#অবাধ্য_বাঁধনে
#পলি_আনান
[পর্ব সংখ্যা ৩৬ খ]
___________________
গাড়ি চলছে ঈশানদের বাড়ির উদ্দেশ্যে।পুরো গাড়ি স্তব্ধ নিরব।থেকে থেকে ছোট্ট রুদবা একটু আধটু কথা তুলছে তার নিরবতায় আবার নিরবতা নামে সকলের মাঝে।সামনে বসেছে রাসেল তার কোলে রুদবা।পেছনে ঈশান ঈশা এবং রুমা।রুমার ঘাড়ে মাথা দিয়ে নিশ্চুপ কান্না করছে ঈশা কিছুক্ষণ পর পর ঈশার নাক টানার আওয়াজ পাওয়া যাচ্ছে।ঈশান পাশে বসে নিরিবিলি পর্যবেক্ষণ করছে মেয়েটাকে।মনে মনে তার জমেছে গাঢ় অভিমান।তার বুকে এসে কাঁদলে কি হতো?তাকে আড়াল করে সে রুমার কাছে কাঁদছে!পুনরায় নিজের অভিমানকে গালি দিল ঈশান সবকিছুতে তার বাড়াবাড়ি।
অবশেষে তাদের যাত্রার সমাপ্তি ঘটলো বাড়ি এসে পৌছালো তারা।মাহমুদা হাসি মুখে ঈশাকে বরণ করে নিলেন।রাত অনেক হয়েছে আজকের মতো আচার-অনুষ্ঠান এখানে শেষ করা জরুরি।ঈশা চুপচাপ সোফায় বসে ছিল।মাহমুদা রুমা রেদোয়ান আর রুদবাকে নির্দেশ দিলেন তাদের কক্ষে যেতে।এই বাড়িতে ঈশান তাদের জন্য বরাদ্দ একটি কক্ষ রেখেছে।মাঝে মাঝে যখনি আসে এই রুমটাতেই তাদের থাকা হয়।মাহমুদা এগিয়ে এলেন ঈশানের কাছে এবং তাকে নির্দেশ দিলেন,
” ঈশান যাও, তুমি তোমার রুমে যাও।”
মায়ের কথায় ঈশান কিছুটা অপ্রস্তুত হয়ে পড়লো।আড় চোখে ঈশার দিকে তাকিয়ে বলে,
” একা যাব?”
” হ্যাঁ একাই যাবে।ঈশাকে তোমার রুমে পাঠানো হবে না।বিয়ে করেছো আমাকে দূর্বল পেয়ে হুমকি দিয়ে। মেয়ে এনেছো আমাকে হুমকি দিয়ে।এবার কি তোমার ঘরে নিয়ে যাবে হুমকি দিয়ে?দাও না দাও যতই হুমকি দাও ঈশাকে আমি তোমার রুমে পাঠাব না।যেদিন ঈশা মানিয়ে নেবে সবকিছু সেদিন সে তোমার রুমে যাবে।রুমা ঈশাকে আমার রুমে রেখে আয়।”
মাহমুদার কড়া আদেশ।ঈশান আর দ্বিতীয়বার কিছু বলার সাহস পেল না।এখন যদি সে কিছু বলে নির্ঘাত তাকে নির্লজ্জের উপাধি পেতে হবে।তাই পরিস্থিতি বুঝে চুপ রইলো সে।ঈশাকে নিয়ে গেলো রুমা তার পিছু পিছু গেলেন মাহমুদা।মাহমুদার নির্দেশে রাসেল যেন আকাশ থেকে পড়েছে ঈশানের থেকেও তার মুখের ভাবসাবের অবস্থা করুণ।রাসেল এগিয়ে এলো এবং ঈশানের পিঠ চাপড়ে বলে
” সরি দোস্ত এমনটা হবে ভাবতে পারিনি।আমাকে ক্ষমা করিস।”
” কেন কি হয়েছে? তুই কি করেছিস?”
” সেটা তুই রুমে গেলেই বুঝবি।”
রাসেল বিষণ্ণ মন নিয়ে স্থান ত্যাগ করলো।বসার ঘরে একা কিছুক্ষণ দাঁড়িয়ে রইলো ঈশান।মায়ের কি এমনটা করা খুব বেশি জরুরি ছিল?এই রাত কি বারবার আসবে?বিয়ের প্রথম রাত আর আজকেই কাবাবে হাড্ডি হতে গেলো।ক্লান্ত শরীরটা টেনে নিজের ঘরের দিকে গেলো ঈশান।দরজা খুলে রুমের লাইট জ্বালাতে স্তব্ধ বাক্যহারা সে।পুরো রুমটা সাদা গোলাপ আর লাল গোলাপের সমাহার।বিছানা দেয়াল মেঝে কোন কিছুই বাদ যায়নি।এ যেন কক্ষ নয় পুষ্পোদ্যান!ঈশান বুকের কোণে সূক্ষ্ম ব্যথা অনুভব করলো।এলোমেলো পা ছাড়িয়ে বসলো বিছানায়।লাল সাদা পাপড়ির ভিড়ে বিছানার চাদর চোখে পড়ছে না।মৃদ্যু আলোতে কয়েকটি প্রদীপ জ্বলছে।পুরো রুমটাতে নজর ফেরানো দায় কিন্তু এখন এসব মোটেও ভালো লাগছে না ঈশানের।লাগবে কি করে?ঘর আছে, বর আছে, ফুল আছে তবে ফুলের মতো কোমল বউটা নাই।বুক চিড়ে হতাশার শ্বাস বেরিয়ে এলো তার।দেয়াল ঘড়িতে জানান দিচ্ছে রাত দুইটা বাজতে চলেছে।বিষণ্ণ মন নিয়ে বারান্দায় গিয়ে দাঁড়ালো ঈশান রাসেল কি তবে এইজন্য সরি বলেছে?হ্যাঁ এইজন্যই সরি বলেছে।ঈশানের ভাবনায় ছিল রাসেল এমন কিছু করবে কিন্তু এতটা বাড়াবাড়ি করবে ভাবেনি।নিজের রুম ছেড়ে রাসেলের রুমের দিকে পা বাড়ালো সে।রাসেলের রুমের দরজা খোলা ছেলেটা ওয়াশরুমে আছে নিশ্চয়ই গোসল করছে।পুনরায় নিজের রুমে ফিরলো ঈশান।অবশেষে বিয়েটা হলো আজ তার মনের কোনে শান্তি থাকার কথা কিন্তু তার মনে শান্তি নেই।ঈশান সবটা মেনে নিয়েছিল কিন্তু ঝামেলা লাগালো এই রাসেল।কে বলেছে তাকে রুম সাজাতে?এখন তো তার তর সইছে না।হাতের ঘড়িটা খুলে বিছানার কোনে রাখলো ঈশান দ্রুত শুয়ে পড়লো বিছানার এক পাশে।ফুল গুলো যেভাবে আছে সেভাবে পড়ে থাকুক।চোখ বন্ধ করে কিয়ৎক্ষণ ঘুমানোর চেষ্টা চালালো কিন্তু সে ব্যর্থ।ডানে বামে তাকিয়ে অনুভব করছে ফুলগুলো তার দিকে তাকিয়ে হাসছে।তাদের দাঁত কেলানো হাসিতে গা পিত্তি জ্বলে উঠলো ঈশানের।ফুলগুলো যেন তার দিকে তাকিয়ে অবজ্ঞার সুরে বলছে,
“বউ ছাড়া তুই এখানে কেন ঘুমাস?
হতচ্ছাড়া বের হ এখান থেকে।এই রুমে থাকার তোর কোন অধিকার নেই।”
ঈশান উঠে দাঁড়ালো বেশ কিছুক্ষণ পাইচারি করলো কক্ষ জুড়ে।সময় অনেকটা পেরিয়ে গেল দেয়াল ঘড়িতে জানান দিচ্ছে দুইটা চল্লিশ বাজতে চলেছে।ঈশান সবার কক্ষের আশেপাশে ঘুরে এলো কেউ জেগে নেই সবাই ভেতর থেকে দরজা লাগিয়ে দিয়েছে একমাত্র মাহমুদার রুমের দরজা খোলা।তিনি আগেও দরজা বন্ধ করে ঘুমাননি।ঈশান শব্দহীন পায়ে প্রবেশ করলো মাহমুদার কক্ষে টি-টেবিলে তার ওষুধেরর খোসা গুলো পড়ে আছে।প্রতিদিন রাতে মাহমুদার ওষুধের সাথে একটা করে ঘুমের ওষুধ থাকে।আজকেও তার ব্যতিক্রম নয় মাহমুদা নিশ্চিন্তে গভীর ঘুমে মগ্ন।ঈশান দুই একবার হাত নেড়ে ডাকলেন তাকে কিন্তু তার কোন সাড়া শব্দ নেই।মাহমুদার নাকের গোঙানির শব্দে থেকে থেকে কেঁপে উঠছে ঈশান, মন বলছে এই বুঝি ধরা পড়বে সে।আর আজ যদি ধরা পড়ে এতদিন জমানো মানসম্মান ইগো সবটা ধূলোয় মিশে যাবে।সবাই সারাজীবন এই একটা বিষয়ের ফায়দা তুলবে।
পরিস্থিতি হাতের মুঠোয় বুঝতে পেরে এবার ঈশার দিকে ঝুকলো সে।মেয়েটা এখনো বিয়ের সাজে।কাঁদতে কাঁদতে কখন যে ঘুমিয়ে পড়েছে তার হুশ নেই।দোপাট্ট পড়ে আছে বিছানার এক কোনে এলোমেলো শাড়িটা ঠিক করে ঝটপট হাতে ঈশাকে পাঁজা কোলে তুললো ঈশান।ঘুমের ঘোরে ঈশা ভেবেছি তার হিপনিক জার্ক হচ্ছে।তাই ঘুমের ঘোরে চোখ মেলে তাকানোর আর ইচ্ছে জাগলো না।
ঈশাকে নিয়ে ঈশান নিজের কক্ষে ফিরলো।ঈশাকে বিছানায় শোয়াতে সঙ্গে সঙ্গে চোখ মেললো সে।তার চাহনি স্বাভাবিক ছিল না আচমকা ঘুম ভাঙ্গলে যেমন চোখ বড়বড় তাকানো হয় ঠিক তেমনটা ঈশানের দিকে তাকিয়ে রইলো ঈশা।সম্মুখে ঈশানকে দেখতে পাবে ভাবেনি সে মুখ ফুটে কিছু বলার আগে তার মুখ চেপে ধরে ঈশান।
” আল্লার ওয়াস্তে কথা বলো না।প্লিজ চুপ করো আমি তোমায় সবটা বলবো।”
জড় পুতুলের ন্যায় চুপচাপ হয়ে রইলো ঈশা।ঈশান দ্রুত দরজা রুদ্ধ করে বসলো মেয়েটার পাশে।ঈশার চাহনি এখনো আতঙ্কে ঘেরা।
” প্লিজ স্বাভাবিক হও।”
” আমি এখানে!”
” আমি এনেছি।”
ঈশা কিছুক্ষণ চোখ বন্ধ করে চুপচাপ শুয়ে রইলো।ঈশান তার পাশ থেকে একটুও নড়লো না সরলো না তাকিয়ে আছে এক দৃষ্টিতে।
” আন্টি কি বলেছে শুনেন নাই?আমাকে এখানে কেন এনেছেন?ইসস কেউ দেখে ফেললে কি ভাববে!”
” আম্মুর ঘুম এখন ভাঙবে না নিশ্চিত থাকো।বাকিদের আমি ভয় পাই না ওরা জানলেও কি আর হবে?”
” আমি লজ্জায় পড়বো ঈশান।”
” চুপ করবে তুমি?এসব আলোচনা এখন রাখো।”
ঈশান চুপচাপ তাকিয়ে রইলো ঈশার দিকে মেয়েটা পড়েছে বেকায়দায়।কি করবে সে?মাহমুদার আদেশে ভীষণ খুশি ছিল কিন্তু ঈশান সব ভেস্তে দিল।কাঁদতে কাঁদতে কখন যে ঘুমিয়ে পড়েছিলো তার হুশ ছিল না।ঘুমানোর আগে ঈশাকে মাহমুদা বার বার বলেছেন তুমি ফ্রেশ হয়ে দরজা লাগিয়ে শুয়ে পড়ো আমার ছেলেকে আমি চিনি যে কোন সময় শক্রু পক্ষের মতো এসে আক্রমণ করবে।ঠিক তাই হলো।ঈশার মন চাইছে মাটিতে মাথা আছাড় দিয়ে কাঁদতে।
” এই কি ভাবছো তুমি?”
” হুহ কিছু না।”
” রুমটা পছন্দ হয়েছে?”
সবটা চোখ বুলিয়ে একবার দেখলো ঈশা।এখানে ফুলের অভাব নেই অনন্য সময় হলে খুশিতে লাফিয়ে উঠতো ঈশা কিন্তু এখন ভয়ে আন্তর আত্মা থেকে থেকে কেঁপে উঠছে।
” এই ফুলের ভিড়ে আমরা দুজন প্রজাপতি।”
” আমি বরং এবার যাই আন্টি….”
” যাওয়ার জন্য এনেছি তোমায়?”
বেশ রাগ নিয়ে বললো ঈশান।ঈশার বাহু টেনে জড়িয়ে আনলো কিছুটা কাছে।
” দেখো এই ফুলগুলো আমায় দেখে হাসছিলো এখন আমাদের রোমান্স দেখে এই ফুলেরা লজ্জা পাবে।এদের লজ্জা পাওয়া উচিত।”
” মানুষ ছেড়ে এবার আপনি ফুলের সাথে ঝগড়া করছেন।”
” মাঝে মাঝে করতে হয়।ফ্রেশ হওনি কেন?মুখে এতক্ষণ মেকাপ রাখা ঠিক নয়।”
ঈশান একে একে ঈশার চুড়ি খুললো গলার হার খুললো।চুলের খোপা খুলতে গিয়ে পড়লো বেকায়দায়।এত এত ক্লিপ তার মাঝে চুল জট ধরে অবস্থা করুন।ফুল গুলো নেতিয়ে পড়েছে।প্রতিটা ফুল খুলে এক পাশে রাখলো ঈশান।ঈশানের হতাশার মুখখানি দেখে ঠোঁট কুচকে হাসলো ঈশা।
” তুমি হাসছো কেন?প্রথম রাতের প্রথম কাজ বউ আনপ্যাক করছি।”
” চুল এলোমেলো করে লাভ নেই রুমা আপু খুলে দিবে আপনি এবার বসুন।”
ঈশান এবার সরে বসলো।ঈশা চলে গেল ফ্রেশ হতে।হাত মুখ ধুয়ে ফিরলো সে ঈশান তার জন্য দাঁড়িয়ে ছিল তোয়ালে হাতে।ঈশানের আতিশয্য দেখে মনে মনে ভীষণ হাসলো ঈশা।রাগি জেদি ঈশান এখন ঈশার সেবা যত্নে লিপ্ত।
” ঘুমাও তুমি।”
ঈশা প্রত্যুত্ত করলো না।চুপচাপ শুয়ে পড়লো এক কোনে সারা ঘরে ফুলের ঘ্রাণে মাথাটা কেমন ঝিম ধরে গেছে।
৮৯.
রাসেল দরজা খুলে বাইরে বেরিয়ে এলো শব্দহীন পায়ে।তার কক্ষের বাইরে ছিল রেদোয়ান এবং রুমা দুজনের হাস্যজ্বল মুখ দেখে রাসেল বলে,
” বলেছিলাম না ঈশান সত্যি সত্যি ঈশাকে নিয়ে যাবে এবার বিশ্বাস হলো তো?”
” এতক্ষণ যাবৎ ঘুমায়নি কখন আমাদের ধারণা সত্যি হবে।আন্টি যদি জানেন ঈশান সত্যি সত্যি ঈশাকে নিয়ে গেছে তবে তুলকালাম কান্ড ঘটবে।”
রুমার কথায় সহমত জানালো রাসেল।তারা সবাই মিলে ঈশানের কক্ষের বাইরে দাঁড়িয়ে রইলো।আবার গেল মাহমুদার কক্ষে।মাহমুদার গোঙানির শব্দে তাদের বুঝতে বাকি নেই মাহমুরা টের পায়নি ঈশা যে তার পাশে নেই।রেদোয়ান রুমা আর রাসেলকে উদ্দেশ্য করে ফিসফিসিয়ে বলে,
” সকালে উঠে সবাই না জানার ভান করে থাকবে।এমন একটা ভান ধরবে যেন তারা বুঝতে না পারে আমরা সবটা জানি।”
” আমি হাসি আটকাবো কি করে?আমি তো ঈশানের মুখোমুখি হলেই হাসবো।”
রাসেলের কথায় পিঠে চাপড় মা র লো রেদোয়ান।
” খবরদার হাসবে না।হাসলে ঈশান সাহেব লজ্জা পাবেন।তিনি লজ্জায় শহিদ হয়ে যাক তাতে আমাদের কিছু যায় আসে না।কিন্তু ঈশা বেচারির দোষ নেই তাকে জ্বালানো যাবে না কথা ক্লিয়ার?”
” জি ভাই।আমরা কিচ্ছু জানি না।আমরা তো ঘুমে ছিলাম।আসলেও আমরা কিচ্ছু জানি না জানবো কি করে?কেউ যদি রুমের দরজা আটকে রাখে।”
” ফাজিল ছেলে রুমের দরজা খুলে বাসর করবে তোমার জন্য?”
.
” একটুখানি আদর করি?”
” আমি বাচ্চা নাকি যে আদর করবেন?”
ঈশান পড়েছে বিপত্তিতে।ঈশার অনুমতি ছাড়া সে মেয়েটার গালেও একটি চুমু খাবে না।কিন্তু এই মেয়ে সেচ্চায় ঈশানকে জ্বালাতে বার বার কথা ঘুরিয়ে দিচ্ছে।
” তুমি বাচ্চাদের মতো কোমল।”
” বাচ্চা তো আর নই।”
” থাক তুমি বাচ্চা নও।তবে বাচ্চা হবার ব্যবস্থা করে দিব।”
” অসভ্য লোক।”
” তোমার কাছে সভ্য হতে চাই না।একটা চুমু খাই?প্লিজ ফুল গুলো না হয় হাসবে।”
” আপনি বড্ড অবাধ্য ঈশান।”
” এই অবাধ্য ছেলের অবাধ্য বাঁধনেই তো বাঁধা পড়েছো তুমি।এবার বেশি কথা নয় রাত পেরিয়ে যাচ্ছে তোমার হিটলার শ্বাশুড়ি একবার ঘুম ভাঙলে আর তোমায় পাশে না পেলে রণক্ষেত্র তৈরি হবে।”
ঈশা খিলখিলিয়ে হেসে উঠলো।আবছা আলোতে ঈশার হাসিটায় থামিয়ে দিলো ঈশানের সব চাওয়া পাওয়া।ঈশানের ঘোর চাহনিতে কিছুটা অপ্রস্তুত হয়ে পড়লো ঈশা ভেবেছিলো ছেলেটা রাগ করেছে।
” ঈশান কি হয়েছে?”
” পরিস্থিতি কোথায় এসে থমকে গেলো।তুমি আমার শত্রু ছিলে ঈশা তোমার ক্ষতি করার পদে পদে চেষ্টা করেছি।আর এখন দেখো তোমার দিকে কেউ চোখ তুলে তাকালেও মাথায় রক্ত ওঠে আমার।প্লিজ আগের সব ভুলে যাও আমি এসব ভাবতে চাই না।পূর্বের অন্যয়ের জন্য আমি লজ্জিত,ক্ষমা চাই আমি।এই যে তোমার মুখের হাসি এই হাসি শেষ নিশ্বাস অবধি দেখতে চাই।”
” ঈশান এসব মনে করে লাভ নেই।আমরা তো…
ঈশার কথা থেমে গেলো।সম্মুখে থাকা ব্যক্তির ওষ্ঠে নিজের ওষ্ঠ অনুভব করতে শিউরে উঠলো।কয়েক সেকেন্ড নিজেকে ছাড়াতে চাইলেও কিয়ৎক্ষণ বাদে নিজেকে মানিয়ে নিলো।গভীর আলিঙ্গনে হারিয়ে গেল দুজনে।কয়েক মিনিটে ঈশান ছাড়লো ঈশাকে।মেয়েটা থরথর করে কাঁপছে অন্ধকার কক্ষে ম্রিয়মাণ আলোতে ঈশানের হাসি হয়তো চোখে পড়েনি ঈশার ঈশান আধশোয়া হয়ে বসলো।বিছনার সাইডে থাকা টি-টেবিলে একটি জুয়েলি বক্স সেটি নিয়ে ঈশার হাতে দিলো ঈশান।মেয়েটা তখনো কাঁপছিলো ঈশান কিছুটা জোর খাটিয়ে টেনে নেয় তাকে।
” এই মেয়ে এত ঘামছো কেন?মনে হচ্ছে তোমার গলায় ছুরি ধরেছি।”
” তার থেকেও ভয়াবহ কাজ করেছেন ঈশান।”
ঈশান তার আলিঙ্গনে রুদ্ধ করলো ঈশাকে।কানের লতিতে শব্দ করে চুমু খেয়ে ফিসফিসিয়ে বলে,
“তোমার হৃদজমিনে প্রথম প্রেমের আন্দোলন শুরু করা পুরুষটি তবে আমি!”
” সন্দেহ আছে?”
” না নেই।”
ঈশান চোখে হাসলো।জুয়েলারি বক্সটা এগিয়ে দিলো ঈশাকে এখানে একটি ডায়মন্ডের নেকলেস আছে।
” এটা তোমার জন্য।আজ তো কিছু উপহার দেওয়ার কথা।”
” আপনি আমার জীবনে এসেছেন এর চেয়ে বড় উপহার আর কি হতে পারে?তবে আমার আরেকটি উপহার চাই ঈশান।”
” শুধু একবার হুকুম করুন যা চাই এনে দেবো।”
” আমার বাবা মা’র সন্তুষ্টি চাই ঈশান।আপনার আচরণে ব্যবহারে তারা যেন কখনো মন ক্ষুণ্ণ না হন।”
” তোমার মা আমাকে এমনিতেও পছন্দ করেন না।সেদিনের পর থেকে খেয়াল করেছি বিয়েতেও তার কোন আন্তরিকতা ছিল না।গতকাল আমার মুখে মিষ্টি কীভাবে দিয়েছে জানো?চামচ ঠেসে দিয়েছে।”
” আম্মু এই বিয়েতে রাজি ছিল না।যাই হোক ধীরে ধীরে সবটা মেনে নেবেন।”
” তাই যেন হয়।”
” এই নেকলেস আপনার কাছে রেখে দিন।”
” এই রুমে তোমায় কবে পাব ঈশা?”
” পেতে হবে না।আন্টির সম্মতিতে যেদিন এই কক্ষে পা রাখবো আমার মনে হয় সেদিন থেকে আপনার অত্যাচারে আমি শেষ হয়ে যাব।”
” আজকেই শেষ করে দিতাম কিন্তু…”
ঈশান কান্নার ভান ধরে ঠোঁট উলটে ফেললো।ঈশা ঝটপট উঠে দাঁড়ালো তার আগে ঈশান তাকে জড়িয়ে ধরে টেনে বিছানায় ফেললো।গলায় মুখ ডুবিয়ে নাক ঘষে অজস্র বার ওষ্ঠ ছোঁয়ালো।সময় পেরিয়ে গেলো ঈশানের ভালোবাসায় মগ্ন হলো ঈশা।কিন্তু একটা সময় ব্যথায় লাফিয়ে উঠলো মেয়েটা।ঈশানকে ছিটকে সরিয়ে উঠে বসে সে।ঘোরে থাকা ঈশান ঈশার দিকে তাকিয়ে কিছুটা অপ্রস্তুত হয়ে পড়ে।মেয়েটা গলায় হাত দিয়ে আগুন চোখে তাকিয়ে আছে তার দিকে।
” আপনি এটা কি করলেন ঈশান?এখন আমি সবার সামনে যাব কি করে?সবাই সন্দেহ করবে।”
ঈশান ঈশার গলায় হাত ছোঁয়ালো।আফসোস সুরে বলে,
” এখনি লাল হয়ে গেছে।ইসস ভুল করে ফেলেছি।”
ঈশা গলায় হাত দিয়ে রাগে ফুসছিলো ঈশানের চাহনি কাতর।নিজের ভুল বুঝতে পেরে জিভ কামড়ে বসে আছে ছেলেটা।হন্তদন্ত পায়ে ছুটে গিয়ে নিচে নামলো ঈশান।কিচেন থেকে বরফ নিয়ে ফিরলো ঈশার কাছে।একখন্ড বরফ তুলে ধীরে ধীরে ঈশার গলায় ছুঁয়ে দিলো।ততক্ষণে ঈশা রাগে জিদে কেঁদে ফেলেছে।ঈশানের এত ব্যস্ততা দেখে নাক ফুলিয়ে বলে,
” সাপ হয়ে কামড়ে এখন ওজা হয়ে ঝাড়তে এসেছে।অসভ্য লোক।”
#চলবে__