স্মৃতির_শেষ_অধ্যায়ে_তুমি #পর্ব_১১

0
632

#স্মৃতির_শেষ_অধ্যায়ে_তুমি
#পর্ব_১১
#লেখিকা_Fabiha_bushra_nimu

খুব সাধারণ ভাবেই অভ্র আর স্রুতির বিয়েটা হয়ে গেল। তবে পাড়াপ্রতিবেশিরা এখনো কানাঘুঁষা করেই যাচ্ছে। তাদের উপেক্ষা করে চলছে স্রুতির পরিবার। অভ্ররের রুমে বসে আছে স্রুতি। অদ্ভুত ভাবে মনের গহীনে ভীতি কাজ করছে। অভ্র তাকে কিভাবে নিবে? ভাবতেই সময় পার হয়ে যায়। স্রুতি চিন্তায় এতই মগ্ন যে, অভ্র রুমে এসেছে। সেদিকে তার খেয়াল নেই। অভ্র কোনো কথা না বলে, বিছানায় উঠে বসলো। কারো উপস্থিতি টের পেয়ে স্রুতি নড়েচড়ে বসলো। অভ্রকে দেখে হৃদস্পন্দনের গতিবেগ অস্বাভাবিক ভাবে বেড়ে গেল। অভ্র স্রুতিকে উদ্দেশ্য করে বলল,

–এই রুমটা আমার। বিছানা টাও আমার। তাই আমি নিচে ঘুমোতে পারবো না। জানি এখন বলবে? এই বাসাটা আমার বাবার। তাই আমি যা বলবো। আপনাকে তাই শুনতে হবে। এমন কিছু বললে, আমিও মানবো না। মানছি বাসাটা তোমার বাবার৷ কিন্তু তোমার বাবার বাসায় তো আর এমনি এমনি থাকি না। প্রতি মাসে ভাড়া দিয়ে থাকি। ভুলে যেও না। আমি আর তোমাদের বাসার ভাড়াটিয়া নই। আমি তোমার স্বামী। এখন থেকে আমি যা বলবো। সবকিছু তোমাকে করতে হবে। সব সময় স্বামীর কাজে নিয়োজিত থাকবে। এখন একটু স্বামী সেবা করো। তোমার পেছনে ছুটতে ছুটতে আমার পা ব্যথা হয়ে গিয়েছে। স্রুতি অভ্রের কথার ঝটপট উত্তর দিয়ে বলল,

–আপনি কোনো কাজই করেনি। যা করার আরাভ করেছে। একজনের পরিশ্রমের ফল, আপনি ভোগ করবেন। আবার ক্রেডিটাও আপনি নিবেন? কেমন মানুষ আপনি? লজ্জা করে না নিজের ছোট ভাইয়ের সব অর্জন নিজের নামে চালিয়ে দিচ্ছেন। আমি কি আপনাকে একবারও বলেছি? আপনি আমার বাবার বাসায় থাকেন? আপনি নিচে ঘুমান। বিয়ে করেছেন নিচে ঘুমানোর জন্য নয়। বউকে নিয়ে ঘুমানোর জন্যই তো বিয়ে করেছেন। কথা গুলো বলেই স্রুতি অভ্রের দিকে তাকালো। অভ্র বিস্ময় নয়নে স্রুতির দিকে তাকিয়ে আছে। নিজেকে স্বাভাবিক করে নিয়ে, শান্ত কণ্ঠে বলল,

–অনেক রাত হয়েছে।ঘুমাও। কথাটা বলেই অভ্র অন্য পাশ ফিরে দু’নয়ন বন্ধ করে ফেলল। স্রুতি অভ্রের দিকে তাকিয়ে একটা দীর্ঘশ্বাস ছাড়ল। কতই না চাওয়া পাওয়া ছিল তার। কথায় আছে না। অতিরিক্ত আশা করলে, তা কখনো পূর্ণ হয় না। স্রুতি কথাটা আজ ভিষণ ভাবে উপলব্ধি করতে পারছে। সে চেয়েছিল। এক সমুদ্র সামান ভালোবাসা। পেয়েছে বুকভরা দীর্ঘশ্বাস। সবই অতিরিক্ত আশা করার ফল। মানুষটার সম্পর্কে সবকিছু না জেনেই, এতটা ভালোবাসা উচিত হয় নাই। আগে যদি জানতো মানুষটা অন্য কাউকে ভালোবাসে। তাহলে কখনোই মানুষটার জন্য এতটা মায়া তৈরি হতো না। এতটা বেহায়া হতে হতো না। লজ্জা সরম ভুলে গিয়ে, মানুষটাকে বিয়ে করতো না। ভালোবাসা জিনিসটা এমনই। না পেলে আক্ষেপ রয়ে যায়। পেয়ে গেলে বিষাদে মন ছেয়ে যায়। আমার ভালোবাসা কোনটা? বিষাদ নাকি আক্ষেপ। মানুষটা যে আমার হয়েও হইলো না। কথা গুলো ভাবতেই স্রুতির বুক ভারি হয়ে আসছে। গভীর রাতে বুক ভারি হয়ে, শ্বাসরুদ্ধকর অবস্থার কথাটা কাউকে বলতে না পারার ব্যাপারটা ভিষণ সুন্দর। তাই না? স্রুতি আর কোনো কথা বলল না। সে-ও অভ্রের পাশে চুপটি করে শুয়ে পড়লো।

পরের দিন সকাল বেলা কলেজে সবাই স্মৃতির জন্য অপেক্ষা করছে। কাল থেকে কলেজে নির্বাচনী পরীক্ষা। সবাই আজকে প্রবেশ পত্র তুলতে এসেছে। পরীক্ষার সময় আসলে স্মৃতির বন্ধুরা স্মৃতিকে একটু বেশিই ভালোবাসে। যা স্মৃতির চক্ষুদ্বয় এড়ায় না। স্মৃতি বিরক্ত মাখা মুখশ্রী করে, সবার সামনের দাড়ালো। ললাটের কার্নিশ বেয়ে ঘাম গড়িয়ে পড়ছে। স্মৃতি নিজের ওড়না দিয়ে সমস্ত মুখশ্রী মুছে মিল। স্মৃতি কিছু বলতে যাবে। তখনই মেঘলা বলে উঠলো,

–তোর প্রচন্ড গরম লাগছে। কোকোকলা খাবি? চল একটা কোকোকলা কিনে সবাই মিলে, ভাগ করে খাই। আমরা তোর জন্যই অপেক্ষা করছিলাম। প্রবেশ পত্র তুলে নিয়ে, আজকে সবাই মিলে একটু ঘুরবো। মেঘলার কথায় বিরক্ত প্রকাশ করল স্মৃতি। কালকে পরীক্ষা! আজ এদের মধ্যে কোনো অনুভূতি নেই? স্মৃতি রাগান্বিত হয়ে বলল,

–তোদের ঘুরতে ইচ্ছে হলে, তোরা গিয়ে ঘুর। আমি কোথাও যাব না। কালকে পরীক্ষা। আমার শেষের দুই অধ্যায় পড়া বাকি আছে। বাসায় গিয়ে পড়তে বসবো। রাতে চাপ নিতে পারবো না। কারন রাতে লম্বা একটা ঘুম দিব। পরীক্ষার আগের দিন সারারাত জেগে পড়লে, পরীক্ষার হলে এসে ঘুম পাবে। পরীক্ষার হলে ঘুমিয়ে, নিজের পরীক্ষা খারাপ করতে চাই না। কথা গুলো বলেই স্মৃতির আঁখি জোড়া কলেজের গেটের বাহিরে গিয়ে আটকালো। আরাভ দাঁড়িয়ে জাহিদ স্যারের সাথে কথা বলছে। আরাভকে দেখলে অদ্ভুত ভাবে স্মৃতির অনুভূতিরা আনন্দে মেতে উঠে। দু-চোখ স্থির হয় মানুষটাকে প্রান ভরে দেখার জন্য। নিজের এমন নিষিদ্ধ চাওয়া পাওয়ার আকাঙ্খা দেখে, সে নিজেই নিজের প্রতি বিরক্ত। মনের আর কি দোষ দিবে? সে তো নিজেও আরাভের প্রতি দুর্বল হয়ে পড়ছে। যা ভেতর থেকে সে স্বীকার করতে চাইছে না। কিন্তু নিজের মনকে দমিয়ে রাখা এত সহজ না। কখন কার কাছে চলে যাবে। সেটা নিজেও জানতে পারবে না। মন জিনিসটা বড়ই অদ্ভুত তাই না। এরা নিজের হয়েও, নিজের থেকে অন্যকে বেশি ভালোবাসে। কথা গুলো ভাবতেই দীর্ঘশ্বাস বেড়িয়ে এলো। স্মৃতিকে অন্যমনষ্ক হতে দেখে, সবাই গভীর আগ্রহ নিয়ে স্মৃতির দিকে তাকিয়ে আছে। সবাইকে নিজের দিকে তাকিয়ে থাকতে দেখে, স্মৃতি বেশ বিব্রত বোধ করল। থমথমে মুখশ্রী করে বলে উঠলো,

–আমার রুপ কি আগের থেকে বেশি হয়েছে? সবাই এভাবে আমার দিকে তাকিয়ে আছিস কেনো? স্মৃতির কথা শুনে মেঘ সন্দিহান দৃষ্টিতে স্মৃতির দিকে তাকিয়ে, গম্ভীর কণ্ঠে বলে উঠলো,

–কি রে স্মৃতি তোর ব্যাপার কি? আজকাল দেখি তুই বড্ড অন্যমনষ্ক হয়ে থাকিস। সারাক্ষণ গম্ভীর চিন্তায় মগ্ন থাকিস। তোর কিছু হয়েছে? কোনো সমস্যা থাকলে, আমাদের জানাতে পারিস। আমরা সবাই মিলে তোর সমস্যা সমাধান করার চেষ্টা করবো। তুই আবার কারো প্রেমে পড়িস নি তো? মেঘের কথায় স্মৃতি কেশে উঠলো। কথা ঘোরাতে অফিস রুমের দিকে ছুটলো প্রবেশ পত্র নিয়ে আসার জন্য।

আজকে স্রুতির ফুফাতো ভাই আসবে। বহু বছর পরে বাসায় ফিরছে। বাসায় একদম হৈচৈ পড়ে গিয়েছে। একদিকে স্রুতির বিয়ে, অন্য দিকে বাসায় ছেলে কতদিন পরে দেশে আসছে। ভাবতেই খুশির রেশ ঘিরে ধরেছে দুই পরিবারকে। স্মৃতি পরীক্ষার চক্করে বাসার সবার সাথে আনন্দ উপভোগ করতে পারছে না। আজকে যে তার প্রিয় ভাইয়া আসবে। সে কথাও জানে না স্মৃতি। ছোট বেলা থেকে মুনতাসীর ভাই ভক্ত সে। যেদিন মুনতাসীর দেশ ছেড়ে চলে গিয়েছিল। স্মৃতি প্রচুর কান্না করেছিল। পুরো একদিন না খেয়েছিল। বাবা-মায়ের কাছে একটাই আর্জি করেছিল। আমার মুনতাসীর ভাইয়াকে চাই। আমার মুনতাসীর ভাইয়াকে এনে দাও। পুরোনো দিনের কথা গুলো ভাবতে ভাবতে কখন যে চোখের কার্নিশে অশ্রুকণা গুলো দলা পাকিয়েছে। সেদিকে তার কোনো খেয়াল নেই। মুনিয়া বেগমের।

কলেজ থেকে হন্তদন্ত হয়ে বাসায় ফিরছিল স্মৃতি। রৌদ্রের প্রখরতা তার পুরো শরীর জ্বালিয়ে, পুড়িয়ে শেষ করে দিয়েছে। মেজাজ পুরো দমে বিগড়ে আছে। দ্রুত গতিতে বাসার দিকে ছুটে আসছে। এমন সময় কারো সাথে ধাক্কা লাগে। অতিরিক্ত মেজাজ খারাপ থাকায় সে ব্যক্তিকে খেয়াল না করেই বাসার দিকে এগিয়ে গেল। স্মৃতিকে দেখে ব্যক্তিটি চোখ থেকে সানগ্লাস টা খুলে, মুগ্ধ নয়নে স্মৃতির দিকে তাকিয়ে আছে। বিরক্ত মাখা মুখশ্রীতে মেয়েটাকে একটু বেশিই সুন্দর লাগছে। স্মৃতিকে দেখা মাত্রই ব্যক্তিটির মুখে ফুটে উঠলো মনোমুগ্ধকর হাসি৷

চলবে…..

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here