কুড়িয়ে_পাওয়া_ধন #পার্ট_২৬

0
361

#কুড়িয়ে_পাওয়া_ধন
#পার্ট_২৬
জাওয়াদ জামী

আজ কান্তা ভিষণ খুশি। অবশেষে ও আরমানের কাছে আসতে পেরেছে। থেকে থেকেই হাসছে ও।যেটা আরমানের নজর এড়ায়নি।
ও আর খালা মিলে ফ্ল্যাট সাজিয়েছে। আজকে রান্নার ঝামেলা ওকে করতে হয়নি। আরমানের রাঁধুনিই সব রান্না করেছে। তবে কান্তা তাকে বলে দিয়েছে আজকের পর থেকে ও নিজেই রান্না করবে। তবে রাঁধুনি সহায়ক হিসেবে ওর সাথে থাকবে। আরমান চায়না খালা এই বয়সে আর কোন কাজ করুক।
আজকে কান্তার নিজেকে রঙিন প্রজাপতি মনে হচ্ছে। কতদিনের স্বপ্ন ছিল পাহাড় দেখবে। আজ ওর সেই স্বপ্ন পূরণ হয়েছে। ওর বেডরুমের জানালা দিয়ে পাহাড় দেখা যাচ্ছে। এই পাহাড়ের বুকে সে এক জনম অনায়াসেই কাটিয়ে দিতে পারবে। কান্তা জানালার কাঁচ সরিয়ে তাকিয়ে থাকে সারি সারি পাহাড়ের দিকে।এ যেন সবুজের সমারোহ। দেখলেই চোখ জুড়িয়ে যাচ্ছে।

” কি হয়েছে? এত উদাস নয়নে কি দেখছ? ” কান্তার কোমর জড়িয়ে ধরে কাঁধে থুঁতনি রেখেছে আরমান।
হঠাৎই আরমানের এমন কাজে হকচকিয়ে যায় কান্তা। একটু লজ্জাও পায়। মানুষটা দিনদিন বড্ড বেয়ারা হচ্ছে। শুধু ওকে ছোঁয়ার তালে থাকে। তবে আরমানের ছোঁয়া ওর কাছে মন্দ লাগেনা। কান্তা বুঝতে পারে এই ছোঁয়ায় মিশে আছে অনেক আবেগ, ভালোবাসা আর কান্তার প্রতি শ্রদ্ধা। কান্তা আরমানের কথার উত্তর না দিয়ে চুপচাপ অনুভব করতে থাকে প্রিয়জনের সান্নিধ্যে থেকে সদ্য পূর্ণ হওয়া অতীতের অপূর্ণতা।

” কথা বলছনা যে। এতক্ষণতো ঠিকই হাসছিলে। নাকি আমাকে দেখে সব কথা হাওয়া হয়ে গেছে! ”
কান্তা এবারও আরমানের কথার জবাব দেয়না। বরং নিজের শরীর এলিয়ে দেয় আরমানের শরীরে। আরমান কান্তার মনোভাব বুঝতে পেরে ওকে নিজের সাথে শক্ত করে জড়িয়ে নেয়। ওর কামিজের ওপর দিয়েই পেটে হাত রাখে। আরমানের এমন স্পর্শে শিউরে ওঠে কান্তা।

” এই, তুমি শাড়ি পরতে জানোনা? সব সময় এসব কি পরে থাক? জানোনা শাড়িতেই, নারী। ” আরমানের কোমল গলায় যেন নেশা চুঁইয়ে পরছে।

” জানিতো। কিন্তু আমার সুতি শাড়ি নেই। তাই পরতে পারিনা। আপনি বিয়েতে সব জর্জেট, কাতান, বেনারসি শাড়ি দিয়েছিলেন। সেগুলো কি বাসায় পরে থাকা যায়। ”

” আমাকে আগে বলনি কেন? তুমি কালকেই আমার সাথে শপিংয়ে যাবে। পছন্দমত শাড়ি কিনবে। তারপর বাসায় এসব পরে থাকা চলবেনা। ”

” শুধু বাসায়! বাইরে নয় কেন? ”

” আমার বউকে শুধু আমি দেখব। এটা আমার স্বামীগত অধিকার। যেটা আমার সেটা একান্তই আমার। আর আমার জিনিস আমি ঠিক আগলে রাখতে জানি। ” আরমানের ফিসফিসানি কথা শুনে কান্তার ভেতরটা কেঁপে ওঠে। আরমানের নিঃস্বাস ওর উন্মুক্ত গলায় আছড়ে পড়ছে।
হঠাৎই আরমান ওর কানের লতিতে গভীরভাবে চুমু দেয়। কান্তা আর নিজেকে ধরে রাখতে পারেনা। ও আরমানের দিকে ফিরে ঝাঁপিয়ে পড়ে আরমানের বুকে। আরমানও ওকে পরম আবেশে জড়িয়ে ধরে।

” এখন মাত্র সন্ধ্যা। এখনই এভাবে আমাকে পাগল করছ কেন? রাত আরও গভীর হোক, তখন না-হয় পাগল কর। ”

” আপনি এমন অ’স’ভ্য কথা বলছেন কেন! আমার ভিষণ লজ্জা লাগছে। ” আরমানের বুকে মুখ গুঁজে বলে কান্তা।

” লজ্জা পেলে আমার বউকে দেখতে কিন্তু বেশ লাগে। ঠিক যেন রসমালাইয়ের মত। আর রসমালাই আমার পছন্দের মিষ্টি। তাছাড়া সব সময় পছন্দের জিনিসের স্বাদই আলাদা মনে হয়, তাইনা? ”
কান্তা বুঝতে পারে এর সাথে কথা বললেই আরও লজ্জা পেতে হবে। তাই চুপ করে থাকে। আরমানও ওকে জড়িয়ে রেখেছে ভালোবাসার চাদরে।

দেখতে দেখতে অনেকগুলো দিন পার হয়ে গেছে। কান্তা অ্যাডমিশন দিতে আরমানের সাথে ঢাকায় এসেছে। ওরা আরমানের খালার বাসায় উঠেছে। সেখান থেকে পরীক্ষা দিয়ে দুইদিন ঢাকায় থেকে আবার চিটাগং ফিরে। এবার ওদের সাথে শ্রীজা চিটাগং এসেছে।
ওরা বেশ কয়েকদিন আনন্দে কাটায়। সাতদিন পর শ্রীজাকে ঢাকায় দিয়ে আসে আরমান।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগে পড়ার সুযোগ পেয়েছে কান্তা। ওর খুশি যেন বাঁধ ভেঙেছে । একে একে অধরা স্বপ্ন পূরনের সুযোগ আসছে ওর। প্রথমেই ও খরবটা শ্রীজাকে জানায়। শীজাও শুনে খুব খুশি হয়। সে তার বাবাকে জানায়। শহিদ আহমেদ সব শুনে ছেলের বউকে অনেক দোয়া করলেন। তবে আফসোস একটাই, তার ছেলে ও ছেলের বউ আজ তার কাছে নেই। আরমান সেই-যে গেছে, তারপর থেকে আজ পর্যন্ত তার খবর নেয়নি। অবশ্য এসবের জন্য তিনি নিজেকেই দায়ী করেন সব সময়।

খালা আজ কান্তার জন্য অনেক কিছু রান্না করেছে। আরমান সন্ধ্যার পরপরই বাসায় এসেছে। তার দু হাত ভর্তি শপিং ব্যাগ। কান্তার জন্য সে নিজের পছন্দমত শপিং করেছে। অবশ্য খালাও বাদ যায়নি। তার জন্যও কয়েকটা শাড়ি কিনেছে।

কান্তা খালার সাথে কথা বলছে আর হাসছে। কারনে-অকারনে আজ বারবার ও হেসে উঠছে। রাতের খাবার পর ও অনেকক্ষণ খালার সাথে গল্প করে রুমে আসে। রুমে ঢুকেই ওর কপাল কুঁচকে আসে। আরমান ওর দিকে বাঁকা চোখে তাকিয়ে আছে। তার চোখের পলক পড়ছেনা।
কান্তা একটু থতমত খেয়ে যায়। ও এদিক-ওদিক অযথাই হাঁটাহাঁটি করে, এটা-সেটা নাড়তে থাকে। আর সেই ফাঁকে আঁড়চোখে আরমানের দিকে তাকায়। কিন্তু মহাশয়ের কোন হেলদোল নেই। সে একইভাবে কান্তার দিকে তাকিয়ে আছে।

” কি হল! এভাবে কি দেখছেন? এমন ভূতের মত তাকিয়ে আছেন কেন? ”

” তোমাকে দেখছি। আর ভাবছি আজ এত খুশির কারন কি? ”

” কিহ! আপনি বুঝি জানেননা, আমার খুশির কারন! ”

” জানি, আমি সবই জানি। কিন্তু আমি ভাবছি কোন কারনে তুমি বেশি খুশি। ”

” কোন কারনে মানে? আর কি কারন আছে! ”

” সত্যি করে বল, তুমি ঢাবিতে ভর্তির সুযোগ পেয়ে বেশি খুশি? নাকি আজ তোমার বাসররাত এজন্য বেশি খুশি? ” আরমানের চোখেমুখে দুষ্টুমির ছাপ। হাসিতেও তাই।

তার প্রশ্নের উত্তর কি দেবে কান্তা! এই লোক যে মোক্ষম চাল চেলেছে!
আরমান ততক্ষণে কান্তার কাছে এসেছে।

” কি, আমার কথার উত্তর দিলেনা? আমি কিন্তু সত্যিটা জানতে চাই। কোন কারনে তুমি বেশি খুশি? আমি আবার এসব বিষয়ে ভিষণ উদার। বিয়ের রাতে কি বলেছিলাম, তা কিন্তু আমার স্পষ্ট মনে আছে। ”

” আপনি আবারও শুরু করলেন। আমি কিন্তু সত্যিই লজ্জা পাচ্ছি। ” লজ্জায় মিইয়ে যাচ্ছে কান্তা।

” আমিও সত্যি বলেছি। এবার তোমার উত্তরও শুনি। ”

কান্তা নিশ্চুপ। ও বুঝে গেছে আরমান কি চায়। আর এ-ও বুঝে গেছে, মহাশয় সেই কথাটা কান্তার মুখ থেকে শুনতে চায়।

” আজকের দিনে তুমি এই পুরোনো শাড়ি পরে আছ কেন? তোমার জন্য কয়েকটা নতুন শাড়ি আনলাম, কিন্তু তুমি সেগুলো খুলেও দেখনি! সত্যিই কি তুমি আমার সেই কথা ভুলে গেছ? ” আরমান কান্তার কোমর ধরে ওকে কাছে টেনে নেয়।

কান্তা মাথা নাড়িয়ে বোঝায় ও আরমানের কথা ভোলেনি।

আরমান অপলক নয়নে কান্তার দিকে তাকিয়ে আছে। আর দৃষ্টি মেঝেতে নিবদ্ধ। আরমান ওর বাম হাত দিয়ে কান্তার কোমর পেঁচিয়ে নেয়, আর ডান হাত দিয়ে ওর চুল থেকে হেয়ার ব্যান্ড খুলে ছুঁড়ে ফেলে। আলতোভাবে আঙুল চালায় চুলের ভেতর। কান্তা ঠোঁট কামড়ে, চোখ বন্ধ করে রেখেছে। আরমান মৃদু হেসে ওর কপালে চুমু দেয়। চুলের মধ্যে একটু চাপ দিয়ে কান্তার মুখ ওপরে তোলে। কান্তা তখনও ঠোঁট কামড়ে চোখ বন্ধ করে রেখেছে।
আরমান কান্তার চোখেমুখে হালকা করে ফুঁ দেয়। ওর এমন কান্ডে শিউরে ওঠে কান্তা। কিন্তু চোখ খোলেনা।
আরমানও ঠোঁট কামড়ে হেসে এক ঝটকায় কান্তাকে কোলে তুলে নেয়।
কান্তা এবার চমকে উঠে চোখ খোলে।

” কি করছেন আপনি? আমি….. ” কান্তা কথা শেষ করতে পারেনা। ওর ঠোঁটে চুমু দেয় আরমান।

” কোন কথা নয়। আমি আমার কথা রেখেছি। এবার তুমি স্ত্রীর দ্বায়িত্ব পালন কর। ” আরমান কান্তাকে নিয়ে সোজা বিছানায় যায়।

চলবে…

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here