প্রেম_প্রেম_পায় #স্বর্ণালী_সন্ধ্যা পর্ব এগারো

0
788

#প্রেম_প্রেম_পায়
#স্বর্ণালী_সন্ধ্যা
পর্ব এগারো

১১.
সন্ধ্যা হওয়ার একটু আগে দিয়ে ফায়াদ অপরাজিতা কে বাসায় পোছে দিল। গাড়িটা অপরাজিতার বাসা থেকে একটু দূরে থামিয়েছে।অপরাজিতা এখনো নামছে না। কিছু একটা ভাবছে ভীষণ মনোযোগ দিয়ে। ফায়াদ গাড়ির পিছনে মাথা এলিয়ে চোখ বন্ধ করে বলল,
‘বলো।’

অপরাজিতা ভাবনা থেকে ছুটে গিয়ে ভ্যাবাচেকা খেয়ে বলল,
‘জি?’

আগের মতো থেকেই বলল,
‘কিছু একটা ঘুরছে তোমার মাথায়। বলো।’

অপরাজিতা উড়না পেচাতে পেচাতে বলল,
‘আগে তো কখনো এরকম অনুভূতি দেখান নি৷ হঠাৎ? আর কেন?’

ফায়াদ এবার চোখ খুলল।সোজা হয়ে বসে অপরাজিতার দিকে ফিরল।তারপর তার সেই চমৎকার কণ্ঠে নরম সুরে বলল,
‘তুমি আমাকে এতো বছর থেকে চিনে এটা নিশ্চয় বুঝতে পেরেছে আমি ভীষণ প্রাক্টিক্যাল একজন মানুষ।আবেগ দিয়ে কাজ টা আমি একটু কমই করি। তুমি আমাকে যখন অনুভুতি ব্যক্ত করো তুমি তখন মাত্র ক্লাস টেনে পড়।অতোটুকু একটা বাচ্চার ভালোবাসা নামক আবেগ নিশ্চয়ই আমার মতো যুবকের মনে জায়গা করতে পারবে না৷আর তুমি খুবই দুষ্ট আমি প্রথম দিন দেখেই বুঝেছি। তোমাকে বুঝালাম, ইগ্নোর করলাম তবুও তুমি থামলে না। বরং তোমার পাগলামি বেড়েই যাচ্ছে। ফোন দিতে, দেখতে আসতে। আমি জানতাম মানা করে লাভ নেই। তুমি মানবে না। একবার একটু কঠোর হলাম তাতে তোমার সে কি কান্না!!আমার এখনো মনে আছে। তাই ভেবেছিলাম আচ্ছা করুক যা ইচ্ছা। নিজের টা নিজে বুঝবে। এভাবে দেড় বছর গেল৷ তুমি যেভাবে ভালোবাসা ব্যক্ত করছিলে একটা সময় সেই ভালোবাসা আমাকে ভাবাতে লাগলো। যতোই হোক ছেলে মানুষ আমি। আমারো ইচ্ছে হয় কারো ভালোবাসায় বিচরণ করতে।কিন্তু তুমি আমার থেকে ভীষণ ছোট। কলেজে মাত্র তখন৷ আমি যদি সাড়া দিতাম তুমি সারাদিন আমাকে নিয়েই পড়ে থাকতে। তাই চাচ্ছিলাম না এক্সাম এর আগে কোনো প্রকারে কোনো ডিস্ট্রাকশন হোক তোমার।’

অপরাজিতা অবাক হয়ে শুনছিল। মনে মনে ভাবলো,
‘এই লোক এতোকিছু ভেবে অনুভূতি বলল।আর আমি তো ঠাস করে বলে দিসিলাম যে উনাকে আমার লাগবে। উনাকে পাওয়ার জন্য পড়ালেখা করলাম কতো পরিশ্রম করে। উনি তো ব্রিলিয়ান্ট মানুষ বুঝে গেল উনাকে পেলে পড়তাম না’

ফায়াদ একটু থেমে একটু বিচলিত ভাবে বলল,
‘তোমাকে আমি ভালোবাসি কিনা জানি না৷বাসলেও কতোটুকু তা আমার জানা নেই। শুধু এতোটুকু জানি তোমাকেই লাগবে আমার এখন।তোমার ভালোবাসা টুকু হারাতে চাই না।’

অপরাজিতার ইচ্ছে করছে খুশিতে নাচতে। কিন্তু এই মুহুর্তে সে নাচবে না। বাসায় গিয়ে নাচবে। ফায়াদ অপরাজিতার মনোভাব বুঝে স্বভাবসুলভ গম্ভিরকন্ঠে বলল,
‘কিন্তু আমি যেন কোনো কাজে কোনো গাফিলতি না দেখি। ‘

অপরাজিতার এবার নিজেকে নিজের শান্তনা দিতে হচ্ছে,’ ব্যাটা মাথা বসে বসে হুকুম করে।’
মুখে বলল,
‘আচ্ছা’

ফায়াদ এবার হালকা হেসে বলল,
‘বাসায় যাও’

বাধ্যমেয়ের মতো বলল,
‘আচ্ছা’

গাড়ি থেকে বের হয়ে গিয়ে তার কিছু মনে পড়ায় অপরাজিতা আবার পিছে ঘুরে গাড়ির জানালায় নক করলো। ফায়াদ কাচ নামিয়ে জিজ্ঞাসু দৃষ্টিতে তাকালো। অপরাজিতা জিজ্ঞেস করলো,
‘ওই বাক্সটার চাবি দিবেন না?’

ফায়াদ কিছুক্ষণ ভাবার ভঙ্গিতে বলল,
‘আগে শর্ত পূরণ হোক’

বলেই অপরাজিতাকে কোনোকিছু বলার সুযোগ না দিয়ে গাড়ি স্টার্ট দিয়ে চলে গেল।অপরাজিতা হা হয়ে গেল।
‘শর্ত?’
পরক্ষণেই মনে পড়ে তার কান্না পাচ্ছে,
‘এ+ কি আমার শ্বশুরের ফ্যাক্টরি নাকি যে চাইলেই একটা দিয়ে দিবে!!ফাজিল ডাক্তার’

গাড়ি চালাতে চালাতে মুচকি হাসছে ফায়াদ। কখনো ভাবে নি সে এমন একটা পুচকি মেয়ে তে আটকাবে। তার দৃঢ় বিশ্বাস ছিল যে অপরাজিতা যতই চেষ্টা করুক তার মন গলবে না। কিন্তু আগুন তো গলাতে জানে। সেই তো আটকে গেল! এখন যে এই মেয়েকেই লাগবে।মেয়েটা যেন প্রেম শিখাচ্ছে।
গাড়ি চালাতে চালাতে ফায়াদের মনে পড়ে গেল সেদিনের কথা।
অপরাজিতা অনুভুতি ব্যক্ত করার পর থেকে ফায়াদ তাকে যথাসম্ভব এড়িয়ে চলার চেষ্টা করতো। সে কোনো খারাপ বিহেব করতে চায় না। ইতিমধ্যে মেয়েটার সম্পর্কে তার জানা হয়ে গিয়েছিল। ভীষণ ভালো মেয়ে।সকলের আদরের মধ্যমনি। কিন্তু ভীষণ দুষ্ট। এভাবে কিছুদিন এড়িয়ে চলায় অপরাজিতা যেন আরো মরিয়া হয়ে উঠে ফায়াদের জন্য। তাই ফায়াদ একটু কঠোর হয়। অপরাজিতার নাম্বার ব্লক করে দেয়। তাকে চ্যাম্বারে ঢুকতে দেওয়ার অনুমতি দেওয়া হতো না। ফায়াদ ভেবেছিল অপরাজিতা আর আসবে না। কিন্তু তার ধারনা ভুল বের হলো। সে যখন একদিন সকালে হাস্পাতালে আসলো। তার কেবিনের বাহিরে অপরাজিতাকে বসে থাকতে দেখলো। অবাক হলো সে। তার থেকে বেশি অবাক হলো অপরাজিতা তাকে দেখেই কান্না শুরু করে দিয়েছিল। মেয়েটার চোখ মুখ লাল হয়ে গিয়েছিল। কি বলবে সে বুঝতে পারছিল না। মেয়েটার কম বয়সের আবেগ মেয়েটাকে একদম কাবু করে ফেলেছিল।তারপর তাকে কেবিনে নিয়ে যখন ফায়াদ ঠান্ডা কণ্ঠে জিজ্ঞেস করেছিল,

‘তুমি কি এমনই করবে?’

অপরাজিতা কান্না করতে করতেই জিদ দেখিয়ে জোর কণ্ঠে বলল,
‘হ্যা’

তার কণ্ঠের জোর ই বলে দিয়েছিল সে থামবে না। ফায়াদ পরাজয় স্বীকার করেছিল এই পুচকি ফুলের কাছে।করতে দিয়েছিল তার ইচ্ছামতো। অপরাজিতার এই ছোট ছোট ভালোবাসা ধীরে ধীরে বড় ভালোবাসায় পরিণত হয়ে ফায়াদকে তাতে আবদ্ধ করে ফেলে৷
পুরোনো এই স্মৃতি মনে পড়তেই ফায়াদ নিজেকে শান্তনা দিল, ‘কিছু ক্ষেত্রে হেরে যাওয়া ভালো’

অপরাজিতা বাসায় প্রবেশ করতেই রামিসা বেগম থামালেন তাকে,
‘কোথায় ছিলি তুই?’

‘ঘুড়তে গিয়েছিলাম’

রামিসা মেয়েকে তীক্ষ্ণ চোখে পর্যবেক্ষণ করে বললেন,
‘তুই রুমে গিয়ে বস তোর সাথে কথা আছে আমার’

অপরাজিতা রুমে গিয়ে টেনশনে অস্থির।মায়ের আবার কি হলো। তার তো এইচএসসি শেষ। এখন কি বিয়ে দেওয়ার পাইতারি করছে নাকি?এখন কি গল্প মুভির মতো তাকে জোর করে বিয়ে দিবে? তাহলে তার ডাক্তারের কি হবে? এরকম নানা ভাবনায় তার মাথা ঘুরাচ্ছে।
রামিসা হাতের কাজ শেষ করে অপরাজিতার রুমে গিয়ে দেখলে অপরাজিতা ভীষণ ভাবনায় ব্যাস্ত। তিনি অপরাজিতাকে ডাকতেই অপরাজিতা ফট করে বলে উঠলো,
‘আম্মু আমাকে জোর করে বিয়ে দিবা না বললাম’

সাথে সাথে তার মাথা একটা থাপ্পড় পড়লো।রামিসা পাশে বসে বললেন,
‘সারাদিন মাথায় এগুলাই ঘুরে?’

অপরাজিতা গাল ফুলালো। পরক্ষণেই আবার খুশি হয়ে বলল,
‘তার মানে এটা না? যাক আলহামদুলিল্লাহ ‘

রামিসা অপরাজিতাকে নিজের দিকে ঘুরিয়ে বললেন,
‘হুম ঘটনা অন্য কিছু।এবার তুই বল ছেলেটা কে?’

অপরাজিতার মুখটা চুপসে গেল। অপরাধে যেন ধরা খেয়েছে। আমতা আমতা করে বলল,
‘কিসের ছেলে?’

রামিসা মেয়ের মাথায় খুব আদূরে ভাবে হাত বুলিয়ে দিল।
‘ইশ আমার মেয়েটা কতো ইনোসেন্ট ‘
সাথে সাথেই আবার কন্ঠ শক্ত করে বলল,
‘থাপ্পড় খেতে না চাইলে সুন্দরভাবে বল।’

অপরাজিতা মা এর কাছে থেকে একটু দূরে সরে গেল।
অস্থির হয়ে বলল,
‘আম্মু!তুমি এমন টিপিকাল মায়েদের মতো করতেছো কেন?এখন কি আমাকে জোর করে অন্য কোথাও বিয়ে দিবা?’

রামিসা বাকাভাবে তাকালেন মেয়ের দিকে,
‘তোমার কি আমাকে বাংলা ছবির ভিলেন মা মনে হয়?তবে একটা কথা সিউর হলাম যে তুমি প্রেম করছো। অন্য কোথাও বিয়ে দেই কিনা সেটা পরে কিন্তু তুই যে আমাদের ধোকা দিচ্ছিস?’

অপরাজিতা মায়ের কাছে এসে অসহায় ভাবে বলল,
‘ধোকা দিচ্ছি না আম্মু বিশ্বাস করো।প্রেম করছি না। যাস্ট একজন কে পছন্দ করি৷’

মেয়ের অসহায় মুখের দিকে তাকিয়ে রামিসার মায়া হলো।
‘সত্যি তো?’

‘হ্যা’

‘আচ্ছা উলটা পালটা কিছু যেন না শুনি তোর নামে৷ ছেলে যদি তোকে পছন্দ করে বলবি আমার সাথে দেখা করতে।’

বলেই তিনি বেরিয়ে গেলেন। রামিসা মেয়েকে ভালোভাবে চিনে। তার মেয়ে প্রেম করবে আর সে জানবে না এটা ভুল ধারনা অপরাজিতার।মেয়ের হুটহাট বেরিয়ে যাওয়া।রাতে ফোন এ কথা বলা।একা একা কান্না করা। তিনি কি দেখেনি এসব? অবশ্যই দেখেছেন। এখন দেখা যাক ছেলেটা কে। তারপর অবস্থা বুঝে ব্যবস্থা করবেন তিনি।

(চলবে)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here