প্রেম_প্রেম_পায় #স্বর্ণালী_সন্ধ্যা পর্ব সাতাশ

0
611

#প্রেম_প্রেম_পায়
#স্বর্ণালী_সন্ধ্যা
পর্ব সাতাশ

২৭.
নৌকাটা অনেক সময়ের জন্য ভাড়া করেছিল নীতি। সেখানে শুয়ে ছিল ফারাজ আর নীতি পা ঝুলিয়ে বসেছিল। অনেকটা সময় থাকার পরে ঝুম বৃষ্টি নেমে এলো তাদের ভিজিয়ে দিতে৷ দুজনেই মনের আনন্দে ভিজছিল। কিন্তু বিপত্তি ঘটলো কিছুক্ষণ পর। নীতি হাচি দিতেই আছে একটার পর একটা।ইতিমধ্যে দারুন ঠান্ডা লেগে গেছে তার। তাই উপায় না পেয়ে ফারাজ নীতিকে নিয়ে গাড়িতে চলে আসলো।
গাড়িতে একটা তোয়ালে রাখা ছিল আগে থেকেই।ফারাজ তোয়ালে টা নীতিকে এগিয়ে দিল।নীতি তা নিয়ে মাথা মুছে নিল৷ নীতি হাচি দিতে দিতে বলল,
‘কি একটা অবস্থা বলেন তো স্যার।এতো তাড়াতাড়ি ঠান্ডা লেগে গেল।’

ফারাজ নীতি দিকে তাকিয়ে হাসি দেওয়ার চেষ্টা করে বলল,
‘আপনি এমন ব্রয়লার মুরগী তা তো জানতাম না নীতি।’

নীতি প্রতিবাদ করে বলল,
‘আমি ব্রয়লার না। আপনার আগেই মাথা ব্যথা ছিল।এখন ভেজার কারনে দেখবেন জ্বর ও চলে আসবে।’

ফারাজ হাত দিয়ে চুল ঝাড়তে ঝাড়তে বলল,
‘আমার বৃষ্টিতে ভিজলে জ্বর আসে না।’

নীতি ভ্রু কুচকে নিজের সাথে নিজে বির বির করে বলল,
‘তাহলে কি আমি আসলেই ব্রয়লার মুরগি?’

ফারাজ নীতির বিরবির শুনে শব্দ করে হেসে দিল। নীতি লজ্জা পেয়ে গাল ফুলাল। ফারাজ হাসতে হাসতে অনেকটা সময় নিয়ে হাসি থামালো। হাসি থামিয়ে নীতির দিকে তাকাতেই এক মুহূর্তের জন্য ফারাজের কি যেন হয়ে গেল। ঠান্ডা লাগার কারণে নীতির নাক গাল পুরো লাল হয়ে গিয়েছে।তার উপর সে গাল ফুলিয়ে রেখেছে। ভেজা চুল,চোখেমুখে বৃষ্টির স্নিগ্ধতা।
দৃশ্যটি দেখে ফারাজের মনে এক মুহূর্তের জন্য অন্যরকম অনুভূতি বয়ে গেল। এই মুহূর্তে কেউ যদি ফারাজকে জিজ্ঞাসা করত আপনার কাছে সুন্দরী রমণী কে? ফারাজ হয়তো নীতির নামটাই নিত।

নিজের ভাবনা নিজের অবাক হচ্ছে ফারাজ। এমনটা তো হওয়ার কথা নয়। হঠাৎ এই অনুভূতি কেন?ফারাজ নিজেকে বুঝ দিচ্ছে যে নীতি সুন্দর। সুন্দরকে সুন্দর বলা কোনো অপরাধ নয়। হুম এটাই।
তারপর সে গলাখাকারি দিয়ে বলল,
‘এবার বাসায় যাওয়া যাক।’

গাড়ি স্টার্ট দিয়ে বাড়ির পথে চালানো শুরু করলো।
বাড়ি পৌঁছে দুজনকে খুব বকা খেতে হয়েছে আখি বেগমের কাছ থেকে।কাউকে ছাড় দিচ্ছিলেন না আখি বেগম। নীতি চালাকি করে সব দোষ ফারাজের উপর চাপিয়ে দিয়ে সে রুমে চলে গেল।
ফারাজ অবাক হয়ে নীতি কে দেখলো। নীতি তাকে কিভাবে ফাসিয়ে দিয়ে গেল মায়ের কাছে! মেয়ে জাতি!!

আসরের পর ফায়াদ,ফারাজ এবং নীতি বের হয়েছে অপরাজিতাকে পিক করতে। তারা যাবে শপিং মলে। অপরাজিতার জন্য একটা শাড়ি কিনবে আকদ উপলক্ষে। আখি বেগম চান শাড়ি অপরাজিতার নিজের পছন্দের হোক।ফায়াদের গাড়ি নিয়ে বেরিয়েছে তারা। ফারাজ চালাচ্ছে গাড়ি। ফায়াদ বসেছে প্যাসেঞ্জার সিটে।নীতি পিছনে৷ নীতির ঠান্ডা এখনো কমে নি৷ টিস্যু দিয়ে কিছুক্ষণ পর পর নাক মুচছে সে।
ফায়াদ তাকে ওষুধ দিয়েছিল। কিন্তু সে খেতে ভুলে গিয়েছে।

‘হাচ্চি!!’

শুনে ফায়াদ টিস্যু এগিয়ে দিক পিছে নীতিকে৷ ফারাজ নীতির অবস্থা দেখে মুচকি মুচকি হাসছে। নীতি টিস্যু নিয়ে ফায়াদ কে বলল,
‘জানেন ভাইয়া কিছু মানুষ অন্যের বিপদে হাসে।’

ফারাজ তা শুনে এবার জোরে হেসে দিল। নীতি ভেঙচি কেটে নাক মুছলো।ফারাজ দুষ্টুমি করে বলল,
‘আস্তে আস্তে! এভাবে তো নাক ছুটে হাতে চলে আসবে।’

এবার ফায়াদও হেসে দিল নিশব্দে।নীতি অসহায় চোখে তাকালো ফারাজের দিকে৷ চোখ দিয়ে হয়তো বলতে চাচ্ছে আর কতো চেতাবেন!

অপরাজিতার বাসার সামনে গাড়ি থামাতেই অপরাজিতা বাহিরে আসলো। নীল রঙের থ্রিপিস এ তাকে আসলেই অপরাজিতা ফুল লাগছে।
অপরাজিতা গাড়ি খুলে পিছনে বসতে গেলে ফারাজ থামিয়ে দিয়ে নীতিকে বলল সামনে এসে বসতে। ফায়াদকে বলল,
‘ভাই পিছে গিয়ে তোর বউ এর সাথে বস।’

নীতি বের হয়ে সামনে বসলো।ফায়াদ এবং অপরাজিতা পিছে বসলো।অপরাজিতা পিছে বসেই ফারাজকে উদ্দেশ্য করে বলল,
‘বাহ আপনি তো খুব ভালো ভাই!’

ফারাজ পিছে ঘুরে বলল,
‘কিন্তু আপনি মোটেও ভালো ভাবি না। আমার চুল টেনেছেন আমি ভুলি নি।’

অপরাজিতা ভাব নিয়ে বলল,
‘ভালো করেছি। আবার আসিয়েন ডাক্তার সাঝতে।’

ফারাজ কথা টা তুলেছিল অপরাজিতাকে একটু লজ্জা দিতে। কিন্তু এর মধ্যে তো কোনো ভাবাবেগই নেই৷
ফারাজ কপাল চাপড়ে গাড়ি স্টার্ট দিল।গাড়ি চালাতে চালাতে সে বলল,
‘ভাই তোর ওয়াইফাই তো আমার থেকে অনেক ছোট তাকে নাম ধরে ডাকলে কি মাইন্ড করবে নাকি?’

ফায়াদ একবার অপরাজিতার দিকে তাকিয়ে বলল,
‘না। ডাকতে পারিস।’

ফারাজ এবার অপরাজিতাকে লজ্জা দেওয়ার আরেকটু চেষ্টা করে বলল,
‘তো পুচকি ফুল! আপনি তো খুব ছোট।আমার ভাইকে সামলাতে পারবেন তো?’

সম্বোধন শুনে অপরাজিতা চোখ বড় বড় করে ফায়াদের দিকে তাকালো। ফায়াদ কি তাকে এই নামে সম্বোধন করে তার বাসায়? ফারাজের কথা শুনে ফায়াদ এর ইচ্ছা করলো ফারাজের কানের নিচে দুটো থাপ্প’ড় দিতে। সে জানে ফারাজ ইচ্ছে করে এই নাম বলেছে এখন। অপরাজিতা ফায়াদের দিকে তাকাতেই ফায়াদ অন্যদিকে তাকালো।
অপরাজিতা সম্বোধন শুনে মেকি হেসে বলল,
‘পারবো না কেন ভাইয়া? সামলাতে না পারলে তো আর উনি আমার প্রেমে পড়তেন না। এই যে উনি হুটহাট বেসামাল হয় তখন তো আমিই সামলাই।এগুলো কি বলার মতো বলেন।তাই আর কিছু বললাম না।’

ফারাজ চেয়েছিল অপরাজিতাকে লজ্জা দিতে কিন্তু এখন সে নিজেই লজ্জা পাচ্ছে।সে বুঝতে পারলো এই মেয়ের সাথে কথায় পারবেনা।
তাই আর বৃথা চেষ্টা না করে গাড়ি চালানোয় মনোযোগ দিল সে। নীতি ফারাজের অবস্থা দেখে মুচকি মুচকি হাসলো।

অপরাজিতা একটু একটু করে ফায়াদের কাছ ঘেঁষে বসলো। ফিসফিস করে বলল,
‘আপনি আমার এসব আজেবাজে নাম ছড়াচ্ছেন কেন?’

ফায়াদও ফিসফিস করে বলল,
‘আমি কিছু করি নি।’

অপরাজিতা কিছু বলতে যাবে তখনি ফারাজ কাশি দিয়ে দৃষ্টি আকর্ষন করে অপরাজিতাকে বলল,
‘আমি কিন্তু দেখেছি আপনি একটু একটু করে আমার ভাইয়ের কাছে গিয়ে তাকে শাসাচ্ছেন’

অপরাজিতা ফিক করে হেসে বলল,
‘আমি মোটেও লজ্জা পাচ্ছি না ভাইয়া। কারন লজ্জা পাওয়ার মতো কিছু হয় নি এখনো। ডাক্তার সাহেব হয়তো আপনাকে বলে নি আমার স্বভাবের কথা। লজ্জা থাকলে আপনার ভাইকে পেতাম না।’

ফারাজ অবাক হয়ে বলল,
‘ভাই আসলেই কোথা থেকে পেলি এটাকে৷ নীতিকে দেখি কিছু বলার আগেই লজ্জা পায়৷ আর উনাকে কতো কিছু বললাম!’

ফায়াদ এবার নিজেই অপরাজিতা কাছ ঘেঁষে বলল,
‘she is all rounder. সব পারে।’

অপরাজিতা এবার সত্যিকারে একটু লজ্জা পেল ফারাজের সামনে ফায়াদ এভাবে বলায়।
ব্যাপার টা খুবই সুইট লাগলো ফারাজ এবং নীতির কাছে।

শপিং মলে প্রবেশ করতেই ফায়াদ অপরাজিতার হাত হাতের মুঠোয় ভরে নিল। যেন অপরাজিতা ছোট একটা বাচ্চা। অপরাজিতা প্রতিবাদ করলো না। সে উপভোগ করছে এই ছোট ছোট কেয়ার গুলো।

শাড়ির দোকানে বসে এতো শাড়ি দেখতে দেখতে অপরাজিতা হয়রান। ফায়াদকে বলেছিল হেল্প করতে কিন্তু ফায়াদ বলে সে জানেনা।এবার অপরাজিতা জিদ দেখিয়ে বলল,
‘শাড়ি কি পছন্দ করে দিবেন নাকি বাসায় চলে যাবো?’

নীতি অপরাজিতার জিদ দেখে ফারাজকে ফিস ফিস করে বলল,
‘স্যার চলেন আমরা অন্য জায়গায় যাই।এরা আবার মারামারি লাগবে না তো?’

ফারাজ ও ফিসফিস করে বলল,
‘আরে দাড়ান দেখি। ভাইয়ের ইম্যাচুর মেয়ে আগে পছন্দ ছিল না কারন তাদের আলাদা করে হ্যান্ডেল করতে হয়। দেখি ভাই কি করে?’

ফারাজ অপরাজিতার কাছে এসে বলল,
‘ওকে ওকে দিচ্ছি।’

নীতি ফারাজকে বলল,
‘কিছুই তো হলো না।’

ফারাজ চ জাতীয় শব্দ করে বলল,
‘আহারে আমার ভাই টা গেসে’

নীতি উৎসুক হয়ে বলল,
‘কোথায় গেছে?’

ফারাজ নীতির মাথায় টোকা দিয়ে বলল,
‘আরে প্রেমে ডুবে গেছে।’

বলে ফারাজ এগিয়ে গেল ফায়াদ আর অপরাজিতার দিকে। নীতি মাথা ঘষে বলল,
‘তা তো আমিও গেছি।’

তারপর সেও এগিয়ে গেল তাদের দিকে। গিয়ে দেখলো দুজনে মিলে সুন্দর একটা শাড়ি পছন্দ করেছে।তারপর টুকটাক আরো কেনাকাটা করে তারা যাচ্ছিল রেস্টুরেন্টে। খাওয়াদাওয়া করবে তাই।
যাওয়ার পথেই নীতি হাচি দিতে গিয়ে একটা লোকের সাথে বারি খেলো মাথায়।
মাথা ঘষে সামনে তাকাতেই লোকটা তাকে স্যরি বলল।
তারপর পাশে তাকাতেই বলল,
‘আরে অপরাজিতা না?’

‘রাফিদ ভাইয়া?’

রাফিদ নামের লোকটি বলল,
‘আরে কি অবস্থা। কতদিন পর দেখা হয়েছে।’

অপরাজিতা খুবই হাসি মুখে কথা বলছে। অপরাজিতাকে এভাবে কথা বলতে দেখে ভ্রু কুচকে তাকিয়ে আছে ফায়াদ। ফায়াদদের সাথে পরিচয় করিয়ে দিল অপরাজিতা। রাফিদ অপরাজিতাকে ক্যারাটের বেসিক শিখিয়েছিল একাডেমি তে।অনেক আগের কথা এটা। অপরাজিতা একটা টাইমে ক্যারাটে শিখেছিল শখ করে।

রেস্টুরেন্টে বিরক্তি নিয়ে বসে আছে ফায়াদ।রাফিদ নামের লোকটিকে অপরাজিতা এখানেও ইনভাইট করে নিয়ে এসেছে। দুজনের সে কি আলাপ!ফায়াদের ইচ্ছে করছে অপরাজিতাকে এখান থেকে টেনে নিয়ে বের হয়ে যেতে। সে চুপচাপ বসে নিজেকে নিয়ন্ত্রণ করছে। অপরাজিতার আপাতত তাতে খেয়াল নেই। সে ব্যস্ত আগের দিনের গল্প করতে।

ফায়াদ এবং অপরাজিতার কান্ড বসে বসে খেয়াল করছে নীতি এবং ফারাজ।ফারাজ নীতিকে বলল,
‘ধাক্কা খাওয়ার আর মানুষ পেলেন না?’

নীতি অপরাজিতা এবং রাফিদ নামের লোকটির দিকে এক পলক তাকিয়ে বলল,
‘পাইনি বোধহয়’

ফারাজ আরেকটু নিচু করে বলল,
‘আমার ভাই জ্বলতেছে ‘

নীতি বলল,
‘শান্ত ভাবে বসে আছে তো!’

ফারাজ বলল,
‘আরে দেখেন দেখেন।’

তার কিছু মুহুর্তের মধ্যেই ফায়াদ দাড়িয়ে গেল। ফায়াদকে দাড়িয়ে যেতে দেখে অপরাজিতা তাকালো। ফায়াদ অপরাজিতার হাত ধরে টেনে দাঁড় করালো। ফারাজ কে উদ্দেশ্য করে গম্ভীর শান্তকণ্ঠে বলল,
‘আমি গাড়ি নিয়ে যাচ্ছি নীতিকে নিয়ে এগুলো নিয়ে বাসায় চলে আসিস।’

কাউকে কিছু বলার সুযোগ না দিয়ে অপরাজতার হাত ধরে হাটা ধরলো।হঠাৎ এরকম করায় অপরাজিতা হকচকিয়ে গেল।এটা কি হলো! কোথায় নিয়ে যাচ্ছে!

রাফিদ অবাক হয়ে তাকিয়ে আছে। সে ফারাজকে জিজ্ঞেস করলো,
‘কি হয়েছে?’

ফারাজ দুষ্টুমি করে বলল,
‘হয় নি। হবে অনেক কিছু।তাই না নীতি?’

নীতি কি জবাব দিবে বুঝতে পারছে না।কি হবে?কি হতে পারে?ভাবনায় পড়ে গেল নীতি।

(চলবে)

(বাসায় দেড়িতে এসেছি তাই লেট হয়ে গেল। স্যরি। আর পড়ার টাইম পাই নি। ভুল থাকতে পারে টুকিটাকি। নামে ভুল করলে বলিয়েন। এই পর্বে তেমন কিছু নাই তাই ছোট। নেক্সট পর্ব বড় হবে।🌸)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here