বায়বীয়(২য় পর্ব) ###লাকি রশীদ

0
237

###বায়বীয়(২য় পর্ব)
###লাকি রশীদ

কি বলবে ভাইয়া বুঝতে পারছিলাম না। নতুন কোনো ঝামেলায় না জড়ালেই হলো। আমার ভাবনাগুলো মিথ্যে প্রমাণিত করে ভাইয়া বললো সব মানুষের হাতে ব্যবসা হয় না। দেখ্ না তুই যাতেই হাত দিস্ ছক্কা মেরে
দিস্ একেবারে। আমি অনেকদিন ধরে ভাবছিলাম বেশ কিছু টাকা অলস পড়ে আছে। আমার মনে হয় ঢাকায় বাণিজ্যিক এলাকায় ভালো খাবারের দোকান খুব চলবে। তুই এটা মানুষ রেখে চালালি। লাভ যা হয় তা ফিফটি ফিফটি নিলাম। ইনভেস্ট করার জন্য যা লাগে দুজনে দিলাম। আমি হেসে বলি ভাইয়া এতো সহজ না সবকিছু। নার্সারি চলেছে বলে খাবার দোকান ভালো চলবে, ভালো লাভ হবে…………. ভাবছো কেন? দুটো কিন্তু সম্পুর্ন ভিন্ন ব্যবসা।তুমি বরং অন্য কাউকে দেখো।
তাছাড়া এই ৫ বছরে এতো লাভ হয়নি যে খাবারের ব্যবসায় ক্যাপিটাল হাফ দিতে পারবো। আমার এসব ব্যাপারে কোনো আইডিয়া নেই। এতো কম জ্ঞান নিয়ে এরকম ব্যবসায় ঝাঁপিয়ে পড়া মানে আত্মহত্যার শামিল

ভাইয়া এবার বলছে ঠিক আছে তোকে মূলধনের টাকা দিতে হবে না। পুরোটা ই আমি দেবো। তুই শুধু রেষ্টুরেন্ট টা পরিচালনা করলি। আমার এবার বিরক্ত লাগে,বলি
শোনো ভাইয়া বোকার স্বর্গে বাস করছো তুমি। টাকা যদি নষ্ট করতেই হয় বুড়িগঙ্গায় ফেলে দিয়ে এসো। শুধু শুধু আমাকে এসবে দয়া করে টেনো না তো। সারাটা জীবন ধরে দেখে আসছি ভাইয়া খুশি হলে মা খুশি,সে রাগ হলে রাগ। রাতে শুনি একমনে গজগজ করছে কত
খুশি হয়েছিলাম এই ভেবে যে ছেলেটা যদি দেশে কিছু করে তবে আস্তে আস্তে দেশের প্রতি টানটা বাড়বে। কিন্তু আমার খুশি কি আর স্থায়ী হয়? তোকে তো আর এক পয়সা দিতে হচ্ছে না। দেখ্ না চেষ্টা করে। লাভের মুখ না দেখলে তোকে তো মেরে ফেলবে না। আমি মৃদু স্বরে বলি কিন্তু আমার খারাপ লাগবে। আমার না হোক,
টাকাটা তো আমার ভাইয়ের অনেক কষ্টের জমানো। তুমি সেটা বুঝবে না মা। রেগে গেছে মা এবার চিৎকার দিয়ে বললো, না আমি বুঝবো কেন? বুঝবুদ্ধি যা সব
তো আল্লাহ তোমাকে দিয়েছেন। ঠিক সেই মুহূর্তে বাবা রুমে ঢুকে বলছে আবার তোমাদের মা মেয়ের ধুন্ধুমার যুদ্ধ লাগলো কেন শুনি।

আমি মাকে কথা বলতে না দিয়ে বাবাকে বলতেই দেখি
বাবা কিছুই জানে না। তারমানে ভাইয়া এই ব্যাপারটা মাকে শুধু বলেছে। বাবা শুনে মাথা নেড়ে বলছে কথা
শোনো !!! আমি তো কিছুই জানি না। এসব কি মায়ের হাতের মোয়া না কি? নার্সারি বাসায় ছিল,ক্ষতি হলেও গা সওয়া হতো। ওখানে তো চড়া দামে মাসিক ভাড়া মেটাতে হবে। তাছাড়া আজকাল কতো জনকে কতো টাকা খাওয়াতে হয় ব্যবসা করতে গেলে সে বিষয়ে কি তোমার কোনো আইডিয়া আছে? ছেলের কথায় নাচা শুরু করে দিলে যে !!! ওখানে কোনো কিছুতে ইনভেস্ট করলেই তো হয়। মা এবার কাঁদছে,নাক টেনে টেনে বলছে ওখানে করে না কেন বলছ। ওখানে ব্যবসাপাতি
করলে ছেলে কি আর এখানে ফিরবে? বাবা মুচকি হেসে বললো, শোনো ভুল ধারণা মনে পুষে রেখে কষ্ট পেও না। ছেলে তোমার এমনিতেই ফিরবে না। আমার কথা বিশ্বাস না হলে ওকেই জিজ্ঞেস করে দেখো। তার ১৮ ও ২০ বছরের দুটো বাচ্চা ফারষ্ট ওয়ার্ল্ড ছেড়ে কোন
দুঃখে এখানে আসবে? ওসব ভাবলে শুধু মনোকষ্ট বাড়ে

আমি তখনও বুঝিনি ভাইয়া তো পরীর ই ভাই। আমার কামড় কে যদি কচ্ছপের কামড় বলা হয় তবে ভাইয়ার জেদও তো তাই। পরদিন ভাইয়া নাস্তার টেবিলে বললো
আমাকে দুটো ঘন্টা সময় দিতে পারবি? তোকে একজন
এর সাথে আলাপ করিয়ে দেবো। আমি হেসে বলি বিয়ে টিয়ের ব্যাপারে দেখাসাক্ষাৎ করাতে চাইলে বাদ দাও। আপাতত আমার মাথায় এসব নেই। প্রথমে হতভম্ব হলেও পরে মাথায় আলতো চাটি মেরে বললো ওসব ছন্দার কাজ। আমি জীবনেও ম্যাচমেকিং এর যন্ত্রণায় যাই না। ভয় লাগে দুই পক্ষের গালাগাল শুনতে শুনতে না আবার কান ঝালাপালা হয়ে যায়। এসব কিছু না,
চল্ তো আগে দেখবি কোথায় কাকে দেখাতে নিয়ে যাই

নিয়ে গেল মহাখালীর এক রেস্টুরেন্টে। আমি ভাবছি এইমাত্র ভরপেট খেয়ে এসে আবার ক্ষুধা লাগলো না কি !!! দেখি ছোট চুলের অধিকারী মিষ্টিহাসিনী একজন
মেয়ে উপস্থিত। ভাইয়ার বন্ধুর স্ত্রী। ভাইয়া এবার বলছে উনার অনেক গুলো রেষ্টুরেন্ট। ভীষণ ব্যস্ত থাকেন শুধু তোকে তার জীবনের সত্যি ঘটনা গুলো শোনাবার জন্য তাকে অনুরোধ করেছি। মন দিয়ে শোন্ প্লিজ।

ভদ্রমহিলা বলা শুরু করলেন, আমি চাকরি করতাম। অফিসিয়াল ঝামেলার কারণে ছুটি পাইনি। যে কারণে মিসক্যারেজ হয়ে যায়। অভিমানে চাকরি ছেড়ে দেই। ক্যাটারিং সার্ভিস দিয়ে শুরু। আমার প্রথম বিনিয়োগ ছিল ৩০ হাজার টাকা। সেখান থেকে টিফিন বক্স এটা সেটা কিনে শুরু করা। এখন ক্যাটারিং সার্ভিস সহ মোট ৩টা রেষ্টুরেন্ট আমার। যার বর্তমান মূল্যমান ২৫ লক্ষ টাকা। খাবারের প্রতি আমার একটা আকর্ষণ আছে। পাশাপাশি বন্ধুরা উৎসাহ দিলো তুমি তো বেশ ভালো রান্না করো। দেখো না ওইদিকে কিছু করতে পারো কি না। তখন আমি বাংলাদেশ পর্যটন কর্পোরেশন থেকে ১ বছরের শেফ কোর্স করলাম। ওই কোর্স করা অবস্থায় একটি অফিসে খাবার দেয়া শুরু করলাম। বাসায় ১ জন সহকারী নিয়ে রান্না করতাম। তখন সবাই আমাকে বুয়া বলা শুরু করলো। অনেকেই আমার সাথে কথা বলা বন্ধ করে দিলো। আমি মাষ্টার্স পাস মেয়ে বাবুর্চির
কাজ করবো? দেখতে ভালো লাগে না। সমাজের সাথে যায় না।

মহাখালীতে প্রথম রেষ্টুরেন্টে শুরু করলাম। যাত্রাটা ভালো করেছিলাম, সুন্দর করেছিলাম। কিন্তু সব সুন্দর তো ভালো থাকে না। ওইসময় আমি কনসিভ করলাম।ষ্টাফদের উপর দায়িত্ব দিয়ে গিয়েছিলাম। দেখা গেল ওরা বসিয়ে দিয়েছে। নিজে না থাকলে যা হয় আর কি।
ওখান থেকে চলে এসেছিলাম ৩০০ ফিটে। ঢালাওভাবে
শুরু করলাম এখানে। প্রথমে কাবাব ও পরে পিৎজা ও
পাস্তার দোকান দিলাম। ছোট ছোট দুটো বাচ্চা নিয়ে ৩টা রেষ্টুরেন্ট চালাতে ভীষণ কষ্ট হয়। দিন শুরু হয় ভোর ৫টায়। ৫ বছরের ব্যবসায়িক জীবনে দোকান পুড়ে যায় ২ বার। উঠে দাঁড়াই ব্যাংক ঋণ ও আমার বন্ধুবান্ধবের সহযোগিতায়। ব্যবসা মানেই উত্থান পতন।
খারাপ সময়ে ভেঙ্গে পড়ি, মনে হয় কেন এলাম? যতটা
না ব্যবসায়ি হিসেবে প্রতিবন্ধকতার সম্মুখীন হচ্ছি এর চেয়ে বেশি হচ্ছি মেয়ে হিসেবে। অনেক বার হোঁচট খেয়েছি,খাচ্ছি এবং খেতে থাকবো জানি। এই সবকিছু কে পাত্তা না দিয়ে হাঁটছি, হাঁটার চেষ্টা করছি। লোকসান
করে করে লাভের মুখ দেখছি, আবার লোকসানও করেছি। আমি এখনও নিজেকে সফল বলি না,সফল হবার চেষ্টা করছি (কৃতজ্ঞতা; ইশরাত জাহান নিপা, ৯
ডিসেম্বর ২০১৯, BBC News বাংলা)।

আসার সময় গাড়িতে বসে বারবার ভদ্রমহিলার যুদ্ধের কথা ভাবছিলাম। দুটো বাচ্চা নিয়ে যদি এতদূর আসা যায় তবে আমার তো কাউকে দেখে রাখা, মানুষ করা
…………… এসব দায় দায়িত্বও নেই। ঝাড়া হাত পা। কি করবো, নতুন আরেকটি ঢেউয়ের সামনে দাঁড়িয়ে দেখব
না কি দন্ডায়মান থাকা যায় কি না। নিজেকে ঝুঁকিতে ফেলে আগের নিরাপদ নিশ্চিন্ত আবাসে বিজয়ীর স্বাদ পাওয়া যায় কিনা…………পরীক্ষা করে দেখবো না কি?
নিরুদ্বেগ নিরুদ্বিগ্ন নিস্তরঙ্গ জীবনে মাঝে মাঝে ঢেউয়ের
সঞ্চার………কি যে দরকারি সেটা তো আমি হাড়ে হাড়ে জানি। কিন্তু ঢেউয়ের তোড়ে যদি ভেসে যাই তাহলেও তো সমস্যা।ভাইয়া চালাক মানুষ,সময় দিচ্ছিল আমায়।
এবার বললো কিরে কি ভাবছিস? এবার ভয় ভেঙ্গেছে
তো? আমি বলি এভাবে হুট করে বলি কিভাবে? আরো ভাবতে হবে। এতগুলো টাকা তোমার,যদি লসের খাতা
তে যোগ হয় ………….সেটাই ভাবছি। ভাইয়া বলে ভাগ্য আর পরিশ্রম এই দুটোতে বিশ্বাস করি আমি। ভালো করেই জানি পরিশ্রমের কোনো অভাব হবে না। বাকিটা তো আল্লাহর হাতে। টাকা নিয়ে এতো চিন্তা ভাবনার দরকার নেই। গেল তো গেল, তোকে অন্তত জবাবদিহি করতে হবে না কথা দিচ্ছি।

তারপরও মনস্থির করতে পারিনি। পরের দিন রাতে ভাইয়া তাড়া দিচ্ছে, কি রে কি ঠিক করলি? আমার হাতে সময় থাকতে থাকতে যদি জানাতি প্রাথমিক ভাবে অনেক কিছু সাহায্য করে যেতে পারতাম। আমি বাবার দিকে তাকিয়ে বলি কি করবো বাবা? অদ্ভুত এক
সিদ্ধান্তহীনতায় ভুগছি। বাবা বললো করবি কি করবি না যদি ফিফটি ফিফটি মনে উদয় হয় তবে বিসমিল্লাহ্
বলে শুরু করে দে। আল্লাহ ভরসা। বললাম তাহলে কিছু দিন আপাতত তোমাকে নার্সারিতে বসতে হবে। না হয় এরা আমাকে বসিয়ে দিবে। সেই থেকে আরেক সেক্টরে পা রাখা। সেই ছোট চারাটি ১০ বছরে আজ বট
বৃক্ষ হয়ে দাঁড়িয়েছে। সে জায়গা সকালে দুপুরে সন্ধ্যায় খাবার রসিকদের আড্ডায় হাসিতে গমগম করতে থাকে। ভাইয়া চেয়েছিল দামী দামী আইটেম রাখবে। আমি মানি নি। সব দামের খাবার ই সবসময় চলে।

ষ্টুডেন্টদের জন্য মাসের বেশ কয়েকদিন আকর্ষণীয় অফার থাকে। বিভিন্ন ধরনের প্ল্যাটারের ম্যেনু কি হবে শেফের সাথে আলাপ করে আমিই ঠিক করি। যদিও হাতেকলমে দায়িত্বে আছি আমি কিন্তু প্রকাশ্যমান নই। বাইরে থেকে কারো দৃষ্টি ভেতরে যাবে না এমনি একটি গ্লাসঘেরা ছোট কেবিন আমার জন্য বরাদ্দ থাকে। খুব কাছেই বেসরকারি একটি মেডিকেল কলেজ থাকায় দুপুরে সন্ধ্যায় এ মেডিকেল কলেজের ছাত্র ছাত্রীরাই বেশি আসে। এদেরকে ভেতর থেকে জুলজুল দৃষ্টিতে দেখতে দেখতে তখন আমার মেয়েটার কথা মনে হয়। উনিশ বছর বয়সে এবার পা দিলো সে। এখন চট্রগ্রাম মেডিকেল কলেজের ফারষ্ট ইয়ারের ছাত্রী সে। সেজন্যই মনে হয় এপ্রন পরা কাউকে দেখলেই মেয়ের ছবি চোখে ভাসে। আমি যখন কাঙ্গালের মতন গ্নাসের ওইপাশে ক্রন্দনরত অবস্থায় দাঁড়াই তখন যদি কোনো অধিনস্থ আমাকে দেখতে পেতো তবে বিস্ময়ে বিমূঢ় হয়ে যেত। সবসময় গম্ভীর,বড় বড় চোখ দিয়ে সারাক্ষণ অদৃশ্য ছড়ি উচানো থাকে যার……………. তাকে রিক্ত নিঃস্ব দেখতে অবাক হওয়ার ই কথা।

মামুনের সাথে আমার সম্পর্কটা কেমন যেন অমৃত আর
বিষে মাখামাখি ছিল। একা কিছু খেলে ওর জন্য অর্ধেক রাখতাম। অপরদিকে মামুন চেঁচালে আমি তখন দ্বিগুণ চেঁচাতাম। একটা বললে মুখের উপর দশটা কথা শুনিয়ে দিতাম। বয়স কম ছিল, ভালো মন্দ বিচার করতাম না। সহ্য ক্ষমতা শুন্যের কোঠায় ছিল। এখন মনে হয় একটু চুপ থাকলে কি হতো? একা একা ভূতের মতো এভাবে কাটাতে হতো না। আমি কি এক অর্থহীন অদ্ভুত জীবন কাটিয়ে দিলাম !!! যখন ফিরে আসবো তখন নিশ্চিত ছিলাম মেয়ে তো আমার সাথেই যাবে। তখন বিয়ের বয়স ৫ বছর ২ মাস আর মেয়ের বয়স ৪ বছর মাত্র পেরিয়েছে। এটুকু মেয়েকে জিজ্ঞেস করার কথাও মনে আসেনি। যখন মেয়ে বললো আমি বাবা ও দাদুকে ছেড়ে কোত্থাও যাবো না। চলে এলাম একা। তারও বছরখানেক পরে মামুন আবার বিয়ে করেছে শুনেছি। বৃষ্টি মায়ের সঙ্গে না কি গল্প করেছে,আন্টি তাকে বেশ সমঝে চলে। কোনো কিছু বলার সাহস ই নেই তার। কারণ তাকে বিয়ের দিন আন্টির সামনে তার বাবা বলেছে যদি কোনো দিন আন্টি তার সাথে খারাপ ব্যবহার করে সে যেন বাবাকে বলে। বাবা যা করার করবে।

পড়াশুনা নিয়ে মেয়েটা এতো ব্যস্ত থাকে যে প্রায় মাস পাঁচেক এর মধ্যে আর আসেনি। সেদিন ফোন দিয়েছিল কিছুক্ষন কথা বলে রেখে দিয়েছি। কেমন যেন বেশ বড় একটা দূরত্ব রচিত হয়ে গেছে। আমার থেকে আমার মায়ের সাথে ওর সম্পর্ক অনেক বন্ধুত্বপূর্ণ ভালবাসাময়
তা স্বীকার না করার কোনো উপায় নেই। আমি ভাবতে বসলে কখন যে সময়গুলো কোন অজানায় উড়ে উড়ে চলে যায় বুঝতেও পারি না। এবার বের না হলে সময় মতো বৃক্ষমেলায় পৌঁছুতে পারবো না। আজকে মেলার
শেষদিন। মৌরি গতকাল থেকে ৩/৪ বার ফোন করে আসতে বলেছে।

বুঝি বিক্রিতে সেরা তার সাফল্যগাঁথা দেখাতেই এই ডাকাডাকির তোড়জোড়। আশেপাশে সে সাক্ষাৎকার ই
হোক আর কর্মক্ষেত্রেই হোক……..একটা কথা গুঞ্জরিত
হয় মাহরীন রহমান পরীর এখানে খাটলেও লাভ আছে। লাভের অংশ একা একা তিনি খাবেন না, কর্মচারীদের
সাথে নিয়েই খাবেন। মৌরির একটা প্লাস পয়েন্ট হলো উচ্চবিত্ত শ্রেণীর অনেক লোক তার পরিচিত। সে নিজে মধ্যবিত্ত, একবার জিজ্ঞেস করাতে বলেছিল এরা সব আমার বন্ধু ম্যাম। বাহারী, বৈচিত্রময় কোনো কোনোটা
আবার দুর্লভ অর্কিড দাম দিয়ে কিনে রাখা এদের জন্য কোনো ব্যাপার ই নয়। আরেকটা মেয়ে আছে শোভা,ও
তখন দুঃখ করে বলে আহ্ হা রে !!! বিশ্বাস করুন ম্যাম
আমার পরিচিত কোনো বড়লোক নেই। আমি হেসে বলি, ঠিক মতো কাজ করো সেটাই যথেষ্ট হবে।

আমি সামনাসামনি আসি না বলে দুই কর্মক্ষেত্রে বেশিরভাগ মানুষ ই আমাকে চিনে না। সাক্ষাৎকার নিতে চাইলে উদার হয়ে তা দেই তবে প্রথমেই শর্তারোপ
করা থাকে কোনো ছবি পাবে না। এর কি যে সুফল ভোগ করি বলার মতো না। কর্মচারীবৃন্দকে বলা আছে একান্ত বাধ্য না হলে কারো সামনে ম্যাম বলার দরকার নেই। নিজেকে যত বেশি পাবলিক করবেন ততই সমস্যা দেখা দিবে। এটা অবশ্যম্ভাবি। নার্সারিতে এটা নিয়ে কোনো ঝামেলা দেখা না দিলেও রেষ্টুরেন্টে সম্ভব নয়।
তাই দীপু নামের প্রানবন্ত একজনকে রেখে বলেছি,
আপনার নির্দিষ্ট কোনো পদ নেই। ধরে নেন আপনি এখানকার ম্যানেজার,ক্যাশিয়ার। হঠাৎ দেখলেন কিছু উশৃঙ্খল ঝামেলা করছে। তখন আমাকে গিয়ে ম্যাম কি করবো, না বলে আপনি ব্যবস্থা নিবেন। কিভাবে কাকে কত দিলে শান্তিপূর্ণভাবে এই জায়গায় ব্যবসা করা যায় সেদিকে খুব খেয়াল রাখবেন। মানুষ পয়সা খরচ করে খেতে এসে নিশ্চয়ই ঝামেলা দেখতে চাইবে না। তাছাড়া সবচেয়ে ইম্পোর্টেন্ট কথা হলো বিপদাপদ তো বলেকয়ে
আসে না। তাই দারাকে সাথে রেখে রেখে হাতে কলমে কাজ শেখাবেন। ইমারজেন্সি হলে যেন চালিয়ে নিতে পারে। অর্ধেক যন্ত্রণা তাই এখানেই খতম হয়ে গেছে।

বৃক্ষমেলায় শেষ মুহূর্তের ভিড় অনেক। আলগা আলগা থাকতে থাকতে বেশী লোকজন ভিড়বাট্টা অসহ্য লাগে।
কিন্তু সব জিনিসে আপত্তি জানালে ওরা হয়তো ভাববে
শুধু আমাদের দিয়েই তুমি পার পেয়ে যেতে চাও। নিজে
কষ্ট করবে না সেটা ভেবেই আসা। আমাদের নির্দিষ্ট ষ্টল
খুঁজতে খুঁজতে হঠাৎ মনে হলো ছত্রিশেই এতো ক্লান্ত লাগতে চলবে কি করে পরী? গা ঝাড়া দিয়ে উঠলাম যেন। ঐ তো দেখা যাচ্ছে ষ্টলে বড় করে লেখা ছায়াবীথি নার্সারি। ভিড় পাতলা আছে, ঢুকতেই ক্রেতা সামনে দেখে সবাই মুখে কিছু না বলে শুধু হাসি উপহার দিলো।

আমি শুনি মধ্যবয়সী এক ভদ্রমহিলা ঝগড়া করছেন,
গতকাল যদি বলে গেলাম টাকা শেষ হয়ে গেছে। রেখে দিবেন প্লিজ আজকে এসে নিয়ে যাব। তারপরও বিক্রি
করে দিলেন? আশ্চর্য টাকা ছাড়া আপনারা আর কিছু চিনেন না? মৌরি বুঝাতে চাচ্ছে,স্যরি ম্যাম ভুল করে ওটা আলাদা রাখা হয়নি। এসব কানে না তুলে কন্ঠস্বর
সপ্তগ্ৰামে চড়েছে, আমাকে শেখাতে আসবেন না। যদি সম্ভব হয় আপনাদের মালিককে বলবেন যদি এরকম এমপ্লয়ী থাকে তবে এই ব্যবসা ডুবতে বেশিক্ষণ লাগবে
না। মৌরি বেচারি পড়েছে মুস্কিলে,সাফল্যগাঁথা দেখানো দূরে থাক্ এতো বিদায় ঘন্টা বাজিয়ে দিচ্ছে একেবারে।
বুঝলাম এবার সামনে না এলে সমস্যা আছে। বললাম এসব কি শুরু করলেন মৌরি? এসব ম্যামের কানে গেলে আপনার খবর আছে। তাড়াতাড়ি কাগজ কলম দিন। ওটা আমার হাতে দিতেই মহিলার দিকে বাড়িয়ে বললাম দয়া করে আপনার ঠিকানা এখানে দিয়ে যান ম্যাডাম। সম্পুর্ন বিনা খরচে আগামী সপ্তাহে আপনার বাসায় পৌঁছে যাবে। চেক করে ক্যাশ অন ডেলিভারি দিয়ে দিবেন প্লিজ।

মহিলা সন্দেহের চোখে তাকাতেই বলি আমি আগে এই
নার্সারিতে কাজ করতাম। মহিলা নিশ্চিন্ত হয়ে ঠিকানা লিখতে লিখতে বলছেন মালিকপক্ষ ইয়াংদের পেলে আপনাদের মতো অভিজ্ঞতাসম্পন্ন দের ছেড়ে দেয় কেন
বুঝি না। এনিওয়ে আপনাকে অনেক ধন্যবাদ। সকালে রেষ্টুরেন্টে ঢুকার আগে আলেয়ার জন্য দুটো চকলেট নিয়েছিলাম। একটা হাতে নিয়ে বলি, আপনার নিশ্চয়ই ডায়বেটিস নেই ম্যাডাম। উনি অবাক হয়ে গেল, না তো
কেন? আমি চকলেট টা হাতে দিয়ে বলি গলা শুকিয়ে গেছে সিওর। এটা মুখে দিয়ে এবার নিশ্চিন্তে বাসায় চলে যান প্লিজ। আল্লাহ ভালো রাখুন আপনাকে। মিষ্টি একটা হাসি দিয়ে উনি ফেরার পথ ধরলেন এবার।
###(রিপোষ্ট)

(চলবে)
###৩য় পর্ব আগামীকাল পাবেন ইনশাআল্লাহ্।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here