#যে_বর্ষণে_প্রেমের_ছোঁয়া
#আনিশা_সাবিহা
পর্ব ১১
মুখোমুখি বসে আছে মোহ আর স্বচ্ছ। দুজনের মুখে কথা না থাকলেও নিজের লোচন দুটো দ্বারা যেন তারা একে অপরকে ভস্ম করে দেওয়ার প্রচেষ্টা চালাচ্ছে। বেশ কিছুটা সময় অতিবাহিত হবার পরেও যখন স্বচ্ছের মুখ থেকে বিস্ময়াবিষ্ট হওয়ার কারণেও কথা বের হলো না তখনই মোহ হাতের তালু দ্বারা টেবিলে আ;ঘাত করে ঝাঁজালো সুরে বলল,
“আপনি বাসায় বিয়ের প্রস্তাব পাঠিয়েছেন কেন?”
আচমকা মোহের এমন ধারালো কথায় চমকে নড়েচড়ে বসল স্বচ্ছ। পরক্ষণেই নিজেকে সামাল দিয়ে কড়া গলায় জবাবে বলল,
আমার কি দায়ে পড়েছে তোমার বাড়িতে বিয়ের প্রস্তাব পাঠাতে? দুনিয়ায় কি মেয়েদের কম পড়ে গিয়েছে নাকি?”
“তাহলে আপনার ফ্যামিলি আমার মায়ের কাছে কেন এই দাবি করেছে যে আপনি আমাকে ভালোবাসেন? এসব কী? কী করতে চাইছেন আপনি?”
স্বচ্ছ তেলেবেগুনে জ্বলে উঠে বলল,
“এই শোনো আমার মাথা এতটাও খারাপ না যে আমার ফ্যামিলিকে আমি এসব ভুলভাল কথা বলতে যাব। আমি যদি নেশা করে মাতালও হয়ে থাকি তবে তোমাকে ভালোবাসার কথা আমি জীবনেও বলতে যাব না। কারণ এটা সম্পূর্ণ মিথ্যা।”
“তো আপনার পরিবার কি মিথ্যা বলল? বললে কেনই বা বলল! আপনার জন্য আমি ফাঁসাদে পড়ে গেছি।”
“তো আমি কি খুশিতে নাচানাচি শুরু করে দিয়েছি? আমি তো বুঝতেই পারছি না এই ভালোবাসাবাসির কথাটা এলো কোথায় থেকে।”
মোহ এবার প্রচণ্ড অতিষ্ঠ হয়ে জবাবে বলল,
“আমি ওসব কিছু জানি না জানতেও চাই না। আমি আপনার মতো একজন বদমেজাজি, একরোখা, অসৎ বাবার ছেলেকে বিয়ে করতে পারব না। অবশ্য বিয়ে করা তো দূর আপনাকে তো আমার সহ্যই হয় না একটা মুহূর্তও। আপনি জানেন? এই মুহূর্তে অসহ্য লাগছে আপনাকে দেখে আমার।”
স্বচ্ছ সরাসরি একপ্রকার বিদ্রুপ করেই হেসে দিলো মোহের কথায়। চোখ রাঙিয়ে, কপাল ভাঁজ করে এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইল মোহ। স্বচ্ছ এবার ব্যঙ্গ করে বলে ওঠে,
“আমি যেন বসে আছে উনাকে বিয়ে করবার জন্য। শুনে রাখো, পৃথিবীতে যদি মেয়েদের দুর্ভিক্ষও দেখা দেয় তবুও তোমার কাছে এই আহিয়ান স্বচ্ছ কখনো আসবে না। জীবনেও না।”
মোহ উঠে দাঁড়ায় যাওয়ার জন্য। কটমট করে নিজের ব্যাগটা কাঁধে তুলে নেয়। বিড়বিড়িয়ে আপনাআপনি বলতে থাকে,
“জানি না কেন যতই দোয়া করি এই লোকটার সামনাসামনি যেন না হতে হয় ঠিক ততবার এই লোকটার সামনাসামনি হয়ে যাই। আসলে আমার ভাগ্যটাই খারাপ।”
স্বচ্ছ কিছু বলতে চায় মোহের এমন কথায়। মোহের তবে ফোনের রিংটোন স্বচ্ছের কথায় বাঁধ সাধে। মোহ ফোনটা বের করে মায়ের নামটা দেখে বিরক্তির মাত্রা বেড়ে যায়। তখনি ভেবে নেয় কল রিসিভ করে ঠিকমতো ঝেড়ে দিবে প্রথমে। ভাবনা অনুযায়ী সেখানেই কল রিসিভ করে বসল মোহ। তবে মায়ের ওপাশ থেকে কান্নারত সুর সবকিছু পাল্টে দিলো। মোহের চোখমুখের কড়া ভাব কেটে গেল। শিউরে উঠল গায়ের লোম। অস্থিরচিত্তে মিসেস. সুফিয়াকে শুধাল,
“মা! কী হয়েছে? কাঁদছ কেন?”
মিসেস. সুফিয়া কাঁদতে কাঁদতে কম্পান্বিত গলায় শুধু একটি শব্দই উচ্চারণ করতে পারলেন।
ইথান…”
ইথানের নামটা শুনে বুকের ভেতরটা জ্বলে উঠল মোহের। নিজেকে সামলাতে না পেরে খানিকটা চিল্লিয়ে বলল,
“কী হয়েছে ইথানের? বলো মা! আমার ইথান ঠিক আছে?”
“আমি রান্না করছিলাম। দরজা খোলা থাকায় ছাঁদে চলে গিয়েছিল। সিঁড়িতে দৌড়াদৌড়ি করতে গিয়ে পড়ে গিয়েছে সিঁড়ি থেকে গড়িয়ে। কপাল ফে/টে গেছে। র/ক্ত বেরিয়েই যাচ্ছে। থামার নাম নিচ্ছে না। তোর বাবাও বাড়িতে নেই। সম্ভবত স্কুলে ক্লাসে আছে তাই ফোনটা বন্ধ। আমি কী করব বুঝতে পারছি না। বাহিরে বৃষ্টিও শুরু হয়েছে।”,
ইথানের এই বিপত্তি শুনে যেন শ্বাস নেওয়া বন্ধ হয়ে গেল মোহের। কষ্ট হলো প্রশ্বাস ফেলতে। অনেক কষ্ট দৃঢ় প্রশ্বাস ফেলে চাপা উত্তেজনা নিয়ে বলল,
“আমি আসছি। এখনি আসছি।”
কল কেটে মোহ তড়িঘড়ি করে বের হতে গিয়ে টেবিলের সঙ্গে পায়ে লেগে উপুড় হয়ে পড়তে নিলে তাকে ধরতে উদ্যত হয় স্বচ্ছ। পরমুহূর্তেই মোহ নিজেকে সামলে নিয়ে এলোমেলো ভঙ্গিমায় ছুটে যায় বাহিরের দিকে।
মোহের অদ্ভুত, ফ্যাকাসে, আতঙ্কে ভরপুর মুখশ্রী স্বচ্ছকে অযথাই উদগ্রীব করে তুলল। কিছুটা সময় বসে থেকে নিজেকে শান্ত না করতে পেরে বিচলিত হয়ে সেও উঠে এলো নিজের কফি খাওয়ার বিল মিটিয়ে।
স্বচ্ছ বাহিরে এসে ভেবেছিল মোহের দেখা পাবে না। তবে তার ভাবনা ভুল প্রমাণিত করল মোহ। মেয়েটা দাঁড়িয়ে আছে। চোখেমুখে টানটান উত্তেজনা। স্বচ্ছ চোখ সরিয়ে মোহের থেকে খানিকটা দূরত্বে দাঁড়িয়ে রইল। মোহ পাগলের মতো রিকশা, অটোকে ডেকে চলেছে। এই বৃষ্টিতে বেশিরভাগ গাড়ি নাকচ করে দিচ্ছে। নয়ত যাত্রী রয়েছে গাড়িতে। তার এত তাড়া দেখে স্বচ্ছ না চাইতেও খানিকটা ব্যাকুল হলো। মোহ এবার খালি অটো পেল। তবে মোহের এত তাড়াহুড়ো দেখল অটোর চালক ঠিকই অতিরিক্ত দাম চেয়ে বসলেন।
“হ যামু। কিন্তু আমারে আড়াইশ টেহা দেওয়া লাগবে। তাইলে যামু।”
মোহ আশ্চর্য হয়ে গেল।
“এত কেন মামা? অন্যসময় তো দেড়শ হলেই যাওয়া যায়।”
“এখন যাওন যাইব না। বৃষ্টি দেখতাছ না? বৃষ্টির সময় ভাড়া বেশি হইবই তো। তার উপর রাস্তা খারাপ। না গেলে যাইয়ো না। এখন অনেক প্যাসেঞ্জার বেশি ভাড়া দিয়া যাওনের জন্য দাঁড়াইয়া আছে।”
মোহ বিপাকে পড়ে গেল। গলা ধরে আসছে তার। অটো চালকের ওপর রাগ হলেও প্রকাশ করতে পারছে না। সে অনুনয়ের সঙ্গে বলল,
“মামা! আমার যাওয়াটা খুবই জরুরি। আমার কাছে একশ আশি টাকা আছে। আমি কি আপনাকে বাড়িতে পৌঁছে বাকি টাকা দিতে পারি?”
অটো চালক ব্যঙ্গ করে হেসে বলল,
“না, না। এসব ধান্ধাবাজি আমার সাথে চলবে না মামনি। টেহা দিবা কইয়া গায়েব হইয়া যাইবা! এসব হইব না।”
মোহ আরো কিছু বলতে চাইল। তবে তার আগেই অটো চালক চলে গেল। নিজের চুল টেনে ধরে বিষণ্ণ মনে স্থির হয়ে রইল মোহ। পুরোটাই পর্যবেক্ষণ করল স্বচ্ছ। আঁড়চোখে মোহের পানে চাইতেই খেয়াল করল মোহ দুহাত দিয়ে পুরো মুখ ঢেকে দাঁড়িয়ে রয়েছে। নিজের মনের ভেতরকার হাজারও বাকবিতন্ডা কাটিয়ে স্বচ্ছ মোহের নিকটে এলো। গম্ভীর গলায় বলল,
“তুমি চাইলে আমি তোমাকে বাড়িতে পৌঁছে দিতে পারি!”
মুখ থেকে তৎক্ষনাৎ দুহাত সরিয়ে নিলো মোহ। মেয়েটির চোখের নিচ ভেজা। কে কাঁদছিল। তার চোখের পাতায় পানি লেগে রয়েছে। ভাঙা গলায় মোহ তবুও তেজ দেখিয়ে বলল,
“কোনো দরকার নেই।”
“বিপদে পড়েছ তুমি। সাহায্য করতে চাইছি। তবুও নিজের তেজ বজায় রাখা জরুরি? তোমার ফোনে কথা বলা শুনে মনে হলো বাড়িতে তোমার কারোর কিছু হয়েছে। এজন্য হেল্প করতে চাইলাম। বাট ইটস ওকে। যেতে না চাইলে আমারও এত দায়ে পড়েনি।”
স্বচ্ছ পুনরায় অন্যপাশে গিয়ে দাঁড়াল। মোহের তেজী উত্তরে মেজাজ চড়ে গিয়েছে তার। সে বিড়বিড়িয়ে বলল,
“ভাঙবে তবু মচকাবে না। এমন মেয়ে জীবনে প্রথমবার দেখলাম। আমার ভুল হয়েছে। ম্যাডামকে সাহায্য করার জন্য গিয়েছিলাম।”
মোহের পায়ের পাতা স্থির থাকতে চাইছে না। মন চাইছে ছুটেই তার আদরের ইথানের কাছে চলে যেতে। কিন্তু কতক্ষণ ছুটবে? এখান থেকে বহুদূর বাড়ি! সে স্বচ্ছের দিকে আঁড়চোখে তাকাল। তীব্র বাতাসে বাঁকা হয়ে পড়ছে বৃষ্টি। বৃষ্টি ঝিরিঝিরি হয়ে মোহ আর স্বচ্ছ উভয়ের গা ভিজাচ্ছে। মোহ আর স্বচ্ছ ছাড়াও সেখানে বেশ কিছু লোক উপস্থিত রয়েছে। তারাও অপেক্ষা করছে বর্ষণ থামার। একটা সময় মোহের জেদ হার মানল নিজের অস্থিরতার কাছে। সকল গুমর ভেঙে স্বচ্ছের কাছে গটগটিয়ে গিয়ে মিনমিন করে বলল,
“আমি যেতে রাজি আছি!”
পকেটে হাত গুঁজে ভূতলে বৃষ্টির একেকটা ফোঁটা পড়ার ছন্দ আপনমনে উপভোগ করছিল স্বচ্ছ। মোহের কথায় কিছুটা চকিতে তাকাল সে। বলল,
“কোথায় যেতে রাজি আছো?”
মোহ বিব্রতবোধ করে বলে ওঠে,
“আপনি যে আমাকে পৌঁছে দিতে চাইলেন বাড়ি অবধি!”
“কিন্তু আমার মন এখন পাল্টে গিয়েছে। তোমায় সাহায্য করতে আর মন চাইছে না।”
স্বচ্ছের স্পষ্ট কথায় বেশ অপমানিত বোধ করল মোহ। সেই সঙ্গে প্রচণ্ড রাগে কেঁপে উঠল সর্বাঙ্গ। তবে ভুলে গেলে চলবে না ভুলটা তার নিজের। কারণ সে-ই প্রথমে স্বচ্ছকে ফিরিয়ে দিয়েছে। তাই মোহ একরাশ হতাশা নিয়ে অন্যপাশ ঘুরে যেতেই স্বচ্ছ ভারী গলায় বলল,
“এইযে মিস. বিছুটি পাতা! এখানেই দাঁড়াও। আমি বাইক নিয়ে আসছি।”
না চাইতেও মোহের সিক্ত মুখখানিতে খুশিতে ঝলমল করে উঠল। স্বচ্ছ ফের বলল,
“যেতে যেতে গা ভিজে যাবে কিন্তু। আমি আজকে গাড়ি আনিনি।
মোহ ফট করে জবাবে বলে,
“সমস্যা নেই। আমি শুধু ইথানের কাছে পৌঁছাতে চাই। আমার বাড়ি যেতে চাই।”
স্বচ্ছ মোহের উত্তর শুনে দ্রুত নিজের বৃষ্টিতে ভিজে যাওয়া বাইকটি মোহের সামনে এনে দাঁড় করাল।
“নাও উঠে পড়ো।”
স্বচ্ছের সঙ্গে যেতে রাজি হলেও মোহের বুক এখন ধড়ফড় করছে। কেননা তার সঙ্গে যেতে হলে তার একদম নিকটে বসতে হবে। এমন অস্বস্তিকর পরিস্থিতি যেন আর দুটো নেই। পা যেন বাড়াতেই মন চাইছে না। স্বচ্ছ তৎক্ষনাৎ তাড়া দিলো,
“এই মেয়ে! তাড়াতাড়ি ওঠো।”
ঢক গিলে স্বচ্ছের বাইকের পেছনে উঠে বসল মোহ। সঙ্গে সঙ্গে লেগে গেল স্বচ্ছের চপচপে ভিজে পিঠের সঙ্গে মোহের ডান বাহুর সংঘর্ষ। কেঁপে উঠে একটু দূরে সরে বসল মোহ। স্বচ্ছ বাইক স্টার্ট দিয়ে বলল,
“এটা বাইক ম্যাডাম। বাস না। যে এত জায়গা থাকবে আর চাইলেই আপনি একশ হাত দূরে বসতে পারবেন। আমায় ধরে বসলে ভালো হয়। ফুল স্পিডে চালাব তো! মাঝরাস্তায় পড়ে টড়ে গেলে আমার দোষ নেই।”
মোহ এবার খানিকটা সরে এলো স্বচ্ছের কাছে। স্বচ্ছকে না ধরে বাইকের পেছনের হ্যান্ডেল ধরল সে। নিচু সুরে বলল,
“সমস্যা নেই। আপনি চলুন।”
স্বচ্ছের বাইক চলতে শুরু করল। বাইকের গতি বাড়তে থাকল সেই সঙ্গে বর্ষণের গতিও। যেন এই সাপ নেউলকে একসঙ্গে দেখে প্রকৃতি বেশিই জেগে উঠেছে। শুরু করে দিয়েছে আকাশের বজ্রপাত। সেই খোলা আকাশের নিচে এই বজ্রপাত শুনে মাঝে মাঝে ভয়ে কম্পন ধরছে মোহের শরীরে। বাইকের হ্যান্ডেল ধরে সুবিধা করতে পারছে না। স্বচ্ছের বাইকের গতি আরো বাড়ল। আচমকা এমনটা হওয়ায় মোহের একহাত আপনাআপনি জোরেশোরে স্বচ্ছের পেটের শার্টের অংশ খামচে ধরতে বাধ্য হলো। আকাশে বজ্রপাত, প্রকৃতিকে ভেজানো বর্ষণ এবং খোলা সেই আসমানের নিচে বাইকে ভিজতে থাকা একজন পুরুষ এবং একজন রমনী! নিজ থেকে নিজের চির শত্রুর কাতারে ফেলা পুরুষটিকে রমনী নিজে ছুঁয়ে ফেলে হতভম্ব হলো। সেই সঙ্গে ভেতরটা শীতল হয়ে এলো তার।
স্বচ্ছ অনেকটা সময় বাইক নিয়ন্ত্রণ করতে মনোযোগী থাকতে থাকতে আচমকা বলল,
“মঞ্জুলিকার মতো চুল নয় শুধু তোমার। আচরণটাও মঞ্জুলিকার মতোই করছ। শুধু শার্ট যেভাবে চেপে ধরেছ যদি ছিঁড়ে যায় নিজেই উল্টো হয়ে পড়ে যাবে। একহাত আমার কাঁধে রাখো। এখনো আমি ফুল স্পিড তুলিনি।”
মোহ কথা না বাড়িয়ে বাধ্য মেয়ের মতো এবার আস্তে করে স্বচ্ছের কাঁধে হাত রাখে। মোহ হঠাৎ জিজ্ঞাসা করে,
“আচ্ছা! আপনার আর আমার সম্পর্ক শুরু থেকেই ভালো নয়। তবুও আপনি আমার সাহায্য করলেন কী মনে করে?”
“আমি সাহায্য কিছু মনে করেই করিনা। তোমায় দেখে মনে হলো তুমি খুবই বিপদে আছো। তাই এইটুকু সময় আমাদের সেই খারাপ সম্পর্কের কথা একপাশে রেখে দিয়েছি। তোমায় সাহায্য করা শেষ হলে ঠিকই আবার আগের মতো হয়ে যাব।”
স্বচ্ছের এমন উদ্ভট কথায় এত চিন্তার মাঝেও কেন যেন হাসি এসে যায় তার উপর মোহের। কী অদ্ভুত কথাবার্তা! একজনের প্রতি রাগ থাকলে বুঝি সেটা সাময়িক সময়ের জন্য পাশে রেখে দেওয়া যায়?
স্বচ্ছ ফের কৌতূহলবশত প্রশ্ন করে ফেলল,
“আচ্ছা! হঠাৎ তুমি এতটা ভয় পেলে রেস্টুরেন্টেই সেটা আমি খেয়াল করলাম। বাড়িতে কোনো সমস্যা হয়েছে তোমার? কারোর কোনো বিপদ হয়েছে? ফোনে মনে হয় ইথান না কারোর নাম বললে! এই বিষয়ে আর কোনো সাহায্য লাগলে বলতে পারো।”
“আমার ইথান খেলতে খেলতে সিঁড়ি থেকে পড়ে গিয়েছে। এই বৃষ্টিতে মা একা কী করবে বুঝে উঠতে পারছে না। আমার এই চিন্তা হচ্ছে যে অতিরিক্ত ব্লি/ডিং না হয়ে যায়!”
“ইথানকে খুব ভালোবাসো? তোমায় বোন বা ভাইয়ের ছেলে হয় নাকি? সেদিন একটা পিচ্চি ছেলে বাচ্চাকে দেখেছিলাম সে ইথান আই থিংক?”
“হু। তবে সে আমার বোন বা ভাইয়ের ছেলে নয়। আমারই ছেলে।”
স্বচ্ছ হঠাৎই বাইকের নিয়ন্ত্রণ হারায়। পরক্ষণেই নিজেকে সামলে তীব্র উদ্বেগ নিয়ে শুধায়,
“তুমি বিবাহিত?”
‘কেন? বিবাহিত না হলে বুঝি সন্তান থাকতে পারে না?”
মোহের পাল্টা প্রশ্ন শুনে অপ্রস্তুত হয়ে পড়ে স্বচ্ছ। মুখে আর কোনো কথা আসে না। অদ্ভুত তিক্ততা ঘিরে ধরে থাকে। এই তিক্ততার সূচনা কীসে বা কীভাবে হলো সে নিজেও জানে না!
চলবে…
[বি.দ্র. ভুল ত্রুটি ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন। গল্পটি সম্পূর্ণ কাল্পনিক।]