হাত_বাড়িয়ে_রই (পর্ব ২) #মেহেদী_হাসান_রিয়াদ

0
338

#হাত_বাড়িয়ে_রই (পর্ব ২)
#মেহেদী_হাসান_রিয়াদ

‘আমি চাই তুমি এমন কাউকে বিয়ে করো যে তোমাকে পিতৃত্বের স্বাদ দিতে পারবে। আমার সাথে থেকে তুমি তা কখনোই পাবে না। আমি চাইনা তুমি সারা জীবন বাবা হওয়া থেকে বঞ্চিত থাকো।’

রুপন্তি আজ হটাৎ কেন এমন কথা বলল তা মাথায় আসছে না সাঈদের। ক্ষনিকটা সময় ওভাবেই ঠায় দাড়িয়ে রইল সে। তাহলে মা কি গতকাল আমাকে বলা কথা গুলো রুপন্তিকেও বলেছে? ভাবতে ভাবতেই সেও বেড়িয়ে গেলো রুম থেকে।

ছাদের এক পাশে বসে দুই হাটুতে মুখ গুজে কান্না করছে রুপন্তি। সিড়ির রুম অব্দি এসে যা দেখেই থমকে গুলো সাঈদ। একটু আগে কত স্বাভাবিক ভাবেই না ওসব বলেছিল। আর এখন এসে নিরবে কান্না করে চলছে।

রুপন্তির কাছে যাওয়ার জন্য পা বাড়াতেই পেছন থেকে হাতটা ধরে নিল নুর জাহান বেগম। সাঈদকে টেনে সিড়ির মধ্য স্থানে নিয়ে এসে বলে,
“এমন বিষয়ে কাঁন্না করাটা অস্বাভাবিক কিছু না। স্বামীর দ্বিতীয় বিয়ের কথা শুনলে সব মেয়েই এমন কাঁন্না করবে। যখন বিয়ে হয়ে কয়দিন চলে যাবে, তখন সব কিছু ঠিক হয়ে যাবে।”

সাঈদ ক্ষনিকটা কৌতুহল নিয়ে বলে,
“তুমি রুপন্তিকেও ওসব বলেছো? যেগুলো গতকাল আমাকে বলেছিলে?”
“না তো, এই বিষয়ে এখনো কিছু বলিনি।”
“তাহলে সে এসব বিষয়ে জেনেছে কিভাবে?”
“নিজে থেকে বুঝতে পারলে সেটা আরো ভালো কথা। যাই হোক এখন ওর কাছে যাওয়ার প্রয়োজন নেই। অফিসে যাওয়ার দেরি হয়ে যাবে।”

সাঈদ ক্ষনিকটা করুণ দৃষ্টিতে মায়ের দিকে চেয়ে বলে,
“তাই বলে তাকে কাঁন্নারত অবস্থায় একা রেখে চলে যাবো মা?”
নুর জাহান বেগম কন্ঠে ক্ষনিকটা কঠোরতা এনে বলে,
“এখন তার কাছে গেলে সে দুর্বল হয়ে যাবে। এটা বুঝতে হবে তোকে। এখন তাকে একা থাকতে দে। যেন সে পরিস্থিতি মানিয়ে নিতে পারে।”

সাঈদ বের হওয়ার সময় রুমে আসে রুপন্তি। হাতে দুপুরের খাবার। বাইরের খাবার প্রয়োজন ছাড়া তেমন একটা খায়না সে। তাই দুপুরের খাবারটা যাওয়ার সময় বাসা থেকেই নিয়ে যায়। রাতের খাবার বাসায় ফিরে সবাই একসাথে মিলে খাওয়া হয়।

তখন রুপন্তি কোথায় ছিল সেটা জানলেও সাঈদ তার দিকে চেয়ে জিজ্ঞেস করে,
“তখন কোথায় গিয়েছিলে?”
রুপন্তু স্বাভাবিক থাকার চেষ্টা করে বলে,
“ছাদে কাপর শুকাতে দেওয়ার জন্য গিয়েছিলাম।”
“বাসায় তো কাজের মেয়ে আছে।”
“তার শরির খারাপ। আচ্ছা বাদ দাও ওসব। এই নাও খাবার। সময় মতো খেয়ে নিবে।”

সাঈদ আর কিছু বললো না। খাবারটা হাতে নিয়ে রুপন্তির কপালে একটা চুমু দিয়ে বেড়িয়ে গেলো। বিনিময়ে জোর পূর্বক একটা হাসি দিল রুপন্তি।
,
,
বিকেলে মেহমান এসেছে বাসায়। সম্পর্কে নিকটতম আত্মিয় না হলেও নুর জাহানের ছোট বেলার বান্ধবি। সাথে তার নাতি-নাতনি দুজনকে নিয়ে এসেছে। অনেক বছর পর একে অপরকে দেখতে পেয়ে আনন্দের সীমা নেই তাদের মাঝে।
রুপন্তি তখন শুয়ে ছিল রুমে। চোখ লেগে আসায় ঘরে মেহমানের আগমনের বিষয়ে টের পায়নি হয়তো।

নুর জাহান বেগম দু’বার ডাক দিয়ে রুমের সামনে গিয়ে চড়া গলায় বলে,
“সারা দিন রুমে পড়ে থেকে কি করো শুনি? বাচ্চা-কাচ্চাও তো নেই যে তাদের নিয়ে পড়ে থাকো। রুমে বসে করো টা কি সারা দিন? ওদিকে মেহমান এসে বসে আছে সে খবর কি আছে?”

ইদানিং শাশুড়ির এমন আচরণে এখন অভ্যস্ত হয়ে গেছে সে। তাই এভাবে বলা কথায় তার খুব একটা খারাপ লাগার কথা না। কিন্তু এখানেও সেই বাচ্চার প্রসঙ্গ টেনে কথা বলায় মন অনেকটাই বিষণ্ন হয়ে যায় তার। মানুষ যতই শক্ত হোক, দুর্বল জায়গায় আঘাত কখনোই সহ্য হয়না তাদের।

রুপন্তি চুপচাপ বেড়িয়ে আসে রুম থেকে। ক্ষনিকটা মাথা ধরে আছে তার। কাজের মেয়েটাই বাসায় নেই। দু’দিনের জন্য বাড়িতে গেছে সে।
নুর জাহান বেগম রুপন্তির দিকে চেয়ে বলে,
“ঢং করে এতো হেলেদুলে ক্লান্তির ভান করতে হবে না। বাচ্চা জন্ম দিতে গিয়ে শরিরের শক্তি ফুরিয়ে যায়নি যে এত অল্পতেই ক্লান্তি ভর করবে। এখন আমি কি বলি শুনো। আমার বান্ধবি তার ছেলের ঘরের নাতি-নাতনি নিয়ে এসেছে। তাদের আথিতেয়তায় যেন কোনো কমতি না হয়। যাও গিয়ে তাড়াতাড়ি নাস্তা প্রস্তুত করো তাদের জন্য।”

বলেই রুপন্তির সামনে থেকে চলে গেলেন তিনি। একটা দীর্ঘশ্বাস ছাড়ে রুপন্তি। এই বাচ্চা নামক ছোট একটা শব্দ দিয়ে আর কত হাজার খোঁচা সহ্য করতে হবে তাকে? দীর্ঘ পাঁচ বছর ধরে আল্লাহর নিকট হাত বাড়িয়ে আছে সে। তার দৃঢ় বিশ্বাস, তার মালিক সে হাত খালি ফিরিয়ে দিবেন না।

নুর জাহান বেগম আড্ডায় মশগুল তার বান্ধবি রোকেয়া বেগমের সাথে। তারা এই একালায় এসেছে এক মাস হলো। ছেলের বদলিতে এখানে বাসা নিয়েছে তারা। রাস্তার ওপাশের বাড়িটাতেই থাকে। অথচ এতদিন বুঝতেও পারেনি তারা এত কাছাকাছি।
দু’দিন আগে রাস্তায় নুর জাহানকে দেখেই চিনে ফেলে রোকেয়া। তারপর খোঁজ খবর নিয়ে দেখে এই বাড়িতেই থাকে। তাই আজ সময় করে দেখা করতে এসেছে।

রুপন্তি শরবত বানিয়ে সাথে ফলমুল কেটে নিয়ে আসে তাদের সামনে। রোকেয়া বেগম রুপন্তিকে দেখে হাসি মুখে বলে,
“বৌ মা নিশ্চই?”
নুর জাহান বেগমও কিছুটা হাসি মুখে উত্তর দেয়,
“হ্যাঁ, আমার একমাত্র ছেলে সাঈদের বৌ।”

রুপন্তি সালাম দিল তাকে। রোকেয়া বেগম সালাম নিয়ে মুখে হাসি ধরে রেখে বলে,
“মা’শা আল্লাহ্। বেচে থাকো মা। তো সাঈদের ঘরে ছেলে-সন্তান কি?” (নুর জাহানের দিকে তাকিয়ে বললো কথাটা)

এমন প্রশ্নে বৌ শাশুড়ি দুজনের মাঝেই বিষণ্নতা ছেয়ে গেলো। নুর জাহান বেগম ক্ষনিকটা বিষণ্ন মনে বলে,
“কপাল খারাপ বোন। এখনো নাতি নাতনির মুখ দেখা হয়নি। আল্লাহ্ মুখ তুলে তাকায়নি আমাদের দিকে।”

হাসিখুশি মুহুর্তটা নিমেষেই বিষণ্নতায় ঘিরে গেলো। রুপন্তির মন খারাপের পরিমানটা আরো বেড়ে গেলো এতে। শুধু আজ না, প্রায়ই এমন প্রশ্নের সম্মুখীন হতে হয় তাদের। সব জায়গাতেই না চাইতেও এসে ভিড় জমায় এক রাশ বিষণ্নতা।

কিছুক্ষণ চুপ থেকে নুর জাহান এবার রুপন্তির দিকে চেয়ে কিছুটা খিটখিটে স্বরে বলে,
“দাড়িয়ে আছো কেন? যাও গিয়ে চায়ের আইটেম রেডি করো।”
,
,
আজ শুক্রবার। ছুটির দিনে সকালে সাঈদও বাসায় পড়ে ঘুমাচ্ছে। গতকাল শাশুড়ি মা বলেছিল আজ তার ভাইয়েরা আসবে। তাই সকাল থেকেই চলছে কাজ। কাজের মেয়েটা ঘর মোছার কাজে ব্যস্ত আর রুপন্তি অন্যান্য জিনিসপত্র গুছিয়ে রাখার। নুর জাহান বেগম মাঝে মাঝে এসে এটা ওটা দেখিয়ে দিয়ে যাচ্ছে।

এমনিতেও রুপন্তির মন মেজাজ আজ অনেকটাই খিটখিটে হয়ে আছে। কারণ মামারা আসবে মানে নিধিও আসবে। কেন যেন এই মেয়েকে ইদানিং একদমই সহ্য হয় না। ইদানিং তার প্রতি শাশুড়ির এক্সট্রা কেয়ার দেখে মাঝে মাঝে ইচ্ছে করে চুল টেনে ছিড়ে ফেলে বলতে, আর কখনো যেন এই বাড়িতে না আসে।

কিন্তু প্রতিবারই তার ইচ্ছেটা অপুর্ণই থেকে যায়। আর যাই হোক, মেহমানের সাথে এমনটা করা যায় না। তার উপর শাশুড়ির আদরের ভাগনী। কোনো টু শব্দ শুনলেও নির্ঘাত তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধ শুরু হয়ে যাবে। যেটা সে কখনো চায় না। তাই ইচ্ছে হলেই সব করা সম্ভব না।

প্রায় বারোটার দিকে বাসায় আসে মামারা। সাঈদ তখন গোসল করার উদ্দেশ্য ওয়াশ রুমে যাওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছিল। গায়ে সেন্টু গেঞ্জি ওর কাধে একটা টাওয়াল ঝুলানো।
মামারা আসলে মায়ের সাথে সেও গেল তাদের সামনে। মামা মামির সাথে হাসি মুখে কথা বলার পর ভেতরে চলে গেলো তারা। তাদের পেছনে দাড়িয়ে থাকা নিধি মুখে আমায়িক হাসি রেখে কথা বলছে সাঈদের সাথে। এত কিছুর মাঝেও রুপন্তি ঠিকই চেয়ে রইল তাদের দিকে। এতক্ষণ দাড়িয়ে হেসে হেসে কি কথা বলছে তারা? বিশেষ করে সাঈদের হাসি মুখটাই এখন সহ্য হচ্ছে না তার। অন্য মেয়ের সাথে কথা বলার সময় সে হাসবে কেন? আগে তো এমন ছিল না। মেয়ে মানুষ এড়িয়ে চলতে চাইতো সে। এমনকি নিধিকেও। তাহলে এখন কেন এমন হয়ে যাচ্ছে সে?

আজ সত্যি সত্যিই মেয়েটার চুল টেনে ছিড়ে ফেলতে ইচ্ছে হচ্ছে। সহ্যের সীমা পেড়িয়ে গেলে ফোঁস ফোঁস করে কয়েকটা শ্বাস নিয়ে তাদের দিকে এগিয়ে গেলো রুপন্তি।

To be continue…………..

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here