না।”
তানিয়া প্রতিত্তোরে জবাব না দিয়ে বিড়বিড় করে কিছু একটা পড়ে নিজের বুকে ফুঁ দিয়ে মোহের চোখেমুখে ফুঁ দিয়ে বলে,
“বৃষ্টি আসবে! আমার বাড়ি কাছেই। চল বাড়িতে।”
মোহ নীরবে চলতে থাকল। তানিয়ার কথার জবাব দিতে ইচ্ছে করছে না এখন। মাথায় ঘুরছে কিছুক্ষণ আগে ঘটে যাওয়া ঘটনাগুলো। আদেও সব ঠিকঠাক মিটে গিয়েছে তো?
ঝুম বৃষ্টি থেমেছে। কিছুটা সময় পর সন্ধ্যা নামবে। আকাশটা এতটাই অন্ধকারাচ্ছন্ন যে সন্ধ্যা লেগেছে যেন এখনি। তানিয়ার বাড়ি থেকে বেরিয়েছে মোহ। তার ইচ্ছে করল কোনো অটো ধরে বাড়িতে যাওয়ার তবে উপায় পেল না। তখন মায়ের সাথে কিছুটা রাগারাগি করে টাকা না নিয়েই বেরিয়েছে সে। সুতরাং, পুরো পথ হেঁটেই যেতে হবে। মাঝরাস্তায় এসে ফের বিপত্তি বাঁধল। বৃষ্টির বেগটা বাড়তে লাগল। সেই সাথে দৃঢ় বেগের বাতাস নিজ ছন্দে বইতে লাগল। জোরে গিয়ে সামনে সেই চায়ের দোকানটাই পেল মোহ। বিড়বিড়িয়ে নিজ মনে বলল,
“কাল ইন্টারভিউ আছে। আজ যদি জ্বর বাঁধিয়ে ফেলি তাহলে কাল যেতেই পারব না। দোকানেই কিছুক্ষণ দাঁড়াই।”
যেই ভাবা সেই কাজ। চায়ের দোকানের ছোটো ছাউনির নিচে দাঁড়িয়ে পড়ল। ঝুঁটি করা কোঁকড়ানো চুল অর্ধেকই ইতিমধ্যে ভিজে গিয়েছে। চুল খুলে এলোমেলো করে ঝাড়তে ব্যস্ত হলো সে।
হাই স্পিডে বাইক চালিয়ে সেই চায়ের দোকানে এসে থামল স্বচ্ছ। সে ভেবেছিল, সবাই হয়ত এখানেই আছে। কিন্তু এখানে কাউকে দেখল না স্বচ্ছ। তার ফোন পানিতে ভিজে বন্ধ হয়ে গিয়েছে। বাড়ি ফেরার কথা মাথায় আনতেই তীব্র বর্ষণের সঙ্গে তখন উৎপাত ঘটল বজ্রপাতের। তড়িঘড়ি করে বাইক থেকে নেমে ছাউনির নিচে দাঁড়াতে গিয়েই বিপত্তি ঘটল। এক নারীজনের সাথে গা ঘেঁষে গেল তার। সঙ্গে সঙ্গে ছিটকে দূরে সরে গেল সেই নারী। আঁখি দুটো কপালে উঠে গেল স্বচ্ছের। সেই দুঃসাহসিক কাজ করা মেয়েটি আবারও তার সামনে। মেয়েটি থতমত খেয়ে বলল,
“আপনি আবার?”
স্বচ্ছ চোয়াল শক্ত করে দূরে সরে দাঁড়াল বৃষ্টির মাঝে। মেয়েটির আশেপাশে থাকারও ইচ্ছে নেই তার। স্বচ্ছ বলল,
“কেন জায়গাটা কি তুমি রেজিস্ট্রি করে নিয়েছ নাকি?”
মোহের বুঝতে দেরি হলো না স্বচ্ছ তাকে ব্যঙ্গ করে কথা বলতে চাইছে। তবে সে উত্তরে নিশ্চুপ রইল। কারণ সে জানে ভুল তার ছিল। আর এই ভুলের পর যেকোনো লোকের রেগে থাকা স্বাভাবিক। মোহ যথাসম্ভব শান্ত থেকে বলল,
“আমি একথা কখন বললাম? আপনি চাইলে আমার পাশে দাঁড়াতে পারেন। অনেক বৃষ্টি হচ্ছে।”
“ওহ আচ্ছা! আমি তোমার পাশে দাঁড়াব তারপর তুমি সেই অপরাধে আমাকে আরেকটা থা/প্পড় মে/রে দেবে। তোমার ইটেনশান কি শুধু আমাকে চ/ড় মা/রা?”
“আরে আশ্চর্য! আমার পাশে দাঁড়ালে আপনাকে কেন থা/প্পড় মা/রতে যাব? তখন ওটা আমার ভুল ছিল। আপনাকে চিনতে ভুল করেছি যেটা আমি স্বীকার করেছি। আপনি ভিজে যাচ্ছেন তাই আপনাকে বললাম দাঁড়াতে। আজকাল মানুষের ভালো করতে নেই দেখছি।”
স্বচ্ছ বিদ্রুপাত্মক হাসি দিয়ে বলল,
“ওহ মাই গড! তুমি দেখি খুবই মহান একজন নারী! জুতো মে/রে গোরু দান করতে বেশ ভালো মতোই জানো।”
মোহ এবার উত্ত্যক্ত হলো। গোল মুখে দেখা দিলো রক্তিম বর্ণের আভা।
“আমি বারবার একটা কথা স্বীকার করেছি যে আমার ভুল হয়েছে। কিন্তু সত্যি বলতে আপনি এতোটাই ঘাড়ত্যাড়া মানুষ যে কথাগুলো ঘুরিয়ে-ফিরিয়ে সেই ভুলের দিকেই নিয়ে চলে যাচ্ছেন। আপনার এখানে দাঁড়াতে হলে দাঁড়ান নয়ত আমার সাথে মুখ লাগাবেন না।”
স্বচ্ছ কিছু বলার আগেই দোকানের ভেতরে থাকা দোকানদার এবার ধমকে উঠল মোহের দিকে।
“এই মাইয়া এই! কারে কী কইতাছ? মনে ভয়ডর নাই? মনে সম্মান শ্রদ্ধা নাই?”
মোহ সোজাসাপ্টা বলল,
“সম্মান-শ্রদ্ধা পাওয়ার জন্য সেই সম্মানজনক কাজ করতে হয় কাকা। নয়ত কখনোই সেই সম্মান অর্জন করা যায় না।”
“তোমার জ্ঞানের কথা তোমার নিজের কাছেই রাখো। আজ যদি তোমার এই বেয়াদবির কারণে কথা উঠে তাহলে সবার আগে আমার দোকান উঠাইয়া দিবে। তুমি যাও তো এখানে থাইকা। এমনি মেলা বড়ো ঝামেলা হইয়া গেছে।”
“কিন্তু কাকা বাহিরে বৃষ্টি…”
দোকানদার ফের ধমক দিয়ে বললেন,
“তুমি যাইবা এখান থাইকা? আমার বিপদ আর বাড়াইয়ো না।”
মোহ কড়া দৃষ্টিপাত করল স্বচ্ছের দিকে। ভেতরটা ক্রোধে ফেটে যাচ্ছে অথচ সে কিছু বলতে পারছে না। মোহ ছাউনি থেকে বের হতেই স্বচ্ছ মৃদু হেসে ছাউনির নিচে গিয়ে দাঁড়াল ভেজা ছিপছিপে গায়ে। প্রবল আত্মবিশ্বাস নিয়ে বলল,
“কার জায়গা কোথায় বুঝতে পেরেছ? তোমার জায়গা ওখানেই। আর আমার জায়গা এখানে।”
মোহ আঙ্গুল উঁচিয়ে কিছু বলার আগেই স্বচ্ছ নিজের তর্জনী আঙ্গুল নিজের ঠোঁটের কাছে ধরে হিসহিসিয়ে বলল,
“হুঁশশ! এই একটা থা/প্পড়ে তুমি আমার সম্মান যতটা হানি করেছ আমাকে যতটা নিচে নামিয়েছ তোমাকেও ঠিক একটু একটু করে তার চেয়ে দশগুন নিচে নামাব মিস. বিছুটি পাতা। তোমার সব রস যদি আমি নিংড়ে না নিয়েছি তবে আমার নাম আহিয়ান স্বচ্ছ নয়। নাউ গো! যত দ্রুত বাড়িতে যাবে তোমার নিজেরই মঙ্গল। নয়ত পুরো শরীর ভিজে যাবে রাস্তার ছেলেরা টিজ করবে তখন আবার কাকে চ/ড় মে/রে বসবে কে জানে! তোমরা কিছু মেয়েরাই তো এমন। দোষ করো তোমরা নিজে আর দোষী বানাও ছেলেদের। তোমরা নিজেদের দেখিয়ে বেড়ালে দোষ নেই কিন্তু ছেলেরা তাকালেই দোষী!”
এবার মোহের মাথা ফেটে যাওয়ার উপক্রম। তার বোধ হলো সে লোকটিকে চ/ড় মে/রে একদম ঠিক কাজ করেছে। এই মুহূর্তে তার বাসনা জাগছে আরো দুই চারটা থা/প্পড় লাগাতে পারলে মন্দ হতো না। তবে সে নিজেকে দমিয়ে বলল,
“ঠিক হয়েছে আপনাকে থা/প্পড় মে/রে। আপনি সেটারই যোগ্য। এতক্ষণ ক্ষমা চাইছিলাম। আর চাইব না। আপনি আরো কয়েকটা থা/প্পড় ডিজার্ব করেন। আমিও দেখব আপনার ক্ষমতা দিয়ে আমাকে কতটুকু নিংড়ে নিতে পারেন।”
আর বিলম্ব করল না মোহ এক সেকেন্ডও। সেই তুমুল বৃষ্টিপাতে হাঁটা শুরু করল রাস্তা ধরে হনহনিয়ে। কিছুটা দূর যাওয়ার পরেই তার পাশ কাটিয়ে ফুল স্পিডে বাইক চলে গেল। এমন গতিতে রাস্তায় জমে থাকা নোংরা পানি গিয়ে পড়ল মোহের গায়ে। আকস্মিক ঘটনায় হতভম্ব হয়ে গেল মোহ। দূরে দৃষ্টিপাত করতেই দেখল বাইকে বসে থাকা সেই অভদ্র পুরুষটাকে। স্বচ্ছ মুচকি ঘাড় বাঁকিয়ে মুচকি হেসে চেয়ে আছে। মোহের বুঝতে দেরি রইল না এটা সেই ছেলেটার করা ইচ্ছাকৃত কাজ। ক্রোধ আর সামলে উঠতে পারল না সে। নিচু হয়ে হাতে ছোটো ইঁটের টুকরো তুলে তেড়ে গিয়ে স্বচ্ছের দিকে ছুঁড়তে গেলেই ফের বাইক স্টার্ট দিয়ে মুহূর্তেই বেশ দূরে চলে গেল লোকটি। মোহের গায়ে কম্পন ধরল ক্ষোভে। কিন্তু সে কিছুই করতে পারল না।
ভেজা কাপড়েই মেঝেতে পা দুলিয়ে বিছানায় শুয়ে আছে স্বচ্ছ চোখ বুঁজে। ভাবনা থেকে একটুর জন্যও সরাতে পারছে না আজকের ঘটনাগুলো। একটা সামান্য মেয়ে তাকে এভাবে অপমান করতে সেটা তার ভাবনাতেও আসেনি। মেজাজটা তার এখনো তুঙ্গে। রিনরিনে কোনো মেয়েলি কণ্ঠস্বরে চোখ মেলে ঘাড় বাঁকিয়ে তাকাল স্বচ্ছ। লাল চকচকে পোশাক পরা হাস্যোজ্জ্বল স্বচ্ছের ছোটো বোন ফারাহ তার পাশে এসে বসেই তাকে ভেজা অবস্থায় দেখে বিস্মিত হয়ে বলে উঠল,
“ভাই! ভেজা গায়ে বিছানায় শুয়ে পড়েছ কেন?”
স্বচ্ছ পাশ ফিরে শুয়ে বলল,
“এমনি, ফারাহ! ভালো লাগছে না।”
“উঁহু! তোমার মন মেজাজ দেখে ভালো ঠেকছে না। দুপুরে খেয়ে তো খুশি মনে সৌমিত্র ভাইয়ের সাথে বেরিয়ে গেলে। হঠাৎ কী হলো?”
“দেখো ফারাহ মাথায় র/ক্ত উঠে আছে। আমি চাই না আমার রাগ তোমার উপর ঝাড়তে। আমার ঘর থেকে বেরিয়ে যাও এখনি।”
ফারাহ মুখ গোমড়া হয়ে এলো। কিছু বলতে চাইল আরো তবে ঘরে তড়িঘড়ি করে হাজির হলো সৌমিত্র। হতভম্ব হয়ে জিজ্ঞাসা করল,
“আরেহ ভাই! তুমি কখন বাড়িতে এলে? তোমাকে কত জায়গায় খুঁজলাম তুমি ওখান থেকে চলে যাওয়ার পর। কল করলাম ফোন বন্ধ! এখন বাড়িতে এসে ভেজা গায়ে রিল্যাক্স করছ?”
স্বচ্ছ এবার উঠে বসল। তার মুখের অঙ্গিভঙ্গি দেখে সৌমিত্র নিকটে এলো।
“এখনো ওই বিষয়টা নিয়ে তুমি ডিপ্রেসড? বাদ দাও না। তাছাড়া মেয়েটা তো সরি বলেছে।”
“ওহ তোকে আমি খু/ন করে সরি বলে দিলে তুই জীবিত হতে পারবি?”
সৌমিত্র একরাশ বিস্ময়ের সাথে বলল,
“ওই মেয়েটা কি তোমাকে খু/ন করেছে? তাছাড়া এই প্রথম তুমি কারোর হাতে থা;প্পড় খেলে ফিলিংস কেমন?”
স্বচ্ছের চোয়াল শক্ত হয়ে এলো। কপালের রগ দপদপ করতে আরম্ভ করল। ফারাহ কৌতূহল দমিয়ে না রাখতে পেরে বলল,
“সৌমিত্র ভাই? কী বলছ? ভাই কোনো মেয়ের হাতে থা;প্পড় খেয়েছে।”
“সে আর বলতে! কেয়া লা জাবাব সিন হে! কিন্তু ভাইয়ের জায়গায় আমি থাকলে গাল এগিয়ে বলতাম আরো কয়েকটা থা;প্পড় দিতে। এমন এংরি বিউটির হাতে চ/ড় খেতে খারাপ লাগার কথা নয়। তাই না ভাই?”
স্বচ্ছের দিকে প্রশ্নটা ছুঁড়তেই স্বচ্ছ তার দিকে ধারালো দৃষ্টিপাত করে বলল,
“তোরা দুজনই আমার ঘর থেকে বের হ। এখনি বের হ।”
“আরে এত রাগছ কেন ভাই? কিন্তু তুমি চ/ড় খেলে কী করে? কেন মা/রল তোমাকে?”
ফারাহ নিজের আগ্রহ দমিয়ে রাখতেই পারছে না। স্বচ্ছ ধৈর্যহারা হয়ে উঠে দাঁড়াতেই সৌমিত্র আর ফারাহ সুড়সুড় করে বেরিয়ে গেল।
সারাদিন পর বাহির থেকে বাড়ি ফিরলেন শহরের একজন ক্ষমতাশালী মন্ত্রী সরোয়ার সাহের। সদর দরজা পেরিয়ে ধীর পায়ে আড়ম্বরপূর্ণ ড্রয়িংরুমে এসেই দেখতে পেলেন নিজের স্ত্রী জেবা সাহেরকে। মিসেস. জেবা সারাদিন পর নিজের স্বামীকে দেখে স্মিত হাসেন। সরোয়ার সাহেব গিয়ে জেবার পাশে বসে একটা সিগারেট ধরাতে ধরাতে বলেন,
“সারাদিন তো বাড়িতেই থাকো। তোমার ছেলে কী করে সেসবের দিকে নজর রাখো?”
বাড়িতে ফিরেই স্বামীর মুখে এমন কথা শুনে হাসি উবে গেল মিসেস. জেবার মুখ থেকে। তিনি জানেন, উনার ছেলেরা খানিকটা অবাধ্য। চিন্তিত হয়ে শুধালেন,
“কী হয়েছে? কী করেছে আমার ছেলেরা?”
“আগে তোমার আদরের ছেলে মি. আহিয়ান স্বচ্ছকে ডাকো।”
সরোয়ার সাহেবের গম্ভীরতা দেখে মিসেস. জেবা বুঝলেন বিষয়টা রুত্বপূর্ণ। তিনি বাড়ির এক সহকর্মীকে ডাক দিলেন স্বচ্ছকে ডেকে আনার জন্য। কিন্তু তার আগেই সিঁড়ি দিয়ে নামতে দেখা গেল স্বচ্ছকে। কানে হেডফোন লাগিয়ে ফোন ঘাঁটতে ঘাঁটতে ব্যস্ত ভঙ্গিতে এদিকেই এগিয়ে আসছে সে। তার চোখে সরোয়ার সাহেব পড়লে সে শুধু বলল,
“হাই বাবা!”
বলেই বসে গেল সরোয়ার সাহেবের বিপরীতে থাকা কাউচটায়। মিসেস. জেবা বলেন,
“স্বচ্ছ! তোমার বাবার তোমার সাথে কিছু কথা বলতে চাইছেন।”
স্বচ্ছের কান অবধি পৌঁছায় না তার মায়ের কথা। কানে হেডফোনে গান বাজছে উচ্চস্বরে। সে মগ্ন নিজের মাঝে। মিসেস. জেবা এবার সরোয়ার সাহেবের দৃঢ় চাহনি দেখে স্বচ্ছের কান থেকে হেডফোন টেনে খুলে দিলেন।
“কী, মা? এমন করছ কেন?”
“আগে তুমি আমায় বলো, কেন আমার মান সম্মান ডুবিয়ে দিচ্ছো?”
মায়ের বদলে বাবার পাল্টা উত্তরে কপাল কুঞ্চিত হলো স্বচ্ছের।
“আমি কী করেছি?”
“কী করেছ জানো না? তোমাদের আমি তোমাদের মতো চলতে দিই। জোর করি না আমার রাজনৈতিক বিষয়টা সামলাতে। চাপ দিই না। কারণ তোমরা আমার চোখে এখনো ছোটো। তাই বলে এতটাও ছোটো না যে নিজের বাবার মানসম্মান কীভাবে বজায় রাখতে হয় সেই সম্পর্কে তোমরা অবগত নয়।”
স্বচ্ছ এবার চটে গিয়ে বলল,
“আমি কী এমন করেছি সেটা বলো! আমি কেন খামখা তোমার মানসম্মান মাটিচাপা দিয়ে দেব?”
সরোয়ার সাহেব এবার জবাবে নিশ্চুপ থেকে সিগারেট বামহাতে নিয়ে ডানহাতে নিজের ফোন বের করলেন। একটা ভিডিও ক্লিপ বের করে স্বচ্ছের সামনে ধরলেন। স্বচ্ছ স্পষ্ট দেখতে পেল তার সজোরে সেই থা/প্পড় খাওয়ার দৃশ্য!
চলবে…
[বি.দ্র. ভুল ত্রুটি ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন। গল্পটি সম্পূর্ণ কাল্পনিক।]