তুমি_আমি_দুজনে #লেখিকা_হুমাইরা_হাসান পর্ব-৫৫

0
901

#তুমি_আমি_দুজনে
#লেখিকা_হুমাইরা_হাসান
পর্ব-৫৫

চোখে মুখে চরম অস্বস্তি নিয়ে খাটের এক কোণায় বসে আছে তুরা, নেভি ব্লু রঙের শাড়িটার আঁচল হাতের আঙুলে পেঁচিয়ে যাচ্ছে অনবরত। ঘড়ির দিকে তাকিয়ে দেখল এগারোটা বেজে ছাব্বিশ মিনিট, পুরো ঘরটাতে ফুলের গন্ধে মো মো করছে। পাশেই বউ সেজে বসে আছে প্রিয়তা নামের মেয়েটা। প্রিয়তা ফুয়াদের বউ। দেখতে খুব বড় মনে হয়না, ছোট খাটো গোলগাল মায়াবী চেহারা। বেশ মানাবে ফুয়াদ ভাইয়ার পাশে।

-উফ,এই ভাইয়ারা সবাই কোথায় গেল, আমাকে দুই মিনিট বলে বসিয়ে সব উধাও। ভাবি তুমি নতুন ভাবির পাশে বসো আমি দেখে আসি একটু

বলেই উঠে ঘরের বাইরে চলে গেল রুহি। তুরা প্রত্যুত্তর করল নাহ। ঘাড় ঘুরিয়ে তাকাল পাশে বসে থাকা মেয়েটার দিকে। এই শীতল পরিবেশের আবহাওয়া তেও ঘামছে মৃদু, আর হাতের উল্টো পিঠে মুছে নিচ্ছে বারংবার। চেহারায় কেমন অস্থিতিশীল ভাব। তুরা বুঝতে পারছে ওর ব্যাপারটা। এগিয়ে গিয়ে কাছাকাছি বসল, কাঁধের উপর হাত রেখে বলল

-মন খারাপ করছে? কিছু লাগবে তোমার?

মেয়েটা ঘনঘন মাথা নাড়াল। তুরা আবারও বলল

-পানি খাবে?

আবারও না সূচক ঘাড় নাড়াল মেয়েটা। কিন্তু তুরা সেদিকে না দেখে গ্লাস থেকে পানি ঢেলে ওর সামনে ধরলেই ফট করে নিয়ে ঢকঢক করে এক নিঃশ্বাসে গ্লাসের পানি শেষ করে ফেলল। তুরা আবারও ওর কাছে বসে বলল

-এত ঘাবড়ানোর কিছু নেই। তুমি ভয় পাচ্ছ কেনো?

মেয়েটা আড়চোখে একবার তাকাল তুরার দিকে তারপর আবার মাথা ঝুকিয়ে নিল। তুরা ওর গালে হাত রেখে মুখটা উঁচু করে ঘোমটা টা একটু সরিয়ে দিল

-এখন ঘরে কেও আসবে নাহ। তুমি এভাবে থাক তাহলে একটু বেটার লাগবে। আর আমি তুরা,ফুয়াদ ভাইয়ের ভাবি হই। তোমার বোনের মতই আমি। কোনো প্রবলেম হলে আমাকে নিঃসংকোচে বলবে, কোনো জড়তা রাখবে না কেমন?

মেয়েটা হালকা হেসে ঘাড় কাত করল। এবার যেন একটু সহজ হলো। তুরার মুখের দিকে তাকিয়ে বলল

-আপনার বিয়ে হয়েছে কত বছর?

-বছর নাহ, এগারো মাস একুশ দিন হলো

হালকা হেসে বলল তুরা, মেয়েটি কিছু একটা ভেবে আবারও জিজ্ঞাসা করল

-আপনি কি আহান ভাইয়ের বউ?

সম্মতি সূচক ঘাড় নাড়াল তুরা। প্রিয়তা এবার আরও জড়তা কাটিয়ে তুরার দিকে ঘুরে বলল

-হ্যাঁ উনি বলেছিল ফোনে আপনাদের কথা।

-আচ্ছা? কি বলেছে?

-এই যে আহান ভাই আর উনি প্রায় সমবয়সী, ওই ভাইয়া প্রফেসর আর..

-ভাবি ফুয়াদ ভাই এখনি চলে আসবে। খালা তোমাকে ঘরে গিয়ে ফ্রেশ হয়ে নিতে বলল

প্রিয়তার কথার মাঝেই তনু এসে পরায় ও চুপ করে গেল, তুরা আসছে বলে তনুকে যেতে বলে প্রিয়তার হাত ধরে বলল

-তুমি ভয় পেয়ো না হ্যাঁ? ফুয়াদ ভাই এখনি চলে আসবে। আর শোনো বড় বোন হিসেবে একটা কথা বলছি, এ বাড়ির প্রতিটি মানুষই অসম্ভব ভালো। ফুফ আম্মা একটু কড়া করে কথা বললেও উনার মন আরও ভালো। তুমি শুধু একটু উনার পছন্দ মতো থাকবে,উনি তোমাকে মাথায় করে রাখবে। এ বাড়িতে কখনো তোমার কোনো অসুবিধা হবে না বুঝলে

মেয়েটা এবার স্পষ্ট হেসে ঘাড় কাত করল। ওকে ঘরে বসিয়ে বেরিয়ে এল তুরা।
বউ নিয়ে ফিরতে প্রায় সন্ধ্যা হয়ে গেছিল। এসে খাওয়া রেস্ট সেড়ে বউ ঘরে এনে সব গোছগাছ করতেই অনেকটা রাত হয়ে গেছে। এখন বাড়ি ঘর প্রায় ঠান্ডা।
তুরা গিয়ে মিনুর সাথে দেখা করে এলো। উনি এখনো ঘরে বসে জিনিস গোছগাছ করছে। তুরা সাহায্য করতে গেলে জোর করে বের করে দিল বলে ‘বাবুর কি দরকার সেটা দেখ,আমাকে সাহায্য করতে হবে নাহ,আর শুয়ে পরো তাড়াতাড়ি আজ অনেক ধকল গেছে ‘
তুরাও বাধ্য মেয়ের মতো ঘাড় নাড়িয়ে চলে এসেছে। কিন্তু চলে তো এসেছে এখন যাবে কি করে! আজকে বিকেলে ফুয়াদ ভাইয়ের শ্বশুরবাড়ির ঘটনা টা মনে পরে গেল ওর

~খাওয়া দাওয়া শেষে তুরা একাই ঘুরছিল বাড়িটাতে, সৌজন্যের খাতিরে অনেকের সাথে পরিচয় ও করেছে, একেবারে শেষ মুহূর্তের আগে যখন ও চলে আসছিল এক মাঝবয়েসী মহিলা ডাকল পেছন থেকে

-তোমার নাম কি?

-তাকওয়াতুল তুরা

-তুমি তো ছেলে পক্ষের তাই তো?

-জ্বি

-আমার নাম রাহেলা বানু। আমি প্রিয়তার বড় ভাবির ননদের শাশুড়ী

তুরা চোখ গোলগোল করে তাকিয়ে রইল খানিক। ও তো এখনো ফুয়াদ ভাইয়ের বউ টাকেই ঠিকঠাক দেখতে পারল নাহ। আর এ কোন ভাবির ননদের শাশুড়ী আসল। তবুও মেকি হেসে ঠোঁট গোল করে ও বলল।

-আচ্ছা সে যাই হোক। তোমার বাবা আসেনি? তাদের তো দেখছি না?

-জ্বি না বাবা মা আসেনি

-তাহলে আমাকে তোমার নাম্বার দাও তো

ভদ্রমহিলার এরূপ কথায় বেশ ভড়কে গেল তুরা। এ আবার কেমন মহিলা! দুটো কথা বলেই নাম্বার কেন চাচ্ছে। আমতা-আমতা করে বলল

-আমার নাম্বার কেন?

-শোনো আমি ওত ভনিতা করেকথা বলব না। যা বলার সরাসরি বলছি। তোমাকে দেখে আমার পছন্দ হয়েছে। আমার বোনের ছেলের জন্য অনেকদিন ধরেই মেয়ে খুঁজছে। তাই তোমাকে ওর জন্য চাইতাম। বাবা মা যখন আসেনি তোমাকেই বলছি, আমার বোনের ছেলে খুব ভালো জাগায় চাকরি করে তুমি খুব ভালো থাকবে

আগামাথা না শুনেই মহিলা হড়বড় করে বলে দিল। তুরার চোখ কপালে, এখন ভাবছে আহান ভুল বলেনি। এই বিয়ে বাড়িতে আসা মহিলা গুলো চলমান শাদি ডট কম হয়। দেখেই বিয়ের প্রস্তাব দিয়ে দিল! তবুও বিস্ময় দমিয়ে স্বাভাবিক গলায় বলল

-দেখুন বাবা মা তো আসেনি তবে আমার স্বামী এসেছে। আপনি চাইলে তার সাথে কথা বলে দেখতে পারেন

হাসি হাসি মুখ করে বলল তুরা। তুরার কথা শুনে মহিলা খানিক মোটা ভ্রু কুচকে তাকিয়ে রইল। বার কয়েক পলক ঝাপটে বলল

-এই মেয়ে,কি যা তা বলছ। স্বামীর সাথে কথা বলব মানে?

-হ্যাঁ, বাবা মায়ের পরে স্বামী ই তো গার্জেন হয় তাই না?

-তুমি বিবাহিত?

-হ্যাঁ, একদম নির্ভেজাল টাইপ বিবাহিত

তুরার রম্য করে বলা কথায় মহিলার যেন বিশ্বাস হচ্ছে নাহ। নিশ্চয়ই তার সাথে হেয়ালি করছে মেয়েটা! তিনি জোর গলায় বলল

-কই তোমার বর,ডাকো তাহলে।না দেখলে বিশ্বাস করব না

তুরা মেকি অবাক হওয়ার ভান ধরল। চোখ কুচকে বলল

-সেকি,আপনার বিশ্বাস হচ্ছে না! ওকে এক মিনিট

বলেই এদিক ওদিক তাকালে অদূরেই আহানকে দেখতে পেল। ভীড়ের মধ্যে কিছু খুঁজছে যেন। তুরা এক হাত উচিয়ে আহানকে ইশারা করে ডাকল। আহান ওর দিকে আসতে লাগলে তুরা আরও দ্বিগুণ ঢং করে বলল

-ওই দেখুন আসছেন উনি। আমাকেই খুঁজছিলেন এতক্ষন। আসলে এই উনিটা এত দুষ্টু হয়েছে না আমাকে না দেখে দুই মিনিট ও থাকতে পারেনা। সারাদিন বউ বউ করে বেড়ায়। আমিও কিছু বলিনা এত সুইট,কিউট,কুচুপুচু,সনুমনু চকলেট, অরেঞ্জ,রেড ভেলভেট ফ্লেভার পেস্ট্রি কেক টাইপ জামাই থাকলে তাকে কিছু বলা যায় বলুন! ওকে দেখলেই তো খেয়ে ফেলতে ইচ্ছে করে যা সুস্বাদু না উনিই!

একেবারে হাত নাড়িয়ে ঢং করে বলল তুরা।মহিলা চোয়াল ঝুলিয়ে তাকিয়ে আছে তুরার দিকে। দেখেই বোঝা যাচ্ছে কথার আগামাথা তো কিছু বোঝেই নি বরং মাথায় গোলমাল হয়ে গেছে তুরার কথা শুনে। তুরার দম ফাটা হাসি পাচ্ছে কিন্তু জোর করে আটকে আরও কিছু বলতে যাবে তখনই আহান একদম কাছাকাছি এলে তুরা আহানের কাছে এগিয়ে গিয়ে মহিলাকে উদ্দেশ্য করে বলল

-ওগো শুনছেন,দেখুন না এই ইনি হলো ভাবির ভাবির ননদের শাশুড়ী। ইনি তার বোনের ছেলের সাথে আমার বিয়ে দিতে চান,আপনি বলুন তো এ ব্যাপারে আপনার মতামত কি

বলেই আহানের দিকে তাকাতেই সোজা হয়ে দাঁড়াল। এই রে এবার বারাবাড়ি রকমের হয়ে গেল! আহান প্রথমে সৌজন্যতা নিয়ে থাকলেও এখন চোখ মুখ শক্ত করে আছে। মহিলা আহানের এরূপ রূপ দেখে হয়তো ভড়কে গেছে তড়িঘড়ি করে সরে যেতে যেতে বলল

-কি যানি বাপু, এত বাচ্চা একটা মেয়েই যখন বিয়ে করেছে একটু কাছে কাছে রাখলেই পারে। শুধু শুধু এতগুলো সময় নষ্ট হলো আমার

বলেই মোটা শরীর নিয়ে হেলতে দুলতে চলে গেলেই আহান তুরার হাত চেপে ধরল। আশেপাশে তাকিয়ে তুরার কাছে এসে বলল

-তুমি বড্ড ফাজিল হয়ে গেছ তুরা, খুব জ্বালাচ্ছ আমাকে। বাসায় চলো তারপর দেখাচ্ছি আমি কোন ফ্লেভারের পেস্ট্রি কেক টাইপ
~

ভাবতে ভাবতেই ঘরের সামনে এসে দাঁড়াল তুরা। একটু আগেই আহানকে দেখেছিল বউয়ের বাড়ি থেকে আনা জিনিস গুলো বিহান আর আরমানকে সাথে নিয়ে এক এক করে ভেতরে এনে রাখছেন। এখন তো সবাই ঘরে চলে গেছে কাজ সেরে উনি কোথায় তাহলে?
আস্তে করে দরজাটা আলগা করে দেখল আহান খাটের উপর চিত হয়ে শুয়ে আছে কপালের উপর এক হাত রেখে। তুরা খুব সাবধানে সন্তপর্ণে পা ফেলে ভেতরে এল যাতে আহান টের না পাই। ক্লান্ত আছে ঘুমিয়ে যাবে। আস্তে করে পাশের আলনার উপর থেকে সুতির শাড়িটা নিয়ে ওয়াশরুমে ঢুকে পরল। মিনিট দশেক ব্যায় করে গোসল করে শাড়ি পালটে বেরলে দেখল আহান একই ভাবে শুয়ে আছে। তুরা তোয়ালে টা হাত থেকে রেখে দাঁড়িয়ে পরল চুপচাপ।
লোকটা ঘুমিয়ে আছে কিনা বোঝা যাচ্ছে না, বুকের ভেতর দুরুদুরু কম্পন শুরু হয়েছে, কেন যানি আহানকে আজও ভীষণ ভয় লাগে তুরার, ওর কাছাকাছি থাকলে এক অদ্ভুত অস্থিরতা জেঁকে ধরে ওকে। তার উপর তিখন যেভাবে বলল

-কি হলো ওখানে দাঁড়িয়ে আছ কেন? আমি কি উঠে আসতে পারব না?

প্রচন্ড শীতল কণ্ঠে গায়ে কাটা দিয়ে উঠল তুরার। বুকের ভেতর ধক করে উঠল। পেছনে ঘুরে তাকাতে দেখল দরজার ছিটকিনি তুলে দেওয়া। সে তো লাগাইনি,তার মানে আহানই উঠে লাগিয়েছে দরজা টা!

-এখানে আসতে বলছি,আমি উঠে গেলে ভালো হবে না তোমার জন্য

তুরা ভদ্র মেয়ের মতো এগিয়ে গিয়ে বসল আহানের পাশে। ভয়ে ঠোঁট কামড়ে ধরে রেখেছে। আহান চোখ থেকে হাত নামিয়ে উঠে বিছানার হেডবোর্ডে হেলান দিয়ে বসল, তুরার ভীতসন্ত্রস্ত মুখের দিকে খানিক নিষ্পলক তাকিয়ে থেকে এক টানে তুরাকে বুকের উপর নিয়ে বলল

-এভাবে পালিয়ে বেড়ালে আমি কোন ফ্লেভারের এটা কি করে বোঝাব বলো তো

-আ আপনি কেন কোনো ফ্লেভারের হবেন,ফ্লেভার তো আইসক্রিম, কেকের হয় মানুষের নাহ

-নাহ,,মানুষের ও হয়। আমার বউ যখন বলেছে অবশ্যই হয়

তুরা মাথা নামিয়ে নিল। এখন নিজের পাকনামির উপর নিজেরই রাগ হচ্ছে। কেন যে তখন ওই মহিলাকে জব্দ করতে ওসব বলতে গেলো।
আহান তুরার ঘাড়ের পেছনে হাত রেখে মুখটা ভীষণ কাছে আনল, তুরার পাপড়ির ন্যায় পেলব ঠোঁটে পুরু অধরযুগল ঘষে দিতেই ঘুঙিয়ে উঠল তুরা, আহানকে সরিয়ে দিতে গেলে ও আরও চেপে ধরল, ঠোঁটের পাশটাতে ঠোঁট লাগিয়ে নেশাগ্রস্ত গলায় বলল

-বড্ড জ্বালাচ্ছ আমাকে তুমি ইদানীং। তোমার দূরে দূরে থাকা যে আমি সহ্য করতে পারিনা যেনেও আমাকে তড়পাচ্ছ। এর মাশুল দিতে হবে তো!

বলেই এক ঝটকায় পাশে শুইয়ে দিয়ে গলার মাঝে মুখ ডুবিয়ে দিল। তুরার ঘাড়ে কামড়ে ধরেই এক হাত বাড়িয়ে টেবিল ল্যাম্পটা বন্ধ করে দিল।

••••

বিকট শব্দে ফোন বাজায় হুড়মুড়িয়ে উঠল সাদমান। পড়তে পড়তে টেবিলেই ঘুমিয়ে পরেছিল,তার উপর আচমকা হুড়মুড়িয়ে ওঠায় ঘাড়ে ভীষণ টান লাগল।
খানিকটা ধাতস্থ হয়ে ফোন হাতে নেওয়ার আগেই কেটে গেল।
কিন্তু অনতিবিলম্বে আবারও শব্দ করে বেজে উঠল,সাদমান বিরক্ত হলো খুব এত রাতে আবার কেও ফোন দেয়!
স্ক্রীন না দেখেই কানে ধরে ঘুমে ঢুলু ঢুলু গলায় বলল

-হ্যালো কে

-“তোমার অবিন্যস্ত রূপের খামখেয়ালি হাসিতে আমার আমার দিন কাটে
আমার বেপরোয়া, বেহায়া অনুভূতিরা দিগবিদিক ভুলে তোমার পানে ছোটে!
এত নির্মল, রূপসীর হাসি আমি কোথায় পাব
তোমার অস্তিত্ব ভরা শহর ছেড়ে আমি কোথায় যাব!”

চট করে সাদমানের ঘুমের রেশ ছুটে গেল। কান থেকে ফোনটা নামিয়ে আবারও কানে ধরল। ঠোঁট ভিজিয়ে আমতা-আমতা করে বলল

-ক্ কে,মানে কি

-আমি,মানে যাকে নিয়ে কবিতা লেখে তুমি অপ্রকাশিত কবি হয়ে গেছ সেই আমি বাছা

ফারিহার এহেন কথায় সাদমান অপ্রতিভ হলো, তবুও গলা ঝেরে কড়া কণ্ঠে বলল

-হোয়াট! এত রাতে কেন ফোন দিয়েছিস তুই? আর কি যা তা শোনাচ্ছিস

-ওমাহ, ওমনেই যা তা হয়ে গেল নাহ? তুই ই তো লিখেছিস এসব যা তা

-আজেবাজে বকিস না তো ফোন রাখ

ফারিহা তবুও দমল নাহ। ক্ষেপাটে গলায় বলল

-দেখ ভদ্দরলোকের ছা, একদম পার্ট নিবি না হ্যাঁ, তুই লিখিস নি? বল এই কবিতা টা তুই ই লিখিস নি?

-তুই আমার ডায়েরি পড়েছিস? কতটা ম্যানারলেস হলে মানুষ কারো পারমিশন ছাড়া তার পারসোনাল জিনিস নিয়ে ঘাটাঘাটি করতে পারে

-একশ বার করব, শুধু ঘাটাঘাটি কেন ঘেটে ঘ করে মানুষটা শুদ্দ গিলে ফেলব তোর কি বে!

-হুহ,,মুখের কি ভাষা

-কি করব জনেমান,তোমার মতো কবিতা লিখতে পারিনা তো। তুমি কবিতা শোনাবে আর আমি মুখের ভাষা,,ওয়াহহ একদম রাব নে বানাদি টাইপ হবে

-শাট আপ, আমি কবিতা লিখি আর উপন্যাস লিখি, তোকে অন্তত শোনাব নাহ

-ওমাহ,আমার জন্যেই তো লিখেছিস, আমাকে শোনাবি না তো কাকে শোনাবি

-তোকে কে বলল আমি তোর জন্যে লিখেছি,আর রাত বিরেতে ফোন দিয়ে জালাবি নাহ তো,বাই

-এই এই খবরদার,ফোন ভুলেও কাটবি নাহ। এক তো আমার বান্ধবী টা বিয়ে খেতে গেছে। ও নিজেই বর সামলাতে ব্যস্ত বলে ওকে ফোন করতে পারছি নাহ,তুই ফোন কাটবি তো বাড়ি চলে আসব কিন্তু

সাদমান বিরক্ত হলো।টেবিল থেকে উঠে খাটে এসে শুয়ে চটা গলায় বলল

-আচ্ছা জ্বালা তো,কয়দিন তো ভালই ভাব দেখাই ঘুরলি আবার ছ্যাছড়ামো শুরু করেছিস কেন তুই?

-তখন তো জানতাম নাহ তুই আমার বিরহে কবি হয়ে বেড়াচ্ছিস

-দেখ ফালতু বকবি না একদম,তোকে কে বলেছে আমি তোর জন্যে কবি হয়ে বেড়াচ্ছি? আমার ইচ্ছে করেছে আমি লিখেছি এর সাথে তোর কোনো কানেকশন নেই

ফারিহা হাসল। অন্ধকারে হাসিটা দেখাও গেল নাহ,আর নাইবা কোনো শব্দ হলো। কৌতুহলী গলায় বলল

-তাহলে তোর কবিতার পৃষ্ঠায় আমার কানে দেওয়া শুকনো ফুলটা কি করছে বল তো। এটাও কি অস্বীকার করবি?

সাদমান আরও অপ্রস্তুত হলো।খানিক চুপ করে থেকে জড়তা ভরা গলায় বলল

-ফুল কি তোর বাপের গাছের নাকি,ওটা আমি রাস্তায় কুড়িয়ে পেয়েছি

-তুরা দুটো কাঠগোলাপ এনেছিল ওর বাড়ির বাগান থেকে, দুটো ফুলের পাপড়ির উপর নাম লিখে একটা ওর কানে আরেকটা আমার কানে দিয়েছিল। ক্লাস শেষে ওটা আর আমি খুঁজে পাইনি,,এখন কি বলবি পারবি তোর রাস্তায় কুড়িয়ে পাওয়া ফুলটাতে আমার নামটা কি করে লেখা?

সাদমান বাকরুদ্ধ হলো,এর কোনো জবাব তার মাথায় এলো নাহ। খানিক ফোস ফোস করে নিশ্বাস ছেড়ে কান থেকে নামিয়ে ধপ করে ফোনটা কেটে দিল। এর উত্তর আসলেই জানা নেই ওর,,ও কেন ফুলটা রেখেছে ডায়েরির ভাজে,, কি উত্তর দেবে ও? আর কেনই বা চুরি করে ওর কান থেকে ফুলটা নিয়ে লুকিয়ে এনেছে তারই বা কি কারণ দেখাবে!
.
.
.
চলবে ইনশাআল্লাহ

#হীডিংঃ আসসালামু আলাইকুম। প্রথমত আকস্মিক অনিয়মতার কারণে দুঃখিত, কিন্তু কাল থেকে যথারীতিতে দিতে পারব এমনটাও আস্বস্ত করতে পারছি না। কয়েকটা দিন হয়তো মিসড হবে, অবগত করে দিতে পারব কিনা তাও বলতে পারছি নাহ,,সিরিয়াস ইস্যু! দীর্ঘ উপন্যাসের শেষের সময়টাতে সকলের ধৈর্য, আর সহযোগিতা আশা করছি,,ধন্যবাদ❤️

#Humu_❤️

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here