#গভীর_গোপন
#৯ম_পর্ব
#অনন্য_শফিক
‘
‘
‘
মনির বললো,’ সবচেয়ে মজার বিষয় হলো কি জানেন? যার কাছে জেবার বিয়ে হয়েছে সে নিজেও জেনে শুনেই বিয়ে করেছে এই কথা যে, জেবা গর্ভবতী।বিষয়টা খুব অদ্ভুত লাগছে না? মনে হচ্ছে না , এরকম কি কখনো হয় নাকি? পৃথিবীতে এমন পুরুষ কি আসলেই আছে যে কি না,জেনে শুনে এরকম একটা পঁচা কাজ করবে? ‘
আমি আর জুঁই চোখ চড়কগাছ করে তাকালাম। অদ্ভুত বিষয় হলো এখন আর আশফাক, জেবাও তেমন প্রতিবাদ করছে না। আগের মতো কথা বলতেই লাফিয়ে বসা থেকে উঠে পড়ছে না।মুখ কাচুমাচু করে নিচ দিকে তাকিয়ে বসে আছে।দেখেই মনে হচ্ছে চিন্তায় মগ্ন। কিসের চিন্তা করছে ওরা? সবকিছু প্রকাশ হয়ে যাবার পরেও কিভাবে সবকিছুকে মিথ্যে প্রমাণ করে দেয়া যায় এরকম কিছুর?
এরকম কিছুর পরিকল্পনা করলে ভুল করবে। আমি আমার সিদ্ধান্ত ইতিমধ্যে মনে মনে নিয়ে নিয়েছি। এখন আশফাক নিজেকে ধোঁয়া তুলসী পাতা প্রমাণ করুক অথবা প্রমাণ করতে না পেরে সব দোষ স্বীকারই করুক।আমি আমার যা করণীয় তা করবোই।পিছপা হবো না এক পা-ও।
মনির কারোর কোন সাড়াশব্দ না পেয়ে নিজ থেকেই বললো,’অন্যের সন্তান গর্ভে নিয়ে আসা কোন মেয়েকে কোন পুরুষ বিয়ে করবে না তা ঠিক। কিন্তু কিছু না-পুরুষ আছে।তারা করবে।জেবার যার কাছে বিয়ে হয়েছিল সে আসলে কোন পুরুষই না। আশফাক আগে থেকেই এই লোককে চিনতো। এই লোকের ছোটখাটো একটা ফার্মেসি ছিল। আশফাক ওখান থেকে ওষুধ পত্তর কিনতো। সেই সুবাদে এই লোকের সঙ্গে তার বিরাট খাতির হয়ে যায়। এই লোকের সবকিছুই জানতো আশফাক। এই লোকের জনম জনমের শখ তার ফার্মেসিটাকে দাঁড় করানোর।বড় করবার। আশফাক তাকে বললো, ফার্মেসি দাঁড় করিয়ে কি করবেন? অনেক টাকা পয়সা ইনকাম করবেন এই তো? এতো টাকা পয়সা ইনকাম করে কি করবেন? কার জন্য এসব করবেন? সংসার তো করবেন না। করার ক্ষমতাও নাই আপনার। তাহলে শুধু শুধু অতো বড় শখ করে কি লাভ?
জেবার হাসব্যান্ড কোন উত্তর দিতে পারেনি। উত্তর দিবে কি করে? আশফাক তো ভুল বলেনি।
পরে আশফাক নিজেই বললো, এখনও বয়স আছে।সময় আছে। নিজের সব শখ আহ্লাদ মাটি দেয়ার কি দরকার! ইন্ডিয়ায় এর ভালো চিকিৎসা আছে। অনেকেই চিকিৎসা করে সুস্থ হয়ে আসছে। শুধু টাকাটা বেশি ঢালতে হয় এই আর কি! লাখ লাখ টাকা লাগবে।টাকা হলে আজকাল এসব ঠিক করা কোন বিষয়ই না! এমন চিকিৎসা দিবে ওরা, দেখবেন সব ঠিক। আপনি পুরোপুরি সুস্থ।
জেবার হাসব্যান্ডের মাথায় বিষয়টা গেঁথে গেল।যাবার কথাই। পৃথিবীতে কোনো পুরুষ চায় না নিজের অক্ষমতা নিয়ে না-পুরুষের জীবন যাপন করতে! কিন্তু বেচারার ঘাটে তো পয়সা পাতি নাই।ঘরের আলমারি খালি। সে হতাশার গলায় বললো,দশ টাকার মুরোদ নাই আর লাখ লাখ টাকা! টাকা কি গাছে ধরে ভাই?
আশফাক সঙ্গে সঙ্গে টুপ ফেললো। সে জানতো এই টুপ গিলবে জেবার হাসব্যান্ড। কারণ, পৌরুষ হয়ে সবাই বাঁচতে চায়।পৌরুষত্বহীন জীবন তো সে এতো কাল কাটিয়েছেই। এই জীবনে স্বাদ নাই।রুচি নাই। ভালো লাগা নাই। এমন রুক্ষ জীবন সে আর যাপন করতে পারছিলো না! যে করেই হোক এই অপমান আর অভিশাপের জীবন থেকে সে বেরিয়ে আসতে চেয়েছিল! কিন্তু পয়সার জন্য কিছুই হচ্ছিলো না।অবশ্য ঢাকার দেয়ালে দেয়ালে ওসব পোস্টারে লিখা ‘এক ফাইল যথেষ্ঠ’ দেখে বহু দৌড়ঝাঁপ করেছে এসবে। ওখানে গিয়ে ভাঙা কিছু পয়সাই খরচ করেছে শুধু।ফলের ফল গোল্লাই এসেছে সব সময়। আরো হতাশ হয়েছে সে।ভেবেই নিয়েছে,আর কোনদিন সে সুস্থ হতে পারবে না! এই আজন্ম অভিশাপ আর তাকে ছেড়ে যাবে না!
আশফাক তাকে ভরসা দেয়। বলে, টাকা নিয়ে ভাববেন না ভাই। আপনাকে আমি দশ লাখ দিবো।একটা পয়সাও কম দিবো না। আপনি একটা একটা করে নোট গোনে নিবেন। সমস্যা হবে না।
জেবার হাসব্যান্ড জানতে চায়লো,যেখানে কেউ কাউকে এক টাকা দিতে চায় না আর আশফাক তাকে দশ লাখ দিবে। এতো টাকা সে কেন দিবে? ঘটনা কি? টাকা কি হাতের মোয়া হয়ে গেছে নাকি আজকাল?
আশফাক অফার দিলো। বললো,জেবার বিষয়ে। সব খুলে বললো।
জেবার হাসব্যান্ড প্রথমে ইতস্তত করলেও পরে বুঝতে পারলো তার সবার আগে পুরুষ হতে হবে।ওই নাপুরুষত্বের অভিশাপ থেকে যে করেই হোক সবার আগে তাকে বাঁচতে হবে। এরপর সাতপাঁচ ভাবা যাবে।
শেষমেষ নগদ দশ লক্ষ টাকা যৌ*তুক গ্রহণের মাধ্যমে বিয়েটি করে ফেলে সে। মজার বিষয় হলো এই দশলক্ষ টাকার যৌ*তুকের বিয়েতেই আবার দশ লক্ষ টাকার কাবিনও ছিলো। বেচারা এতোই উদগ্রীব ছিল যে ওসব মাথায় নেয়নি পর্যন্ত। তার কথা হলো আগে সুস্থ হতে হবে। বিয়ের পর দীর্ঘদিন চিকিৎসা চলে জেবার হাসব্যান্ডের। এদিকে আশফাক সাহেবও বিয়ে করেন। বিয়ে করলেই তো সবার চরিত্র আর শুদ্ধ হয়ে যায় না। আশফাক সাহেবের চরিত্রও শুদ্ধ হয়নি। তিনি নিয়মিতই যাতায়াত করতেন জেবার কাছে।জেবা তখন হাসব্যান্ডের বাড়িতেই। হাসব্যান্ড দেখেও না দেখার ভান করতো।মনে কষ্ট এলেও সহ্য করতো।শত হোক, এখান থেকেই তো তার চিকিৎসার টাকা এসেছে। এই টাকা না এলে তার চিকিৎসা হতো কি করে? হয়তো সে তখন অপেক্ষা করেছে সঠিক সময়ের জন্য।
জেবা যে সন্তান গর্ভে নিয়ে এসেছিল বিয়ের আট মাস পর সেই সন্তান ভূমিষ্ঠ হয়।সবাই জানে আটমাসেই সন্তান হয়েছে। কিন্তু জেবা, আশফাক,আর জেবার পুতুল স্বামী জানতো আটমাস নয়, পুরো সময় পাড় হয়েই জেবার সন্তান প্রসব হয়েছে। জেবা তার সন্তানের নাম রাখে টুকি। এই যে এই দুঃখি টুকি! এই টুকি আশফাকেরই ঔরসজাত সন্তান।
কথাগুলো বলে শেষ করে মনির।
শুনে আমার কান কেমন যেন গরম হয়ে উঠে।কানের কাছে যেন বড় কর্কশ গলায় চেঁচাতে শুরু করে দেয় এক দল ঝিঁঝিঁ। শরীর কেমন ঝিমঝিম করতে শুরু করে। মনে হয় চোখ জুড়ে অতল আঁধার নেমে আসছে। আশফাক, আমার স্বামী আশফাক। খুবই নম্র ভদ্র যে।যাকে আমি ভীষণ রকম বিশ্বাস করতাম।যার বুকে স্বপ্ন সাজিয়ে আমি ঘুমিয়েছি শতো শতো রাত। সেই আশফাক আড়ালে আবডালে ছিল এমন নিকৃষ্ট এক অমানুষ!
ছিঃ!
আমার ঘেন্না হচ্ছে ওর চেহারার দিকে তাকাতে। এই সুনিপুণ চেহারার আড়ালে কি ভয়ংকর এক সাপ লুকিয়ে রেখেছিল সে, যা আমি কোনদিন দেখিনি। ভাবিনি। অনুভব করিনি!
জুঁই বললো,’ মনির ভাই, আপনি যা বলেছেন এর সব সত্যি তো?’
মনির বললো,’ আমি ঘাঁটাঘাঁটি করে এসব জেনেছি।এর অর্ধেক আগেই জানতাম।জেবার কাজিনের থেকে ছলে বলে কৌশলে অনেক তথ্য নিয়েছিলাম। যেহেতু জেবা তাদের ফ্যামিলির লোক।আপন চাচাতো বোন। সে তো জানবেই।আর বাকী অর্ধেক দেশে আসার পর জেবার হাসব্যান্ড থেকে জানলাম।জেবার হাসব্যান্ড এখন সুস্থ। দীর্ঘদিন চিকিৎসার পর সে সুস্থ হয়েছে। সুস্থ হবার পরেই তার সহ্য করার ক্ষমতা রহিত হলো। সে এখন আর তার স্ত্রীর পাশে অন্য কোন পুরুষকে দেখতে পছন্দ করে না। সে আর অন্যের বী*র্য থেকে জন্ম নেয়া মেয়েকে নিজের ভাবতে পারে না। সে তার এরকম পাপীষ্ঠ স্ত্রীকেও আর চায় না! সে এইসব পাপ থেকে ধুয়ে মুছে পবিত্র হতে চায়। নতুন করে জীবনের ভূমিকা লিখতে চায়। জীবনকে সাজাতে চায় জীবনের মতো করে। কিন্তু বেচারা এই জোড়া থেকে কিছুতেই ছুটতে পারছিলো না।ওই যে এতো গুলো টাকার কাবিন নামা। এই অতো টাকা কি তার আছে? এর জন্যই মুখ বুজে সব সহ্য করতে হচ্ছিলো। কিন্তু সহ্যের সীমা থাকে। তুলি ভাবি গর্ভবতী হবার পর আশফাক সাহেব নিজের বাসনা পূরণ করতে জেবার কাছে ঘন ঘন যেতেন। একজন সুস্থ সবল পুরুষ হিসেবে এটা কীভাবে সহ্য করতেন জেবার হাসব্যান্ড?
এবার আসি ভিডিও প্রসঙ্গে।
বলে সে থামলো।
আশফাক কি যেন বলতে চেয়েও থেমে গেল। শুধু ঠোঁট নাড়ালো।জেবা পিনপতন নীরবতা পালন করছে। যেন নিরবতা এখন তার ধর্ম হয়েছে।কথা বলতে সাহস পাচ্ছে না হয়তো।অথবা সে ক্লান্ত, শ্রান্ত আর বিধ্বস্ত।অথবা পরাজয় মেনে নিয়েছে মনে মনে।
মনির আগের কথায় জোড়া দিলো।বললো আবার,’ ভিডিও যদি দেখে থাকেন তবে একটু ভালো করে খেয়াল করলেই দেখবেন এই ভিডিও যে রুমে ধারণ করা সেই রুম জেবার হাসব্যান্ডের।জেবার হাসব্যান্ডের সব কথা শুনে আমার সন্দেহ হয়েছিল।তাই ওকে ফুঁসলিয়ে ওর বাসায় গিয়েছিলাম। গিয়ে দেখি সন্দেহ সত্যি।ভিডিও ধারণ করা হয়েছে ওখানেই।জেবা যে ঘরে থাকতো সে ঘরে। বিশ্বাস না হলে আমার সঙ্গে আপনারা যেতে পারেন।আমি গিয়ে আপনাদের ঘর দেখিয়ে আনবো।জেবার বিয়ের আগেই আমার সঙ্গে তার যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়। আবার এই ভিডিও তার বিয়ের আগের না। বিয়ের পরের। যেহেতু ওর হাসব্যান্ডের ঘরে ধারণ করা তাহলে এটা তো বিয়ের আগের হবার কোন চান্সই নাই।তো ওর সঙ্গে যেহেতু ওর বিয়ের আগ থেকেই আমার কোন ধরনের যোগাযোগ নাই তাহলে আমি এই ভিডিও পেলাম কি করে? আর ভিডিও না পেলে এটা ছ*ড়ালাম কি করে? ‘
মনির প্রশ্নটা আমার এবং জুঁইয়ের দিকে ছুঁড়ে মারলো। জুঁই এবং আমি উভয়েই চুপ করে একে অপরের মুখের দিকে তাকালাম। আমরা বুঝতে পারছিলাম না কি উত্তর দেবার আছে এখানে। কিংবা কি বলবো আমরা।
মনির অপেক্ষা করলো না।চুপ করে না থেকে সে নিজ থেকেই আবার বলতে শুরু করলো।বললো,’ এই বিষয়টা নিয়ে আমার অতো ঘাঁটাঘাঁটির প্রয়োজন ছিল না।পরের সমস্যাতে আমি কেন জড়াবো? কার সংসার ভাঙছে আর কার জোড়া লাগছে এটা তো আমার দেখার বিষয় না। কিন্তু সমস্যা হলো এখানে আমাকেও জড়িয়ে ফেলেছে জেবা। আমাকে জড়িয়ে,আমি ভিডিও ছ*ড়িয়েছি এই অপবাদ দিয়ে সে এই বাড়িতে এসে উঠেছে। যেহেতু আমার উপর এতো বড় একটা ব্লে*ইম এসে পড়েছে।জেবা আমাকে ব্লে*ইম দিচ্ছে।সো, আমার তো এখন মুখ বন্ধ করে রাখলে চলবে না।যে অপবাদ মুখ বুজে সহ্য করে সে সরল মানুষ নয়, দূর্বল মানুষ।আমি সরল কিন্তু দূর্বল না। আমি এই অপবাদ মুখ বুজে সহ্য করবো না।আমি যে কাজ করিনি তার ব্লে*ইম আমি ম*রে গেলেও নিজের কাঁধে তুলে নিবো না!আমি যে নির্দোষ এটা প্রমাণ করতেই এতো সব কথা বলা। এখানে ছুটে আসা। এখন প্রশ্ন হলো, যেহেতু আমি এটা করিনি তাহলে এই কাজ করেছে কে-
জেবা নিজে ? তার হাসব্যান্ড ? আশফাক ?
নাকি চতুর্থ কেউ আছে এখানে?
———
‘
#চলবে
‘
৮ম পর্বের লিংক –
‘
https://m.facebook.com/groups/371586494563129/permalink/809801997408241/?mibextid=Nif5oz