#মিশেছো_আলো_ছায়াতে
#Writer_Sintiha_Eva
#part : 08
🍁🍁🍁
ডাক্তার আমান কাল থেকে ছুটিতে থাকায় তিন্নির দায়িত্ব টা এসে সিমথির উপর পড়ে। সিমথি নিজের কেবিন থেকে আদির সাথে রাগারাগি করে সোজা তিন্নীর কেবিনে চলে যায়। দরজা খোলার শব্দে মেহের, ইশান আর তিন্নি দরজার দিকে তাকায়। সিমথিকে দেখেই তিন্নি লাফিয়ে উঠে। তিন্নির লাফানো দেখে সিমথি না চাইতে ও মুচকি হাসি দেয়।
তিন্নি : ডাক্তার আন্টি ইউ আর সো লেট।
তিন্নির কথায় সিমথি হালকা হাসে। তিন্নির ছোট গালগুলোতে হাত রেখে একটা দীর্ঘশ্বাস ছাড়ে।
সিমথি : আমি ঠিক টাইমেই এসেছি। বাই দ্য ওয়ে মেহের ম্যাম তিন্নিকে আজই ছেড়ে দেওয়া হবে। আপনারা আজই ওকে বাসায় নিয়ে যেতে পারবেন।
সিমথির কথায় মেহের মাথা নাড়িয়ে সম্মতি জানায়। সিমথি তিন্নির পালস রেট চেক করে সব ঠিক ঠাক দেখে একটা স্বস্তির নিশ্বাস ছাড়ে। তখনই কেবিনে হন্তদন্ত হয়ে আদি প্রবেশ করে। আদিকে দেখা মাত্র সিমথির মাথায় রাগ পুনরায় ঝেকে বসে। কেবিনে থাকা নার্স কে তিন্নির খেয়াল রাখতে বলে চলে যেতে নিল তিন্নির কথায় আটকে যায়।
তিন্নি : একি ডাক্তার আন্টি তোমার হাতে তো র/ক্ত। ( বিচলিত হয়ে)
তিন্নির কথায় মেহের আর ইশান বিচলিত হয়ে সিমথির দিকে তাকায়। হাতের শুভ্র রঙের ব্যান্ডেজ টা র/ক্তে লাল বর্ণ ধারণ করেছে। আদি অপরাধীর দৃষ্টিতে সিমথির দিকে তাকায়। সিমথি একটা বারের জন্য ও আদির দিকে তাকালো না। তিন্নির দিকে তাকিয়ে শান্ত গলায় বলে উঠে,,,
সিমথি : তেমন কিছু না।
মেহের : কি বলছো তেমন কিছু না হাতটা সম্পূর্ণ র/ক্তে ভিজে গেছে।
সিমথি : না ম্যাম ইট’স ওকে। আমি ঠিক ঠিক আছি।
ইশান : কিন্তু সিমথি
সিমথি : ভাইয়া ইট’স ওকে। তিন্নির খেয়াল রাখুন আমি আসছি।
সিমথির কথায় মেহের আর ইশান একে অপরের দিকে অসহায় দৃষ্টিতে তাকায়। সিমথি চলে যেতে নিলে তিন্নির জেদ ধরে বসে।
তিন্নি : নার্স আন্টি ডাক্তার আন্টিকে ব্যান্ডেজ করে দাও।
সিমথি : তিন্নি সোনা দেখো,,
সিমথির কথা শেষ হবার আগেই তিন্নি কাঁদতে শুরু করে।
তিন্নি: তুমি ব্যান্ডেজ না করলে আমিও আর মেডিসিন খাবো না । ( কাঁদতে কাঁদতে)
মেহের : তিন্নি কিন্তু অনেক জেদী মেয়ে।
তিন্নির মায়ের কথায় সিমথি হালকা কেশে নার্সের দিকে তাকায়। নার্স ভয়ে ভয়ে সিমথির দিকে আসে। নার্সকে এমন ভয় পেয়ে নতুন বউয়ের মতো আসতে দেখে সিমথি বিরক্তি নিয়ে হালকা ধমকের সুরে বলে ওঠে,,,,
সিমথি : বিয়ে করে নতুন বরের কাছে আসছো নাকি। এভাবে ভয় পাওয়ার কি আছে। তাড়াতাড়ি আসো নয়তো আমাকে দাও আমি করে নিচ্ছি। স্টুপিড একটা।
সিমথির ধমকে মোটামুটি সবাই অনেকটাই কেঁপে ওঠে। নার্স দ্রুতপায়ে সিমথির কাছে আসে। অতঃপর সন্তপর্ণে হাতে র/ক্তে ভেজা ব্যান্ডেজ টা খুলে দেয়। হাতের দিকে তাকাতেই মেহেররা কেঁপে ওঠে। হাতটা লাল হয়ে অনেক ফুলে গেছে। তিন্নি সিমথির হাত দেখে ডুকরে কেঁদে ওঠে। সিমথি পড়ে যায় বেকায়দায়। নার্সের হাত থেকে তুলো আর ব্যান্ডেজ নিয়ে দ্রুত নিজের হাতেই ব্যান্ডেজ করে নেয়। অতঃপর তিন্নিকপ এক হাতে জড়িয়ে ধরে মাথায় চুমু খায়। হালকা হেসে বলে উঠে,,,
সিমথি : কাঁদছো কেনো?
তিন্নি : তোমার হাত এতোটা কিভাবে কাটলো। কতটা কেটে গেছে। ( কাঁদতে কাঁদতে)
সিমথি : আসে ছুড়ি লেগে কেটে গেছে। সমস্যা নেই সেড়ে যাবে। এখন কান্না বন্ধ করো।
তিন্নি: তুমি কিন্তু ঔষুধ খাবে।
সিমথি : আচ্ছা খাবো।
তিন্নি : আমি কিন্তু তোমার সাথে এসে মাঝে মাঝে দেখা করবো।
সিমথি : আচ্ছা।
তিন্নি : আমার যখন ইচ্ছে তখনই আসবো।
সিমথি : আচ্ছা।
তিন্নি : হুমমমম ( গাল ফুলিয়ে)
তিন্নির গাল ফুলানো দেখে সিমথি তিন্নির ফুলানো গালে টপ একটা চুমু খায়। অতঃপর তিন্নির মাথায় হাত বুলিয়ে বলে,,,
সিমথি : মেডিসিন গুলো টাইমলি খাবে ওকে।
তিন্নি মাথা নাড়িয়ে সম্মতি জানায়। সিমথি মেহেরের দিকে তাকিয়ে বিদায় নিয়ে চলে আসে। আদি এতোক্ষণ সিমথির দিকে তাকিয়ে ছিলে। সিমথি চলে যেতেই আদি ও হসপিটাল থেকে বেরিয়ে পড়ে। কিছুই ভালো লাগছে না। এবার একটু রিফ্রেশ হতে হবে। আদি গাড়ি নিয়ে হসপিটাল থেকে বেরিয়ে যায়। ফুল স্পিডে ড্রাইভিং করছে।কানে শুধু সিমথির বলা কথাগুলোই সানাইয়ের মতো বাজছে। নিজের অজান্তেই চোখে পানি এসে পড়ে। শার্টের হাতায় শুকিয়ে যাওয়া র/ক্তের দিকে তাকায়।
__________________
বাংলাদেশ ষড়ঋতুর দেশ। ঋতুবদলের পালাক্রমে গ্রীষ্মের পরই শুরু হয় বর্ষাকাল। আর বর্ষাকাল মানেই হচ্ছে বৃষ্টি। রাস্তাঘাট, গাছগাছালি বৃষ্টির পানিতে ভিজে টুইটুম্বুর হয়ে আছে। তবে ব্যস্ততায় ঘেরা শহুরে মানুষের মাঝে তেমন কোনো আলাদা উচ্ছ্বাস নেই। তবে এটা যদি হতো গ্রামাঞ্চল তাহলে তার চিত্র ফুটে উঠতো রকমারি সাজে। শহুরে মানুষ ইট-পাথরের দালান-কোঠার মাঝে থাকতে থাকতে নিজেরাও হয়ে উঠেছে পাথর মনের মানব।
অম্বর জুড়ে কালো মেঘের আনাগোনা। মাঝে মাঝে শীতল বাতাসে বইছে। সন্ধ্যা ছয়টা হওয়া স্বত্বেও বাইরের অবস্থা দেখে যে কেউ বলবে রাত হয়ে গেছে। আদিরা সবাই ড্রয়িং রুমে বসে আড্ডা দিচ্ছে। আজ অফ ডে। পুরো ফ্যামিলি মেম্বার্স রা একত্রে আড্ডায় মজে আছে। একেকজন একেক কথা বলছে আর বাকিরা হেসে উঠছে। আচমকায় আড্ডার মাঝে তিন্নি লাফিয়ে উঠে।
তিন্নি : উফফসস পাঁচ দিন হলো ডাক্তার আন্টিকে দেখি না।
তিন্নির কথায় ইশান খোঁচা দিয়ে বলে,,,
ইশান : এক কাজ কর তোর ডাক্তার আন্টি কে ফোন দিয়ে আসতে বল।
তিন্নি আফসোসের সুরে বলে ওঠে,,,
তিন্নি : ডাক্তার আন্টি অনেক বিজি।
আচমকা ওদের মাঝে আদি বলে উঠে,,,,
আদি : চল তোর ডাক্তার আন্টির সাথে দেখা করিয়ে নিয়ে আসি।
আদির কথায় কয়েক জোড়া চোখ আদির দিকে তাকায়। ওদের তাকানো দেখে
আদি : কি? এভাবে তাকানোর কি আছে? জাস্ট তোর মেয়ের ইচ্ছে পূরণ করাতে চেয়েছি অর নাথিং।
আদির কথায় আদিবা কোমড়ে হাত দিয়ে বলে,,,,
আদিবা : তো আমরা কখন বললাম তুই অন্য কিছু বলেছিস।
আদিবার কথায় আদি থতমত খায়।
আদি : আ আসলে
তুহা : তোর হাব ভাব মোটেই সুবিধার লাগছে না ভাইয়া।
মেহের : ভাইয়া বিয়ে সাদি করবা নাকি।
মেহেরের কথায় আদির কাশ উঠে যায়। ইশান আর শাওন হাসতে হাসতে আদির পিঠ চাপড়ে দেয়।
শাওন : আহ মেহের ছেলেটার পেছনে শুধু শুধু কেনো লাগছো।
ইশান : চুপ কর ভাইয়া। আদি ব্রো’র হাব ভাব মোটেই সুবিধার না।
তুহা : রাইট। সারাদিন কি এতো ভাবো একা একা। আবার মাঝে মাঝে হাসিস। বল বল।
আচমকায় আদিবা গেয়ে উঠে।
আদিবা : প্রেমে পড়েছে মন প্রেমে পড়েছে
আদিবার গানে আদি রাগী রাগী চোখে ওদের দিকে তাকায়। বাকিরা সবাই হেসে দেয়। আদি কোলের উপরের কুশন টা আদিবার দিকে ছুঁড়ে মারে।
আদি : বে’য়া’দ’ব বড় ভাই হয় তোর।
আদির কথায় এবার বাকি সবাই হেঁসে দেয়। এদিকে বেচারি তিন্নি বোকা বোকা চোখে সবার দিকে তাকাচ্ছে। কি হচ্ছে কি করছে সবাই সবই তার ছোট্ট মাথার উপর দিয়ে যাচ্ছে।
তিন্নি : কি হচ্ছে এসব। ( চেঁচিয়ে)
তিন্নির চেঁচানো তে ইশানরা কানে হাত দেয়।
শাওন : এই এক মেয়ে। পুরাই মায়ের মতো হয়েছে।
শাওনের কথায় মেহের রাগী চোখে তাকায়।
মেহের : কি বললে। আবার বলো।
শাওন : হিহিহি। কিছুই না। তিন্নি চল ঘুরে আসি।
তিন্নি : কোথায় যাবে? ডাক্তার আন্টির কাছে।
আদি : চল যায়।
আদিবা : ডাক্তার আন্টি র কথা শুনলে তুই সবার আগে লাফাস কেনো?
তুহা : ব্যাপার কি ভাই।
আদি ডোন্ট কেয়ার ভাব নিয়ে তিন্নিকে কোলে তুলে হাঁটা লাগায়। পেছনে সবাই বোকার মতো আদির যাওয়ার দিকে তাকিয়ে থাকে।
_________________
তন্ময় : আজ চল কফিশপে যায়। আমার ও কাজের প্রেশার কম তোদের ও কম।
রোদেলা : গুড আইডিয়া।
তুহিন : চল চল তাহলে।
মেঘা : সিমথি কে রাজি করানোর দায়িত্ব তন্ময়ের।
তন্ময় : বাঘের খাঁচায় যাওয়ার জন্য তো আমি তন্ময় আছিই।
তন্ময়ের কথায় সবাই হেসে দেয়।
তন্ময়রা সিমথির কেবিনে যায়। তন্ময় গিয়ে সোজা সিমথির সামনে চেয়ারে বসে পড়ে। সিমথি ভ্রু কুঁচকে সবার দিকে তাকায়।
সিমথি : হোয়াট হ্যাপেন্ড?
তন্ময় : জানু শোন না।
সিমথি : এতো রস মেখে কথা না বলে কি বলবি বল।
সিমথি র কথায় তন্ময় হালকা কাশে।
তন্ময় : চল না সবাই মিলে একটু কফি খেয়ে আসি।
সিমথি : কিসের ট্রিট। তোর বিয়ের ( ল্যাপটপের দিকে তাকিয়ে)
তন্ময় : কি যে বলিস আমার বিয়ে হলে তো সবার আগে তুই জানবি। ( মুচকি হেসে)
মেঘা : তন্ময় বিলিভ মি তোর ভাগ্য ভালো সিমথির মতো একজন গার্লফ্রেন্ড পেয়েছিস।
তন্ময় : এ কথা আমি অস্বীকার করবো আম রিয়েলি লাকি। আমি সত্যিই ভাগ্যবান আমি সিমথির মতো একজন ভালোবাসার মানুষ পেয়েছি। ভীষণ ভালোবাসি সিমথিকে। চাইলে ও ওর থেকে দূরে সরে থাকতে পারি না।
তন্ময়ের কথায় সিমথি হাসে। তন্ময়ের দিকে তাকিয়ে হালকা হেসে বলে,,,
সিমথি : মিস্টার এহমাদ এতো প্রেমিক পুরুষ কবে থেকে হলেন। আম রিয়েলি সারপ্রাইজড।
সিমথির কথায় তন্ময়সহ বাকিরা ও হেসে দেয়।
মেঘা : কিরে তন্ময় তুই নাকি এখনো সিমথিকে আই লাভ ইউ বলিস নি।
মেঘার কথায় তন্ময় হাসে । উঠে গিয়ে সিমথির পেছনের চেয়ারের কাধে হাত রেখে সিমথির দিকে হালকা ঝুঁকে বলে উঠে,,,,
তন্ময় : আই লাভ ইউ বললেই কি ভালোবাসা হয় নাকি। ভালোবাসা মানে ভালো রাখা। বিপরীত পাশের মানুষ টার সব কিছুকে প্রাধান্য দেওয়া। বিপরীত পাশের মানুষ টা কে সম্মান করা। সর্বোপরি আচার-আচরণে ভালোবাসার বর্হিপ্রকাশ করা। আমি আই লাভ ইউ বলে ভালোবাসা প্রকাশে বিশ্বাসী না। আমি ব্যবহারে প্রকাশিত ভালোবাসায় বিশ্বাসী।
তন্ময়ের কথায় সিমথি বাদে বাকিরা চেঁচিয়ে উঠে।
মেঘা : সিমথি বইন ইউ আর রিয়েলি লাকি।
মেঘার কথায় সিমথি হেসে দেয়। তন্ময়ের দিকে তাকিয়ে একটা টেডি স্মাইল দিয়ে বলে উঠে,,,
সিমথি : ইউ আর রাইট মেঘা। সিমথি রিয়েলি লাকি পার্সন।
আচমকা তন্ময়ের চোখ দরজায় যেতেই সিমথির কাছ থেকে দূরে সরে যায়। তন্ময়ের চোখের দৃষ্টি অনুসরণ করে দরজায় দিকে তাকায়।
মেঘা : আদি ভাইয়া।
চলবে,,,,,
( বাড়িতে আসছি। তাই ব্যস্ত আছি। অনেকদিন পর এসেছি তো তাই গল্প লেখার সুযোগ পাইনি। ❤️)