#তুমি_আমি_দুজনে
#লেখিকা_হুমাইরা_হাসান
পর্ব- ৪৫
ভার্সিটির ক্লাস শেষে বেরোলো তুরা, ফারিহা আর সাদমান বরাবরের মতো বিপরীত পথে গেলে তুরাও হাঁটা ধরলো, সামনে এগোতেই দেখলো মাহিদ গাড়ির সামনেই দাঁড়িয়ে ফোনে কথা বলছে, তুরা এগিয়ে গেলে কান থেকে ফোন নামিয়ে বলল
-বুড়ি গাড়িতে উঠে বস,তোকে রেখে আবারও বেরোতে হবে কাজ আছে আমার
তুরা মাথা নাড়িয়ে সম্মতি দিয়ে গাড়ির দরজা খুলতে হাত বাড়ালেই পেছন থেকে অতি পরিচিত কণ্ঠস্বর শুনে ঘুরে দাঁড়ায়
-দাঁড়াও
ঘুরে দাঁড়িয়ে আহানকে দেখে ভ্রু কুচকালো। সে যতদূর যানে আহানের ছুটি পনেরো দিনের ছিলো। আজকে চৌদ্দতম দিন। আজ তো আহানের ভার্সিটিতে আসার কথা না, পরনে আসমানী রঙের একটা শার্ট আর কালো রঙের প্যান্ট। কালো রঙের চশমায় গভীর চোখ জোড়া ঢাকা।
তুরার বিরতিহীন অপলক চেয়ে থাকা অবস্থায় আহান এগিয়ে এলো। তুরাকে পাশ কাটিয়ে মাহিদের সামনে দাঁড়ালে মাহিদ বেশ বিস্মিত হয়ে বলল
-আরে স্যার আপনি
আহান চোখের চশমা টা খুলে লেকচার দেওয়ার মতো বাচনভঙ্গিতে বলল
-ফার্স্ট অফ অল ভার্সিটির বাইরে কলিগ টাইপ সম্পর্ক বাদ। আর সেকেন্ডলি তুমি তুরার বড় ভাই, প্রায় আমারই সমবয়সী সেক্ষেত্রে আমাকে তুমি করে নাম ধরে ডাকলেই খুশি হবো
মাহিদ হাসলো বিস্তর। সম্মতি সূচক ঘাড় নাড়িয়ে আবারও বলল
-পনেরো দিন বাদে তো ফেরার কথা ছিলো তাই না?
-হ্যাঁ বাট রিসার্চ টা আগেই শেষ হয়ে গেছে তাই আর দেরি করলাম নাহ। কাল রাতেই ফিরেছি
বলে আবারও বলল
-তুরাকে আমি নিয়ে যাচ্ছি, মা আর দিদুন ওকে আজই ফিরিয়ে নিতে বলেছে। আশা করছি তোমাদের আপত্তি হবে নাহ?
-আরে না না, এটা তো ভালো কথা। তোমার বউকে তুমি নিয়ে যাও এই কয়দিনে আমাকে পাগল করে রেখেছে একটার পর একটা বাহানা করে।
রসিকতার ছলে বলল মাহিদ। তুরা ক্ষিপ্ত হয়ে এগিয়ে এসে বলল
-ইয়াজ ভাই! তোমার এতো বড় সাহস তুমি আমাকে এভাবে বললে,আমি এক্ষুনি মামনীকে বলবো।
-ভাই এইটারে নিয়ে যাও প্লিজ,একটা টোকা না দিতেই ম্যা ম্যা করে সব বলে দেই
-ভাইয়ায়া!
বলেই এগিয়ে গিয়ে দুম করে দুটো কিল বসিয়ে দিলো মাহিদের পিঠে। আহান তুরার হাত ধরে সরিয়ে এনে বলল
-সব জাগায় দস্যু পানা শুরু করেছো,এটা যে ভার্সিটির এরিয়া সে খেয়াল আছে? মাঝ রাস্তায় টিচারকে আঘাত করছে স্টুডেন্টস এমন নিউজ ছাপবে
তুরা মুখ ভেংচে দাঁড়িয়ে রইলো। মাহিদ আহানের থেকে বিদায় নিয়ে গাড়ি নিয়ে চলে যেতেই আহান গলায় ঝুলানো চশমা টা চোখে পরে পকেট থেকে চাবি বের করতে করতে বলল
-ফটাফট গাড়িতে ওঠো
বলেই এগিয়ে গিয়ে গাড়িতে বসে স্টার্ট দিলেও তুরা ঠাই দাঁড়িয়ে রইলো মুখ ফুলিয়ে। আহান ভেতর থেকেই চোখ গরম করে তাকালে থপ থপ করে হেঁটে এসে বসলো, ধুপ করে কাঁধের ব্যাগটা পেছনের সিটে রাখলো। আহান চশমার ফাঁকে আড়চোখে সবটা খেয়াল করলেও সেদিকে ভ্রুক্ষেপ না দিয়ে ড্রাইভিং এ মনোযোগ দিলো।
তুরা চুপচাপ বসে থেকে কিয়ৎক্ষণ পার হলে আড়চোখে তাকালো আহানের দিকে।
লোকটা দিনদিন আরও সুন্দর হচ্ছে যেনো, দেখে তো মনে হবে সবে ভার্সিটিতে পড়া কোনো ফার্স্ট/ সেকেন্ড ইয়ারের স্টুডেন্ট। তুরার চোখে আহানকে একটু বেশিরকমই সুন্দর লাগছে,ফারিহার ভাষায় ক্রাশ করার মতো। আকাশী রঙের শার্ট টার হাতা কনুই পর্যন্ত পরিপাটি করে ভাঁজ করে রাখা,বুকের কাছে দুটো বোতাম খোলা রাখায় শুভ্র বুকটা স্পষ্ট দেখা যাচ্ছে। নিচের ঠোঁট দুটো কামড়ে রেখে স্টিয়ারিং ঘুরিয়ে গাড়ি চালাচ্ছে আহান, দৃষ্টি স্থির সামনের দিকে যেনো দুনিয়াতে সে গাড়ি আর রাস্তা ছাড়া কিছুই নেই!
তুরা অপলক চেয়ে থাকতেই মনে হলো এতো সুন্দর তার স্বামীটা, না জানি কতো মেয়েরা নজর দেয়, ভার্সিটির মেয়েরাই তো চোখ দিয়ে গিলে খায় আহানকে দেখলেই হা করে তাকিয়ে থাকে। হুট করেই খুব রাগ হলো তুরার,এখানে যখন মেয়েগুলো এভাবে তাকিয়ে থাকে তাহলে বিদেশে গিয়েও নিশ্চয় মেয়েরা তাকিয়ে ছিলো। আর বিদেশে মেয়েগুলো তো ছ্যাছড়া স্বভাবেরও হয়,কিসব ছোট ছোট জামাকাপড় পরে থাকে,পুরুষ মানুষের গায়ে ঢলে ঢলে পরে ন্যাকা করে। ভাবতেই রাগে মাথাটা দপদপ করে উঠলো তুরার, মেজাজ টা তুঙ্গে চড়ে গেলো। আহান ঘাড় কাত করে তুরার দিকে তাকিয়ে আবারও গাড়ি চালাতে চালাতে বলল
-কি সমস্যা, মুখটা এমন পেঁচার মতো করে রেখেছো কেনো
তুরা কটমট চোখে তাকালো। রাশভারী গলায় বলল
-হ্যাঁ আমি তো পেঁচাই, বিদেশের ধলা চামড়া গুলোকে দেখে এসে আমাকে তো পেঁচাই লাগবে।
-হোয়াট ননসেন্স, কি যা তা বলছো
-যা তা নয় ঠিক ই বলছি। তাই তো দশদিনের জাগায় তেরো দিন থেকেছেন
আহান চোখ বাকিয়ে তুরার মুখের দিকে তাকিয়ে বলল
-তোমাকে কে বলল দশদিন থাকার কথা ছিলো, আন্দাজে পকপক করা বন্ধ করো
তুরার রাগ তিরতির করে বেড়ে গেলো। শুধু শুধুই এখন তার মেজাজ খারাপ আরও বেশি হচ্ছে। আহানের দিকে আঙুল উচিয়ে বলল
-একদম মিথ্যা বলবেন না,আপনি বলেছিলেন না দশ থেকে পনেরো দিন লাগতে পারে!
-তো আমি কি বলেছি দশদিনেই হয়ে যাবে, ওটার ডিউরেশন দশ থেকে পনেরো দিন ছিলো৷ এর মাঝে যেকোনো দিনেই শেষ হতে পারতো। না বুঝে যা নয় তা বলছো ষ্টুপিড!
গমগমে গলায় বলল আহান। তুরা খানিক থ মেরে তাকিয়ে থাকলো, তারপর বলল
-হ্যাঁ হ্যাঁ আমিতো ষ্টুপিড, গাধা আরও কতো কিছু। তাই তো আমাকে পছন্দ হয়না। হওয়া লাগবেও না। ওই পেত্নী গুলোকেই পছন্দ করুন গিয়ে
আহান বিরক্তিকর চোখে তাকালো। এই মেয়ের মাথার তার কি সবগুলোই গেছে?কিসব বলছে। এক হাতে গাড়ির স্টিয়ারিং ঘুরাতে ঘুরাতে আরেক হাতে তুরার ফুলিয়ে রাখা মুখটা নিজের দিকে ঘুরিয়ে ব্যস্ত স্বরে আহান বলল
-কি হয়েছে বলো তো, শুধু শুধু এমন ঝগড়া কেনো করছো
ঝামটা দিয়ে হাত সরিয়ে দিলো আহানের, ছলছল নয়নে বলল
-আমিতো শুধু শুধুই ঝগড়া করি। আমি তো ভালই না। তাই তো আমাকে কারো সহ্য হয়না,আমার কথা মনেও হয়না,ভালোও বাসেনা
বলতে বলতে চোখ ছাপিয়ে জল গড়িয়ে পরলো, আহান হতভম্ব হয়ে গাড়ি ব্রেক কষে থামালো। যদিও বাড়ি এসে গেছে, কিন্তু সে থামিয়েছে তুরার কান্না দেখে, সিট বেল্ট খুলে দুহাতে তুরার মুখ নিজের দিকে ঘুরিয়ে বলল
-কি হয়েছে তুরা,এমন কেনো করছো?
আবারও হাত ছাড়িয়ে নিলো তুরা, কাঁদো কাঁদো চোখেই বলল
-ঠিকই তো বলেছি। আমার যাই হোক শুনতে হবে না আপনার। যে আমাকে এ্যাটেনশন দেয়না,ভালোবাসে না তার কোনো লোক দেখানো দয়া মায়া লাগবে নাহ
বলেই দরজা খুলে বেরিয়ে দৌড়ে বাড়ির ভেতর ঢুকে গেলো। তুরার যাওয়ার পানে আহান নিষ্পলক তাকিয়ে ফোস করে শ্বাস ফেলল। এই মেয়ের হুটহাট কি হয় কে জানে, যা নয় তাই বলে দেয়,একবার ও ভাবে না আহানের কেমন লাগে। এই যে ঠোঁট ভেঙে কেঁদে দিলো, ও কি একটুও
বুঝতে পারলো ওর চোখে পানি দেখে আহানের ঠিক কোন জাগায় আঘাত টা লাগে। চোখ টিপে বন্ধ করে সিটে মাথা এলিয়ে দিলো আহান,বিড়বিড় করে বলল
-তুমি কবে বুঝবে তুরা রাণী, আর কতো যন্ত্রণা দেবে!
••••
অপরাহ্নের শেষ সময়, দিনের এই আলসেমি ভরা সময়টাতে সকলের ভাতঘুম দেওয়ার কথা, নিস্তব্ধতায় পরিবেশ থমথমে থাকার কথা। কিন্তু তার বদলে বিরাজ করছে প্রাণোচ্ছল শোরগোল,গল্পগুজব। আশেপাশে নানন মানুষের হাস্যজ্বল চেহারা তাদের জমজমাট আসরে তুরা চুপচাপ অস্বস্তিকর চেহারায় বসে আছে। গরম না থাকা সত্ত্বেও গলা বয়ে ঘাম টপকে পরল এক ফোঁটা। সন্তপর্ণে হাতের উল্টো পিঠে মুছে নিলো।
ভেতরে ভেতরে ভীষণ অস্বস্তি কুণ্ঠা কাজ করলেও মেকি হাস্যজ্বল চেহারা করে রেখেছে।
তুরার অস্বস্তিকে আরও কয়েক ধাপ বাড়িয়ে দিয়ে তার পাশে এসে বসলো বয়োজ্যেষ্ঠ ভদ্রমহিলা, তুরা তাকিয়ে ধীমি গলায় সালাম দিলো, বৃদ্ধা জহুরি দৃষ্টিতে তুরার দিকে তাকালে রাইমা পাশ থেকে চশমা টা তার দিকে এগিয়ে ধরে বলল
-এটা তুরা,আহানের বউ। তুমি না ওকে দেখতে চেয়েছিলে দাদীজান
রাইমার পানে এক পলক তাকিয়ে চশমা টা চোখে পরলো। অবশেষে সালামের উত্তর পেলো তুরা, পৌঢ় কণ্ঠে শান্তভাবে উত্তর দিয়ে ভ্রু জড়ো করে খানিক তাকিয়ে থাকলো তুরার মুখের দিকে। কয়েকবার চোখে মুখে হাত বুলিয়ে ক্ষান্ত হলেন। ললাটের বলিরেখার ভাঁজ প্রসারিত করে বলল
-বাহ্ মাশাল্লাহ! একদম নায়িকার মতো বউ পাইছে তোমার ভাই রাইমা। একেবারে ফুলের মতো টুসটুসে!
মেকি হাসলো তুরা,রাইমার দাদী শাশুড়ীর কথায় লজ্জা পেলেও প্রকাশ করলো নাহ। মাথার ঘোমটা টা আরও সামনে টেনে নিলো। বসে থেকে থেকে ভীষণ অস্বস্তি হচ্ছিলো তার,একে তো এতগুলো লোকজন থাকায় বিব্রত তুরা, তার উপর পরনে শাড়ি, না যানি কখন উস্টা খেয়ে পরবে। ঘরভর্তি মানুষ গুলোর সামনে মান ইজ্জতের দফারফা হবে! ঘাড় ঘুরিয়ে তাকালো সামনের দিকে, দিদুন আর মা তো গল্প করায় ব্যস্ত, এদিকে তুরার অবস্থা নাজেহাল।
আজ দুপুরের দিকেই এসেছে ধানমন্ডিতে। রাইমার শ্বশুরবাড়ি। এ বাড়ির লোকজন আর ইনসাফ মাহবুবের বাড়ির সকলকে দাওয়াত করে এনেছে। কারণ টা এমনি আত্মীয়তার খাতিরে হলেও এখানে এসে দারুণ একটা সুসংবাদ ও পেয়েছে। রাইমা সন্তানসম্ভবা, বাড়ির বড় বউমার এমন সুসংবাদে আনন্দিত হয়ে তাতে এ বাড়ির লোক গুলোকেও সামিল করতেই এতসব আয়োজন।
উনাদের অনুরোধ সকলকে অন্তত দুদিন এ বাড়িতে থাকতে হবে, রাইমার বিয়ের কতগুলো দিন পেরিয়ে গেলো অথচ পরম আত্মীয়রা তাদের বাসায় একটা দিন ও থাকেনি বলে তারা ভীষণ দুঃখ প্রকাশ করেছে। সহবত, সহমর্মিতার আর স্বজনপ্রীতির কারণে রুবি বা আমেনা খাতুন ও দ্বিরুক্তি না করে থাকার জন্যে রাজি হয়েছে। কিন্তু তুরা এই কয় ঘন্টাতেই যেরকম বিড়ম্বনায় পরেছে তাতে দুটো দিন কিভাবে থাকবে ভেবেই তো জান যাচ্ছে।
তুরার ভাবনার মাঝেই গাল টিপে ধরলো রাইমার দাদী শাশুড়ী, টুসকি মেরে বলল
-এতো কি ভাবছো ফুলটুসি। বরের কথা মনে পরে নাকি?
তুরা বিব্রত বোধ করলেও গাল টিপে ধরায় ভীষণ ব্যথা পেলো। মৃদু স্বরে আহ্ করে উঠলো। ধরা গলায় বলল
-ব্যাথা লাগছে দাদীজান
বৃদ্ধা যেনো তুরার কথা শুনে বেশ মজা পেলো। প্রেক্ষিতে তুরার আরও কাছে সরে এসে বলল
-এটুকু তেই লাগে কেনো। বর আদর সোহাগ করে না?
হিচকি উঠে গেলো তুরার এহেন লজ্জাজড়িত কথাবার্তা শুনে। এ ধরনের কথাটা তুরার কাছে একেবারেই অপ্রত্যাশিত ছিলো। তুরার হিচকি উঠা দেখে দাদী ব্যস্ত হয়ে রাইমাকে পানি দিতে বললে তুরা উঠে দাঁড়ালো, নাকচ করে বলল
-না না থাক, আমি একটু ঘরে যেতে চাই। মাথাটা ধরেছে
রাইমা তুরাকে ঘর দেখিয়ে দিলো। উপর তালার একেবারে কর্ণারের ঘরটাতে তার থাকার ব্যবস্থা করা আছে। তুরা ধন্যবাদ জানিয়ে অন্য সকলের সাথে টুকটাক কথা বলে উঠে আসলো।
ডুপ্লেক্স বাড়িটা বেশ সুন্দর। সিড়ি বেয়ে উঠতে উঠতে এদিক ওদিক তাকিয়ে দেখছিলো তুরা, হুট করেই রাইমার ঘরটার সামনে আহানকে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখলো। সামনেই একটা মেয়ে দাঁড়িয়ে, মেয়েটা ইমানের বোন অর্থাৎ ফারিনের ননদ। বয়সে তুরার চেয়ে একটু বড়। তবে সেটা বিষয় নয়। মেয়েটার সাথেই আহান দাঁড়িয়ে কথা বলছে। কথা কম মেয়েটা হাসছে বেশি, হাসতে হাসতে একদম গায়ে হেলে পরবে যেনো। আহানের অধরেও ছড়ানো হাসি। এক ভ্রু উচিয়ে সিড়ি বেয়ে উপরে উঠলো তুরা, এমনিতেই আহানের উপর ভীষণ রাগ, তার উপর বউয়ের রাগ না ভাঙিয়ে মেয়েটার সাথে নিকনিক করা হচ্ছে! গটগট করে হেঁটে ওদের সামনে গিয়ে দাঁড়ালো তুরা,সূক্ষ্ম গলায় বলল
-এখানে কি হচ্ছে?
মেয়েটা আবারও হাসলো। খুব সম্ভবত নিশি মেয়েটার নাম। হাসিমুখেই উত্তর দিলো
-আরে তুরা ভাবি যে,এইতো গল্প করছিলাম আমরা। আহান ভাইয়া ভীষণ মজার মানুষ উনার সাথে কথা বলে আমার ভীষণ ভালো লাগছে,তুমিও আসো না?
অনিচ্ছা সত্ত্বেও গাল বাকিয়ে হাসলো তুরা। নিশির মতো করেই বলল
-থাক,তোমার মজার মানুষের সাথে তুমিই কথা বলো। তোমার ভালো লাগলেও আমার একদম ই লাগছে না।
বলেই ঘরের ভেতর চলে গেলো। নিশি মেয়েটা তুরার কথার মানে না বুঝে হা করে তাকিয়ে রইলো। আহান ঠোঁট টিপে হাসলো শুধু।
ঘরে ঢুকেই হাতের ফোনটা ছুড়ে মারলো বিছানাতে, মাজায় হাত রেখে পায়চারি করতে করতে বলল ‘হুহ,ভীষণ মজার মানুষ,ভীষণ ভালো লেগেছে’ মানুষ না বনমানুষ। যে বউ রেখে অন্য মেয়েদের সাথে নিকনিক করে তাদের বনমানুষ ই বলে। পায়চারি করার মাঝেই দেখলো আহানকে ঘরের ভেতর ঢুকতে, রাগে ক্ষিপ্ত হয়ে বলল
-আপনি এই ঘরে কেনো এসেছেন৷ আপু আমাকে এই ঘরে থাকতে বলেছে। আপনি চলে যান। গিয়ে ওই নিশির সাথে নিকনিক করুন গিয়ে
বলে গজরাতে গজরাতে বিছানায় দুই পা তুলে বসলো। গায়ের শাড়ির এলোমেলো অবস্থা এক হাতে কোনো রকম আঁচল ঠিক করে মুখ ফুলিয়ে আরেক দিকে তাকিয়ে রইলো।
আহান হাসলো মৃদু এগিয়ে গিয়ে তুরার পাশে বসে ওর কোমরে হাত জড়িয়ে ধরলো,কানের কাছে মুখ এনে বলল
-তোমার সবকিছুই তো আমার তুরা রাণী। শুধু তোমার থাকার ঘর কেনো তুমি,তোমার ঠোঁট,গাল,গলা, বুক,পেট সব আমার।
বলে কথার সাথেই খামচে ধরলো আলতো স্পর্শে তুরার নরম পেটের চামড়া। চোখ খিঁচিয়ে বন্ধ করে নিলো তুরা, হাতটা আহানের হাতের উপর রেখে খামচে ধরলো, জমে গেছে সারা শরীর, না চাইতেও হেসে ফেলল সামান্য। নাসারন্ধ্র টেনে জোরে জোরে নিঃশ্বাস নিলো। আহান তুরাকে ছেড়ে উঠে দাঁড়ালো। মৃদু হেসে ওয়াশরুমে চলে যেতেই উঠে দাঁড়ালো তুরা, ঘাট হয়েছে ঘরে এসে। এর চেয়ে দাদীর ওসব টুসকি মারা কথাও ভালো ছিলো।
~
সন্ধ্যা পার হয়েছে, সময় প্রায় সাড়ে সাতটা। তুরা বসার ঘরে বসে সকলের সাথে। এর মাঝে হুট করেই আহান সিড়ি বেয়ে নেমে এলো। রুবি খাতুনকে উদ্দেশ্য করে বলল
-মা, আমাকে এখনই ফিরতে হবে।
ইমানের মা আজমেরি চৌধুরী চায়ের ট্রে রাখতে রাখতে বলল
-সেকি আহান, তোমরা না সকলে দুদিন থাকবে
-আজ সম্ভব নয় আন্টি, মা দিদুন থাকুক। আমাকে ফিরতে হবে। ভার্সিটির অথোরিটি থেকে ইমেইল এসেছে ইম্পর্ট্যান্ট কাজের,ওটা আমাকে শেষ করতে হবে। ল্যাপটপ টা বাড়িতেই রেখে এসেছি।
আহানের কথার দ্বিরুক্তি আর করলো নাহ কেও। কারণ আহানকে যে এখন আর রাখতে পারবে না সেটা সবাই জানে। সকলের সাথে কথা বলে আহান উপরে যাওয়ার জন্যে উদ্যত হলে তুরাকে উদ্দেশ্য করে বলল
-উপরে এসো তুরা
বলেই চলে গেলো। তুরা এখনো দ্বিধাদ্বন্দ্বিত দৃষ্টিতে চেয়ে আছে,ওর থ মেরে বসে থাকার মাঝেই ইমানের দাদী আবারও বলল
-আহান তো দেখি বউ ছাড়া থাকতেই পারেনা, যাও গো ফুলটুসি। তোমার বর তোমাকে রেখে যাবে না
লজ্জায় কান গরম হয়ে এলো তুরার,সমস্ত রাগটা গিয়ে পরলো আহানের উপর। কি দরকার ছিলো এভাবে সবার সামনে ডাকার। ইদানীং লোকটা মাত্রাতিরিক্ত অসভ্য হয়ে গেছে। সব খানেই তুরা তুরা করা লাগে। কোনো রকমে রুবিকে বলেই উঠে এলো তুরা। ঘরে এসে দেখল আহান আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে শার্টের বোতাম লাগাচ্ছে।
-আপনি আমাকে ওভাবে সবার সামনে ডাকলেন কেনো?
-রেডি হও, এক্ষুনি বেরোবো।
হাতা গোছাতে গোছাতে বলল আহান। তুরা ফট করে বলল
-আমি কেনো রেডি হবো,আপনার কাজ আছে আপনি যান। আমি মা আর দিদুনের সাথেই যাবো
-তোমার সবকিছু যেমন আমার,আমার সবকিছু ও তোমার, তাই আমি যেখানে তুমিও সেখানে।
বলেই ফোন আর মানিব্যাগ পকেটে ভরে নিলো। আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে চুলে আঙুল চালিয়ে ব্রাশ করে তুরার হাত ধরে হাঁটা ধরলো
-আরে কি করছেন,ছাড়ুন। আমাকে রেডি তো হতে দিন।
-লাগবে নাহ।
বলে সিড়ি বেয়ে নেমে এলো। তুরা মুখটা কাচুমাচু করে আহানের পেছনে দাঁড়িয়ে আছে। সকলের সামনে দাঁড়াতেও লজ্জা লাগছে এখন। কোন কুক্ষনে যে এই নির্লজ্জ উগান্ডা টাকে বিয়ে করতে গেছিলো সেইটা ভেবেই এখন নিজের মাথা নিজের ফা’টাতে মন চাচ্ছে। কিন্তু তাতে আহানের কি। সে স্বাভাবিক ভাবেই সকলের থেকে বিদায় নিয়ে আবারও তুরার হাত ধরে বাইরে নিয়ে এলো। কাওকে কিছু বলতে অবদি পারলো না তুরা।নিজের হাত ছাড়ানোর চেষ্টা করতে করতে বলল
-আপনার মতো ব’জ্জাত হনুমান আমি দুটো দেখিনি। ছাড়ুন আমাকে, ছাড়ুন বলছি। এরকম নির্লজ্জ লোকের সাথে এক ছাদের নিচে আমি কিছুতেই থাকবো নাহ।
তবুও আহানের হাত এক চুল আলগা হলো নাহ। গাড়ির দরজা খুলে তুরাকে বসিয়ে নিজেও এসে বসলো। চাবি ঘুরিয়ে স্টার্ট দিতে লাগলে তুরা আগুনের মতো ঝলসে উঠে বলল
-কি করছেন টা কি আপনি,পাগল হয়েছেন?
আহান ঘাড় কাত করে তাকালো। গভীর চোখ দু’টো তুরার দিকে স্থির রেখেই স্টিয়ারিং ঘুরাতে ঘুরাতে বলল
-এ্যাটেনশন চাইছিলে নাহ? ওটাই দিচ্ছি
.
.
.
চলবে ইনশাআল্লাহ
#Humu_♥️
#হীডিংঃ ব্যস্ততা যতই থাকুক,পাঠকদের অপেক্ষায় রাখবো না বলে রোজই নিয়মিত ভাবে প্রতিটি পর্ব দিচ্ছি। কিন্তু সকলের রেসপন্স তুলনামূলক কম, ব্যাপারটাতে আমি আশাহত। এমন হলে গল্পটা তাড়াতাড়ি শেষ করতে হবে হয়তো