#গভীর_গোপন #৮ম_পর্ব #অনন্য_শফিক ‘

0
270

#গভীর_গোপন
#৮ম_পর্ব
#অনন্য_শফিক



মনির বললো,’ জেবা সম্পর্কে কিছু বলতেও আমার রুচিতে বাধে।ওর নাম শুনলেও ঘেন্না ধরে শরীরে। কিন্তু এখানে আমায় চুপ করে থাকলেও চলবে না।এসেই যেহেতু পড়েছি সত্যটা বলে যাবো।বলার জন্যই আমি এসেছি এখানে।’
জেবা রাগে ফুসফুস করে উঠে বললো,’ তোর কথার চার পয়সার দাম নাই!তুই একটা কুকুরের চেয়েও নিকৃষ্ট। তুই এখানে কেন এসেছিস তা আমি ভালো করেই জানি। এর আগে আমার ভিডিও ছ*ড়িয়ে দিয়ে আমার সংসার ভেঙেছিস।আর এখন এখানে এসেছিস আরেকটা সংসার ভাঙতে।জা*রজ কোথাকার!’
মনির হাসলো। হেসে বললো,’ অতি উ*ত্তেজনা শরীরের জন্য খুবই খারাপ। এইসব নাটক ফাটক এখন বন্ধ করো জেবা।এসব করে আর আমার মুখ বন্ধ করে রাখতে পারবে না ।যা সত্য তা আমি বলবোই।’
আশফাক বললো,’ ভালোই ভালোই তুমি আমার বাড়ি থেকে বেরিয়ে যাও বলছি । নয়তো ঘা*ড় ধরে বে*র করে দিবো বলছি! তোমার জন্য জেবা কি না করেছিল বলো? শেষে তুমি ওকে বিয়ে করেছিলে? বলো, করেছিলে? ‘
মনির বললো,’ ভাই, এরকম চরিত্রহীন মেয়েকে আমি কোন দুঃখে বিয়ে করতে যাবো বলেন? আরেকজনের সন্তান পেটে নিয়ে এসে যদি কোন মেয়ে আপনাকে বিয়ে করতে চায় তবে আপনি তাকে বিয়ে করবেন? করবেন বিয়ে? তাছাড়া ওর সঙ্গে আমার যখন সম্পর্ক ছিল তখন আমি কতোক্ষণ ওর সঙ্গে থাকতাম আর আপনি কতোক্ষণ থাকতেন ওর সঙ্গে? আপনারা জাস্টফ্রেন্ডের দোহাই দিয়ে সারাক্ষণ টই টই করে ঘুরে বেড়াতেন।আর আমি যদি জেবাকে কিছু বলতাম তখন সে বলতো আপনারা ভাই -বোন ।আমি কোন রকম সন্দেহ করলেই জেবা কেঁদে কেটে তখন চোখ ভাসাতো।আমি বোকা ছিলাম।ওর মায়া কান্নাকে সত্য ভেবে সবকিছুই ভুলে যেতাম। আমি ভাবতাম,জেবার সঙ্গে আসলেই আপনার ভালো সম্পর্ক। কিন্তু শেষে যে খেলাটা দেখালেন ভাই!ওর গর্ভে আপনার নিজের সন্তান সহ জেবাকে আমার কাছে গছিয়ে দিতে চায়লেন। আপনি আবার কোন নৈতিকতা নিয়ে আমায় প্রশ্ন করেন যে কেন আমি জেবাকে বিয়ে করিনি?’
মনিরের মুখ থেকে কথাটা শুনে আমার মাথা কেমন চক্কর দিয়ে উঠলো। জুঁইকে দেখলাম চোখ বড় বড় করে তাকাতে।সত্যি বলতে আমি কখনোই এরকম কিছু শুনবো বলে প্রস্তুত ছিলাম না।জেবাকে আমি দু*শ্চরিত্রের ভেবেছিলাম । কিন্তু এতোটা দু*শ্চরিত্রের সে এরকম কখনোই ভাবিনি! আর আশফাকের প্রতি তো সমস্ত বিশ্বাস উঠেই গেল মুহুর্তে। ছিঃ!
আমার ভাবতেই অবাক লাগছে যে এই বদ লোকটার সঙ্গে এতো গুলো দিন আমি সংসার করেছি!

এরিমধ্যে জেবা বললো,’ মুখ সামলে কথা বল জা*রজের বাচ্চা! নয়তো জুতা দিয়ে পি*টিয়ে সো*জা করে ছা*ড়বো একেবারে!’
এরিমধ্যে মনির উঠে গেল।ও এমন ভাবে এগিয়ে যাচ্ছে যে সে এক্ষুনি মা*রধোর করে মনিরকে এখান থেকে বের করে দিবে।
জুঁই বাঁধা দিলো। ওদের দুজনের মাঝখানে গিয়ে দাঁড়ালো।
মনির এবার বললো,’সত্য কথা বললেই শরীরে জ্বালা ধরে তাই না আশফাক সাহেব? লজ্জা হয় না আপনার ,ভাই বোনের পরিচয় দিয়ে যে এসব করে বেড়ান? ছিঃ! আমার তো আপনার আর জেবার মতো চরিত্রহীন মানুষদের শরীরে থুথু ফেলতেও ঘেন্না করে! জেবা যে আমাকে জা*রজ বললা কেমনে বললা এটা ভাই? আমি কি তোমার মতো ছলনাময়ী ? আমি কি তোমার মতো বেঈমান? আমি একের আড়ালে অসংখ্য মানুষ নিয়ে নোংরামো করার লোক ? এইসব তো তোমার কাজ। নিজের বয়ফ্রেন্ড রেখে ভাই বানিয়ে ভাইয়ের সাথে ন*ষ্টামি করে বেড়াতে সব সময়।শেষে তো ভাইয়ের সন্তানও পেটে ধরলে। এখন জা*রজটা আসলে কে একটু হিসেব করে দেখো তো নিজেই।’
আশফাক ,জেবা এখান থেকে উঠে পড়লো।তারা এখানে থাকবে না।এই বৈঠক তারা মানে না। এখানে নাকি তাদের অপদস্থ করার জন্য বসা হয়েছে। তাদেরকে দোষী সাব্যস্ত করতেই জেবার এক্সকে ডাকা হয়েছে।
জুঁই বললো,’ আপনারা এখানে বসতে বাধ্য।মনির ভাইয়ের কথা শেষ হোক আগে।পরে দেখা যাবে কে দোষী আর কে নির্দোষ!’
মনির বলতে শুরু করলোকরলো আবার। সে বললো,’ জেবা যে ভিডিওর জন্য আমায় দোষারোপ করছে, সে বলছে যে, আমি তার ভিডিও ছ*ড়িয়ে দিয়েছি, এটা মিথ্যে একটা অপবাদ ছাড়া আর কিছুই নয়। তার ভিডিও আমার কাছে থাকবে কেন? আমি তো কোনদিন তার কাছে এরকম কিছু চাই -ইনি।তো ওর ভিডিও যদি আমার কাছে না থাকে তবে তা আমি ছ*ড়িয়ে দিলাম কিভাবে?এটা যদি ছড়িয়ে থাকে তবে এমন কেউ ছড়িয়েছে যাকে সে এই ভিডিও দিয়েছিল। তাছাড়া জেবা যে ভ*য়ংকর মেয়ে, সে নিজেই নিজের ভিডিও ছড়িয়ে দিতে পারে।ও পারে না এমন কিছুই নেই!’
জেবা রাগে অগ্নিশর্মা হয়ে উঠলো। বসা থেকে এক লাফে উঠে দাঁড়িয়ে বললো,’ এক চ*ড়ে তোর সবগুলো দাঁত ফে*লে দিবো বেঈমান। মিথ্যের পর তুই মিথ্যে বানিয়ে বানিয়ে বলে যাচ্ছিস! এসব বলার আর জায়গা পাস না। তুই ছাড়া আর কাউকেই আমি ভিডিও দেইনি।তুই -ই এটা করেছিস। আমার সংসার ভাঙার জন্য এটা করেছিস।’
জুঁই রাগ দেখিয়ে বললো,’ জেবা আপু, আপনি চুপচাপ বসুন। আরেকটা কথাও বলবেন না খবরদার।’
জেবা মুখে বিরক্তি নিয়ে বসলো।
মনির এবার বললো,’ আশফাকের সঙ্গে জেবার সম্পর্কটা কখনোই আমি স্বাভাবিক ভাবে নেইনি। তবুও আমি ওকে বিয়ে করতে চেয়েছিলাম। ভেবেছিলাম ওকে বিয়ে করলে সব ঠিক হয়ে যাবে। জেবাকে আমি বলেছিলাম,জেবা আমি তোমায় বিয়ে করতে চাই! জেবা বলেছিল, তার ফ্যামিলিতে বিয়ের আলাপ পাঠাতে। মাকে পাঠাতে।
মাকে আমি পাঠিয়েছিলাম। বিয়ের প্রপোজাল নিয়ে ওদের বাড়িতে গিয়েছিলেন মা।ওর বাবা মা আমার মাকে তখন অপমান করে ওদের বাড়ি থেকে বের করে দিয়েছিল। মা তখন বলেছিলেন, আপনাদের মেয়েকে এখানে ডেকে আনুন। তার কাছে জিজ্ঞেস করে দেখুন সে এই বিষয়ে কি বলে। মজার বিষয় হলো জেবাকে মার সামনে ডেকে আনলে জেবা এই বিষয়টা পুরোপুরি অস্বীকার করেছে।সে বলেছে, আমার সঙ্গে তার কোন ধরনের সম্পর্ক নাই। কখনো ছিলও না।’
জেবা রাগে ফুসফুস করছে। কিন্তু কিছু বলতে পারছে না।
জুঁই বললো,’ আপনি বলুন মনির ভাই।সব বলুন।’
মনির বললো,’এরপর আমি জেবার সঙ্গে সব ধরনের যোগাযোগ বন্ধ করে দেই।জেবাও আর চেষ্টা করেনি যোগাযোগ করতে। কিন্তু এই ঘটনার মাস তিনেক পরেই জেবা আমার সঙ্গে দেখা করতে আমাদের বাড়ি চলে আসে।এসে বলে সে ভুল করেছে। আগেরবার যখন মা তাদের বাড়ি গিয়েছিলেন তখন নাকি সে তার বাবা মায়ের সামনে আমাদের সম্পর্কের বিষয়টি স্বীকার করার সাহস করতে পারেনি।ভয় পেয়েছিল। পেছনের সবকিছু ভুলে গিয়ে আমি যেন তাকে মাফ করে দেই এবং তাকে বিয়ে করি। কিন্তু আমি তার কোন অনুনয় শুনিনি।বলেছি, সামনে থেকে চলে যেতে। অদ্ভুত বিষয় হলো এর দুদিন পর তার বাবা আসে আমাদের বাড়িতে।এসে আমার মাকে অনুরোধ করতে শুরু করে এসে। আমাকেও খুব করে অনুরোধ করে। এমনকি মাকে বলে, আমি যদি জেবাকে বিয়ে করি তবে আমায় দশ লক্ষ টাকা যৌ*তুক দিবে। এমনকি আশফাক সাহেব নিজেও আসে। এসে অনুরোধ করে আমায়।বলে,জেবা আমার জন্য পাগলপারা।আমি তাকে বিয়ে না করলে জেবা বি*ষ‌ খাবে। হঠাৎ ওদের এরকম আচরণ আমাকে সন্দিহান করে তুলে। আমার প্রতি ওদের এরকম আগ্রহ কেন হলো তাও বুঝতে পারছিলাম না।আমি সঙ্গে সঙ্গে জেবা সম্পর্কে জানার চেষ্টা করি। জানতেও পারি। জেবার কাজিনের সঙ্গে আমার খুব ভালো সম্পর্ক ছিল। তার কাছে জানতে পারি জেবা সন্তানসম্ভবা। এই জন্যই তার বাবা মা টাকা পয়সা দিয়ে হলেও জেবাকে আমার কাছে গছিয়ে দিতে চেয়েছিল।’
এসব শুনে আমার গা কেমন গুলিয়ে আসে।ঘেন্নায় বমি আসতে চাইছে। ওদের দেখতেই ইচ্ছে করছে না আর। নিজেকে হঠাৎ বড় অসহায় মনে হয়।আমি টের পাই আমার পায়ের মাটি দূরে সরে যাচ্ছে। আমার গর্ভে আশফাকের সন্তান। আমি আমার পেটে তার সন্তান বয়ে বেড়াচ্ছি আর আড়ালে সে এরকম ন*ষ্টামি করে বেড়াচ্ছে। ছিঃ!

মনির আবার বলতে শুরু করলো। সে বললো,’ আমার কাছে মেয়েকে তুলে দিতে না পেরে জেবার বাবা মা আশফাকের উপর প্রেশার দিলেন। সমস্যা হলো আশফাক মিয়া নিজেও এই দুশ্চরিত্র মেয়ে নিয়ে সংসার করতে রাজি ছিল না।কারণ সে ভালো করেই জানতো জেবা এরকম ভাবে ভাই বানাতে খুবই পটু। এই মেয়েকে বিয়ে করলে যে তার কপালে দুঃখ আছে এটা বুঝতে পেরেই সে জেবাকে নিজ দায়িত্বে অন্য একজনের কাছে গছিয়ে দিলো। এবং সবচেয়ে মজার বিষয় হলো —

#চলবে

৭ম পর্বের লিংক –
https://www.facebook.com/groups/371586494563129/permalink/809094594145648/?mibextid=Nif5oz

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here