#গভীর_গোপন #৬ষ্ঠ_পর্ব #অনন্য_শফিক

0
203

#গভীর_গোপন
#৬ষ্ঠ_পর্ব
#অনন্য_শফিক



সে রাতেই দেখা গেল মেয়েকে কোলে নিয়ে ব্যাগ পত্র গোছগাছ করে জেবা বাসা থেকে বেরিয়ে পড়তে চায়ছে।ও সবকিছুই শুনেছে।আমি এটাই চেয়েছিলাম। সে শুনুক।শুনে যদি ওর সামান্যতমো লজ্জাবোধ থেকে থাকে তবে আমার বাসা থেকে বেরিয়ে যাক। আমার পথ থেকে দূরে সরুক।
কিন্তু ওকে যেতে দিলো না আশফাক।
আশফাক গিয়ে ওর পথ আগলে দাঁড়ালো।ধমক দিয়ে বললো,’ পাগলামি করছিস কেন? কি হয়েছে? এই রাতের বেলা কোথায় গিয়ে উঠবি?’
জেবা কাঁদতে কাঁদতে বললো,’ এসব তোদের ভেবে লাভ নাই।পারলে গাড়ির নিচে চা*পা পড়ে মা মেয়ে একসাথে ম*রবো গিয়ে। তবুও আর তোর বাসায় এক দন্ড থাকবো না আমি।তোর বউ ইশারা- ইঙ্গিতে আমায় নিয়ে যা যা বলেছে আমি সব শুনেছি।বুঝেছি। এইসব করার ইচ্ছে থাকলে তোর বাসায় এসে তোর বউকে দেখিয়ে দেখিয়ে করতাম না কখনোই।আড়ালেই করতাম। ‘
আশফাক বললো,’ বাদ দে তো। ভুল বোঝাবুঝি হয়েছে এখানে।এটা নিয়ে রাগ দেখানোই তো বোকামি।’
জেবা রাগে আগুন হয়ে উঠে বললো,’ভুল বোঝাবুঝি কিসের আবার? সব দোষ তোর।কেউ আমায় জায়গা দেয়নি। নিজের বাপ- ভাইও পর্যন্ত বলেছে আমার মুখ কোনদিন দেখবে না তারা।তুই কেন আমার প্রতি দরদ দেখালি? কেন জায়গা দিলি? তোর বউ তো এরকম ভাববেই!’
জেবা কাঁদছে।টুকি মায়ের গলা জড়িয়ে ধরে আছে। সে বুঝতে পারছে না তার মা কেন এভাবে কাঁদছে! মার কান্না দেখলে সন্তানের কষ্ট হয়।টুকিরও হয়তো কষ্ট হচ্ছে।
জেবা জোর করেই বেরিয়ে পড়তে চায়ছে। আশফাক ওর কাছ থেকে টুকিকে টেনে নিজের কাছে নিয়ে নিলো। তারপর বললো,’ পাগলামি করিস না তুই! তুলি বুঝতে পারেনি। আমার দোষ আছে এখানে। বলতে পারিস সবটা দোষ আমার। তোর মেয়ে ডালিম চেয়েছিল। তখন ডালিম দিতে পারিনি। ওখানে ডালিম ছিল না।আমি অন্য জায়গা থেকে ডালিম সংগ্রহ করে এনেছি। কিন্তু তুলির সামনে পড়ে গিয়ে ভয় পেয়ে যাই।ভাবি,ওর কাছে যদি বলি ডালিম টুকির জন্য এনেছি তখন যদি ও কিছু মনে করে! যদি সন্দেহ করে!’
জেবা বললো,’ তোদের সন্দেহ নিয়ে তোরা বসে থাক।আমায় যেতে দে। আমাদের মা মেয়েকে এসবের মধ্যে টানাটানি করার দরকার নেই।’
আশফাক বললো,’ তুলির হয়ে আমি সরি বলছি ‌। ভুল হয়েছে ওর। তুই এটা মনে ধরে রাখিস না প্লিজ!’
আমি এতোক্ষণ শুয়ে থেকেই এসব নাটক দেখছিলাম। শুনছিলাম।আশফাকের শেষ কথাটা শুনে মেজাজ খারাপ হয়ে গেল।কোন রকমে উঠে ওদের কাছে এসে বললাম,’ আশফাক,কার ভুল হয়েছে বললে?’
আশফাক বললো,’ তোমার। তুমি এটা ঠিক করোনি?’
আমি অবাক হবার মতো করে বললাম,’ আমি কোথায় ভুল করলাম? তাছাড়া জেবা যে বার বার বলছে আমি তাকে নিয়ে কথা বলেছি। তাকে অপবাদ দিয়েছি।কই? একবারের জন্যও তো তাকে উদ্দেশ্য করে কিছু বলিনি।বলেছি কি? ‘
আশফাক চুপ করে আছে।জেবাও।কি বলবে আসলে? বলার মতো তো উত্তর এদের কাছে নাই। আসলেই তো ওদের সরাসরি উদ্দেশ্য করে কিংবা ওদের নাম ধরে আমি কিচ্ছু বলিনি।ওরাই আগ বাড়িয়ে নিজেদের গায়ে দোষ চাপিয়ে নিয়েছে। কথায় আছে না,চোরের মন সব সময় পুলিশ পুলিশ করে!
আমি বললাম,’ এখন দু’জনেই চুপসে গেলে কেন এভাবে? চুপ হয়ে গেলে কেন? ‘
আশফাক কিছু বলছে না। জেবা কিছু বলার জন্য মুখ খুলেছে।আমি তাকে কিছু বলার সুযোগ না দিয়ে জেবাকে বললাম,’ জেবা, তুমি মোটেও লোক সুবিধার না। তোমার ভেতর আসলেই ঝামেলা আছে। তুমি নিজেকে যতোটা সৎ দেখাতে চায়ছো ততোটা সৎ তুমি না জেবা!’
জেবা চোখ বড় বড় করে আমার দিকে তাকালো।ওর কপালে ঘাম জমতে শুরু করেছে। কিন্তু কিচ্ছু জিজ্ঞেস করতে সাহস পাচ্ছে না।
আমিই বললাম। বললাম,’ তুমি আমার চায়ের কাপে কিসের পাউডার মেশাতে বল তো?’
জেবা মনে হয় নিজের কানকেও বিশ্বাস করতে পারছে না। ও কিছু বলবার আগেই আশফাক বলে উঠলো,’ তুলি, তুমি কি পাগল টাগল হয়ে গেলে নাকি? একটা অসহায় মেয়ে এসে আমার বাড়িতে উঠেছে।জেবা আমার বোন। বোনের মতো।আর ওকে তুমি সহ্য করতে পারছো না বলে মিথ্যে অপবাদ দিয়ে, ষড়যন্ত্র করে ওকে এখান থেকে বের করে দিতে চায়ছো! ছিঃ তুলি! তুমি এরকম ছোট মন মানসিকতার মেয়ে!’
আমি হাসলাম। হেসে বললাম,’ আর তুমি মহান দরদী।এতোই দরদী যে নিজের স্ত্রীকে ঘুম পাড়িয়ে রেখে —
কথা শেষ করার আগেই আমার সামনে এসে দাঁড়ালো আশফাক।টুকিকে ওর কোল থেকে নামিয়ে রেখে চোখ পাকিয়ে রাগী গলায় বললো,’ কি বললি তুই? ঘুম পাড়িয়ে রেখে আমি জেবার ঘরে যেতাম? তোর জিহ্বা আসলেই অনেক লম্বা হয়ে গেছে। তুই ইদানিং বেশিই বাড়াবাড়ি শুরু করেছিস। নিজেকে বাড়ির মালিক ভাবা শুরু করেছিস। তোকে আগে জানতে হবে এই বাড়ির মালিক আমি। শুধু আমি।আমি একা।আর তুই এই বাড়ির বউ। বউ মানুষ, চুপচাপ থাকবি।বউয়ের মতো থাকবি।কম বুঝবি।আমি বাড়িতে কাকে জায়গা দিবো, আর কাকে বাড়ি থেকে ঘাড় ধরে বের করে দিবো তা আমার একান্ত পার্সোনাল ম্যাটার। এইসবের ভেতর তুই নাক গলাতে আসবি না কোনদিন।ভাত কাপড় তোকে দেই আমি।তুই দিস না আমায়। কথাটা মাথায় রাখবি সব সময়!’
জেবার মুখের তালা এবার খুলেছে। সে এখন হড়বড়িয়ে কথা বলছে।বলছে,’ আমি অবাক হচ্ছি আশফাক। তুই এই রকম ইম্যেচিয়ুরড একটা মেয়ে নিয়ে ঘর সংসার কিভাবে করছিস ভাই? এই মেয়ের ভেতরতো সন্দেহের পোকা ভর্তি। এই জন্যই মানুষ বলে, ক্লাস মেইনটেইন করে বিয়ে করতে হয়। আন্টি তোকে গ্রামের সাদামাটা মেয়ে দেখে বিয়ে করালেন। মেয়ে তোর কথা মেনে চলবে। মুখের উপর তর্ক ধরবে না। এখন মজা বোঝ! ‘
আমার আর সহ্য হলো না।আমি গলার আওয়াজ বড় করেই বললাম,’ জেবা, অন্তত তুমি আমাকে নীতি নৈতিকতা শিখাইতে আইসো না ভাই! অতোটাই যদি ভালো মানুষ হতে, তবে সংসার করে খেতে।আজ এই অবস্থা তোমার হতো না। তাছাড়া ভিডিও প্রসঙ্গটা এখানে না-ই টানলাম। ‘
আশফাক ধমক দিয়ে বললো,’ কি বললি তুই ওকে? কি বললি?’
আমি বললাম,’ যা সত্যি তাই বলেছি। আমার তো মনে হচ্ছে শুধু ভিডিও ভা*ইরাল হয়েছে বলে ওকে ওর হাসব্যান্ড ছেড়ে দিয়েছে বিষয়টা শুধুমাত্র এইটুকু না। আমার মনে হচ্ছে, বিয়ের পরেও এই মেয়ে অনেক কিছু করেছে। অনেক কিছু!’
আশফাক রাগে কিড়মিড় করে বললো,’ তোর ভাগ্য ভালো যে তুই প্রেগন্যান্ট।তোর পেটে আমার বাচ্চাটা। নয়তো আজ উচিৎ শিক্ষা দিয়ে ছাড়তাম তোকে!’
আমি ওর আরো কাছে গেলাম। গিয়ে ওর দিকে মুখ বাড়িয়ে বললাম,’ কিরকম শিক্ষা দিতে? রাতে ঘুম পাড়িয়ে কিভাবে অন্য বিছানায় যাওয়া যায় এই শিক্ষা?’
আশফাক জীবনে প্রথমবারের মতো আমার গায়ে হাত তুললো। শক্ত একটা চ*ড় আমার গালে ব*সিয়ে দিয়ে বললো ,’ চুপ। একদম চুপ হয়ে যা বলছি। বাড়াবাড়ি করিস না খবরদার!’
আমি বললাম,’ বাড়াবাড়ি করলে কি করবে তুমি?’
আশফাক বললো,’ গলা টি*পে মেরে ফেলবো হা*রামজাদি।’
আমি স্তব্ধ হয়ে গেলাম শুনে। তারপর ধারালো গলায় বললাম,’ আমি কি পুলিশে ইনফর্ম করবো? বলবো তুমি আমায় হুমকি দিচ্ছো খু*ন করে ফেলার? বলবো নাকি?’
আশফাক ভয়ে মিইয়ে গেল।ও হয়তো ভাবেইনি আমি ওর সঙ্গে এভাবে তর্ক করবো।ও ভাবতেই পারেনি হয়তো, গ্রাম থেকে বিয়ে করে আনা সামান্য এইচএসসি পাশ দেয়া তার বউ তার সঙ্গে এভাবে লড়বে । সে হয়তো এরকম কল্পনাও করতে পারেনি।
আমি বললাম,’ সবকিছু ভালোই ভালোই শেষ করে দিতাম।এসব নিয়ে অতো বাড়াবাড়ি করতাম না। কিন্তু তুমি আমার গায়ে হাত তুলে,তুই তুকারি করে, হুমকি ধামকি দিয়ে ভুল করেছো। শুনে রাখো।আমি আর দশটা মেয়ের চেয়ে ভিন্ন।আমি অবশ্যই নম্র ভদ্র। কিন্তু অ*ন্যায় অ*ত্যাচার সহ্য করে রাতভর কেঁদেকেটে বালিশ ভেজানোর মতো মেয়ে না! তুমি এবং জেবা তোমরা যে লয়্যাল না এটা এইমাত্র করা তোমাদের আচরণেই বুঝতে পেরেছি আমি। এই কদিন যে চুপ ছিলাম এটাই ভুল করেছি আমি।’
ওরা কেমন শান্ত হয়ে পড়েছে। চুপচাপ হয়ে গেছে একেবারে।জেবা চলে যেতে চায়ছে।
আমি বললাম,’ যেতে পারবে না। এখন যাওয়া যাবে না।’
জেবা বললো,’ মানে? যাওয়া যাবে না মানে? তুমি আমায় আটকে রাখার কে?’
আমি হাসলাম। হেসে বললাম,’ কেউ না। কিন্তু তুমি আমার অনেক বড় ক্ষতি করেছো। এই ক্ষতিপূরণ তোমার কাছ থেকে ঊসল না করে আমি তোমাকে এক পা নড়তে দিবো না এখান থেকে!’
জেবা বললো,’ মিছেমিছি দোষ দিবে না। অনেক সহ্য করেছি তোমায়।’
আমি বললাম,’ এক মিনিট।’
বলে যতোটা দ্রুত সম্ভব জেবার রুমে গেলাম। গিয়ে দেখি বালিশের নিচে তখনও পিলের পাতাটা পড়ে আছে।ও হয়তো খেয়াল করেনি। মানুষের মুখোশ উন্মোচন হবার সময় এভাবেই হয়।এক এক করে সবকিছুই প্রকাশ হতে শুরু করে।ওই পাতাটা আমি হাতে করে এনে ওদের সামনে উঁচিয়ে ধরে বললাম,’ জেবা, তুমি যদি এতোটাই সৎ হও তাহলে এটা কি? নাকি এখন বলবে, এটা তোমার না। তুমি এসব খাও না।এটাও আমার ষ*ড়যন্ত্র?’

#চলবে

৫ম পর্বের লিংক –
https://m.facebook.com/groups/371586494563129/permalink/807952724259835/?mibextid=Nif5oz

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here