হাত_বাড়িয়ে_রই (পর্ব ৪)

0
374

#হাত_বাড়িয়ে_রই (পর্ব ৪)
#মেহেদী_হাসান_রিয়াদ

চোখ খুলেই পাশে সাঈদকে দেখে চমকে উঠে রুপন্তি। স্বপ্ন দেখছে কি না ভাবতেই আশে পাশে একবার চোখ বুলিয়ে নিল। আপার রুমেই শুয়ে আছে সে। তবে আশে পাশে সাঈদ ছাড়া আর কেউ নেই।
রুপন্তি উঠে বসার চেষ্টা করলে সাঈদ ধরে বিছানার সাথে হেলান দিয়ে বসায় তাকে। রাত তখন প্রায় নয় টা।

নিজের অবস্থান বুঝে রুপন্তি অনেকটাই কৌতুহল নিয়ে সাঈদের দিকে তাকালো। কৌতুহল বসত প্রশ্ন করে,
“তুমি এখানে!”
“আসতে বারন আছে নাকি?”
“ওটা বলিনি। তোমার তো এখন বিয়ের আসরে থাকার কথা ছিল। এখানে কি করছো? বিয়ে করেছো? তাহলে নিধি কোথায়?”
“বিয়ে করিনি। করতে পারিনি।”(সাঈদের স্বাভাবিক গলা)

রুপন্তির কৌতুহল বেড়ে গেলো অনেকটা। সে কি স্বপ্নে আছে নাকি বাস্তবে? বিয়ের আসর ছেড়ে সাঈদের এখানে কি কাজ। বিয়ে করতে পারিনি মানে কি? কোনো ঝামেলা হয়েছে কি? কিছু প্রশ্ন উঁকি দিচ্ছে মনে। মনে এক ঝাক প্রশ্ন নিয়ে চেয়ে আছে সাঈদের দিকে।

কিছুক্ষণ আগে,,,
সাঈদ গাড়িতে উঠে রওনা দেওয়ার পর ফোনটা বেজে উঠে তার। দেখে রুপন্তির নাম্বার থেকে কল এসেছে। গেট পার হলেই গাড়ি থামাতে বলে সাঈদ। গাড়ি থেকে নেমে রিসিভ করে কিছুটা দুরে গিয়ে দাড়িয়ে ছোট করে বলে,
“হ্যাঁ রুপন্তি বলো।”

ওপাশ থেকে উত্তেজিত কন্ঠে ভেষে আসে,
“আমি রুপন্তি না। তার বোন বলছি। রুপন্তির অবস্থা ভালো না।”
বুকের ভেতরটা মোচড় দিয়ে উঠে সাঈদের। আগের তুলনায় দ্রুত গলায় বলে উঠে,
“কি হয়েছে রুপন্তির? কোথায় সে?”
“একটু আগে বমি করে সেন্সলেস হয়ে গেছে। অবস্থা ভালো না। ডাক্তারকে ফোন দিয়েছি বাসায় আসতে। আপনাকে জানানোর প্রয়োজন মনে করেছিলাম তাই জানিয়ে দিলাম। আল্লাহ হাফেজ।”

এতটুকু বলেই ফোন কেটে দিল ওপাশ থেকে। হয়তো সাঈদের প্রতি অনেক রাগ তার। সাঈদ ফোন পকেটে ভরে দ্রুত পায়ে তার বন্ধু রাকিবের বাইকের সামনে গিয়ে দাড়ালো। তার কাধে হাত রেখে বলে,
“ভাই নাম তো, আমি একটু আসছি।”

রাকিব বাইক থেকে নামতেই সাঈদ উঠে স্টার্ট দিল বাইক। রাকিব কৌতুহল নিয়ে বলে,
“এই সমনে কোথায় যাচ্ছিস আবার?”
সাঈদ কোনো উত্তর না দিয়ে এক টানে চলে গেলো সেখান থেকে।

রুপন্তিদের বাড়িতে এসেই বাইকটা উঠানে রেখে সোজা রুপন্তির কাছে চলে গেলো সাঈদ। এর আগে রুপন্তিকে নিয়ে এ বাড়িতে আসলে ঐ রুমেই থাকতে দেওয়া হতো তাদেরকে। তাই রুম চিনতে অসুবিধা হয়নি তার।

রুমে প্রবেশ করতেই দেখে ডাক্তার রুপন্তির বাবা-মায়ের সাথে কথা বলছে। আর রুপন্তি চোখ বন্ধ করে শুয়ে আছে বিছানায়। ডাক্তারের দিকে চেয়ে সাঈদ ক্ষনিকটা উত্তেজিত গলায় বলে,
“সে কেমন আছে এখন? কি হয়েছিল তার?”

সাঈদকে দেখে ক্ষনিকটা অবাক হলো রুপন্তির বাবা-মা। তারা যতদুর জানে সাঈদ এই মুহূর্তে বিয়ের পিঁড়িতে বসে থাকার কথা। ডাক্তার স্বাভাবিক গলায় বিষয়টা বুঝিয়ে বললো সাঈদকে। অতঃপর চলে গেলেন তিনি। যাওয়ার আগে বলে গেলো, রুপন্তিকে এখন ডিস্টার্ব না করতে। তার কিছুক্ষণ বিশ্রামের প্রয়োজন।

ঐ অবস্থায় ঠায় দাড়িয়ে রইল সাঈদ। এই মুহুর্তে তার কি করা উচিৎ কিছুই মাথায় আসছে না তার। ডাক্তারের কথা গুলো যেন বিশ্বাসই হতে চাইছে না। রুপন্তির মাঝে মা হওয়ার লক্ষণ দেখা যাচ্ছে। হসপিটাল নিয়ে টেস্ট করিয়ে শিউর হয়ে নিতে বলেছে।
তাহলে কি সত্যিই এত বছরের চাওয়া পূরণ হতে যাচ্ছে?

সাঈদ ফোনটা বের করে দেখে মোট ২৬ টা মিসড কল। দেখতে দেখতে আবারও ফোনে মায়ের নাম ভেসে উঠলো। রিসিভ করতেই মা ওপাশ থেকে তীব্র রাগ নিয়ে বলে,
“এই সাঈদ কই তুই?”

সাঈদ স্বাভাবিক গলায় উত্তর দেয়,
“রুপন্তিদের বাড়িতে।”
এক দফা অবাক হলেন তিনি। বিয়ে বাড়ির জন্য যাত্রা করে সে রুপন্তির কাছে কি করছে? তিনি আবারও রেগে বলে,
“এসবের মানে কি সাঈদ! ওদেকে তোর মামা নাকি তোকে ফোনে না পেয়ে আমাকে একের পর এক কল করে যাচ্ছে। দেড়ি হওয়ার কারণ জানতে চাইছে? ওদিকে সবাই তোদের জন্য অপেক্ষা করছে আর তুই রুপন্তির কাছে গিয়ে বসে আছিস? এখন তোর মামাকে কি জবাব দিব আমি?”

মায়ের প্রশ্নে সাঈদ খুব স্বাভাবিক স্বরে বলে,
“বলে দাও এই বিয়ে আর হচ্ছে না।”
ছেলের কথায় বিষ্মিত হলেন নুর জাহান। অনেক কষ্টে ছেলেকে রাজি করিয়েছে এই বিয়েতে। আর এখন বিয়ের দিন বলছে বিয়ে বন্ধ করতে? হটাৎ ছেলের এমন সোজাসাপটা উত্তরে নুর জাহান বিষ্ময় নিয়ে কিছুটা আমতা আমতা করে বলে,
“এসব কি বলছিস সাঈদ? সব সময় ফাজলামি ভালো লাগে না। রুপন্তিকে বুঝিয়ে দ্রুত চলে আয় তুই। আমি তোর মামাকে বলছি অপেক্ষা করতে।”

সাঈদ এবার কিছুটা চড়া গলায় বলে,
“তোমাকে বলছি না, এই বিয়ে বন্ধ করতে?”
“হটাৎ কি হলো তোর? বুঝেছি। ঐ রুপন্তি কান্নাকাটি করে তোর মন গলিয়ে নিয়েছে তাই না?”

সাঈদ এবার ক্ষনিকটা শান্ত গলায় বলে,
“মা তুমি বিয়ে বন্ধ করো। আমি রুপন্তিকে নিয়ে বাসায় ফিরছি। বাসায় এসেই সব খুলে বলবো।”
বলেই কল কেটে দিল সাঈদ। ওপাশ থেকে নুর জাহান দ্রুত গলায় বলে,
“সব আয়োজন শেষে এখন বিয়ে বন্ধ করা কি মুখের কথা? আর তোর মামাকে কোন মুখে আমি এসব বলবো?”

সাঈদের আর কোনো সাড়াশব্দ পেলো না। কারণ আরো আগেই কল কেটে দিয়েছে সে। নুর জাহান আবারও দু’বার হ্যালো হ্যালো বলে ফোনের দিকে তাকালো।
,
,
রাত ১০ টায় রুপন্তিকে নিয়ে বাসায় ফিরে সাঈদ। এই অবস্থায় রুপন্তির পরিবার প্রথমে আপত্তি জানালেও সাঈদের জোড়াজুড়ি তে হার মানে তারা। রুপন্তি কিছু বলতে চাইলেও ধমকে চুপ করিয়ে দিয়েছে তাকে।

মাকে সব বুঝিয়ে বললে স্তব্ধ হয়ে সোফায় বসে আছে সে। কি করবে কিছুই মাথায় আসছে না। নিজের সিদ্ধান্তের নিয়ে আফসোস হচ্ছে তার। কেন আর কয়েকটা দিন অপেক্ষা করলো না এটা ভেবে। সাঈদকে এটা ওটা বুঝিয়ে অনেক কষ্টে রাজি করিয়েছিল সে। এখন তা কোনো ভাবেই সম্ভব হবে না।

ওদিকে নিধির বাবা ফোন দিয়ে বোনের সাথে সব সম্পর্ক শেষ করে দিয়েছে। তারা সাঈদ’দের চেয়ে আর্থিক ভাবে দুর্বল হতে পারে, তবে মান সম্মান তাদেরও আছে। এমনটাই বলেছেন তিনি। নিধিও সাঈদকে ফোন দিয়ে প্রতারক, সার্থপর নানান কিছু বলে কা়ঁদতে কাঁদতে ফোন কেটে দিয়েছে। একটা মেয়ের বিয়ে ভেঙে যাওয়া মানে অনেক কিছু।

সাঈদ চুপচাপ সহ্য করে নিল সব। শান্ত গলায় নিধিকে বলেছিলো, দোয়া করি আমার চেয়ে ভালো কাউকে পাবি নিধি। তাছাড়া তুই এ বাড়িতে বৌ হয়ে আসলেও কখনোই রুপন্তির জায়গায় স্থান পেতি না। আল্লাহ্ যা করে ভালোর জন্যই করে। আর পারলে আমাকে ও মাকে ক্ষমা করে দিস বোন।

তারপরই নানান গালি দিয়ে ফোন কেটে দিয়েছিল নিধি।
,
,
এক বছর পর,,
ছেলেকে কোলে নিয়ে বসে আছে রুপন্তি। বিয়ের আজ ছয় বছর পর হাসি ফুটেছে পরিবারের সবার মুখে। অথচ বিয়ের পর থেকেই অনেক কিছুর সম্মুখীন হয়েছে সে। কেউ বলেছিল, পরিচিত হুজুর আছে,তার থেকে তাবিজ নিতে।
আবার কেউ বলেছিল, তাদের পরিচিত একজন পীরের কাছে যেতে। তার কাছে অনেক মানুষ দিয়ে তাদের ঘরে সন্তান এসেছে।

নুর জাহানও এসব শুনে রুপন্তিকে জোর করেছিল অনেক বার। রুপন্তি প্রতিবারই সোজাসুজি ভাবে বলেছিল, এসব করা মানে নিজের ঈমানকে তাদের কাছে বিক্রি করে আসা। আর জ্বীন হুজুর পীর এদের যদি বাচ্চা দেওয়ার ক্ষমতা থাকতো, তাহলে পৃথিবীতে কোনো মানুষ নিঃসন্তান থাকতো না। এদের কাছে যাওয়া মানেই তাদের কাছে নিজের ঈমান বিক্রি করে আসা।

সে সন্তান চাইবে তার এক সৃষ্টিকর্তাক কাছেই। তার দিকে হাত বাড়িয়ে রইবে সে। প্রয়োজনে যুগ যুগ অপেক্ষা করবে। তার দৃঢ় বিশ্বাস ছিল, তার বাড়িয়ে রাথা হাত তিনি খালি ফিরিয়ে দিবেন না। তার প্রতি বিশ্বাস সেখেই মুখ বুঁজে সবকিছু সহ্য করে নিয়েছিল রুপন্তি। কারণ দুনিয়াটাই তো একটা পরীক্ষা ক্ষেত্র। হয়তো রুপন্তির জন্য এটা ছিল একটা কঠিন পরীক্ষা। এত কিছুর মাঝেও দৃঢ় বিশ্বাস নিয়ে সে হাত বাড়িয়ে রেখেছিল তার এক সৃষ্টিকর্তার প্রতি। তিনি সত্যিই খালি ফিরে দেয়নি সেই হাত।

~ সমাপ্ত,,,,,,,,,,,,,,,

বিঃদ্রঃ অনেকেই কমেন্টে বললেন বাচ্চা না হলেই কি শশুড় বাড়ির লোকজন দ্বিতীয় বিয়ের সিদ্ধান্ত নিতে হবে? এসব কিছু বাড়াবাড়ি বা এই সেই অনেক কথাই বলেছেন। আপনাদের একটা ছোট কাহিনি বলি,,,,,,

আমার এক পরিচিত আপুর কাহিনি এটা। তিনিও আমার আইডিতে এড আছে। আমার গল্প পড়ে। হয়তো এটাও পড়ছে। যাই হোক,,, তার বিয়ের এক বছর কোনো সন্তান না হওয়ায় তার শশুড় বাড়িতে উঠতে বসতেই অনেক কথা শুনতে হতো তাকে। বিয়ের এক বছর পরই শশুর বাড়ির লোকজন উঠেপড়ে লাগে তার স্বামীকে দ্বিতীয় বিয়ে করাতে। বিয়ের জন্য নাকি পাত্রী দেখাও শুরু করেছিল।
আপু বললো, তখন যেন আমার দম বন্ধ হয়ে আসছিল। আল্লাহর কাছে আমি একটা দোয়া করতাম, হয়তো একটা বাচ্চা দাও নয়তো আমার মৃত্যু দাও। এসব আর সহ্য হচ্ছে না।
যাই হোক। যখন তারা পাত্রী খু্জছিল, তখন নাকি ঐ আপু বেবির সু-সংবাদ পায়। এখন বাচ্চা ও পরিবার নিয়ে অনেক ভালো আছে সে।

কাহিনিটা এই জন্যই বললাম, অনেকে মনে করেন দুনিয়ার সব মানুষ, সব পরিবার এক। সন্তান না হলেও তারা মেনে নিবে সব। কিন্তু হাতের আঙুল সব সময়ন হয় না। বাস্তবতা ভিন্ন। এটা গল্পের মতো নায়ক’কে স্ট্রং পার্সনালিটি দিয়ে যেমন ইচ্ছা তেমন করে সাজানো যায় না। খুব কঠিন হয় এই বাস্তবতা।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here